অপরূপ লুঙচক, যেখানে নিস্তব্ধতা তার নিজের সংজ্ঞা লেখে

Kanchenjungha from Lungchok

জয়দীপ সেনগুপ্ত

‘পাহাড় যখন ডাকে, তখন যেতে হয়’ – এই আপ্তবাক্যটা আমরা যারা পাহাড়প্রেমী তারা বড়োই নিষ্ঠার সাথে অনুসরণ করি। আমাদের মধ্যে অনেকেই বছরে একাধিক বার পাহাড়ের ডাকে সাড়া দিয়ে ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে পাড়ি দিই প্রকৃতির কোলে।

অনেক পাহাড়প্রেমী আছেন যাঁরা অফবিট জায়গা খোঁজেন। কিন্তু অধিকাংশ পাহাড়ি হ্যামলেটগুলো এখন বহুল প্রচারিত। বছরের বেশির ভাগ সময়েই ট্যুরিস্টের ভিড়। তাই আজ আপনাদের সামনে নিয়ে এলাম আক্ষরিক অর্থে একটা অফবিট হ্যামলেট যেটা এখনও মানুষের ভিড় এড়িয়ে সংগোপনে বেঁচে আছে নিস্তব্ধতার মাঝে।

জায়গাটা পূর্ব সিকিমে। গ্রামের নাম লুঙচক, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। অপার নিস্তব্ধতা, পাখির কলতান, রাতে ঝিঁঝিঁ পোকার ঐকতান আর চার দিকে পাহাড়ঘেরা পরিবেশে শান্তিতে দু’টো দিন কাটানোর মতো আদৰ্শ জায়গা এই লুঙচক।

বাড়তি পাওনা মেঘমুক্ত আকাশ পেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের অপার্থিব অভিজ্ঞতা যা সারা জীবন স্মৃতির মণিকোঠায় সঞ্চিত হয়ে থাকবে।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমরা অনেকেই জানি না পূর্ব ভারতের যে কয়েকটা জায়গা থেকে সব থেকে ভালো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম এই অনামী, অজানা লুঙচক।

লুঙচক টপ নেচার ভিউ হোমস্টে।

কোথায় থাকবেন

এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে এমনিতেই লোকসংখ্যা খুবই কম। আর এখানে থাকার সেরা আস্তানা হল গ্রামের শেষ প্রান্তে একেবারে পাহাড়ের মাথায় একটি দারুণ হোমস্টে, যার নাম ‘লুঙচক টপ নেচার ভিউ হোমস্টে’।

পাহাড়ের মাথায় মাত্র একটি পরিবারের বাস আর তাদের তিন ভাই মিলেই এই হোমস্টেটি চালান। হোমস্টেটি খুব যত্ন করে তৈরি করা। এ রকম একটা অফবিট জায়গায় ঘরের সুযোগসুবিধা, সাজসজ্জা ও স্বাচ্ছন্দ্য নজরকাড়া। অত্যাধুনিক ফিটিংস সজ্জিত বাথরুম, রয়েছে গিজারও।

সব মিলিয়ে ঘরের সংখ্যা ১০টি আপাতত। রান্নাঘর ও ডাইনিং হলের ঢিলছোঁড়া দূরত্বে ৪টে ঘর। ঘরগুলির সামনে টানা বারান্দা আর মখমলের মতো ঘাসে ঢাকা চত্বর। আর হাঁটাপথে ২ মিনিটের দূরত্বে পিছন দিকে বাগানঘেরা সুসজ্জিত তিনতলা বাড়ি, যার একতলায় বাকি ৬টি ঘর ও অন্য দু’টি তলা নির্মাণাধীন। ওই দু’টি তলা সম্পূর্ণ হলে আরও ১২টি ঘর পাওয়া যাবে।

হোমস্টের প্রতি দিন থাকা আর খাওয়ার (৪ বেলা) মাথাপিছু খরচা ১০০০-১২০০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন ‘নিম দাওয়া শেরপা’র সঙ্গে। মোবাইল: ৮০১৬২৯৪৯৭২/৯৭৩৩৩২৫৯৭২।

যাবেন কী ভাবে

পূর্ব সিকিমের বিখ্যাত ট্রাভেল ডেস্টিনেশন হল ‘সিল্ক রুট’। এই সিল্ক রুটের প্রবেশপথ হল রংলি। রংলি থেকে সিল্ক রুটের রাস্তায় যাবেন না। বাঁ দিকের রাস্তা ধরন। ওই রাস্তাই উঠে গিয়েছে লুঙচক টপের দিকে। দূরত্ব ৮-১০ কিলোমিটার। রাস্তার অবস্থা খুব একটা ভালো নয়, বড়ো গাড়ি নিয়ে গেলে সুবিধা।

আপনারা এনজেপি অথবা শিলিগুড়ি থেকে রংলি আসুন। তার পর রংলি বাজার স্ট্যান্ড গাড়ি ভাড়া করে চলুন থেকে লুঙচক। ১২০০-১৫০০ টাকা মতো নেবে। এনজেপি অথবা শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি রংলির গাড়ি না পেলে, শিলিগুড়ি জংশন থেকে রংপোর গাড়ি ধরে রংপো আসুন। তার পর সেখান থেকে রংলির গাড়ি নিয়ে রংলি পৌঁছে যান।

যদি কেউ একদম সরাসরি লুঙচক পৌঁছোতে চান এনজেপি বা শিলিগুড়ি থেকে, সে ক্ষেত্রে হোমস্টের মালিকদের সঙ্গে সাথে কথা বলে নিতে হবে আগে যদি ওঁরা পিক-আপের ব্যবস্থা করতে পারেন। গাড়ি ভাড়া পড়তে পারে আন্দাজে ৪০০০-৫০০০ টাকা।

তা হলে আপনার পরবর্তী ট্র্যাভেল ডেস্টিনেশন হোক অপরূপ লুঙচক, যেখানে নিস্তব্ধতা তার নিজের সংজ্ঞা লেখে এক মায়াবী পরিবেশে।

ছবি: প্রতিবেদক

আরও পড়তে পারেন

শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্য কলকাতার বিভিন্ন স্থানে ‘পিক-আপ’ আর ‘ড্রপ পয়েন্ট’ করার ভাবনা

যে দিকে চোখ যাবে শুধুই ময়ূর, মহারাষ্ট্রের এই গ্রাম যেন এক অপার বিস্ময়!

তামিলনাড়ুর স্বল্পচেনা গন্তব্য, সৈকত-মন্দিরের শহর তিরুচেন্দুর

উল্কাপাতের ফলে তৈরি, বদলে যায় জলের রং! সেই রহস্যে ঘেরা হ্রদ দেখে আসুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *