রাজস্থান বেড়ানোর আদর্শ সময় শীত। শীত চলবে মার্চের শেষ পর্যন্ত। ভ্রমণ অনলাইন সাজিয়ে দিচ্ছে রাজস্থান বেড়ানোর ভ্রমণছক। আজ রাজস্থান ভ্রমণের চতুর্থ বা শেষ কিস্তি।
ভ্রমণ শুরু করুন মাউন্ট আবু থেকে।
ভ্রমণসূচি
প্রথম ও দ্বিতীয় দিন – মাউন্ট আবু।
১২১৯ মিটার উঁচু মাউন্ট আবুর কাছের রেলস্টেশন আবু রোড, দূরত্ব ২৯ কিমি। হাওড়া থেকে সরাসরি ট্রেনের অভাবে দিল্লি বা জয়পুর হয়ে আসুন। মুম্বই বা অমদাবাদ থেকেও সরাসরি আবু রোড পৌঁছোনো যায়। যেখান থেকেই আসুন আবু রোড স্টেশন থেকে বাস বা গাড়ি ভাড়া করে মাউন্ট আবু পৌঁছে প্রথম দিন দেখে নিন সানসেট পয়েন্ট থেকে আরাবল্লির কোলে মনোরম সূর্যাস্ত। হনিমুন পয়েন্ট থেকেও সূর্যাস্ত দেখতে পারেন। কাছেই নক্কি লেক।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-sunset-pt-10.11-1024x485.gif)
দ্বিতীয় দিন প্রথমে চলুন শহর থেকে ১৫ কিমি উত্তর-পূর্বে আরাবল্লির সর্বোচ্চ শিখর গুরুশিখর (১৭৭২ মিটার), রয়েছে ব্রহ্মা-বিষ্ণু–মহেশ্বরের মন্দির, পাহাড়ের মাথায় দত্তাত্রেয় মুনির পায়ের ছাপ। এর পর দেখে নিন চৌহান রাজাদের তৈরি অচলগড়, গড় থেকে নীচে অচলেশ্বর শিবের মন্দির। এর পর চলে আসুন শ্বেতপাথরের জৈন মন্দিররাজি দিলওয়ারা, কারুকার্য, অলংকরণ ও ভাস্কর্যে অনন্য। শহরের কাছাকাছি এসে দেখে নিন অর্বুদাদেবী তথা অধরাদেবী তথা দুর্গার মন্দির। দেখে নিন নক্কি লেকের কাছে টোড রক। আগের দিন হনিমুন পয়েন্ট না যাওয়া হয়ে থাকলে চলুন সেখানে।
তৃতীয় দিন – রাত্রিবাস উদয়পুর। আবু রোড থেকে উদয়পুর ১৬৩ কিমি, বাস বা গাড়িতে চলে আসতে পারেন। সকালে বেরোলে ৩-৪ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছে যাবেন উদয়পুর। এ দেখে নিন সিটি প্যালেস, প্যালেসের উত্তরে জগদীশ মন্দির।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-city-palace-10.11-1024x524.gif)
চতুর্থ দিন – রাত্রিবাস উদয়পুর। এ দিন দেখে নিন ক্রিস্টাল গ্যালারি, মহারানাদের ভিন্টেজ গাড়ির প্রদর্শনী, লেক পিছোলা ও লেকের মাঝে জগনিবাস প্রাসাদ, লেকের দক্ষিণ পাহাড়ে জগমন্দির, লেকের পিছনে সজ্জননিবাস বাগ, লেকের উত্তরে ফতেহ সাগর, ফতেহ সাগরের পূবে বাঁধের নীচে সহেলিয়োঁ–কি-বাড়ি, ফতেহ সাগরে রমণীয় দ্বীপ-উদ্যান নেহরু পার্ক, বিপরীতে মোতি মাগরি পাহাড়ে প্রতাপ স্মারক, শহর থেকে ৫ কিমি পশ্চিমে সজ্জনগড় তথা মনসুন প্যালেস, ৬ কিমি উত্তর-পশ্চিমে উদয়পুরের নবতম আকর্ষণ শিল্পীগ্রাম এবং শহর থেকে ৩ কিমি পুবে শিশোদিয়া রাজাদের অতীতের রাজধানী পাহাড়ে ঘেরা অহর।
পঞ্চম দিন – এ দিনও থাকুন উদয়পুরে।
একটা গাড়ি ভাড়া করে সারা দিনের জন্য বেরিয়ে পড়ুন শহর থেকে উত্তরে। চলুন রাজসমন্দ-কাঁকরোলি-নাথদ্বার-দেবীগড়-একলিঙ্গজি-নাগদা। প্রথমে চলুন ৬৬ কিমি দূরে রাজসমন্দ লেক এবং কাঁকরোলি। দেখুন মহারানা রাজ সিংহের তৈরি ৭.৭ বর্গ কিমি আয়তন বিশিষ্ট লেক, লেকের পাড়ে শিলালিপি, শ্বেতপাথরের ন’টি মণ্ডপ তথা নওচৌকি, বাগিচা, শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকাধীশ মন্দির ইত্যাদি।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-rajsamand-10.11-1024x503.gif)
এ বার উদয়পুরের দিকে ১৬ কিমি এসে বৈষ্ণবতীর্থ নাথদ্বার, দেখুন শ্রীকৃষ্ণের মন্দির।
নাথদ্বার থেকে উদয়পুরের দিকে প্রায় ১৬-১৭ কিমি এগিয়ে এলে দেবীগড়, ১৮ শতকের ফোর্ট প্যালেস।
আরও ৭-৮ কিমি এসে একলিঙ্গজি, ৭৩৪ খ্রিস্টাব্দে তৈরি পিরামিড ধাঁচের মন্দির কমপ্লেক্স।
উদয়পুরের দিকে একলিঙ্গজির একেবারে গায়েই নাগদা, রাওয়াল নাগাদিত্যের ১১ শতকের রাজধানী, প্রাচীন নগরী।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-ranakpur-10.11-1024x573.gif)
ষষ্ঠ দিন – আজও থাকুন উদয়পুরে। চলুন রনকপুর-কুম্ভলগড়-হলদিঘাটি।
সক্কালেই গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন। প্রথম গন্তব্য ৯০ কিমি দূরের রনকপুর। ২৯টি জৈন মন্দিরের কমপ্লেক্স, দিলওয়ারাতুল্য।
এখান থেকে চলুন ৫০ কিমি দূরে আরাবল্লি পাহাড়ের ঢালে ১০৮৭ মিটার উঁচুতে কুম্ভলগড় দুর্গ। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাচীরে ঘেরা দুর্গ, রানা কুম্ভের তৈরি। দুর্গের নানা মহলে ফ্রেস্কো চিত্র। বহু মন্দির। র্যামপার্ট থেকে মাড়োয়ারের সমতল ও আরাবল্লির জঙ্গল-পাহাড় সুন্দর দৃশ্যমান। চার কিমি দূরে কুম্ভলগড় স্যাংচুয়ারি।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-kumbhalgarh-10.11-1024x599.gif)
এ বার উদয়পুর ফেরার পথে চলুন হলদিঘাটি, আকবরের বাহিনীর সঙ্গে রানা প্রতাপের সেই যুদ্ধস্থল, যেখানে প্রাণ দিয়েছিল প্রতাপের প্রিয় ঘোড়া চেতক, কুম্ভলগড় থেকে ৫০ কিমি।
হলদিঘাটি দর্শন শেষে ফিরে আসুন ৪০ কিমি দূরের উদয়পুর।
সপ্তম দিন – রাত্রিবাস চিতোরগড়। উদয়পুর থেকে ট্রেনে, বাস বা গাড়িতে আসতে পারেন চিতোরগড়। সকাল ৬টার উদয়পুর-জয়পুর এক্সপ্রেস সকাল ৭.৫৫-য় পৌঁছে দেয় চিতোরগড়। উদয়পুর- চিতোরগড় বাস চলে মুহুর্মুহু। দূরত্ব ১১১ কিমি।
এখানে এক দিন থেকে ধীরেসুস্থে দেখে নিন রানি পদ্মিনী, মীরাবাঈ, রানা কুম্ভ ও জহরব্রতের স্মৃতিবিজড়িত চিতোরগড়।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-chitor-10.11-1024x585.gif)
অষ্টম দিন – রাত্রিবাস কোটা। ট্রেন আছে বটে, তবে চিতোরগড় থেকে কোটা বাসে আসাই ভালো। ভোর থেকেই বাস রয়েছে। দূরত্ব ১৭৩ কিমি। বাসের সময় লাগে সাড়ে চার ঘণ্টা থেকে ছ’ ঘণ্টা। গাড়িতেও আসতে পারেন।
কোটায় দেখে নিন চম্বল নদীর পাড়ে রাও মাধো সিংজির গড়া দুর্গ। দেখে নিন বিভিন্ন মহল। দুর্গের ডাইনে রাও মাধো সিং মিউজিয়াম। দেখুন ১৮ শতকের ভীম মহল, শহরের উত্তরে উমেদ ভবন প্রাসাদ, দুর্গের পিছনে চম্বলের ওপর কোটা ব্যারেজ, কিশোর সাগর, দ্বীপ মহল, ব্রিজরাজ ভবন প্রাসাদ ও জওহর বিলাস গার্ডেন। সন্ধ্যায় চম্বল উদ্যান অবশ্য দ্রষ্টব্য।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-bundi-10.11-1024x628.gif)
নবম দিন – এ দিনও রাত্রিবাস কোটায়।
বুঁদির কেল্লার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে। চিতোরের রানা সেই যে পণ করেছিলেন। সেই বুঁদির কেল্লা কোটা থেকে সাড়ে ৩৮ কিমি। আধ ঘণ্টা অন্তর বাস আছে। গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন বুঁদি। বাসে করে এলে অটো বা টাঙা ভাড়া করে দেখে নিন ১৩৫৪-য় রাজস্থান শৈলীতে তৈরি বুঁদির কেল্লা তথা তারাগড় ফোর্ট, শহরের প্রান্তে রানিজি কি বাউড়ি, কেল্লা থেকে ৫ কিমি উত্তর-পশ্চিমে ফুলসাগর প্রাসাদ, চোগান গেটে নগরসাগর কুণ্ড, ক্ষার বাগে রাজপরিবারের ছত্তিশ, জৈৎসাগর লেক, লেকের উত্তর পাড়ে সুখনিবাস।
দশম দিন – রাত্রিবাস রনথম্ভোর। কোটা থেকে রনথম্ভোর ১৪৪ কিমি, বাসে তিন থেকে চার ঘণ্টার পথ। গাড়িতেও আসতে পারেন। বাসে বা ট্রেনে সোয়াই মাধোপুর এসে মিনিবাস বা গাড়িতে ১৪ কিমি দূরের রনথম্ভোরে আসা যায়। প্রচুর ট্রেন আছে। তবে সব চেয়ে সুবিধাজনক সকাল ৬.১৫-এর নিজামুদ্দিন জনশতাব্দী, ৭.১০-এর দাওদাই এক্সপ্রেস, ৭.২০-এর গোল্ডেন টেম্পল এক্সপ্রেস, ৭.৫৫-এর মুম্বই সেন্ট্রাল-জয়পুর সুপারফাস্ট কিংবা ৮.১৫-এর কোটা-যমুনা ব্রিজ প্যাসেঞ্জার। খুব বেশি হলে ঘণ্টা দুয়েক লাগে ট্রেনে। তবে সোয়া ৮টার প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি একেবারে রনথম্ভোর পৌঁছে দেয় দু’ ঘণ্টা ২০ মিনিটে।
রনথম্ভোরে দু’টো সাফারি করার চেষ্টা করুন। প্রথমটা যে দিন পৌঁছোবেন সে দিন বিকেলে, দ্বিতীয়টি পরের দিন সকালে। সাফারি করা ছাড়া আরও দেখুন পাহাড়ের ওপর কেল্লা। সকালে সাফারি করে এসে কেল্লা দেখুন। বিকেলের দিকে রওনা হয়ে যান আগ্রা।
একাদশ দিন – ঘরের পথে রওনা। সকালে রনথম্ভোর ঘুরে বিকেলের দিকে আগ্রা রওনা হয়ে যান। সেখান থেকে ঘরে ফেরার ট্রেন ধরুন।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-ranthombore-10.11-1024x633.gif)
কোথায় থাকবেন
সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল। হোটেল বুকিং-এর বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে তাদের সন্ধান পেয়ে যাবেন। সব জায়গায় পাবেন রাজস্থান পর্যটনের হোটেল। আগরায় বেসরকারি হোটেল ছাড়াও পাবেন উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল।
অনলাইন হোটেল বুকিং করার জন্য রাজস্থান পর্যটনের ওয়েবসাইট https://rtdc.tourism.rajasthan.gov.in/
রাজস্থান পর্যটনের কলকাতা অফিস – কমার্স হাউস, ২ গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, কলকাতা ৭০০০১৩, যোগাযোগ – ০৯৪১৪২ ৫৩২৯৯
আগ্রায় বেসরকারি হোটেল প্রচুর আছে। আর উত্তরপ্রদেশ পর্যটনের হোটেলে থাকতে চাইলে অনলাইনে বুকিং করতে পারেন: https://uptourism.gov.in/
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2022/11/rajasthan-4-haldighat-10.11-1024x622.gif)
প্রয়োজনীয় পরামর্শ
(১) পুরো ট্যুরটার জন্য মাউন্ট আবু থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। গাড়ি রনথম্ভৌরে এসে ছেড়ে দিন।
(২) পুরো ট্যুরের জন্য গাড়ি না থাকলে বিভিন্ন শহরে স্থানীয় যানে সাইটসিয়িং করুন।
(৩) উদয়পুরের সিটি প্যালেস দেখার জন্য গাইডের সাহায্য নেওয়া ভালো। ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে।
(৪) উদয়পুরে থাকার দ্বিতীয় দিন সকালে ঘুরে আসতে পারেন ৩৩ কিমি দূরের জগত থেকে। জগতকে রাজস্থানের খাজুরাহো বলা হয়। এখানকার অম্বিকা মাতা মন্দিরের গায়ের কারুকাজ আপনাকে বিস্মিত করবে। উদয়পুরে এসে সে দিন সিটি প্যালেস ও জগদীশ মন্দির ছাড়া আরও যদি লোকাল সাইটসিয়িং করে নিতে পারেন, তা হলে পরের দিন সকালে জগত ঘুরে এসে উদয়পুরের বাকি সাইটসিয়িং করে নিতে পারেন।
(৫) রনথম্ভোরে সাফারি করার জন্য অনলাইন বুকিং করতে পারেন – https://www.ranthambhorenationalpark.in/jungle-safari
(৬) ইচ্ছে হলে বা সময় থাকলে রনথম্ভোর থেকে ফেরার পথে আগরায় দু’টো দিন থেকে যেতে পারেন।
আরও পড়তে পারেন
চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ৩: বিকানের-জৈসলমের-বাড়মের-জোধপুর
চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ২: জয়পুর-ফতেপুর-বিকানের-অজমের
চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ১: আগ্রা-ভরতপুর-দৌসা-জয়পুর-সরিস্কা-অলওয়র