১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী, দুর্গাপুজো শুরু। সময় আর নেই। পুজোর ছুটিতে বেড়ানোর পরিকল্পনা এখনই করে ফেলতে হবে। পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের দেশ। ঘোরার জন্য রয়েছে নামী-অনামী বহু জায়গা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খবর অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে। তার পর ছিল সিকিম। এ বার মহারাষ্ট্র। তার সঙ্গে গোয়া। পুজো এ বার অক্টোবরের দ্বিতীয়ার্ধে। সুতরাং এ বার মহারাষ্ট্রের বনাঞ্চলে ঘোরার সুযোগ রয়েছে।
ভ্রমণ-ছক ১: নাগজিরা-তাড়োবা থেকে অজন্তা-ইলোরা ছুঁয়ে বাণিজ্যনগরীতে
প্রথম দিন – পৌঁছে যান গোন্ডিয়া। চলুন ৩৪ কিলোমিটার দূরের বোধলকসা। ছোটো ছোটো পাহাড়, জঙ্গল, ঝরনার মাঝে প্রকৃতি উপভোগ করুন বোধলকসায়। রাত্রিবাস বোধলকসা।
দ্বিতীয় দিন – সকালেই চলুন নাগজিরা, বোধলকসা থেকে ৫৭ কিমি। সাফারি করুন। রাত্রিবাস নাগজিরা।তৃতীয় দিন – চলুন ১০৯ কিমি দূরের নাগপুর হয়ে আরও ১৪১ কিমি দূরের তাড়োবা। রাত্রিবাস তাড়োবা।
চতুর্থ দিন – বাঘ দেখতে সাফারি করুন। রাত্রিবাস তাড়োবা।
পঞ্চম দিন – ফিরুন নাগপুর। রাত্রিবাস নাগপুর। ভোঁসলেদের রাজধানী ছিল নাগপুর। দেখে নিন ভোঁসলে প্রাসাদ, ভোঁসলে ছত্তিশ, গান্ধীসাগর, গান্ধীবাগ, সতী মন্দির, সর্বেশ্বরা মন্দির ইত্যাদি।
ষষ্ঠ দিন – নাগপুর থেকে গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস (সকাল ৭.২০) অথবা মহারাষ্ট্র এক্সপ্রেস (সকাল ১০.৫৫) ধরে চলে আসুন ভুশওয়াল। গীতাঞ্জলি ভুশওয়াল পৌঁছোয় দুপুর ১.১০-এ, মহারাষ্ট্র এক্সপ্রেস পৌঁছোয় বিকেল ৫.৪০ মিনিটে। এখান থেকে চলুন অজন্তা, ৭১ কিমি। রাত্রিবাস অজন্তা।
সপ্তম দিন – আজও থাকুন অজন্তায়। সকালে ধীরেসুস্থে দেখুন অজন্তা গুহা। বিকেলের দিকে আধ ঘণ্টা চড়াই ভেঙে ভিউ পয়েন্টে চলুন। ওপর থেকে দেখুন পুরো অজন্তা ও তার চার পাশ। এখান থেকে সূর্যাস্তও মনোরম।
কুলকুল করে বয়ে চলেছে ছিপছিপে বাঘোড়া। তারই তীরে ৮৫০ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে ওঠা এই গুহামন্দির। সহ্যাদ্রি পাহাড়ের কোলে বাকাতক রাজাদের কালে খ্রিপূঃ ২০০ থেকে খ্রিস্টোত্তর ৬৫০ – এই সময় ধরে গড়ে ওঠে ২৯টি বৌদ্ধগুহা মন্দির। এদের মধ্যে পাঁচটি, ৯, ১০, ১৯, ২৬ ও ২৯ নম্বর গুহা চৈত্য অর্থাৎ ছোট্টো ভজনালয় এবং বাকি ২৪টি মন্যাস্টেরি বা বিহার, সন্ন্যাসীদের বাসের জন্য খুপরি। দেওয়ালচিত্র ও ভাস্কর্যের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে অজন্তার প্রতিটি গুহায়।
অষ্টম দিন – সক্কালেই চলুন আওরঙ্গাবাদ, ১০১ কিমি। মধ্যাহ্নভোজের আগে দেখে নিন তাজমহলের অনুকরণে তৈরি বিবি কা মকবরা, পানি চাক্কি ও তারই চত্বরে আওরঙ্গজেবের সুফি ধর্মগুরু বাবা শাহর সমাধি তথা দরগা। মধ্যাহ্নভোজের পরে দেখে নিন ১০টি গুহার সমাহার আওরঙ্গাবাদ গুহা। রাত্রিবাস আওরঙ্গাবাদ।
নবম দিন – চলুন ইলোরা, ৩০ কিমি। মধ্যাহ্নভোজের পর দেখে নিন অর্ধচন্দ্রাকারে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতের তৃতীয় আশ্চর্য অনুপম ভাস্কর্যের ইলোরা গুহা। রাত্রিবাস ইলোরা।
ইলোরার গুহাগুলি পশ্চিমমুখী, তাই পড়ন্ত দুপুর তথা বিকেলে যথেষ্ট আলোকিত হয় গুহাগুলি। অনুমান করা হয়, এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ছয় শতকের মধ্যভাগে, চলেছিল ৫০০ বছর ধরে। ব্যাসল্ট রক কেটে তৈরি এই গুহাগুলি উত্তর থেকে দক্ষিণে ২ কিমি ধরে বিস্তৃত। গুহামন্দিরের সংখ্যা ৩৪। হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সমন্বয় ঘটেছে এই গুহামন্দিরগুলিতে। ১ থেকে ১২ নম্বর বৌদ্ধ গুহা, ১৩ থেকে ২৯ হিন্দু গুহা এবং ৩০ থেকে ৩৪ জৈন গুহা। স্থাপত্য, ভাস্কর্য আর গঠন সৌষ্ঠবে অভিনব ১৬ নম্বর তথা কৈলাস গুহা।
এই কৈলাস গুহা থেকেই ইলোরা দর্শন শুরু। কৈলাস গুহা থেকে বেরিয়ে এসে ডান হাতে ১৭ থেকে ৩৪ নম্বর গুহা দেখে ফিরে আসুন কৈলাস গুহায়, এ বার চলুন বাঁ দিকে ১৫ থেকে ১ নম্বর গুহা দেখতে। ২৫ ও ২৬ নম্বর গুহার মাঝখানে পাহাড়ের ঢাল দিয়ে নদী নামছে জলপ্রপাতের মতো।
দশম দিন – সকালে চলুন ইলোরা গুহা থেকে ১ কিমি দূরে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম গৃষনেশ্বর দর্শনে। ফিরে এসে ফিরে চলুন আওরঙ্গাবাদ। পথে দেখে নিন আওরঙ্গজেবের সমাধি খুলদাবাদ (৫ কিমি), তার পর দেবগিরি তথা দৌলতাবাদ ফোর্ট (৯ কিমি)। রাত্রিবাস আওরঙ্গাবাদ।
একাদশ দিন – আওরঙ্গাবাদ স্টেশন থেকে সকাল ৬টার জনশতাব্দী ধরে সাড়ে ১২টায় পৌঁছে যান মুম্বই। এই ট্রেনের টার্মিনাস দাদর স্টেশন।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া বা দেশের অন্য জায়গা থেকে গোন্ডিয়া আসার জন্য ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।
নাগপুর থেকে ভুশওয়াল আসার জন্য দু’টি ট্রেন সুবিধাজনক সময়ে। সকাল সাড়ে ৭টার গীতাঞ্জলি এক্সপ্রেস ভুশওয়াল পৌঁছে দেয় দুপুর ১.১০ মিনিটে এবং সকাল ১০.৫৫ মিনিটের মহারাষ্ট্র এক্সপ্রেস ভুশওয়াল পৌঁছে দেয় বিকেল ৫.৪৫-এ।
মুম্বই থেকে কোথাও ফেরার থাকলে ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in আর বিমানের সময়ের জন্য দেখে নিন ইন্টারনেট।
কী ভাবে ঘুরবেন
সর্বত্রই বাস সার্ভিস রয়েছে। তবে গাড়ি ভাড়া করে নিলে সুবিধা। গোন্ডিয়া বা নাগপুর থেকে গাড়ি ভাড়া করে বোধলকসা ও নাগজিরা দেখে নাগপুরে এসে গাড়ি ছেড়ে দিন। পয়েন্ট টু পয়েন্ট গাড়িও ভাড়া করতে পারেন। নাগপুর থেকে চন্দ্রপুর হয়ে বাসে চলুন তাড়োবা। গাড়ি ভাড়া করেও যেতে পারেন।
আরও পড়ুন পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের বাছাই : গন্তব্য উত্তর-পূর্ব / ১
ভুশওয়াল থেকে গাড়ি ভাড়া করে ফর্দাপুর বা অজন্তা টি জংশনে চলুন। ফর্দাপুর বা অজন্তা টি জংশন থেকে ব্যাটারি চালিত বাসে অজন্তা গুহায় যেতে হয়। আওরঙ্গাবাদ আসুন গাড়ি ভাড়া করে।
আওরঙ্গাবাদ ঘুরে নিন গাড়ি বা অটো ভাড়া করে। এমনকি অটো ভাড়া করে চলে যেতে পারেন ইলোরাও। সেই অটোকে যদি বলে রাখেন তা হলে সে পরের দিন আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে।
কোথায় থাকবেন
নাগজিরায় থাকার জন্য আছে ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন অফ মহারাষ্ট্রের (এফডিসিএম) লগ হাট, মধুকুঞ্জ, লতাকুঞ্জ, হলিডে হোম, ডর্মিটরি। নাগজিরার গেট চোরখামারা থেকে ২৯ কিমি দূরে পিতেজারিতেও রয়েছে এফডিসিএম-এর ইকো টুরিজম কমপ্লেক্স। অনলাইন বুকিং www.fdcm.nic.in ।
নাগজিরার গেট চোরখামারায় রয়েছে নাগজিরা টাইগার রিসর্ট। যোগাযোগ: সুধাকর দহিকর (০৯৬৭৩৩৮৭৫৬১)। এদের ওয়েবসাইট nagziratigerresort.org ।
নাগজিরার কাছে বোধলকসায় রয়েছে মহারাষ্ট্র টুরিজম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনের (এমটিডিসি) রিসর্ট। এমটিডিসি রিসর্ট আছে তাড়োবার গেট মোহারলিতে, নাগপুরে, অজন্তা গুহা থেকে ৪ কিমি দূরে অজন্তা টি জংশনে ও ৫ কিমি দূরে ফর্দাপুরে, আওরঙ্গাবাদে। অনলাইন বুকিং www.maharsahtratourism.gov.in ।
তাড়োবায় এফডিসিএম-এর রিসর্ট আছে মোহারলি ও কোলারা গেটে। অনলাইন বুকিং www.fdcm.nic.in ।
ইলোরায় থাকার জন্য রয়েছে হোটেল কৈলাস (২৪৩৭ ২৪৪৫৪৩, ২৪৩৭ ২৪৪৪৪৬)। কলকাতা এজেন্ট হিমালচূড়া (২৩৭০৮০০৪)। বিস্তারিত জানার জন্য দেখে নিন ওয়েবসাইট https://www.hotelkailas.com/ ।
এ ছাড়া নাগজিরা, তাড়োবায় বেশ কিছু বেসরকারি হোটেল, রিসর্ট রয়েছে। নাগপুর, আওরঙ্গাবাদ ও মুম্বইয়ে তো বেসরকারি হোটেলের ছড়াছড়ি। এদের সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।
মনে রাখবেন
১) মঙ্গলবার তাড়োবা বন্ধ থাকে। তাড়োবা ভ্রমণের যাবতীয় তথ্যের জন্য দেখুন https://www.mahatadobatiger.com/ ওয়েবসাইটে এবং নাগজিরা ভ্রমণের যাবতীয় তথ্যের জন্য দেখে নিন ওয়েবসাইট https://www.mahanntr.com/hours-directions.aspx ।
২) নাগজিরা ও তাড়োবায় যেখানে রাত্রিবাস করবেন সেখান থেকে জঙ্গল সাফারির যাবতীয় খোঁজখবর পাবেন।
আরও পড়ুন পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের ভ্রমণ-ছক : উত্তর-পূর্ব / ২
৩) সোমবার ও জাতীয় ছুটির দিকে অজন্তা বন্ধ থাকে। অজন্তা খোলার সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত। অজন্তা গুহা দেখার জন্য ডুলি ও চেয়ার মেলে। ১, ২, ১০, ১৬ ও ১৭ নম্বর গুহা বৈদ্যুতিক আলো ভাড়া করে দেখে নেওয়া উচিত হবে।
৪) মঙ্গলবার ও জাতীয় ছুটির দিন ইলোরা বন্ধ থাকে। ইলোরা খোলা সকাল ৬টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত। ইলোরা দেখার জন্য ব্যাটারি চালিত টোটো মেলে।
৫) দৌলতাবাদ ফোর্ট সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা। পুরো ফোর্ট না হলেও অন্তত ভুলভুলাইয়া দেখার জন্য গাইড নিন।
৬) মুম্বইয়ে পৌঁছে নিজের পরিকল্পনামাফিক ঘুরুন। যাঁদের বাড়ি ফেরার, তাঁরা ট্রেন বা বিমানে ঘরপানে ফিরুন।
ভ্রমণ-ছক ২: অজন্তা-ইলোরা দেখে মহাবালেশ্বর ছুঁয়ে কোঙ্কন উপকূলে
প্রথম দিন – ভুশওয়াল থেকে চলুন অজন্তা, ৭১ কিমি। রাত্রিবাস অজন্তা।
দ্বিতীয় দিন থেকে পঞ্চম দিন – ভ্রমণ-ছক ১-এর সপ্তম থেকে দশম দিনের মতো।
ষষ্ঠ দিন – সকালেই আওরঙ্গাবাদ থেকে চলুন পুনে। দৈনিক ট্রেন দিনে একটা, আওরঙ্গাবাদ-পুনে প্যাসেঞ্জার, সময় নেয় ১২ ঘণ্টা। এ ছাড়া দু’টি সাপ্তাহিক ও দ্বিসাপ্তাহিক ট্রেন আছে। সুতরাং বাসে চলুন। প্রচুর বাস। ২৩০ কিমি পথ পাড়ি দিতে সময় নেয় ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা। বাসে আগাম আসন সংরক্ষণ করা যায়। ঘোরাঘুরি করুন পুনেতে। রাত্রিবাস পুনে।
সপ্তম দিন – আজও থাকুন পুনেতে।
পুনেতে দেখে নিন –
(১) মারাঠা শৈলীতে নানাসাহেবের তৈরি পার্বতী মন্দির।
(২) পার্বতী মন্দিরের পাদদেশে ৩০ একর জমি জুড়ে পেশোয়া উদ্যান। অদূরে বাঙালির আর এক তীর্থ বরেণ্য সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কুঠি।
(৩) শুক্রবার পেটে রাজা দিনকর কেলকর মিউজিয়াম।
(৪) শহর থেকে ৫ কিমি দূরে তালেগাঁও রোডে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের নীরব সাক্ষী আগা খাঁ প্রাসাদ। ১৯৪২-এর আন্দোলনে এখানেই বন্দিবাস করেন মহাত্মা গান্ধী, কস্তুরবা গান্ধী, মহাত্মার সেক্রেটারি মহাদেবভাই দেশাই, সরোজিনী নাইডু প্রমুখ। এখানেই বন্দিবাসে প্রয়াত হন কস্তুরবা, মহাদেবভাই। পাশেই গান্ধী জাতীয় মিউজিয়াম।
(৫) শনিবার পেটে পেশোয়া বাজিরাও ১-এর দারুনির্মিত ৭ তলা দুর্গাকার প্রাসাদ বা শনিবার ওয়াড়া। এর অন্দরেই ঘটেছিল বাজিরাও ও রূপসী নর্তকী মস্তানির প্রেম।
(৬) কাছেই রাস্তার ও-পারে শিবাজির লাল মহল, ছবিতে শিবাজির জীবনচরিত বিধৃত।
(৭) পাতালেশ্বর মন্দির – শহরের পশ্চিমে শিবাজিনগরে রাষ্ট্রকূটদের কালে ৮ শতকের গুহামন্দির। ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠতে হয়।
(৮) সরসবাগ গণপতি মন্দির।
(৯) শ্রী মহালক্ষ্মী মন্দির।
(১০) দাগদুশেঠ হালোয়াই গণপতি মন্দির।
অষ্টম দিন – ভোরেই বেরিয়ে পড়ুন। প্রথমে চলুন সিংহগড়, শহর থেকে ২৪ কিমি দূরে ভুলেশ্বর পর্বতমালায় ৪৩২০ ফুট উচ্চতায় শিবাজির দুর্গ। পথেই খড়াকভাসলা লেক, পাথাল লেক ইত্যাদি। সিংহগড় দেখে ফিরুন পুনে। এ বার চলুন শৈবতীর্থ ভীমাশংকর, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। সহ্যাদ্রি পাহাড়ে ৩৩৯২ ফুট উচ্চতায় মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে ভীমাশংকর। পুনে থেকে ৯৫ কিমি। আজকের প্রাতরাশ ও মধ্যাহ্নভোজ পথেই সারুন। রাত্রিবাস পুনে।
আরও পড়ুন পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের ভ্রমণ-ছক : গন্তব্য সিকিম
নবম দিন – সকালেই চলুন মহাবালেশ্বর (৪৫০০ ফুট, ১২০ কিমি)। মহাবালেশ্বরে দেখে নিন কৃষ্ণাবাঈ তথা পঞ্চগঙ্গা মন্দির (কৃষ্ণা, ভেন্না, কোয়না, সাবিত্রী আর গায়ত্রী নদীর জল ৫টি ধারায় আসছে), অতিবালেশ্বর ও মহাবালেশ্বর মন্দির। এ ছাড়াও অন্তত ৩০টি ভিউ পয়েন্ট রয়েছে মহাবালেশ্বরে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর্থার সিট, হান্টিং পয়েন্ট, ইকো পয়েন্ট, ম্যালকম পয়েন্ট, টাইগার স্প্রিং, উইলসন পয়েন্ট (বাজার থেকে ২ কিমি দূরে, মহাবালেশ্বরের উচ্চতম পয়েন্ট), নিডল হোল পয়েন্ট, মাংকিস পয়েন্ট, লোডউইক পয়েন্ট, এলফিনস্টোন পয়েন্ট, বেবিংটন পয়েন্ট, কেটিস পয়েন্ট, ভেন্না লেক, মুম্বাই পয়েন্ট (সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য) ইত্যাদি। রাত্রিবাস মহাবালেশ্বর।
দশম দিন – সকালে চলুন প্রতাপগড়, ১৬৫৬-য় শিবাজির হাতে তৈরি দুর্গ, যদিও বিধ্বস্ত, তবে আকর্ষণ কম নয়। ৪৫০ সিঁড়ি উঠে ১০৩০ মিটার উচ্চতায় দুর্গ। এখানেই বিজাপুরের সুলতান আদিলশাহের দূত আফজল খাঁকে বাঘনখ দিয়ে বধ করেন শিবাজি।
মহাবালেশ্বর ফিরে চলুন পঞ্চগনি (৪২৪২ ফুট, ২০ কিমি)। পথে দেখে নিন লিঙ্গমালা ফলস্। পঞ্চগনিতে দেখুন পার্সি পয়েন্ট (নিচুতে কৃষ্ণা ভ্যালি), শহরের শিরে টেবল ল্যান্ড, রাজপুরী পয়েন্ট তথা কার্তিকেয় মন্দির, ১৪ কিমি দূরে ওয়াইতে কৃষ্ণা নদীর ধারে প্রাচীন মন্দিররাজি। রাত্রিবাস মহাবালেশ্বর।
একাদশ দিন – চলুন গণপতিপুলে, ১৯৩ কিমি। সবুজে ছাওয়া সাগরবেলা। পাহাড়ি অধিত্যকা, ১০০ মিটার উঁচুতে গণপতি মন্দির। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি মরাঠি শৈলীর মন্দির। পাহাড়ি পথে মন্দির প্রদক্ষিণ রোমাঞ্চ জাগায়। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাগরতীরে আম, কাঁঠাল, নারকেল আর কলার সবুজ বনানী। রাত্রিবাস গণপতিপুলে।
দ্বাদশ দিন – সকালে চলুন রত্নগিরি, ২৫ কিমি। নানা সৈকতের সমাহার রত্নগিরিতে – পান্দ্রে বিচ, ভাটে বিচ, মান্ডভি বিচ ইত্যাদি। এ ছাড়াও দেখে নিন থিবো প্যালেস (বার্মারাজ থিবোকে বন্দি করে রাখার জন্য ব্রিটিশদের গড়া প্রাসাদ), ভগবতী মন্দির, রত্নগিরি দুর্গ, লোকমান্য তিলকের বাড়িতে তিলক স্মারক সংগ্রহশালা ইত্যাদি।
গণপতিপুলে ফিরে দুপুরের খাওয়া সেরে চলুন ১৭ শতকের জয়গড় ফোর্ট ও লাইটহাউস। পথে গণপতিপুলের গা লাগোয়া সৈকত মালগুন্দে মরাঠি কবি কেশবসুতের বাসভবনে কেশবসুত স্মারক। রাত্রিবাস গণপতিপুলে।
ত্রয়োদশ দিন – চলুন হরিহরেশ্বর, ২০৬ কিমি। পশ্চিমঘাট পাহাড়ের কোলে রমণীয় সাগরবেলা, সাগরতীরে টিলার কালভৈরব মন্দির। মন্দিরের পিছন দিক থেকে নেমে গিয়েছে গণেশ গলি, দু’টি পাথরের মাঝখান দিয়ে তিন ফুট চওড়া পথ, ১৫০ ফুট দীর্ঘ পথ নেমে গিয়েছে সমুদ্রতীরে। সাবিত্রী নদী আর সমুদ্রের মোহনায় শুক্লতীর্থ। পাশেই গায়ত্রীতীর্থ। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত রমণীয় হরিহরেশ্বরে। রাত্রিবাস হরিহরেশ্বর।
চতুর্দশ দিন – সকালে চলুন ফেরি পেরিয়ে ব্যাঙ্কট ফোর্ট, বাগমণ্ডলা সৈকত। ফিরে এসে প্রাতরাশ সেরে চলুন মুরুড সৈকত, ৫৬ কিমি। পথে দেখে নিন শ্রীবর্ধন (সৈকত ও লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির সহ এক গুচ্ছ মন্দির), দিবেগর (সৈকত ও সোনার গণেশ মন্দির)। মুরুড পৌঁছে ফেরিতে চলুন সাগরের মাঝে জঞ্জিরা ফোর্ট। দেখে নিন নবাব প্যালেস বা আহমেদগঞ্জ প্রাসাদ, দত্তাত্রেয় মন্দির, গরম্বি ফলস্। রাত্রিবাস মুরুড।
পঞ্চদশ দিন – ফিরে চলুন মুম্বই, ১৪৫ কিমি। পথে দেখে নিন নন্দগাঁও সৈকত, কাশিদ সৈকত, কোরলাই ফোর্ট, রেভডান্ডা ফোর্ট, আলিবাগ সৈকত, সেখান থেকে ভাটার সময় দেখে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে কোলাবা ফোর্ট।
কী ভাবে যাবেন
ভুশওয়াল দেশের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে ট্রেনপথে যুক্ত। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in ।
আওরঙ্গাবাদ থেকে বাসেই চলুন পুনে। বাসে আগাম সংরক্ষণের জন্য দেখুন www.redbus.in ।
পুনে থেকে বাসে বা গাড়িতে চলুন মহাবালেশ্বর। মহাবালেশ্বর থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে চলুন গণপতিপুলে।
সরাসরি বাসের অভাবে গণপতিপুলে থেকে হরিহরেশ্বর গাড়ি ভাড়া করে আসতে হবে।
হরিহরেশ্বর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসুন মুরুড এবং মুরুড থেকে গাড়ি ভাড়া করে আসুন মুম্বই। এই পথে বাস আছে বটে, তবে পথে যা দেখে নেওয়া উচিত, তার জন্য গাড়িই ভাড়া করতে হবে।
কী ভাবে ঘুরবেন
পুনে দর্শনের জন্য সারা দিনের কন্ডাক্টেড ট্যুরের ব্যবস্থা আছে। বিস্তারিত দেখুন www.geodirect.in ওয়েবসাইটে। কন্ডাক্টেড ট্যুরে মন নাও ভরতে পারে। সে ক্ষেত্রে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরুন।
পুনে থেকে সিংহগড় ও ভীমাশংকর যাওয়ার জন্য বাস পাওয়া গেলেও তা যথেষ্ট নয়। তা ছাড়া সিংহগড়ের বাস পাহাড়ের পাদদেশে নামিয়ে দেয়। বাকিটা হেঁটে উঠতে হয়। বাসে গেলে এক দিনে দুটি জায়গা দেখাও মুশকিল। তাই গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিন সিংহগড় ও ভীমাশংকর।
গণপতিপুলে থেকে এক দিন গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নিন জয়গড় দুর্গ ও রত্নগিরি।
মুরুড থেকে অটোতে রাজপুরী এসে সেখান থেকে জঞ্জিরার ফেরিতে চাপুন। অটোতেই চলুন মুরুডের দ্রষ্টব্য দেখতে।
কোথায় থাকবেন
মহাবালেশ্বর, গণপতিপুলে ও হরিহরেশ্বরে রয়েছে মহারাষ্ট্র পর্যটনের রিসর্ট। অনলাইন বুকিং www.maharsahtratourism.gov.in ।
এ ছাড়া সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট। খোঁজ পেয়ে যাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।
মনে রাখবেন
(১) এই ভ্রমণসূচি যদি দীর্ঘ মনে হয়, তা হলে সরাসরি ভ্রমণ শুরু করতে পারেন পুনে থেকে। পুনে দেশের সব জায়গার সঙ্গে ট্রেনে ও বিমানে যুক্ত। অথবা অজন্তা থেকেই শুরু করুন। সে ক্ষেত্রে পুনেতে বুড়ি ছুঁয়ে নিন, মহাবালেশ্বর যাওয়ার জন্য।
(২) পুনেতে রাজা দিনকর কেলকর মিউজিয়াম প্রতি দিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত, গান্ধী জাতীয় মিউজিয়াম সকাল ৯টা ঠেলে দুপুর সাড়ে ১২টা ও দুপুর দেড়টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত, শনিবার ওয়াড়া সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা।
(৩) পুনের গান্ধী জাতীয় মিউজিয়ামে বুধবার ছাড়া এবং শনিবার ওয়াড়ায় প্রতি দিন লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো হয় সন্ধ্যায়।
(৪) জঞ্জিরা ফোর্ট সকাল ৭টা থেকে সন্ধে ৬টা পর্যন্ত খোলা। শুজ্রবার বন্ধ।
ভ্রমণ-ছক ৩: কোঙ্কন উপকূল থেকে গোয়া
প্রথম দিন – মুম্বই থেকে আলিবাগ হয়ে চলুন মুরুড, ১৪৫ কিমি। পথে দেখে নিন আলিবাগ সৈকত, সেখান থেকে ভাটার সময় দেখে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে কোলাবা ফোর্ট, তার পর পথে পড়বে রেভডান্ডা ফোর্ট, কোরলাই ফোর্ট, কাশিদ সৈকত, নন্দগাঁও সৈকত। রাত্রিবাস মুরুড।
দ্বিতীয় দিন – আজ মুরুডে থাকুন। দেখে নিন নবাব প্যালেস বা আহমেদগঞ্জ প্রাসাদ, গরম্বি ফলস্, টিলার টঙে দত্তাত্রেয় মন্দির, কাসা ফোর্ট। রাজপুরী জেটি থেকে চলুন জঞ্জিরা ফোর্ট।
তৃতীয় দিন – আজকের গন্তব্য হরিহরেশ্বর। ভোরেই বেরিয়ে পড়ে আগে চলুন রায়গড় ফোর্ট, উপকূল ছেড়ে অন্দরে, ৯০ কিমি পথ। বাইরি পাহাড়ে শিবাজির বাবা শাহজির গড়া দুর্গের শিরে নতুন দুর্গ গড়েন শিবাজি। আজ সেখানে রয়েছে তার ধ্বংসাবশেষ। শিবাজির মৃত্যুও ঘটে এই রাইগড়ে। তাকমাক ক্লিফ, লিঙ্গমালা রক ফেস, কুইনস্ প্যালেস, রাজভবন, জিজামাতা ভবন, তাকমাক টক তথা পানিশমেন্ট পয়েন্ট, গঙ্গাসাগর লেক, জগদীশ্বর মন্দির ছাড়াও পাহাড় থেকে চার দিকের দৃশ্যও সুন্দর দৃশ্যমান। রায়গড় দেখে চলে আসুন হরিহরেশ্বর, ৮৫ কিমি। পথে দেখে নিন শ্রীবর্ধন (সৈকত ও লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির সহ এক গুচ্ছ মন্দির)। রাত্রিবাস হরিহরেশ্বর।
চতুর্থ দিন – আজ থাকুন হরিহরেশ্বরে। পশ্চিমঘাট পাহাড়ের কোলে রমণীয় সাগরবেলা হরিহরেশ্বর, সাগরতীরে টিলার টঙে কালভৈরব মন্দির। মন্দিরের পিছন দিক থেকে নেমে গিয়েছে গণেশ গলি, দু’টি পাথরের মাঝখান দিয়ে তিন ফুট চওড়া পথ, ১৫০ ফুট দীর্ঘ পথ নেমে গিয়েছে সমুদ্রতীরে। সাবিত্রী নদী আর সমুদ্রের মোহনায় শুক্লতীর্থ। পাশেই গায়ত্রীতীর্থ। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত রমণীয় হরিহরেশ্বরে।
পঞ্চম দিন – চলুন গণপতিপুলে, ২০৬ কিমি। সবুজে ছাওয়া সাগরবেলা। পাহাড়ি অধিত্যকা, ১০০ মিটার উঁচুতে গণপতি মন্দির। ১৬০০ খ্রিস্টাব্দে তৈরি মরাঠি শৈলীর মন্দির। পাহাড়ি পথে মন্দির প্রদক্ষিণ রোমাঞ্চ জাগায়। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, সাগরতীরে আম, কাঁঠাল, নারকেল আর কলার সবুজ বনানী। রাত্রিবাস গণপতিপুলে।
ষষ্ঠ দিন – ঘুরে আসুন ১৭ শতকের জয়গড় ফোর্ট ও লাইটহাউস, ২০ কিমি। পথে গণপতিপুলের গা লাগোয়া সৈকত মালগুন্দে মরাঠি কবি কেশবসুতের বাসভবনে কেশবসুত স্মারক। বাকি সময় উপভোগ করুন গণপতিপুলের সাগরবেলা। রাত্রিবাস গণপতিপুলে।
সপ্তম দিন – সকালে বেরিয়ে পড়ুন, আজকের গন্তব্য কুঙ্কেশ্বর। প্রথমে চলুন রত্নগিরি, ২৫ কিমি। নানা সৈকতের সমাহার রত্নগিরিতে – পান্দ্রে বিচ, ভাটে বিচ, মান্ডভি বিচ ইত্যাদি। এ ছাড়াও দেখে নিন থিবো প্যালেস (বার্মারাজ থিবোকে বন্দি করে রাখার জন্য ব্রিটিশদের গড়া প্রাসাদ), ভগবতী মন্দির, রত্নগিরি দুর্গ, লোকমান্য তিলকের বাড়িতে তিলক স্মারক সংগ্রহশালা ইত্যাদি।
রত্নগিরি দেখে চলুন বিজয়দুর্গ, ৯৬ কিমি। পথে দেখে নিন পুরানগড় ফোর্ট (পাহাড়ি পথে অল্প চড়াই ভাঙতে হয়) ও পাওয়াসে স্বামী স্বরূপানন্দের আশ্রম। বাঘোতন নদীর মোহনায় বিজয়দুর্গ সৈকত সংলগ্ন বিজয়দুর্গ ফোর্ট। সিলাহরাদের তৈরি করা এই ফোর্ট বার বার হাত বদল হয়েছে – প্রথমে আদিলশাহ, তার পর মরাঠা, তার পর ব্রিটিশ এবং শেষে ধুলুপদের হাতে। বিজয়দুর্গ ফোর্টের বাইরে ধুলুপ ম্যানসন।
বিজয়দুর্গ দেখে চলে আসুন কুঙ্কেশ্বর, ৩৫ কিমি। পথে দেখে নিন রামেশ্বর মন্দির, এখানে রয়েছে কানহোজি আংরের উত্তরপুরুষ তুলাজি আংরের সমাধি। রাত্রিবাস কুঙ্কেশ্বর।
অষ্টম দিন – আজও থাকুন কুঙ্কেশ্বর। কোঙ্কন উপকূলের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৈকত কুঙ্কেশ্বর। বিচ আর শিব মন্দির, এই নিয়ে কুঙ্কেশ্বর। নিশ্চিন্ত বিশ্রামের ঠিকানা। যেতে পারেন দেবগড়, সাড়ে ৭ কিমি। মহারাষ্ট্রের বিখ্যাত আম হাপুসের রাজধানী, দেখে নিন সৈকত, ফোর্ট আর মন্দির।
নবম দিন – চলুন তারকার্লি, ৪৯ কিমি। তারকার্লির ৫ কিমি আগে মালভান সৈকত। এখান থেকে যেতে পারেন সিন্ধুদুর্গ, বেলাভূমি থেকে আধ কিমি দূরে কুটে দ্বীপে। মালভান জেটি থেকে বোট মেলে সিন্ধুদুর্গ যাওয়ার। শিবাজির গড়া সামুদ্রিক ফোর্ট, মরাঠা শক্তির নৌবাহিনীর মূল কেন্দ্র, ১২ ফুট উঁচু ৩০ ফুট চওড়া প্রাচীরে ঘেরা। ব্রিটিশদের হাতে যেতে নাম হয়েছিল ফোর্ট অগাস্টাস। শিবাজির ছেলে রাজারামের গড়া শিবাজির কালো মর্মর মূর্তিটি দেখার মতো।
মহারাষ্ট্রের একটি সুন্দর বিচ তারকার্লি, সুরু ও নারকেল গাছে ছাওয়া। মিহি বালুকাবেলা, স্ফটিক স্বচ্ছ জল নিয়ে মনোরম বিচ তারকার্লি। আজ বিশ্রাম এখানেই।
দশম দিন – চলুন গোয়া। রাত্রিবাস কোলভা।
একাদশ থেকে ত্রয়োদশ দিন – রাত্রিবাস কোলভা।
চতুর্দশ দিন – ফিরুন ঘরপানে। ট্রেনে, বাসে বা বিমানে। কোলভা থেকে মাড়গাঁও রেলস্টেশন ৮ কিমি, পানাজি ৩২ কিমি, ডাবোলিম এয়ারপোর্ট ২১ কিমি। ট্রেনে কলকাতা ফিরতে হলে মাড়গাঁও থেকে ধরতে পারেন সকাল ৭.৫০-এর অমরাবতী এক্সপ্রেস। সপ্তাহে চার দিন চলে। অন্যথায় মুম্বই হয়ে ফিরুন।
কী ভাবে যাবেন
যে হেতু পথে দেখতে দেখতে যাওয়া, সে হেতু মুম্বই থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে নেওয়া ভালো। এ পথে বিভিন্ন রুটে বাস আছে বটে বা কোঙ্কন রেলপথের ট্রেনও আছে, তবু ভ্রমণ পরিকল্পনা যে ভাবে করা হয়েছে তাতে বাস বা ট্রেনে গেলে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে না।
তারকার্লিতে মুম্বই থেকে ভাড়া করা গাড়ি ছেড়ে দিন। স্থানীয় গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন গোয়ার কোলভা বিচে, দূরত্ব ১৪১ কিমি। অথবা ৫৫ কিমি দুরের সাওয়ান্তবাড়ি এসে সকাল সোয়া ৯টার কোঙ্কনকন্যা এক্সপ্রেস ধরুন। বেলা ১২.১০ মিনিটে পৌঁছে যান মাড়গাঁও রেলস্টেশন। এখান থেকে কোলভা বিচ ৮ কিমি, চলে আসুন ট্যাক্সি বা অটোতে।
কী ভাবে ঘুরবেন
মুম্বই থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিলে সেই গাড়িতেই ঘুরবেন। আর এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় বাস বা ট্রেনে গেলে সে ভাবে ভ্রমণ প্ল্যান করে নেবেন এবং যেখানে রাত্রিবাস করবেন সেখানকার স্থানীয় যানে ঘুরবেন।
গোয়া পৌঁছে প্রথম দিন কোলভা বিচের সৌন্দর্য উপভোগ করুন। এর পর দু’দিন গোয়া পর্যটন উন্নয়ন নিগমের উত্তর গোয়া এবং দক্ষিণ গোয়া সফরে চলুন। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সিও উত্তর গোয়া ও দক্ষিণ গোয়া সফর করায়। শেষ দিনে ইচ্ছামতো ঘুরুন – কোলভার কাছেই মাড়গাঁও শহর (৮ কিমি), কিছু দূরে পানজিম শহর (উত্তরে ৩২ কিমি) বা প্যালোলেম সৈকত (দক্ষিণে ৪২ কিমি, অনিন্দ্যসুন্দর সূর্যাস্ত)। এ ছাড়াও অজস্র সৈকত আছে। স্থানীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করে চলে যেতে পারেন।
গোয়া পর্যটন উন্নয়ন নিগমের উত্তর গোয়া এবং দক্ষিণ গোয়া সফরে আগাম আসন সংরক্ষণ হয়। অনলাইন বুকিং www.goa-tourism.com ।
কোথায় থাকবেন
হরিহরেশ্বর, গণপতিপুলে, কুঙ্কেশ্বর ও তারকার্লিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র পর্যটনের রিসর্ট। অনলাইন বুকিং www.maharsahtratourism.gov.in ।
কোলভায় রয়েছে গোয়া পর্যটনের কোলভা রেসিডেন্সি। অনলাইন বুকিং www.goa-tourism.com ।
এ ছাড়া সব জায়গাতেই রয়েছে বেসরকারি হোটেল ও রিসর্ট। খোঁজ পেয়ে যাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।
মনে রাখবেন
(১) এই ভ্রমণসূচি যদি দীর্ঘ মনে হয়, তা হলে রায়গড় বাদ দিতে পারেন। আরও ছোটো করতে হলে গণপতিপুলে এক দিন কমিয়ে দিন, তারকার্লি ছেঁটে দিন। সে ক্ষেত্রে গোয়া আসার জন্য কুঙ্কেশ্বর থেকে ৪৭ কিমি দুরের কাঙ্কভলি স্টেশন থেকে ধরুন সকাল ৮.০৬ মিনিটের কোঙ্কন কন্যা এক্সপ্রেস, বেলা ১২.১০ মিনিটে পৌঁছে যান মাড়গাঁও রেলস্টেশন। এর আগে অবশ্য আরও একটি ট্রেন আছে কাঙ্কভলি থেকে , সকাল ৬.৪২ মিনিটের ম্যাঙ্গালোর এক্সপ্রেস, মাড়গাঁও পৌঁছে দেয় ৮.৫০ মিনিটে।
(২) দেড় থেকে দু’ ঘণ্টা সময় লাগে রায়গড় ফোর্টে চড়তে। হাঁটতে না চাইলে রয়েছে রোপওয়ে। গাড়ি রোপওয়ে স্টেশন পর্যন্ত যায়।
(৩) দেবগড় থেকে কুঙ্কেশ্বর ফিরুন সন্ধের পর। দেবগড়ের খুব কাছে তারামুমবারি বিচ। এখান থেকে ৫ কিমি বিচ ট্রেক করে যদি কুঙ্কেশ্বর আসতে পারেন তা হলে এক অদ্ভুত দৃশ্যের সাক্ষী থাকবেন – সামুদ্রিক দীপ্তি (ফসফোরেসেন্স)। মনে হবে সমুদ্রে আগুন লেগেছে।