ভ্রামণিকদের কাছে কেন অনন্য কেরল? রইল একাধিক কারণ

তিরুঅনন্তপুরম: ভ্রামণিকদের অন্যতম পছন্দের রাজ্য হল কেরল। এই রাজ্যে একবার বেড়াতে এলে ভ্রামণিকরা এতটাই মোহিত হয়ে যান যে অনেকেই মনে করেন বার বার এখানে আসবেন। সমুদ্র, পাহাড়, পুরোনো ঔপনিবেশিক বসতি, খাঁড়ি, সব মিলিয়ে কেরল এক বৈচিত্রে ভরা রাজ্য।

এর পাশাপাশি কেরলে আরও কিছু আছে, যার জন্য গোটা ভারতের মধ্যে সব থেকে অনন্য রাজ্যের তকমা অবলীলায় পেয়ে যায় এই রাজ্যটা। এমনই কিছু তথ্য তুলে ধরা হল।

১) যমজদের গ্রাম

যমজ সন্তানের জন্ম হওয়া আদৌ অদ্ভুত কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু বিশ্বে যমজ সন্তান জন্ম হওয়ার গড়ের ছয় গুণ বেশি যমজ সন্তান যদি কোনো গ্রামে জন্ম নেয়, সেটা অদ্ভুত ব্যাপার তো বটেই। মল্লপুরম জেলার কোদিনহি গ্রাম এই অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী। এখানে গেলে আপনি অসংখ্য যমজ মানুষের সম্মুখীন হবেন।

২) এই গ্রামে সবাই দাবা খেলেন

ত্রিশূর জেলার মারোত্তিচাল গ্রাম এমনই এক অদ্ভুত গ্রাম যেখানে প্রায় সব বাসিন্দাই দাবা খেলেন। মদ্যপানে আসক্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল এই গ্রামটি। সময় কাটানোর জন্য দাবা খেলার বন্দোবস্ত করা হয় প্রশাসনের তরফে। এর পর থেকে গ্রামটি দাবাড়ুদের গ্রাম হিসেবেই পরিচিত হয়ে গেছে।

৩) বিশ্বের ধনীতম মন্দির

বিশ্বের ধনীতম মন্দির অবস্থিত এই রাজ্যেই। কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরে রোজ অসংখ্য পুণ্যার্থী ভিড় জমান। পৃষ্ঠপোষকদের থেকে প্রচুর পরিমাণে দানখয়রাতি পায় এই মন্দিরটি।

৪) প্রত্যেক গ্রামেই ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতাল

কেরল এমন একটি অনন্য রাজ্য, যেখানে প্রায় প্রতিটি গ্রামেই ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতাল পরিষেবা পাওয়া যায়। ভ্রমণ করার সময় ভ্রামণিকদের চিন্তা থাকে যেখানে তাঁরা যাবেন সেখানে ব্যাঙ্ক এবং হাসপাতাল রয়েছে কি না। কেরলে বেড়াতে গেলে এই ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়।

৫) দীর্ঘতম ড্রাইভিং বিচ

ভারতের দীর্ঘ উপকূলে গুটিকতক মাত্র সৈকত আছে, সেখানে গাড়ি চলাচল করতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের মন্দারমণি তার মধ্যে অন্যতম। তবে কেরলে রয়েছে দীর্ঘতম ড্রাইভিং বিচ। কান্নুরের মুড়াপ্পিলঙ্গার সৈকতে চার কিলোমিটার দীর্ঘ বালিয়াড়ি দিয়ে গাড়ি চলাচল করতে পারে।

৬) পর্যটক বান্ধব পুলিশ

কেরল পর্যটনের বিষয়টা খুব গুরুত্ব সহকারে দেখে। এখানে পুলিশের একটা বিশেষ শাখাও রয়েছে, ‘Tourism Police’। তাদের দায়িত্ব শুধুমাত্র পর্যটকদের দিকে নজর দেওয়া। এই বিশেষ শাখায় নিযুক্ত থাকা পুলিশকর্মীরা মালায়ালাম এবং ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি, তামিল এবং ফরাসি ভাষাতেও পটু।

৭) ভারতের প্রথম গির্জা, মসজিদ এবং সিনাগগ

ভারতের প্রথম গির্জা, মসজিদ এবং সিনাগগ তৈরি হয়েছিল এই কেরলেই। পলায়ুরের সেন্ট টমাস সাইরো মালাবার ক্যাথোলিক গির্জাটি খ্রিস্টপরবর্তী ৫২ সালে তৈরি করেছিলেন সেন্ট টমাস। ৬২৯ খ্রিস্টাব্দে কোদুনগোল্লুরে তৈরি হওয়া চেরামান জুমা মসজিদটি ভারতের সব থেকে পুরোনো মসজিদ। অন্য দিকে, কোচির অন্যতম দর্শনীয় স্থান পরদেশী সিনাগগটি তৈরি হয়েছিল ১৫৬৭ সালে। এটি ভারতের সব থেকে পুরোনো সিনাগগ।

৮) এশিয়ার প্রথম প্রজাপতি সাফারি পার্ক

রাজ্যের তেনমালায় অবস্থিত এশিয়ার প্রথম প্রজাপতি সাফারি পার্ক। এখানে ১২৫টিরও বেশি প্রজাপতির প্রজাতি রয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিরও দর্শন পাওয়া যায়।

৯) সমুদ্রতল থেকে নীচে অবস্থিত জায়গা

কেরল এমন একটি অনন্য রাজ্য যেখানে সমুদ্রতলের নীচেও জীবন বহমান। রাজ্যের কুট্টানাড় হল ভারতের একমাত্র অঞ্চল যেটা সমুদ্রতল থেকে বেশ কিছুটা নীচে অবস্থিত। এই অঞ্চলে সমুদ্রতল থেকে অন্তত দু’মিটার নীচেও ধানচাষ হয়। এখানকার জনজীবন পুরোপুরি জলকেন্দ্রিক।

আরও পড়তে পারেন

চোখধাঁধানো স্থাপত্যের প্রাসাদ: মাইসোর প্যালেস 

ওড়িশায় ১৩টি নতুন পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা

পুজোয় অদূরে ২ / রাঁচি-ম্যাকলাস্কিগঞ্জ

এ বার থেকে লিফ্‌ট চড়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে ইলোরার কৈলাশ গুহার দোতলায়

পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: মাদকতায় ভরা অপরূপা বাগদা

পূর্ব উপকূলের অল্প-চেনা সৈকত: সূর্যলঙ্কা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *