ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: দ্য হার্ট অব ইনক্রেডিবল্ ইন্ডিয়া – ভারতের হৃদয়ে অবস্থান করছে মধ্যপ্রদেশ। প্রকৃতি, তীর্থস্থান, ইতিহাস, ভাস্কর্য – কী নেই এই রাজ্যে। ছত্তীসগঢ় বেরিয়ে যাওয়ার পরেও এই রাজ্যটি আয়তনে এত বড়ো যে এক বারে দেখে শেষ করা যায় না। বার বার যেতে হয়। এর আগের পর্বে সাজিয়ে দেওয়া হয়েছিল মধ্যপ্রদেশ বেড়ানোর তিনটি ছক, এই পর্বে আরও চারটি ছক। ইতিমধ্যেই সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে গাড়োয়াল, কুমায়ুন এবং রাজস্থান বেড়ানোর ছক।
ভ্রমণছক ১ – বুরহানপুর-হনুবন্তিয়া-ওঁকারেশ্বর-মহেশ্বর-মান্ডু-ইনদৌর- উজ্জৈন-ভোপাল-পাঁচমাড়ি
প্রথম দিন – ভ্রমণ শুরু বুরহানপুর থেকে। রাত্রিবাস বুরহানপুর।
দেশের প্রায় সব প্রধান শহরের সঙ্গে বুরহানপুর ট্রেনপথে যুক্ত। হাওড়া, মুম্বই, দিল্লি এবং বেঙ্গালুরু থেকে সরাসরি ট্রেন আসে বুরহানপুর। মুম্বই মেল (ভায়া ইলাহাবাদ) হাওড়া রাত ৯.৫৫-য় ছেড়ে বুরহানপুর পৌঁছোয় পরের দিন রাত ২.০৪-এ। স্টেশনে ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়ুন। অন্য ভাবে হাওড়া-নাগপুর রেলপথের ভুসওয়াল দিয়েও যাওয়া যায়। হাওড়া থেকে ভুসওয়াল যাওয়ার অনেক ট্রেন আছে। সুবিধাজনক ট্রেন মুম্বই মেল ভায়া নাগপুর (হাওড়া ছাড়ে রাত্রি ৯.৫৫, ভুসওয়াল পৌঁছোয় পরের দিন রাত ২.৫৫), মুম্বই দুরন্ত (সোম, মঙ্গল, বুধ ও শুক্র হাওড়া ছাড়ে সকাল ৮.২০-এ, ভুসওয়াল পৌঁছোয় রাত ৩.৪২ মিনিটে), পুনে দুরন্ত (বৃহস্পতি ও শনি হাওড়া ছাড়ে সকাল ৮.২০-এ, ভুসওয়াল পৌঁছোয় রাত ৩.৪২ মিনিটে) ইত্যাদি। গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে দুপুর ১.৪০-এ, ভুসওয়াল পৌঁছোয় পরের দিন ১.১৫ মিনিটে। ভুসওয়াল থেকে বুরহানপুর ট্রেনে ৪০ মিনিট থেকে সোয়া ঘণ্টা সময় লাগে। ভুসওয়াল থেকে বুরহানপুর ৬৬ কিমি, সরাসরি করে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসা যায়।
বুরহানপুরে কী দেখবেন
তাপ্তী নদীর পাড়ে বুরহানপুরে ভারত সম্রাজ্ঞী মমতাজ মহলের শেষ জীবন কেটেছে। ফারুকিদের হাত থেকে মোঘলদের হাতে বুরহানপুর যায় সম্রাট আকবরের আমলে। সম্রাট শাহজাহানের খুব প্রিয় জায়গা ছিল এই বুরহানপুর। মমতাজ মহল এখানেই মারা যান। এখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুর পর শাহজাহান এখানেই তাজমহল গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু তা আগরায় গড়া হয় এবং মমতাজের মরদেহও সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। বুরহানপুরের প্রধান দ্রষ্টব্য তাপ্তী নদীর পাড়ে মিরন আদিল শাহ ফারুকির তৈরি সাততলা শাহি কেল্লা। এই কেল্লার অনেকটাই আজ ধ্বংস হয়ে গেলেও যতটুকু অটুট আছে তাই-বা কম কী! এর অন্যতম আকর্ষণ হামাম বা রয়্যাল বাথ, মমতাজের জন্য তৈরি। ইরানি স্থাপত্যে কাচ ও কারুকার্যময় রংবেরঙের টালি দিয়ে তৈরি হামাম। শাহি কেল্লায় এ ছাড়াও রয়েছে দেওয়ান-ই-খাস, দেওয়ান-ই-আম, আহুখানা (মমতাজের সমাধি) ইত্যাদি।
বুরহানপুরে আরও দ্রষ্টব্য জামি মসজিদ, মিরন আদিল শাহ-এর সমাধি, দরগা-ই–হাকিমি, শাহ নবাব খাঁয়ের মকবরা, তাপ্তীর কয়েকটি ঘাট, ৭ কিমি দূরে খুনি – কূপের পর কূপ, ২০ কিমি দূরে বুরহানপুর-খান্ডোয়া সড়কে পাহাড়চুড়োয় আসিরগড় ফোর্ট ও ১০ শতকের শিবমন্দির।
দ্বিতীয় দিন – সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে চলুন হনুবন্তিয়া, বুরহানপুর থেকে হনুবন্তিয়া ১১০ কিমি, সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। কিংবা ট্রেনে আসুন খান্ডোয়া, সেখান থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন হনুবন্তিয়া, ৫০ কিমি। ভোর ৫.২৫ থেকে ৮.২০ পর্যন্ত গোটা ছয়েক ট্রেন আছে বুরহানপুর থেকে খান্ডোয়া যাওয়ার, সময় লাগে দেড় থেকে দু’ ঘণ্টা। রাত্রিবাস হনুবন্তিয়া।
সাগরসদৃশ ইন্দিরা সাগর ড্যামের ধারে মধ্যপ্রদেশের সাম্প্রতিকতম ট্যুরিস্ট-গন্তব্য প্রকৃতিপ্রেমিকদের স্বর্গ হনুবন্তিয়া দ্বীপ। অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমের নানা ব্যবস্থা। না চাইলে জলবিহার করুন লঞ্চে বা নৌকায়। দ্বীপের গাছগাছালির মাঝে ঘুরে বেড়ান। অলস দিন কাটান।
তৃতীয় দিন – সক্কাল সক্কাল বেরিয়ে পড়ুন, গাড়ি ভাড়া করে চলুন ওঁকারেশ্বর, ৭৫ কিমি ঘণ্টা। রাত্রিবাস ওঁকারেশ্বর।
ওঁকারেশ্বরে কী দেখবেন
নর্মদা ও কাবেরী (দক্ষিণ ভারতের কাবেরী নয়) নদীর মিলনে সৃষ্ট ওঁ-রূপী দ্বীপে ওঁকারেশ্বর মন্দিরতীর্থ। মেনল্যান্ডের সঙ্গে সাসপেনশন ব্রিজে যুক্ত, নৌকাতেও নদী পেরোনো যায়। নর্মদা পেরোতেই গলিপথে খানিকটা যেতেই ওঁকার পর্বতের ঢালে মন্দির হয়েছে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম ওঁকারেশ্বর মহাদেবের। মন্দির গড়েন সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতা, তাই ওঁকারেশ্বরকে ওঁকার মান্ধাতাও বলা হয়। ওঁকারেশ্বরের মূল ভূমিতে অর্থাৎ নর্মদার দক্ষিণ পাড়ে রয়েছে অমরেশ্বর তথা মামলেশ্বরের মন্দির। ব্রিজ পেরিয়ে তিনশোরও বেশি সিঁড়ি উঠে পঞ্চমুখী গণেশ মন্দির। আরও উঠতে অহল্যাবাঈয়ের তৈরি শ্বেতপাথরের নন্দী মন্দির রেখে ওঁকারেশ্বর মন্দিরের প্রবেশদ্বার। ১০১ স্তম্ভের উপর পাঁচতলা মন্দির – প্রথম তলে ওঁকারেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ। দ্বিতীয় তলে মহাকালেশ্বর, ত্রিতলে সিদ্ধনাথ শিব, চতুর্থ তলে গুপ্তেশ্বর এবং পঞ্চম তলে দ্বিজেশ্বর।
ওঁকারনাথের বাঁয়ে ঢালু পথে শংকরাচার্য গুহা তথা শংকরাচার্যের সাধনপীঠ এবং তাঁর গুরুদেব গোবিন্দপাদের সমাধি। গুহামন্দিরে দেবী মহাকালী। পাশেই কোটিতীর্থ ঘাট।
ওঁকার পর্বতকে ঘিরে ১১ কিমি পরিক্রমা প্রথা আছে ওঁকারেশ্বর। পরিক্রমাপথে নানা মন্দির, নানা আশ্রম – আনন্দময়ী মায়ের আশ্রম, রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম ইত্যাদি। দ্বীপভূমির পশ্চিমে প্রায় তিনশো সিঁড়ি উঠে গৌরী-সোমনাথ মন্দির, নর্মদার উত্তর তীরে সিদ্ধকূট, চামুণ্ডেশ্বরী মন্দির, ৬ কিমি দূরে সপ্তমাতৃকার মন্দির, ৯ কিমি দূরে প্রকৃতির মাঝে কাজলরানি গুহা ইত্যাদি।
ঘুরে আসতে পারেন ওঁকারেশ্বর ড্যামের কাছে সৈলিনি দ্বীপ।
চতুর্থ দিন – পরবর্তী গন্তব্য মহেশ্বর, ৬৫ কিমি। ওঁকারেশ্বর-মহেশ্বর সরাসরি বাসের অভাবে বারওয়াহা (ওঁকারেশ্বর থেকে ১৫ কিমি) বাস বদল করে মহেশ্বর যাওয়া যেতে পারে। নইলে সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন। রাত্রিবাস মহেশ্বর।
মহেশ্বরে কী দেখবেন
রামায়ণ-মহাভারতের মহিষ্মতী আজ মহেশ্বর। ইনদৌরের আগে এই মহেশ্বর হোলকারদের রাজধানী। তবে নর্মদাতীরের এই তীর্থভূমির খ্যাতির শুরু রানি অহল্যাবাঈয়ের (১৭২৫-১৭৯৫ খ্রিস্টাব্দ) সময় থেকে। ঘাটের পর ঘাট নর্মদায়। অহল্যা ঘাট থেকে উঠেছে মহেশ্বর ফোর্ট। আকবরের গড়া দুর্গে ১৭৬৩-তে প্রাসাদ তথা রাজওয়াড়া গড়েন অহল্যাবাঈ।
মহেশ্বরে দ্রষ্টব্য দুর্গ তথা প্রাসাদ (রানি অহল্যাবাঈয়ের উপবিষ্ট মূর্তি), অহিলেশ্বর মন্দির, রাজরাজেশ্বর মন্দির, নর্মদা ও মহেশ্বর নদীর সঙ্গমের কাছে সপ্তমাতৃকাদের সাত মন্দির, সঙ্গমের পুবে টিলার টঙে কালেশ্বর, পশ্চিমের টিলায় জলেশ্বর এবং নর্মদার মাঝে ডুবো পাহাড়ে বানেশ্বর মন্দির। এ ছাড়াও অসংখ্য মন্দির। দেখে নিন হোলকার পরিবারের স্মারক মিউজিয়াম, দশেরা তীর্থমণ্ডপ, সতী বুরুজ, ব্রহ্মা মন্দির, যক্ষপতি কুবেরের তপস্যাক্ষেত্র, অহল্যাবাঈয়ের ছত্তীশ ইত্যাদি।
বারাণসীর মতো মহেশ্বরেও নৌকায় চেপে নর্মদার ঘাটদর্শন করতে পারেন। দেখে আসতে পারেন ১০ কিমি দূরে নর্মদার বুকে সহস্রধারা।
পঞ্চম দিন – সক্কালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন মান্ডু, ৩৮ কিমি। বাসের অসুবিধায় গাড়ি ভাড়া করে চলুন। রাত্রিবাস মান্ডু।
ষষ্ঠ দিন – আজও থাকুন মান্ডুতে।
মান্ডুতে কী দেখবেন
মেষপালিকা রূপসী রূপমতী ও সংগীতজ্ঞ রাজা বায়াজিদ খান তথা বাজ বাহাদুরের প্রেমকাহিনি আজও যার বাতাসে ঘুরে বেড়ায় সেই মান্ডু তথা মান্ডবগড় আদতে এক দুর্গনগরী। মালব মালভূমিতে ২০৮০ ফুট উচ্চতায় ৪৫ কিমি দীর্ঘ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। হাত বদল হয়েছে বার বার। শেষ পর্যন্ত মান্ডু রূপ নিয়েছে এক ভূতুড়ে শহরে। যুদ্ধ-প্রেম-সংঘাত-সংস্কৃতির এক অনন্য ইতিহাস বহন করে চলেছে মান্ডু।
ভালো করে দেখতে হলে এক দিনে শেষ করা যায় না মান্ডু দর্শন। মান্ডুর দ্রষ্টব্যগুলো কয়েকটি গ্রুপে ভাগ করা।
(১) আলমগীর, দিল্লি ও ভাঙ্গি দরওয়াজা পেরিয়ে গাড়ি পৌঁছে যায় মান্ডুর বাজার এলাকায়। এখানেই ভিলেজ গ্রুপ তথা সেন্ট্রাল গ্রুপ। বাস স্ট্যান্ডের পাশেই শ্বেতপাথরের আসরফি মহল তথা খিলজিরাজ মামুদ শাহর সমাধি, অনেকটাই বিধস্ত। পাশেই রামমন্দির। আসরফি মহলের বিপরীতে জামি মসজিদ, আফগান শিল্পের নিদর্শন। জামি মসজিদ লাগোয়া পাঠান স্থাপত্যে গড়া হোসাং শাহর সমাধি। শ্বেতমর্মরে হিন্দু-মুসলিম-আফগান শৈলীতে তৈরি ভারতের প্রথম সৌধ।
(২) বাঁ হাতি পথ ধরে হাতি পোল পেরিয়ে শুরু রয়্যাল গ্রুপ। প্রথমেই লোহানি কেভস। পাহাড় কেটে খাড়া সিঁড়ি। আরও এগিয়ে মুঞ্জ তালাও ও কপূর তালাও-এর মাঝে জাহাজ মহল বা শিপ প্যালেস। এর গঠনশৈলী পর্যটকদের অভিভূত করে। চাঁদের আলোয় লেকের জলে এর প্রতিবিম্ব, সত্যিই যেন জাহাজ ভাসে। বিপরীতে রাজদরবারের তাবেলা অর্থাৎ অশ্বশালা তথা তাবেলি মহলে আজ বসেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মিউজিয়াম। সামান্য এগোতেই হিন্দোলা মহল তথা সুইং প্যালেস, প্রজাদের সঙ্গে রাজাদের সাক্ষাৎস্থল। জাফরির কাজ অনন্য করে তুলেছে একে। মুঞ্জ লেকের উত্তরে রূপমতীর মহলটি আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই মহলের প্রবেশ ফটকে চম্পা বাওড়ি তথা স্টেপ ওয়েল। চম্পা বাওড়ির উত্তরে রূপমতীর হামাম। এরই পাশে ইন্দো-মুসলিম শৈলীতে তৈরি মান্ডুর প্রাচীনতম দিলওয়ারা খান মসজিদ তথা মকবরা। বাঁয়ে মোঘল ও রোমান স্থাপত্যের অনুপম নিদর্শন সম্রাট জাহাঙ্গিরের তৈরি জল মহল আজ বিধ্বস্ত। এ ছাড়াও দেখুন মসজিদের পুবে বর্গাকার সৌধের নাহার ঝরোখার (এখান থেকে সুলতান দর্শন দিতেন) ভগ্নাবশেষ, গদা শাহর (সুলতান মহম্মদের দ্বিতীয় মন্ত্রী) নিবাস তথা বিপণি।
(৩) সাগর তালাওকে কেন্দ্র করে সাগর তালাও গ্রুপ। এখানে দেখে নিন মালিক মুঘিতের মসজিদ, তার বিপরীতে ক্যারাভান সরাই, আর এই দুই ভবনের মাঝখান দিয়ে যে রাস্তা রয়েছে তা আপনাদের পৌঁছে দেবে এক অদ্ভুত নামের ভবনে – দাই কি ছোটি বহেন কা মহল। আদতে এটি একটি সমাধি, কাছেই দাই কা মহল। সাগর তালাওয়ের পাড়ে ইকো পয়েন্ট। আরও যেতে রয়্যাল এনক্লেভের কাছে নিরালা নিভৃতে পাহাড়ের বুকে সানসেট পয়েন্ট।
(৪) বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫ কিমি দক্ষিণে আফগান স্থাপত্যে বাজ বাহাদুরের গড়া রূপমতী প্যাভিলিয়ন অর্থাৎ প্রমোদ নিকেতন। লাগোয়া পাহাড় ঢালে রেওয়া কুণ্ড। বাজ বাহাদুর সংস্কার করেন রূপমতীর জন্য। কুণ্ডের পাড়ে বাজ বাহাদুরের প্রাসাদ। এর সংগীত মহলটির অভিনবত্ব আছে। রূপমতীর ও বাজ বাহাদুরের গান ও তানের মজলিশ বসত এই মহলে। এই হল রেওয়া কুণ্ড গ্রুপ।
(৫) মূল সড়কে ফিরে আসুন। চলুন মান্ডু বাজারের দিকে। সাগর তালাওকে বাঁ দিকে রেখে মালিক মুঘতির মসজিদ পেরিয়ে ডান দিকে ঘুরুন। খেত আর গ্রামের মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবেন হাতি মহলে। ফিরে আসুন মূল সড়কে। ডান দিকে দরিয়া খানের সমাধিকে রেখে মূল সড়ক থেকে বাঁ দিকের রাস্তা ধরে প্রথমে পৌঁছে যান চোর কোট (সম্ভবত জেলখানা) এবং রাস্তার শেষে ৬১ ধাপ সিঁড়ি নেমে নীলকণ্ঠ প্রাসাদ, মারাঠা দখলের পরে যা হয়েছে নীলকণ্ঠ শিবের মন্দির।
সপ্তম দিন – পথে বাগ গুহা ও ধার দেখে এ দিনের গন্তব্য ইনদৌর। রাত্রিবাস ইনদৌর। গাড়ি ভাড়া করে খুব ভোরে বেরিয়ে পড়ুন, প্রথমে চলুন বাগ গুহা ১১০ কিমি। বাগ দর্শন করে রওনা হয়ে যান ধার হয়ে ইনদৌরের উদ্দেশে, দূরত্ব ১৫৫ কিমি।
খুব ভোরে গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন, ৯টার মধ্যে পৌঁছে যান বাগে, ১১০ কিমি। ঘণ্টা তিনেকে বাগ দেখা সাঙ্গ করে চলুন ধার, ৯৭ কিমি। পথে দুপুরের খাওয়া সেরে বিকেল ৩টের মধ্যে পৌঁছে যান ধার। সন্ধে পর্যন্ত ধার-এ থেকে চলুন ইনদৌর, ৬৩ কিমি।
এ দিনের দর্শন
(১) বাগ গুহা – ভারতের দ্বিতীয় অজন্তা বাগ গুহা। বাগরি নদীর ধারে ৮০০ ফুট উঁচু বিন্ধ্য পর্বতে লাল বেলেপাথরের বৌদ্ধ গুহা, গুপ্ত আমলে আবিষ্কৃত। নদী পেরিয়ে চলুন গুহা দেখতে। অতীতের ৯টি গুহার মধ্যে ৪টি আজও পর্যটক আকর্ষণ করে চলেছে। এর মধ্যে ৪ নং গুহার অলংকরণ দেখার মতো। ম্যুরালে নানান আখ্যান রূপ পেয়েছে। ক্রন্দনরতা শোকাভিভূতা নারীর চিত্রটি অনবদ্য। গুহার বাইরে বিরাটাকার যম মূর্তিটিও অনবদ্য। নদীর এ পারে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি মিউজয়ামও রয়েছে।
(২) ধার – ১০-১১ শতকের পারমার রাজাদের রাজধানী ছিল ধার। এই বংশের শ্রেষ্ঠ নরপতি রাজা ভোজ। তাঁর আমলেই ধারের রমরমা। দেখে নিন রাজা ভোজের ‘ভোজশালা’ (সরস্বতী মন্দির ও মসজিদ; একই জায়গায় মঙ্গলবার হিন্দুরা পূজা দেয়, শুক্রবার মুসলিমরা নমাজ পড়ে), ১ কিমি দক্ষিণে রাজা ভোজের তৈরি বিজয় মন্দিরের জায়গায় ১৪০৫-এ দিলওয়ারা খানের তৈরি লাট মসজিদ, পাহাড়শিরে হিন্দু-আফগান-মোঘল গড়া দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, দুর্গের এক দিকে শিশমহল, খর্বুজা মহল, মুসলিম ফকির কামাল মৌলার সমাধি, ৩ কিমি দূরে কবি কালিদাসের সাধনক্ষেত্র কালিকা মন্দির।
অষ্টম দিন – সারা দিন ঘুরে নিন ইনদৌর। বিকেলের পরে চলুন উজ্জৈন (উজ্জয়িনী), সড়ক পথে ৫৫ কিমি, অনেক বাস, পৌঁছে যায় দেড় ঘণ্টায়। প্রচুর ট্রেনও আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য নয়াদিল্লি এক্সপ্রেস (বিকেল ৪.৩৫), নর্মদা এক্সপ্রেস (বিকেল ৫.১৫), বীরভূমি এক্সপ্রেস (বিকেল ৫.৪০), লিঙ্ক এক্সপ্রেস (সন্ধে ৬টা) ইত্যাদি। ট্রেন বিশেষে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা থেকে দু’ ঘণ্টা। আর ইনদৌর থেকে উজ্জৈন গাড়ি ভাড়া করে তো আসতেই পারেন। রাত্রিবাস উজ্জৈনে।
ইনদৌরে কী দেখবেন
শহরের প্রাণকেন্দ্রে কাজুরি বাজারে হোলকারদের ৩৫০ বছরের পুরোনো রাজওয়াড়া অর্থাৎ প্রাসাদ ও জলঘড়ি, রাজবাড়া থেকে ১০ মিনিটের পথে জওহর রোডে কাচমন্দির, কাছেই বড়ো গণপতি মন্দির, শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে লালবাগ প্যালেস তথা এখনকার নেহরু সেন্টার। তা ছাড়া দেখে নিতে পারেন গীতা ভবন, সেন্ট্রাল মিউজয়াম, হোলকার রাজাদের ছত্তীশ ইত্যাদি।
নবম দিন – আজও থাকুন উজ্জৈনে।
উজ্জৈনে কী দেখবেন
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, সম্রাট অশোক, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, মহাকবি কালিদাসের স্মৃতিধন্য অবন্তিকা কালে কালে হল উজ্জৈন (জয়ের গৌরব)। শিপ্রা নদীর পাড়ে ১৬১৪ ফুট উচ্চতায় মালব মালভূমিতে অবস্থিত উজ্জৈন অন্যতম হিন্দুতীর্থ। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মহাকালেশ্বর এই উজ্জৈনে, সপ্তপুরীর অন্যতম উজ্জৈন, অন্যতম সতীপীঠ (সতীর কনুই পড়ে) এই উজ্জৈন, অমৃতকুম্ভ থেকে অমৃতও পড়ে এই উজ্জৈনে। তাই শিপ্রা নদী তটে বসে বারো বছর অন্তর পূর্ণকুম্ভ মেলা। অধ্যাত্ম, শিক্ষা, সংস্কৃতিতে মহীয়ান এই উজ্জৈনে শ’ চারেক বৌদ্ধবিহার ছিল এক সময়। কালিদাসের ‘মেঘদূতম’-এ বর্ণনা আছে এই নগরীর। বহুবার হানাদারি হয়েছে এই উজ্জৈনে, হাত বদল হয়েছে, শেষ পর্যন্ত ১৭৫০-এ সিন্ধিয়াদের দখলে আসার পর রাজধানী উজ্জৈন থেকে সরে যায় গ্বালিয়রে। রমরমা লোপ পায় উজ্জৈনের।
উজ্জৈনের মূল আকর্ষণ মহাকালেশ্বর মন্দির। বর্তমান মন্দিরটি ১৮ শতকে সিন্ধিয়াদের হাতে তৈরি হলেও ২৪ খাম্বা দরওয়াজাটি ১১ শতকের। মূল মন্দিরে মহাকালেশ্বর শিব আর ওপরে ওঁকারেশ্বর শিব। আরও আছেন পার্বতী, গণেশ, কার্তিক। আছেন নন্দীও। আরও অনেক দেবতা মন্দির চত্বরে। সন্ধ্যারতি দেখার মতো। অদূরে হরসিদ্ধি মার্গে পাহাড় ঢালে বড়া গণেশ মন্দির। স্বল্প যেতে বিক্রমাদিত্যের আরাধ্যা দেবী অন্নপূর্ণা বা হরসিদ্ধি মাতার মন্দির, মহাকালেশ্বর মন্দির থেকে শ’ তিনেক মিটার। সিন্ধিয়া প্রাসাদের কাছে আদি মহাকালের ধ্বংসাবশেষ। কাছেই শ্রীরাম মন্দির, নিচু দিয়ে বয়ে চলেছে শিপ্রা। শিপ্রা-তটে বিক্রমাদিত্যের বেতাল-সিদ্ধ বটবৃক্ষ – সিদ্ধবট। হরসিদ্ধি মাতার মন্দিরের কাছেই শিপ্রার রামঘাট। ঘাট থেকে ১ কিমি দূরে শ্রী দ্বারকাধীশ অর্থাৎ গোপাল মন্দির। মহারাজ জয় সিংহের গড়া ভারতের পাঁচটি যন্তর-মন্তরের একটি উজ্জৈনে, শিপ্রা নদীর পাড়ে। এই যন্তর-মন্তরে নতুন করে তৈরি হয়েছে প্ল্যানেটেরিয়াম।
রেলস্টেশন থেকে ৮ কিমি দূরে শিপ্রার অপর পাড়ে চিন্তামণি গণেশ মন্দির। শহরের ৭ কিমি উত্তরে ভর্তৃহরি গুহা, বিক্রমাদিত্যের বৈমাত্রেয় ভাই ভর্তৃহরি ১২ বছরের তপস্যায় বসেছিলেন এই গুহায়। স্বল্প দূরে মেঠোপথে ঋণমুক্তেশ্বর মন্দির। ভর্তৃহরি গুহার কাছেই কালিদাসের বরদাত্রী বিশালাকার কালীও দেখে নেওয়া যায় গড়কালিকা মন্দিরে। কাছেই নাথ সম্প্রদায়ের গুরু মৎস্যেন্দ্রনাথের স্মারক পীর মৎস্যেন্দ্রনাথ। গড়কালিকা থেকে ২ কিমি দূরে কালভৈরব মন্দির। কথিত আছে, কালভৈরব অদর্শনে উজ্জৈন ভ্রমণ অসম্পূর্ণ থাকে। শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে কালিদহ প্যালেস তথা উজ্জৈনের সূর্যমন্দির। নালা কেটে শিপ্রা থেকে জল এনে রূপ তার দ্বীপাকার। রয়েছে নানা কুণ্ড। সুন্দর পরিবেশ।
দেখে নিন ৮৪ ধাপ সিঁড়ি উঠে মঙ্গলনাথ (শিব) মন্দির। মন্দির থেকে শিপ্রা নদীর মনোরম দৃশ্য। শহর থেকে ৩.২ কিমি দূরে সন্দীপনী আশ্রম। শ্রীকৃষ্ণ দাদা বলরাম আর বন্ধু সুদামাকে নিয়ে নিয়মিত আসতেন কুলগুরু সন্দীপনীর কাছে। এ ছাড়াও অসংখ্য মন্দির রয়েছে এই উজ্জৈনে।
দশম দিন – সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন ভোপাল, দূরত্ব ১৮৯ কিমি। প্রচুর বাস আছে, সময় লাগে বাস বিশেষে সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে পাঁচ ঘণ্টা। গাড়ি ভাড়া করে তো আসতেই পারেন ভোপাল। তা ছাড়া ট্রেনও আছে। জবলপুর-ভোপাল এক্সপ্রেস উজ্জৈন থেকে সকাল ৭.৪০ মিনিটে ছেড়ে ভোপাল পৌঁছোয় সকাল ১১.২৫ মিনিটে। রাত্রিবাস ভোপাল।
এ দিন ভোপাল শহর ঘুরে নিন। দেখে নিন –
শহরের মূল আকর্ষণ ৬ কিমি ব্যাপ্ত গ্রেট লেক তথা ভোজতাল (পারমাররাজ ভোজের তৈরি) ও লোয়ার লেক। এ ছাড়া রয়েছে গ্রেট লেকের পাড়ে ৪৪৫ হেক্টর এলাকা জুড়ে বন বিহার সাফারি পার্ক, লোয়ার লেকের দক্ষিণে আরেরা পাহাড়ে বিড়লা মিউজিয়াম ও অদ্ভুত স্থাপত্যের বিড়লা মন্দির (লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির), পুরোনো শহরে মতিয়া তালাওয়ের পাড়ে এশিয়ার বৃহত্তম তাজ-উল-মসজিদ, গ্রেট লেকের পাড়ে ১৮২০-তে গোহর বেগমের তৈরি গোহর মহল, কাছেই ১৮০ বছরের পুরোনো শওকত মহল তথা প্রাসাদ ও সদর মঞ্জিল, চকের দক্ষিণ-পশ্চিমে মোতি মসজিদ। হাতে সময় থাকলে দেখে নিতে পারেন রাষ্ট্রীয় মানব সংগ্রহালয় তথা ট্রাইবাল মিউজিয়াম। শ্যামলা পাহাড়ের মাঝখানে লোয়ার লেকের দক্ষিণে রবীন্দ্র ভবন এবং তার পিছনে স্টেট মিউজিয়াম।
একাদশ দিন – আজও থাকুন ভোপালে। একটা গাড়ি ভাড়া করে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন ভোজপুর-ভীমবেটকা।
প্রথমে চলুন ভোজপুর, ২৮ কিমি, ৪০-৪৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যান। রাজা ভোজের আর এক কীর্তির সাক্ষী ছিল ভোজপুর, ১১ শতকে গড়া এশিয়ার বৃহত্তম লেকটি ছিল এখানে। মাটি আর পাথর দিয়ে ২টি বাঁধ গড়তে বেতোয়ার জলে তৈরি হয় এই লেক। মান্ডুর সুলতান দ্বিতীয় হোসাং শাহের আক্রমণে বাঁধ কেটে ধ্বংস করা হয় বাঁধ দু’টি। এখন সেই বাঁধের ধ্বংসাবশেষ। অতীতের লেকের পাড়ে ‘পুবের সোমনাথ’ বলে খ্যাত ভোজেশ্বর শিবমন্দির। মন্দিরে ভারতের বৃহত্তম শিবলিঙ্গ, উচ্চতায় ২.৩৫ মিটার, ব্যাস ৬ মিটার, এক খণ্ড পাথর কুঁদে তৈরি। ২১ ফুট লম্বা প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে শিবলিঙ্গ, শিবের মাথায় জল ঢালতে লোহার সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। অদূরে ভোজেশ্বরের সমসাময়িক অসম্পূর্ণ মনোলিথিক জৈন মন্দির। মহাবীর ও অন্যান্য তীর্থঙ্করের মূর্তি রয়েছে।
ভোজপুরে ঘণ্টা খানেক থেকে চলুন ভীমবেটকা, ৪৪ কিমি, ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। ২২০০ ফুট উচ্চতায় পাথর কেটে তৈরি তিন ধাপে ৭০০-রও বেশি গুহায় মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। উপরের ধাপের গুহাগুলি যেমন আকারে বড়ো, তেমনই সুন্দর ছবিতে অলংকৃত। প্রতিটি গুহাই লাল-সাদা বা সবুজ-হলুদ রঙের ছবিতে অলংকৃত – গউর, গন্ডার, ভল্লুক, বাঘ, বাইসন, হরিণ, টিকটিকি, সিংহ, কুমির এবং ঘোড়া ও হাতিতে সওয়ার ছাড়াও পশু শিকারের দৃশ্য, নৃত্যকলা তথা তদানীন্তন সমাজজীবন রূপ পেয়েছে ভীমবেটকার গুহাচিত্রে। বিশেষ করে B-52, F-15, III C-29, III C-30, C-5A, C-6, C-9, C-12, C-13, C-17, অডিটোরিয়াম গুহাগুলির আকর্ষণ অনস্বীকার্য। C-13-র মিথোলজিক্যাল গুহাচিত্রে বৈচিত্র্য আছে।
দুর্গামন্দিরও রয়েছে ভীমবেটকার পাহাড় ঢালে। আর আছে বারোমেসে ঝরনা। ভীমবেটকা দেখে ফিরুন ভোপালে, ৪৪ কিমি।
দ্বাদশ দিন – চলুন সাঁচি। ভোপাল জংশন স্টেশন থেকে সকাল ৮টার বিলাসপুর এক্সপ্রেস ধরে ৮.৪২ মিনিটে পৌঁছে যান সাঁচি। রাত্রিবাস সাঁচি।
ভালো হয় একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লে। প্রথমে চলুন রায়সেন, ২৩ কিমি। রায়সেন বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিমি দূরে দরগার কাছে আধ ঘণ্টায় পাহাড়চুড়োয় দেখে নিন ১৩ শতকের বিধ্বস্ত দুর্গ। মন্দির, ৩টি প্রাসাদ, কামান, ১৫টি জলাধার আর ৪০টি কুয়া আছে রায়সেন দুর্গে। ফিরে চলুন সাঁচি। কলিঙ্গ যুদ্ধে রক্তক্ষয়ে বিচলিত সম্রাট অশোক এই সাঁচিতেই সন্ন্যাসী উপগুপ্তের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন। সাঁচির প্রধান আকর্ষণ বৃহৎ স্তূপ তথা স্তূপ নম্বর ১। এই স্তূপের নির্মাণ সম্রাট অশোকের হাতে শুরু হয়ে শেষ হয় তাঁর উত্তর পুরুষের হাতে। ভারতে পাথরের প্রাচীনতম স্থাপত্য এই স্তূপ। স্তূপের চারটি তোরণ সাতবাহন রাজাদের তৈরি। আরও কয়েকটি স্তূপ রয়েছে সাঁচিতে। এর মধ্যে বৈচিত্র্যময় স্তূপ নম্বর ৩। বৃহৎ স্তূপের পশ্চিম পাহাড় ঢালে আপাতদৃষ্টে সাধারণ স্তূপ নম্বর ২-এও বৈচিত্র্য আছে। এ ছাড়াও সাঁচিতে রয়েছে ১৯৫২-য় গড়া নতুন বিহার, এর বিপরীতে বোধিবৃক্ষ। বৃহৎ স্তূপের ডাইনে ৪ শতকে গুপ্ত মন্দির। অবশ্যই দেখবেন প্রত্নতত্ত্ব মিউজিয়াম।
সময় পেলে সাঁচিকে কেন্দ্র করে সাড়ে ৭ কিমি ব্যাস এলাকা জুড়ে সাঁচি বৌদ্ধ সার্কিট অর্থাৎ সোনারি-মুরানখুর্দ-আন্ধের-শতধারা দেখে নিন। বৌদ্ধ সম্পদ সম্পদ বাঁচানোর কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ইউনেস্কো।
ত্রয়োদশ দিন – আজ সারা দিন সাঁচিতে থাকুন, বিদিশা-উদয়গিরি-বেসনগর ঘুরুন। তার পর বিদিশা থেকে রাত ১২.১০-এর দিল্লি হজরত নিজামুদ্দিন-জবলপুর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস ধরে ভোর ৪.২৩-এ পৌঁছে যান পিপারিয়া। পিপারিয়া থেকে পাঁচমাড়ি ৫৪ কিমি পথ, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস। গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন।
বিদিশা-উদয়গিরি-বেসনগরে কী দেখবেন –
সাঁচি থেকে ১৩ কিমি দূরে বেতোয়া (কালিদাসের বেত্রবতী) ও বেস (বিদিশা) নদীর সঙ্গমে বিদিশা। রামায়ণ-মহাভারত থেকে শুরু করে পুরাণ, ইতিহাস থেকে কালিদাসের কাব্যে এবং বাংলার কবি জীবনানন্দের কবিতায় বিদিশা স্মরণীয় হয়ে আছে। বিদিশাকে ঘিরে ২৭ কিমি জুড়ে সম্রাট অশোকের গড়া ৬৫টি স্তূপ ও পাথরের স্তম্ভ দেখে নেওয়া যায়। রেল স্টেশনের সামনে খ্রিস্টপূর্ব ২ শতকের বিষ্ণু মন্দির, সার্কিট হাউসের বিপরীতে মিউজিয়াম।
বিদিশা মিউজিয়াম থেকে ১০ কিমি পশ্চিমে উদয়গিরিতে দুর্গ ও ৪-৫ শতকের ২০টি গুহা। তদানীন্তন সমাজজীবন মূর্ত হয়েছে। ১ ও ১৮ নম্বর গুহা দুই জৈন সাধকের, বাকি ১৮টি গুহা হিন্দুধর্মী। ৩ নম্বর গুহার চতুর্ভুজ নারায়ণ, ৪ নম্বরে শিবলিঙ্গ, ৫ নম্বরের বাইরে বরাহ অবতাররূপী বিষ্ণু। ৭ নম্বরে মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের উত্তর ভারত জয়ের আখ্যান মূর্ত হয়েছে। আকারে বৃহত্তম ৯ নম্বর গুহা। ১৩ নম্বরে অনন্তশয়নে ১৮ ফুটের বিষ্ণু। ২০ নম্বর গুহার কার্ভিং খুব সুন্দর।
উদয়গিরি থেকে ফেরার পথে ডান দিকে ৫ কিমি যেতে বেস ও বেতোয়া নদীর পাড়ে মৌর্য ও সুঙ্গকালের রাজধানী বেসনগর। এখানে রয়েছে মনোলিথিক খাম্বা বাবা বা হেলিওডোরাস পিলার। অশোকস্তম্ভের মতো দেখতে হলেও এটি গড়ুর স্তম্ভ।
বিদিশায় আরও দেখে নিন গম্বুজ কা মকবরা, বিজামণ্ডল মসজিদ তথা বিজয়া মন্দির, লোহাঙ্গি রক ইত্যাদি।
চতুর্দশ ও পঞ্চদশ দিন – ভালো করে ঘুরুন মধ্যপ্রদেশের হিল স্টেশন পাঁচমাড়িতে। রাত্রিবাস পাঁচমাড়িতে।
পাঁচমাড়িতে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১, পুজোয় চলুন: গন্তব্য মধ্যপ্রদেশ ১)
ষোড়শ দিন – ঘরে ফেরা। চলে আসুন পিপারিয়া, দূরত্ব ৫৩ কিমি। ধরুন মুম্বই-হাওড়া মেল। হাওড়া মেল সকাল পৌনে ১০টায় পিপারিয়া ছেড়ে পরের দিন বেলা ১২টায় হাওড়া। অন্য শহরে ফেরার ট্রেনও পেয়ে যাবেন।
ভ্রমণছক ২ – গ্বালিওর-ভোপাল–উজ্জৈন-ইনদৌর-মান্ডু-মহেশ্বর-ওঁকারেশ্বর-খান্ডোয়া
প্রথম দিন – আজ পৌঁছোন গ্বালিয়র। রাত্রিবাস গ্বালিয়র।
হাওড়া থেকে সরাসরি গ্বালিয়র আসার ট্রেন চম্বল এক্সপ্রেস সপ্তাহে তিন দিন – মঙ্গল, বুধ ও রবি হাওড়া থেকে ছাড়ে বিকেল ৫.৪৫-এ, গ্বালিয়র পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৫.১৫-য়। সে ক্ষেত্রে আগরা দিয়ে যাওয়ার সুবিধাই বেশি।
কলকাতা থেকে আগরা যাওয়ার ভালো ট্রেন দুটো – (১) জোধপুর এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে রাত ১১.৩৫-এ ছেড়ে আগরা ফোর্ট পৌঁছোয় পরের দিন রাত পৌনে ৮টায়; (২) অজমের এক্সপ্রেস শিয়ালদহ থেকে রাত ১০.৫৫-য় ছেড়ে আগরা ফোর্ট পৌঁছোয় পরের দিন সন্ধে ৬.৩৫ মিনিটে। এ ছাড়া উদ্যান আভা তুফান এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে সকাল ৯.৩৫-এ ছেড়ে আগরা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছোয় পরের দিন দুপুর ২.৫৫-য়। এ ছাড়া বেশ কিছু সাপ্তাহিক ট্রেন আছে। এগুলির বেশির ভাগই সন্ধে থেকে রাতের দিকে আগরা পৌঁছোয়।
দিল্লি থেকে ট্রেন বিশেষে ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টার যাত্রা আগরা। সক্কালেই দিল্লি থেকে আগরা পৌঁছোনোর বেশ কিছু ট্রেন আছে। দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গেই আগরা ট্রেনপথে যুক্ত।
আগরা থেকে গ্বালিয়র যাওয়ার ট্রেন সারা দিন। সব চেয়ে ভালো হয় রাতের দিকে আগরা পৌঁছোলে সেই রাতেই ট্রেন ধরে ভোর ভোর গ্বালিয়র পৌঁছে যাওয়া। আগরা থেকে রাত্রি ১২.২৫, ১.০২, ২.০০ ও ২.২২৫-এর এক্সপ্রেস ট্রেন ধরলে রাত ৩টে থেকে ভোর সোয়া ৪টের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় গ্বালিয়র। তা না হলে রাতটা আগরায় কাটিয়ে সকাল ৮.০২-এর ভোপাল শতাব্দী ধরে সকাল ৯.২৮-এ গ্বালিয়র পৌঁছোন।
আগরা থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করেও গ্বালিয়র যাওয়া যায়, ১১৮ কিমি।
দ্বিতীয় দিন – আজও থাকুন গ্বালিয়রে।
গ্বালিয়রে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ৩, পুজোয় চলুন: গন্তব্য মধ্যপ্রদেশ ১)
তৃতীয় দিন – গ্বালিয়র থেকে চলুন সাঁচি। শেষ রাত ৩টেয় অমৃতসর-মুম্বই এক্সপ্রেস ধরে সকাল ১০.২০-তে পৌঁছে যান সাঁচি। রাত্রিবাস সাঁচি।
সাঁচিতে কী দেখবেন
কলিঙ্গ যুদ্ধে রক্তক্ষয়ে বিচলিত সম্রাট অশোক এই সাঁচিতেই সন্ন্যাসী উপগুপ্তের কাছে বৌদ্ধধর্মে দীক্ষা নেন। সাঁচির প্রধান আকর্ষণ বৃহৎ স্তূপ তথা স্তূপ নম্বর ১। এই স্তূপের নির্মাণ সম্রাট অশোকের হাতে শুরু হয়ে শেষ হয় তাঁর উত্তর পুরুষের হাতে। ভারতে পাথরের প্রাচীনতম স্থাপত্য এই স্তূপ। স্তূপের চারটি তোরণ সাতবাহন রাজাদের তৈরি। আরও কয়েকটি স্তূপ রয়েছে সাঁচিতে। এর মধ্যে বৈচিত্র্যময় স্তূপ নম্বর ৩। বৃহৎ স্তূপের পশ্চিম পাহাড় ঢালে আপাতদৃষ্টে সাধারণ স্তূপ নম্বর ২-এও বৈচিত্র্য আছে। এ ছাড়াও সাঁচিতে রয়েছে ১৯৫২-য় গড়া নতুন বিহার, এর বিপরীতে বোধিবৃক্ষ। বৃহৎ স্তূপের ডাইনে ৪ শতকে গুপ্ত মন্দির। অবশ্যই দেখবেন প্রত্নতত্ত্ব মিউজিয়াম।
সময় পেলে সাঁচিকে কেন্দ্র করে সাড়ে ৭ কিমি ব্যাস এলাকা জুড়ে সাঁচি বৌদ্ধ সার্কিট অর্থাৎ সোনারি-মুরানখুর্দ-আন্ধের-শতধারা দেখে নিন। বৌদ্ধ সম্পদ সম্পদ বাঁচানোর কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে ইউনেস্কো।
চতুর্থ দিন – আজও ঘুরুন বিদিশা-উদয়গিরি-বেসনগর। তার পর বিদিশা থেকে বিকেল ৫.৫২-এর ছত্তীসগঢ় এক্সপ্রেস ধরে ভোপাল পৌঁছে যান সন্ধে ৬.৫০-এ। সাঁচি থেকে গাড়ি ভাড়া করেও ভোপাল আসতে পারেন, ৪৮ কিমি। রায়সেন ঘুরে এলে দূরত্ব পড়বে ৬৫ কিমি। সে ক্ষেত্রে রায়সেনে দেখে নিন ১৩ শতকের বিধ্বস্ত দুর্গ। রাত্রিবাস ভোপাল।
বিদিশা-উদয়গিরি-বেসনগরে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১)
পঞ্চম দিন – আজও থাকুন ভোপালে, শহরটা ঘুরে নিন।
ভোপালে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১)
ষষ্ঠ দিন – আজও থাকুন ভোপালে। একটা গাড়ি ভাড়া করে খুব সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন ভোজপুর-ভীমবেটকা।
ভোজপুর-ভীমবেটকায় কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১)
সপ্তম দিন – চলুন উজ্জৈন। ভোপাল থেকে ভোর ৪.২৫-এর নর্মদা এক্সপ্রেস ধরুন। উজ্জৈন পৌঁছে যান সকাল ৮.১০-এ। পরের ট্রেন ভোপাল-উজ্জৈন প্যাসেঞ্জার, সকাল ৬,৪০-এ ভোপাল ছেড়ে উজ্জৈন পৌঁছোয় বেলা ১১.০৫-এ। আরও ট্রেন আছে। রাত্রিবাস উজ্জৈন।
উজ্জৈনে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১, নবম দিন)
অষ্টম দিন – চলুন ইনদৌর, সড়কপথে ৫৫ কিমি। উজ্জৈন-ইনদৌর প্রচুর বাস চলে। গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন। অনেক ট্রেনও আছে। রাত্রিবাস ইনদৌর।
ইনদৌরে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১, অষ্টম দিন)
নবম দিন – চলুন মান্ডু। সকাল সকাল একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমে চলুন ধার, ৬৩ কিমি। ধার দেখে চলুন বাগ গুহা, ৯৭ কিমি। বাগ গুহা থেকে চলুন মান্ডু, দূরত্ব ১১০ কিমি। রাত্রিবাস মান্ডু।
কী দেখবেন ধার ও বাগ গুহায় – (দেখুন ভ্রমণছক ১, সপ্তম দিন)
দশম ও একাদশ দিন – থাকুন মান্ডুতে। ভালো করে স্বাদ নিন মান্ডুর ইতিহাসের।
মান্ডুতে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১)
দ্বাদশ দিন – বেরিয়ে পড়ুন সকাল সকাল। বাসের অসুবিধায় গাড়ি ভাড়া করে চলুন মহেশ্বর, ৩৮ কিমি।
মহেশ্বরে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১, চতুর্থ দিন)
ত্রয়োদশ দিন – খুব ভোরে বেরিয়ে পড়ুন, চলুন মহেশ্বর, ৬৫ কিমি। মহেশ্বর-ওঁকারেশ্বর সরাসরি বাসের অভাবে বারওয়াহা (মহেশ্বর থেকে ৫০ কিমি) বাস বদল করে ওঁকারেশ্বর যাওয়া যেতে পারে। রাত্রিবাস ওঁকারেশ্বর।
ওঁকারেশ্বরে কী দেখবেন – (দেখুন ভ্রমণছক ১, তৃতীয় দিন)
চতুর্দশ দিন – গাড়ি বা বাসে চলুন খান্ডোয়া, ৭০ কিমি। রাত্রিবাস কিশোরকুমার- অশোককুমার স্মৃতিধন্য খান্ডোয়ায়। এখানে দেখে নিন কিশোরকুমারদের বাসভবন গৌরীকুঞ্জ, কিশোরকুমার স্মারক, ১৮৮৪-তে ব্রিটিশদের তৈরি ঘণ্টাঘর, নাগচুন ড্যাম, তুলজা ভবানীমাতা মন্দির, নব চণ্ডী দেবী ধাম।
পঞ্চদশ দিন – ঘরপানে রওনা। কলকাতা ফেরার ট্রেন কলকাতা মেল (ভায়া ইলাহাবাদ) খান্ডোয়া ছাড়ে সকাল ৬.৫৫ মিনিটে। হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন বেলা ১২টায়। দেশের অন্যান্য জায়গায় ফেরার ট্রেনও মেলে খান্ডোয়া থেকে।
ভ্রমণছক ৩ – রেওয়া–মাইহার-বান্ধবগড়–অমরকণ্টক-কানহা-মান্ডলা-জবলপুর
প্রথম দিন – সাতনা হয়ে পৌঁছে যান রেওয়া।
হাওড়া থেকে মুম্বই মেল (ভায়া ইলাহাবাদ) ছাড়ে রাত ৯.৫৫ মিনিটে। সাতনা পৌঁছোয় পরের দিন দুপুর ২.৫০ মিনিটে। শিপ্রা এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়ে সোম, বৃহস্পতি ও শনি, বিকেল ৫.৪৫ মিনিটে। সাতনা পৌঁছোয় পরের দিন সকাল সোয়া ১১টায়। দিল্লি ও মুম্বই থেকে বেশ কিছু ট্রেন আছে যাতে এলে সকাল বা বেলার দিকে সাতনা পৌঁছোনো যায়। সাতনা থেকে বাসে বা গাড়িতে চলুন রেওয়া, ৬০ কিমি।
দ্বিতীয় দিন – থাকুন রেওয়ায়।
রেওয়ায় কী দেখবেন
রেওয়া ফোর্ট, রানি তলাও, গোবিন্দগড় লেক, গোবিন্দগড় প্যালেস ও গোবিন্দগড় ফোর্ট (রেওয়া শহর থেকে ১৩ কিমি), বিওঙ্কট ভবন, বাঘেলা মিউজিয়াম, মুকুন্দপুর চিড়িয়াখানা ও সাদা বাঘের সাফারি (শহর থেকে ১৭ কিমি), কেওন্টি ফলস্ (শহর থেকে ৪০ কিমি), চাচাই ফলস্ (শহর থেকে ৪৬ কিমি) ইত্যাদি।
তৃতীয় দিন – রেওয়া থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে চলুন মৈহর, ৭২ কিমি। রাত্রিবাস মৈহর।
মৈহরে কী দেখবেন
কিংবদন্তি সরোদশিল্পী মৈহর ঘরানার স্রষ্টা উস্তাদ আলাউদ্দীন খাঁয়ের বাসভবন, পাহাড়ের মাথায় মা সারদা দেবী মন্দির (পাহাড়তলি থেকে শীর্ষদেশে মন্দিরে যাওয়ার সব চেয়ে ভালো উপায় রোপওয়ে, হাজারেরও বেশি সিঁড়ি ভেঙেও মন্দিরে যাওয়া যায়), এখানেই আছেন আলাউদ্দীন খাঁয়ের আরাধ্যা মা কালী, গোলামঠ মন্দির, আলা দেও মন্দির ইত্যাদি।
চতুর্থ দিন – গাড়ি ভাড়া করে মৈহর থেকে চলুন বান্ধবগড়, ৯৫ কিমি। বিকেলে একটা সাফারি করুন। রাত্রিবাস বান্ধবগড়।
পঞ্চম দিন – আজও থাকুন বান্ধবগড়ে। সকালে আর একটা সাফারি করুন। দুপুরে লাঞ্চের পর ঘুরে আসুন বান্ধবগড় ফোর্ট।
ষষ্ঠ দিন – সকালেই বেরিয়ে পড়ুন। বান্ধবগড় থেকে চলুন অমরকণ্টক। প্রথমে বান্ধবগড় থেকে বাসে বা গাড়িতে আসুন উমারিয়া (৩৫ কিমি), উমারিয়া থেকে সকাল ৮.১০-এর বারৌনি-গোন্ডিয়া এক্সপ্রেস পেন্ড্রা রোড পৌঁছে দেবে সকাল পৌনে ১১টায়। উমারিয়া থেকে পরের ট্রেন সাড়ে ১০টার নর্মদা এক্সপ্রেস পেন্ড্রা রোড পৌঁছে দেবে দুপুর ২.০৫ মিনিটে। পেন্ড্রা রোড থেকে অমরকণ্টক ৩০ কিমি, বাসে বা গাড়িতে চলুন। অথবা পুরোটা পথ গাড়ি করে আসতে পারেন, দূরত্ব ১৮৭ কিমি। রাত্রিবাস অমরকণ্টক।
সপ্তম দিন – আজ থাকুন অমরকণ্টকে।
অমরকণ্টকে কী দেখবেন
বিন্ধ্য পর্বতের সর্বোচ্চ শিখর প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফুট উঁচু মেখল পাহাড়ের অমরকণ্টকে ঘটেছে নিসর্গ আর ধর্মের সমাহার। পুণ্যতোয়া নর্মদার জন্ম এই অমরকণ্টকে, এই অমরকণ্টকে জন্ম সোন নদেরও। সাতপুরা আর বিন্ধ্য পর্বতের মিলন ঘটেছে এই অমরকণ্টকে। পাহাড়ের পর পাহাড়, শাল গাছে ছাওয়া গভীর অরণ্য। কবি কালিদাসের অমর কাব্য ‘মেঘদূতম’-এ প্রশস্তি আছে অমরকণ্টকের।
বাস স্ট্যান্ড থেকে বাজার পেরিয়ে প্রাচীরে ঘেরা ২৭টি মন্দিরের টেম্পল কমপ্লেক্স অমরকণ্টকের মুখ্য আকর্ষণ। নর্মদা মন্দিরে ৯ শতকে রেওয়ারাজের তৈরি নর্মদা মাঈয়ের মূর্তি। বিপরীতে পাতালেশ্বর শিব মন্দিরে জলের তলায় অবস্থান নর্মদেশ্বর অমরনাথের। আরও অনেক দেবতার মন্দির। এদেরই মাঝ দিয়ে সিঁড়ি নেমেছে এগারো কোণের মার্কেণ্ডয় কুণ্ড তথা কোটিতীর্থে। বামে ছোটো কুণ্ড – নর্মদা মাইয়া কি উদগম।
বিড়লা মাইনসের পথে ৭ কিমি যেতে কপিলধারা – নর্মদা মাইয়া কি উদগমে উদ্ভব হওয়ার পর সারা পথ অলক্ষে এসে এই কপিলধারায় শ’ দুয়েক ফুট নীচে সশব্দে আছড়ে পড়ছে নর্মদা। জওহরলাল নেহরুর চিতাভস্ম বিসর্জিত হয় এখানে। তাই রয়েছে নেহরু চবুতরা। আর রয়েছে কমণ্ডলুর মতো দেখতে মহর্ষি ভৃগুর তপোভূমি ভৃগু কমণ্ডলু। সেতু পেরোতেই কপিলমুনির আশ্রমের সামনে থেকে শ’ খানেক সিঁড়ি ভেঙে কপিলাশ্রম। বামে পথ কপিলধারার, ডাইনে পথ গিয়েছে দুগ্ধধারার। ৫০ ফুট নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নর্মদা।
রঙমহল মন্দিরের পিছনে বাঁ হাতি পথে দেড় কিমি যেতে সোনামুড়া – সোন নদের উৎস। ছোটো কুণ্ড। সামনে সানসেট পয়েন্ট। সোনামুড়া থেকে ফেরার পথে ১০৮ মন্দিরের টেম্পল কমপ্লেক্স শুকদেবানন্দের আশ্রমে। স্থাপত্যে আর ভাস্কর্যে অভিনব। পথেই পড়ে পঞ্চমুখী গায়ত্রী মন্দির তথা মার্কেণ্ডয় আশ্রম। এর পর দেখে নিন মাঈ কা বাগিয়া – ঋষিদের তপোবনতুল্য সুন্দর বাগিচার মাঝে দেবী পার্বতী ও দেবী নর্মদার মন্দির।
আরও দেখে নিন গায়ত্রী সরোবর, কবীর চবুতরা ইত্যাদি।
অষ্টম দিন – ভোরেই বেরিয়ে পড়ুন, গাড়ি ভাড়া করে চলুন অমরকণ্টক থেকে কানহা, ১৭০ কিমি। সময় থাকলে বিকেলে একটা সাফারি করুন। রাত্রিবাস কানহা।
নবম দিন – আজও কানহায় থাকুন, সাফারি করুন, জঙ্গল উপভোগ করুন।
দশম দিন – কানহা থেকে চলুন মান্ডলা, ৬২ কিমি। কানহার কিসলি গেট থেকে বাস পেয়ে যাবেন মান্ডলার।
মান্ডলায় কী দেখবেন
১৭ শতকের দুর্গ – তিন দিকে তিন নদী – নর্মদা, বানজার ও সরস্বতী, আরেকটি দিকে পরিখা। এখানেও নর্মদার পাড়ে নানা মন্দির। ওঁ রূপী ত্রিবেণী সঙ্গম পুণ্য হিন্দুতীর্থ। ১৭ কিমি দূরে রামনগরে গোন্ড রাজাদের ত্রিতল বিধ্বস্ত প্রাসাদ মোতিমহল। আর আছে নর্মদার উপরে সহস্রধারা জলপ্রপাত, পাশে সহস্রধারা মন্দির।
একাদশ দিন – সকালেই বেরিয়ে পড়ুন, চলুন জবলপুর, ৯৭ কিমি, ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাস পাবেন। অন্যথায় গাড়ি তো আছেই। রাত্রিবাস জবলপুর।
দ্বাদশ দিন – আজও থাকুন জবলপুর। ধীরে সুস্থে ঘুরে নিন জবলপুর।
জবলপুরে কী দেখবেন (দেখুন ভ্রমণছক ১, পুজোয় চলুন: গন্তব্য মধ্যপ্রদেশ ১, )
ত্রয়োদশ দিন – ফিরুন ঘরপানে।
দেশের সব বড়ো শহরের সঙ্গে জবলপুর ট্রেনপথে যুক্ত। কলকাতা আসার দৈনিক ট্রেন দু’টি – কলকাতা মেল জবলপুর থেকে ছাড়ে বেলা ১.২০-তে, হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন বেলা ১২টা; শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস জবলপুর ছাড়ে রাত ১১.৫০-এ, হাওড়া পৌঁছোয় পরের পরের দিন ভোর সাড়ে চারটেয়।
কোথায় থাকবেন
(১) মধ্যপ্রদেশ ট্যুরিজমের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে বুরহানপুর, হনুবন্তিয়া, ওঁকারেশ্বর, ওঁকারেশ্বরের কাছে সৈলনি দ্বীপ, মহেশ্বর, মান্ডু, উজ্জৈন, ভোপাল, ভীমবেটকা, সাঁচি, গ্বালিয়র, রেওয়া, মৈহর, মান্ডলা এবং পাঁচমাড়িতে। অনলাইন বুকিং http://www.mpstdc.com এবং http://www.mptourism.com/
(২) ওঁকারেশ্বর মন্দির কমিটির শ্রীজি বিশ্রামালয় অনলাইন বুকিং https://shriomkareshwar.org। এ ছাড়াও ওঁকারেশ্বরে বহু ধর্মশালা আছে, বিশদ তথ্য ও অনলাইন বুকিং https://yatradham.org
(৩) মহেশ্বরে থাকতে পারেন অহল্যা ফোর্ট হোটেলে। সংরক্ষণের জন্য যোগাযোগ ০১১-৪১৫৫১৫৭৫, ৯৮১০০৪০৯৮১, ই-মেল info@ahilyafort.com
(৪) সব জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট আছে। সন্ধান পাবেন www.booking.com , www.makemytrip.com , www.yatra.com , www.trivago.in , www.airbnb.co.in , www.tripsavvy.com ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।
মনে রাখবেন
(১) রেলের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in
(২) ভ্রমণ ছক ১-এ শেষ রাতে বুরহানপুর বা ভুসওয়াল পৌঁছোলে পরের দিনটা পুরো পাওয়া যায় ঘোরাঘুরির জন্য। গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেসে ভুসওয়াল এলে বুরহানপুর পৌঁছোতে প্রায় বিকেল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে ভালো করে বুরহানপুর দেখতে হলে পরের দিনটাও থাকতে হবে।
(৩) বুরহানপুরে তাপ্তী নদীতে নৌকাবিহার করতে পারেন।
(৪) ভ্রমণ ছক ১-এ অনুযায়ী হনুবন্তিয়া না যেতে চাইলে বুরহানপুর থেকে ওঁকারেশ্বর চলে আসুন, ১২০ কিমি, সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। কিংবা ট্রেনে আসুন খান্ডোয়া, সেখান থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন ওঁকারেশ্বর, ৬০ কিমি। সে ক্ষেত্রে ভ্রমণ এক দিন কমে যাবে।
(৫) মহেশ্বরি শাড়ির (সিল্ক ও সুতি) জন্য বিখ্যাত মহেশ্বর।
(৬) ধীরে সুস্থে মান্ডুকে উপভোগ করার জন্য দু’দিন রাখা হয়েছে। এক দিন হেঁটে ঘুরুন, আর একদিন একটু দূরের যেগুলো সেগুলো স্থানীয় যান ভাড়া করে ঘুরে নিন। মান্ডুর দ্রষ্টব্যগুলির খোলার নির্দিষ্ট সময় আছে। মান্ডুতে যেখানে থাকবেন, সেখানে খোঁজখবর করে নেবেন।
(৭) মান্ডুতে বাওবাব ফলের রসের স্বাদ নিতে পারেন। আফগানি গাছ বাওবাব, মান্ডুতে প্রচুর হয়। স্থানীয়রা বলেন মান্ডু কা ইমলি। বাওবাব ফলের শাঁস শুকনো করে গুঁড়ো করে জলে মিশিয়ে চিনি দিয়ে যে পানীয় তৈরি হয় তা খেতে একটু টক। গরমে এই পানীয় শরীর তাজা রাখে।
(৮) অটো বা ট্যাক্সি ভাড়া করে ঘণ্টা পাঁচেকে সাঙ্গ করা যায় ইনদৌর দর্শন।
(৯) অটো বা ট্যাক্সি ভাড়া করে ঘুরে নিন ভোপাল। ভোপালের বন বিহার ন্যাশনাল পার্ক মঙ্গলবার বন্ধ থাকে। শীতে খোলার সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধে ৬টা এবং গরমের দিনে সকাল ৭টা থেকে সন্ধে ৭টা পর্যন্ত। তাজ-উল-মসজিদে শুক্রবার ও মুসলিম উৎসবের দিনগুলিতে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশ মানা। ট্রাইবাল মিউজিয়াম খোলা মঙ্গল থেকে রবি (সকাল ১০টা থেকে সন্ধে ৬টা), স্টেট মিউজিয়ামও খোলা মঙ্গল থেকে রবি (সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা)
(১০) ভোপাল-ভীমবেটকা-সাঁচি দর্শনে ভোপালে না থেকে ভীমবেটকা বা সাঁচিতেও থাকা যেতে পারে। দু’ জায়গাতেই মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের রিসর্ট ছাড়াও বেসরকারি হোটেল আছে। উজ্জৈন থেকে নর্মদা এক্সপ্রেস ধরে ভীমবেটকা পৌঁছোনো যায়, তবে তার বেখাপ্পা সময়ের জন্য ভোপালে হয়ে আসাই ভালো।
(১১) সাঁচির মিউজিয়াম শুক্রবার ছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা।
(১২) ভ্রমণছক ১-এর দিন কমাতে হলে পাঁচমাড়ি বাদ দিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে চতুর্দশ দিনে বিদিশা থেকে ঘরের পানে রওনা হতে পারেন। হাওড়া আসার জন্য বুধ, শুক্র আর রবি পাবেন শিপ্রা এক্সপ্রেস, বিদিশা ছাড়ে ভোর ৪.৫১ মিনিটে, হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৬.৫০ মিনিটে; বুধবার আরও দু’টি ট্রেন পাবেন – ভুজ শালিমার এক্সপ্রেস (বিদিশা ছাড়ে সকাল ৯.৪৫-এ, হাওড়া পৌঁছয় পরের দিন সকাল ১০টায়, হবিবগঞ্জ (ভোপাল)-সাঁতরাগাছি হমসফর (বিদিশা ছাড়ে বিকেল ৩.৩২-এ, হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন বিকেল ৪.৪৫-এ)। এ ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই-সহ ভারতের অন্যান্য শহরে আসারও ট্রেন পাবেন বিদিশা থেকে।
(১৩) ভ্রমণছক ২-এ কলকাতা থেকে চম্বল এক্সপ্রেসে গ্বালিয়র এলে প্রথম দিনটা কার্যত নষ্ট হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে আগরা দিয়ে আসাই সুবিধা।
(১৪) হাতে সময় থাকলে ভ্রমণছক ২-এ দু’টো দিন আগরায় কাটিয়ে যেতে পারেন, যদি আগরা দেখা না থাকে। আর আগরা দেখা থাকলেও একটা দিন তো সেখানে থাকতেই পারেন অন্তত তাজমহলের জন্য।
(১৫) ভ্রমণছক ২-এ ভোপাল থেকে উজ্জৈন আসার অনেক ট্রেন আছে। তবে ভোর ৪.২৫-এর নর্মদা এক্সপ্রেস ধরে উজ্জৈন আসতে পারলে ভালো। তা হলে উজ্জৈন দেখার জন্য সারাটা দিন সময় পাওয়া যায়।
(১৬) ভ্রমণছক ৩-এ ইলাহাবাদ থেকেও বাসে রেওয়া যাওয়া যায়, ১৪৭ কিমি।
(১৭) বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন https://www.bandhavgarh-national-park.com/
(১৮) কানহা জাতীয় উদ্যান সম্পর্কে বিশদ জানতে হলে দেখুন http://www.kanhanationalpark.com/
(১৯) ভ্রমণছক ৩-এ জবলপুর থেকে ফেরার জন্য যদি শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ধরেন, তা হলে দ্বাদশ দিন রাতেই ট্রেন ধরতে পারেন।