চলুন সড়কপথে ১: মুম্বই থেকে গোয়া

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: সড়কযাত্রার মজাই আলাদা। তার ওপর আমাদের ভারতের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশে সড়কভ্রমণের অন্য আকর্ষণও রয়েছে। এ দেশে এমন অনেক পর্যটককেন্দ্র রয়েছে, যেখানে পৌঁছোতে হয় সড়কপথে। এ ছাড়াও সড়কভ্রমণে গেলে এমন অনেক জায়গা দেখা যায়, যে জায়গায় সাধারণ পর্যটকদের পা পড়ে না। অথচ সেই সব অনাঘ্রাতা জায়গাগুলো এক কথায় অনবদ্য। সেই সব অচেনা, অল্পচেনা গন্তব্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য চলুন বেরিয়ে পড়ি সড়কভ্রমণে। সড়কভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটান, সেই সব জায়গা চিনুন, তার পর পৌঁছে যান অন্তিম গন্তব্যে। আজ সড়কযাত্রার প্রথম কিস্তি: মুম্বই থেকে গোয়া। 

পশ্চিম ভারতের মুম্বই থেকে গোয়া সড়কভ্রমণের আদর্শ পথ। মুম্বই থেকে গোয়া যাওয়ার দুটি পরিচিত পথ রয়েছে –

(১) জাতীয় সড়ক ৬৬ ধরে। এই পথ গিয়েছে মাহাড়-খেড়-চিপলুন-সাওয়ন্তবাড়ি হয়ে। আপনি যদি পানাজিতে আপনার যাত্রা শেষ করেন তা হলে দূরত্ব পড়বে ৫৪২ কিমি।

(২) পুনে-সাতারা-কোলাপুর-আম্বোলি হয়ে। আপনি যদি পানাজিতে আপনার যাত্রা শেষ করেন তা হলে দূরত্ব পড়বে ৫৭০ কিমি।

আমরা এই দুটো পথের কোনোটাই ধরব না। আমরা যাব আরব সাগরের গা ঘেঁষে, একেবারে উপকূল এলাকা দিয়ে। অসংখ্য সৈকত দেখব, এদের মধ্যে কিছু বিখ্যাত, বেশির ভাগই নাম-না-জানা। পাহাড়ি পথ ধরে এগিয়ে যাব, বেশ কিছু নামী-অনামা মন্দির দর্শন হবে। সমুদ্রতীরবর্তী গ্রাম দেখব, আর মাঝেমাঝেই ফেরি পেরোব। এই সড়কভ্রমণে যে অভিজ্ঞতা লাভ করব, তা সারা জীবনের সঞ্চয় হয়ে থাকবে।

হরিহরেশ্বর মন্দির।

সুতরাং মুম্বই থেকে গোয়া যাওয়ার আমাদের সড়কপথ –

মুম্বই-আলিবাগ-রেবডান্ডা-কোরলাই-কাশিদ-মুরুদ-আগরদন্ডা-হরিহরেশ্বর-বাগমন্ডলা-হরনাই-দাভোল-গুহাগর-জয়গড়-গণপতিপুলে-রত্নগিরি-পাওয়াস-দেবগড়-কুঙ্কেশ্বর-মালভান-তারকারলি-বেনগুরলা-গোয়া।

ভ্রমণসূচি

প্রথম দিন – আজ চলুন মুরুদ পর্যন্ত। মুম্বই থেকে রওনা হয়ে যান সকাল সকাল। পথ কারনালা-বদখল-আলিবাগ-কাশিদ হয়ে। নবি মুম্বই ছাড়িয়ে কিছুটা আসার পর জাতীয় সড়ক ৬৬ ধরে এগোন। বদখল মোড়ে এসে জাতীয় সড়ক ছেড়ে উপকূলের পথ ধরুন। পৌঁছে যান আলিবাগ। এখানে প্রাতরাশ সারতে পারেন। অথবা আসার পথে সুবিধামতো জায়গায় প্রাতরাশ সেরে নিতে পারেন।

আলিবাগ সৈকতে কিছুক্ষণ বিচরণ করুন। যদি ভাটা থাকে তা হলে ঘোড়ার গাড়িতে চেপে সমুদ্রের উপর দিয়ে চলে যান কোলাবা ফোর্ট। যাতায়াতে ৩ কিমি মতো পথ। ঘুরে দেখে আসতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। শিবাজির গড়া এই দুর্গের বয়স প্রায় সাড়ে ৩০০ বছর।

কোরলাই ফোর্ট থেকে।

আলিবাগ থেকে যাত্রা শুরু করে চলুন মুরুদের পথে। রেবডান্ডা হয়ে কোরলাই আসুন। মূল সড়ক ছেড়ে ২ কিমি সমুদ্রের ধার বরাবর এগিয়ে গেলে পেয়ে যাবেন কোরলাই ফোর্ট।এই দুর্গের বয়স ৫০০ বছর। আহমদনগর সুলতানের অনুমতি নিয়ে পর্তুগিজরা এই দুর্গ বানিয়েছিল ১৫২১ সালে। পর্তুগিজ স্থাপত্যের নমুনা এই দুর্গ। রয়েছে লাইটহাউসও।

কোরলাই ফোর্ট ও লাইটহাউস দেখে কাশিদ সৈকতনন্দগাঁও সৈকতে খানিকক্ষণ কাটিয়ে পৌঁছে যান মুরুদ। মুম্বই থেকে দূরত্ব ১৪৭ কিমি। আজ মুরুদে রাত্রিবাস

দুপুরের আহার সেরে চলুন জঞ্জিরা ফোর্ট। মুরুদের রাজাপুরী ফেরি পয়েন্ট থেকে নৌকায় যেতে হয় এই দুর্গে। ভারতের পশ্চিম উপকূলে যতগুলি দুর্গ আছে, তার মধ্যে সব চেয়ে আকর্ষণীয় এই দুর্গ। জঞ্জিরা দ্বীপের পাটিল এবং কোলিদের প্রধান রাজা রাম রাও পাটিল জলদস্যুদের হাত থেকে কোলিদের রক্ষা করার জন্য ১৫ শতকে এই দুর্গ নির্মাণ করেন। তার পর এই দুর্গ সিদ্দিদের হাতে যায়। মুঘলদের সঙ্গে জোট বেঁধে সিদ্দিরা এই দুর্গ দখল থেকে দূরে রাখতে পেরেছে পর্তুগিজদের, ব্রিটিশদের এবং মরাঠাদের। দেখার মতো এই দুর্গের স্থাপত্য। ৪০ ফুট উঁচু দেওয়ালে ঘেরা। দুর্গ থেকে যুদ্ধ চালানোর জন্য রয়েছে ২৬টি টাওয়ার। একটা সময়ে শ’ ছয়েক কামান ছিল এই দুর্গে। এখনও তার কিছু অবশিষ্ট আছে।

জঞ্জিরা ফোর্ট।

মুরুদে আরও দুটি দ্রষ্টব্য আছে – জঞ্জিরার সিদি নবাবদের আহমদগঞ্জ প্রাসাদ এবং রাজাপুরী ফেরি যাওয়ার পথে এএসআই-এর সংরক্ষিত সিদি নবাবদের সমাধিস্থল

দ্বিতীয় দিন – আজ চলুন মুরুদ থেকে হরিহরেশ্বর। প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। আজ এই পথে পেরোতে হবে ফেরি। ১০ কিমি দূরে আগরদন্ডা জেটি। এখানে ভেসেলে নদী পেরিয়ে পৌঁছে যান ও-পারে, দিঘিতে। এখান থেকে ১৫ কিমি দূরে চলে আসুন দিবেয়াগর সৈকতে। চার কিমি দীর্ঘ এই সৈকত জুড়ে ক্যাসুরিনা গাছ। পর্যটকদের পা খুব একটা পড়ে না। সৈকতে খানিকক্ষণ কাটিয়ে পৌঁছে যান ৩ কিমি দূরে সুবর্ণ গণেশ মন্দিরে। গণেশ দর্শন করে ভরদখোল, শ্রীবর্ধন হয়ে পৌঁছে যান হরিহরেশ্বর। এই পথে মুরুদ থেকে হরিহরেশ্বর ৬৩ কিমি। পথে শ্রীবর্ধনে দেখে নিতে পারেন দাক্ষিণাত্যের হোয়সলা স্থাপত্যকীর্তির শ্রীলক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির, শ্রীবর্ধন সৈকত। রাত্রিবাস হরিহরেশ্বর

আগরদন্ডায় ফেরি পারাপার যদি বন্ধ থাকে তা হলে মনদাদ-মহসলা হয়ে ঘুরে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে আরও ১৪-১৫ কিমি বেশি দূরত্ব পাড়ি দিতে হবে। আর দিবেয়াগর ঘুরে আসতে চাইলে মহসলা থেকে আরও ১৯ কিমি পথ পাড়ি দিতে হবে। দিবেয়াগর দেখে আগের পথে চলে আসুন হরিহরেশ্বর। 

হরিহরেশ্বর সৈকত।

মধ্যাহ্নভোজ সেরে উপভোগ করুন আরব সাগরের তীরে হরিহরেশ্বর। হরিহরেশ্বর সৈকতটি অনন্য। তিন পাহাড়ে ঘেরা এই সৈকত – হরিহরেশ্বর, হরসিনহাচল ও পুষ্পদ্রি। এখানেই সাবিত্রী নদী আরব সাগরে পড়েছে। আর রয়েছে হরিহরেশ্বর মন্দির। মন্দিরচত্বরে দুটি মন্দির – প্রথমে কালভৈরব দর্শন করে হরিহরেশ্বর মন্দিরে প্রবেশ করুন। হরিহরেশ্বরকে বলা হয় দক্ষিণ কাশী। সূর্যাস্ত উপভোগ করুন।

তৃতীয় দিন – আজকের যাত্রা গণপতিপুলে পর্যন্ত। এই পথে তিন বার ফেরি পেরোতে হবে। সক্কাল সক্কাল হরিহরেশ্বর থেকে বেরিয়ে পড়ুন। সাড়ে তিন কিমি দূরে বাগমন্ডলা জেটি। এখানে ভেসেলে সাবিত্রী নদী পেরিয়ে পৌঁছে যান বেসবিতে। মিনিট দশেক লাগবে নদী পেরোতে। এখান থেকে চলুন কেলশি, মুরডি হয়ে হরনাই। মুরডি থেকে দু’ পথে হরনাই যাওয়া যায়। একটা পথ পাহাড়ের উপর দিয়ে, আর-একটা পথ সৈকত ধরে। দুটি পথের সৌন্দর্য দু’ রকম। পছন্দমতো পথ বেছে নিয়ে পৌঁছে যান হরনাই। হরিহরেশ্বর থেকে ৪৯ কিমি পথ আসা হল। এখানে প্রাতরাশ সেরে আবার পথে।

বাগমন্ডলায় সাবিত্রী নদীতে ফেরি পারাপার।

হরনাই থেকে দাপোলি হয়ে পৌঁছে যান দাভোল জেটিতে। আসা হল ৯০ কিমি পথ। পথের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। মাঝেমাঝেই দাঁড়িয়ে পড়ে ক্যামেরাবন্দি করবেন সেই সৌন্দর্য। দাভোলে ফেরিতে বশিষ্ঠি নদী পেরিয়ে পৌঁছে যান ধোপাবেতে। ধোপাবে থেকে গুহাগর হয়ে তওসল জেটি যাওয়ার পথে একটু বেপথু হোন। চলুন অঞ্জানবেল লাইটহাউস। টিলার মাথায় এই লাইটহাউস। লাইটহাউসের শীর্ষ থেকে চার দিক দেখুন, মন ভরে যাবে।

অঞ্জানবেল থেকে এগিয়ে চলুন। পথে পড়বে গুহাগর। নারকেল গাছ, আম গাছ আর সুপুরি গাছে ছাওয়া সুদীর্ঘ নিরিবিলি গুহাগর সৈকত। মন ভরে এই সৈকত উপভোগ করে পৌঁছে যান তওসল জেটিতে। ধোপাবে থেকে ৬০ কিমি পথ আসা হল। পথেই সেরে নিন দুপুরের আহার। কিংবা তওসলেও এই কাজ সারতে পারেন। এখান থেকে জয়গড়ের ফেরি ধরুন। ২০ মিনিটের জলযাত্রা আপনাকে পৌঁছে দেবে জয়গড় জেটিতে। কাছেই ১৭ শতকের জয়গড় দুর্গের ভগ্নাবশেষ। দুর্গের র‍্যামপার্ট থেকে চার দিকটা দেখে নিন।

জয়গড় দেখে চলুন গণপতিপুলে। দূরত্ব ২৪ কিমি। বিকেল বিকেল পৌঁছে যান। রাত্রিবাস গণপতিপুলে

জয়গড় ফোর্টের ধ্বংসাবশেষ।

নীল সমুদ্রের হাতছানি। সৈকত বরাবর টিলা। পরিচ্ছন্ন সৈকত। বিকেলটা কাটান সৈকতে ঘোরাঘুরি করে। সময় থাকলে দেখে নিন ৪০০ বছরের পুরোনো কোঙ্কনি স্থাপত্যের বিখ্যাত গণপতিপুলে মন্দির। পারলে পাহাড়ি পথে মন্দির পরিক্রমা করুন। মন্দির থেকে ১ কিমি দূরে প্রাচীন কোঙ্কন মিউজিয়াম। সময় না থাকলে পরদিন সকালে গণেশ মন্দির দেখে নিতে পারেন।

চতুর্থ দিন – আগের দিন মন্দির দর্শন না হলে সকালে দর্শন করে নিন। প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন তারকারলির পথে ৪ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে। এ পথের সৌন্দর্য ভোলার নয়। এই উপকূল-পথ এখনও কার্যত কুমারী। অতি উৎসাহী পর্যটক ছাড়া এ পথ কেউ মাড়ায় না।

গণপতিপুলে থেকে রত্নগিরি হয়ে তারকারলি সৈকত, পুরো পথটাই সমুদ্রের ধার বরাবর। ১১ কিমি পথ পাড়ি দিলেই পৌঁছে যাবেন যমজ সৈকত ‘আরে ওয়ারে বিচ’-এ। অপূর্ব সুন্দর এই সৈকত। এখানে আপনাকে কিছুক্ষণ সময় দিতেই হবে।

গণপতিপুলে থেকে রত্নগিরির পথে।

এগিয়ে চলুন। ডান দিকে সমুদ্রের নানা ছবি, নানা দৃশ্য, বেলাভূমিকে বেষ্টন করে সমুদ্রের নানা খেলা। আর বাঁ দিকে কখনও পাহাড়ের দেওয়াল, কখনও পাহাড়ের মাথা দিয়েই পথ – তখন ডান দিকে সমুদ্র অনেক নীচে। রাস্তা একবার উঠেছে, একবার নেমেছে। ডাইনে বাঁয়ে বাঁক নিয়ে নিয়ে এগিয়ে গেছে পথ।

পৌঁছে যান রত্নগিরি। গণপতিপুলে থেকে দূরত্ব ২৫ কিমি। রত্নগিরিতে দেখে নিন রত্নগিরি দুর্গ, ভগবতী মন্দির, বালগঙ্গাধর তিলকের জন্মস্থান, থিবো প্রাসাদ। বর্মার অধুনা মায়ানমারের শেষ সম্রাট থিবোকে এই প্রাসাদেই অন্তরিন করে রেখেছিল ব্রিটিশ। রত্নগিরি দেখে আবার রওনা।   

কখনও কোঙ্কনি গ্রামের ছায়া সুনিবিড় সবুজ উপস্থিতি, কখনও কাজুর বাগান, কখনও নারকেল বল, কখনও বা হাপুসের (অ্যালফানসো আম) হাতছানি আবার কখনও বা ক্যাজুরিনার ঘন জঙ্গল।

বালগঙ্গাধর তিলকের জন্মস্থান। রত্নগিরি।

পাওয়াস-পূর্ণগড় হয়ে এগিয়ে চলুন। চলে আসুন আদিবারে। দূরত্ব ৪৯ কিমি। এখান থেকে রাজ্য সড়ক ছেড়ে একটু বেপথু হোন। চলুন বেটিয়ে সৈকত, ৫ কিমি। পশ্চিম উপকূলের আর-একটি কুমারী সৈকতকে চিনুন।

বেটিয়ে সৈকত থেকে আরও ৬২ কিমি পথ এগিয়ে গেলে পৌঁছে যাবেন অ্যালফানসো আমের জন্য বিখ্যাত দেবগড়ে। ৬ কিমি দূরেই কুঙ্কেশ্বর। সৈকতে কিছুক্ষণ বিচরণ করে অবশ্যই দেখে নিন কোঙ্কনি স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন শিবমন্দিরটি।

আরও ৫০ কিমি পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যান তারকারলি। পৌঁছোতে পৌঁছোতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। রাত্রিবাস তারকারলি

পঞ্চম দিন – আজকের দিনটাও তারকারলিতে কাটান। আবিষ্কার করুন কোঙ্কন উপকূলের মালবন অঞ্চল। সুরু গাছে ছাওয়া তারকারলি সৈকত বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৈকত। নীল সমুদ্র আর সোনালি বেলাভূমির নয়নমনোহর মিতালি ঘটেছে এই তারকারলিতে। তারকারলি সৈকতের ১৯ কিমি উত্তরে চিওলা সৈকত এবং ৬ কিমি দক্ষিণে দেওবাগ সৈকত। আর অবশ্যই দেখে আসুন সিন্ধুদুর্গ ফোর্ট

সিন্ধুদুর্গ ফোর্ট।

মালবন সৈকত থেকে কিছু দূরে আরব সাগরের মাঝে এক দ্বীপে শিবাজির গড়া ১৭ শতকের দুর্গ সিন্ধুদুর্গ। ৪৮ একর জায়গা জুড়ে তৈরি এই দুর্গের র‍্যামপার্টটি ৩ কিমি দীর্ঘ। দেওয়ালের উচ্চতা ৩০ ফুট। মালবন থেকে ফেরিতে এই দুর্গে যেতে সময় লাগে মিনিট পনেরো। তবে বর্ষাকালে অনেক সময় এই ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। বেশ কয়েক ঘণ্টা কাটানো যায় এই সিন্ধুদুর্গে।      

ষষ্ঠ দিন – সকালে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন গোয়ার পথে। ৫৪ কিমি দূরে বেনগুরলা সৈকত। পাশেই ক্যাসুরিনা গাছে ঢাকা সাগরেশ্বর সৈকত। এখানে রয়েছে সাগরেশ্বরের ছোটো মন্দির। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে এগিয়ে চলুন। আরও ১৭-১৮ কিমি গেলে শিরোদা সৈকত। কাছেই রেদি সৈকত। এখানে রয়েছে গণপতি মন্দির। এর পর তিরাকোল ব্রিজ পেরিয়ে ঢুকে পড়ুন গোয়ায়। পৌঁছে যান আপনার গন্তব্যে। আপনার গন্তব্য যদি হয় পানাজি তা হলে রেদি সৈকত থেকে আরামবোল-মাপুসা হয়ে পৌঁছে যান সেখানে। দূরত্ব ৪০ কিমি।

এমটিডিসি রিসর্ট, গণপতিপুলে।

প্রয়োজনীয় তথ্য

(১) হরিহরেশ্বর, গণপতিপুলে ও তারকারলিতে রয়েছে মহারাষ্ট্র পর্যটনের (এমটিডিসি) রিসর্ট। অনলাইন বুকিং: https://www.mtdc.co/en/। এ ছাড়াও সব জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল, রিসর্ট, হোমস্টে রয়েছে। নেট সার্চ করলে এর সন্ধান পেয়ে যাবেন।

(২) গাড়ি ভাড়া করতে হলে মুম্বই শহরে প্রচুর কার রেন্টাল সার্ভিস রয়েছে। নেট সার্চ করলে এর সন্ধান পেয়ে যাবেন।

(৩) ফেরির সময় জেনে রাখা ভালো – (ক) আগরদন্ডায় সকাল ৮টা থেকে রাত্রি সাড়ে ৯টা পর্যন্ত প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ফেরি পারাপার করে। (খ) বাগমন্ডলা থেকে বেসবি ফেরি চলে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে এক ঘণ্টা অন্তর। (গ) দাভোল-ধোপাবে ফেরি চলাচল শুরু হয় সকাল পৌনে ৭টায়। চলে ৪৫ মিনিট অন্তর। (ঘ) তওসল-জয়গড় ফেরি চলাচল শুরু হয় সকাল ৬.৪০ মিনিটে। চলে এক ঘণ্টা অন্তর।

তবে ফেরির সময় পালটাতে পারে। কোনো কারণে ফেরি বন্ধ থাকলে ফেরি এড়িয়ে বিকল্প পথে যেতে হতে পারে। তাতে সময় একটু বেশি লাগবে।

(৪) প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধপত্র সঙ্গে রেখে দেবেন। পথেই পানীয় জল, খাবারদাবার মিলবে। জলে ভিজলে অসুবিধা হবে না এমন চটি-জুতো সঙ্গে রাখুন।

(৫) বর্ষায় এই সড়কযাত্রা করলে সঙ্গে অবশ্যই রেনকোট রাখবেন। রাস্তার অবস্থা আগাম জেনে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। কোঙ্কন উপকূলে বর্ষাকালে বেশ ভালো বৃষ্টি হয়।   

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *