ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে আজ আমরা ঘরবন্দি। লকডাউন পর্ব শিথিল করে আনলক পর্ব শুরু হওয়ার মাঝেই আমাদের পশ্চিমবঙ্গে কোথাও কোথাও আবার কড়াকড়ি লকডাউন শুরু হয়েছে। তবে নিজের বাহন থাকলে বা বাহনের ব্যবস্থা করতে পারলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে অসুবিধা নেই। এতে দেহ ও মনের একটু নড়াচড়াও হবে।
আর শারীরিক ভাবে না বেরোতে পারলেও মানসিক ভাবে বেরিয়ে পড়তে দোষ কী? কিন্তু কোন পথ ধরবেন? আসুন তারই সন্ধান করা যাক।
কলকাতা থেকে পুরী
দূরত্ব ৫০৫ কিমি। পথ কলকাতা থেকে মুম্বইগামী জাতীয় সড়ক (পুরোনো নম্বর ৬) ধরে খড়গপুর। সেখান থেকে চেন্নাইগামী জাতীয় সড়ক (পুরোনো নম্বর ৫) ধরে বেলদা, দাঁতন, বালেশ্বর, ভদ্রক, কটক, ভুবনেশ্বর, পিপলি, সাক্ষীগোপাল হয়ে পুরী চলুন। মোটামুটি ১০ ঘণ্টার জার্নি। ভোরবেলা কলকাতা থেকে বেরিয়ে পুরীতে সূর্যাস্ত দেখুন অথবা সন্ধের পর কলকাতা থেকে বেরিয়ে পুরীর সৈকতে সূর্যোদয়ের সাক্ষী থাকুন।
বৈচিত্র্যময় এই সড়কযাত্রা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। গ্রাম বাংলা ও গ্রাম ওড়িশার সবুজ প্রকৃতি আপনার মন ভোলাবেই। পথে পড়বে অনেক নদী – জলে ভরা, সুবিস্তৃত – দামোদর, রূপনারায়ণ, বৈতরণী, ব্রাহ্মণী, মহানদী, কাটজুরি। বালেশ্বরের কাছে দূরের নীলগিরি শৈলশ্রেণির সবুজ আপনাকে হাতছানি দেবে। আপনার পথের ধারেই পাহাড় সঙ্গী হবে কটকের কাছে চণ্ডীখোলে।
যদি মনে করেন আপনার গন্তব্যে পৌঁছোবেন তাড়াহুড়ো করে নয়, পথের দ্রষ্টব্য দেখে, তা হলে তো ব্রেক জার্নি করে, মাঝে কোথাও কোথাও রাত্রিবাস করে, যেতেই পারেন। পথে দেখে নিতে পারেন –
(১) সামতাবেড় – মুম্বইগামী জাতীয় সড়কে দেউলটি থেকে ডান হাতি সড়কে ৩ কিমি দূরত্বে সামতাবেড়ে কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্রের বাসভবন। রয়েছে শরৎচন্দ্রের ব্যবহৃত জিনিসপত্রের প্রদর্শনী। কাছেই রূপনারায়ণ নদ।
(২) মোগলমারি বৌদ্ধ মহাবিহার – চেন্নাইগামী জাতীয় সড়কে দাঁতন ছাড়িয়ে ১০ কিমি মতো গিয়ে ঋষিকৃপা সেতু পেরিয়ে বাঁ দিকে কিছুটা গেলেই মোগলমারির প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এখানে রয়েছে বৌদ্ধধর্মের বজ্রযান পর্বে নির্মিত বৌদ্ধ মহাবিহারের ধ্বংসাবশেষ, সখিসেনা ঢিবি ও খননকাজে প্রাপ্ত প্রত্নসামগ্রীর মিউজিয়াম।
(৩) চাঁদিপুর সমুদ্রসৈকত – চেন্নাইগামী জাতীয় সড়কে বালেশ্বর থেকে ১৩ কিমি। এখানে থাকার জন্য ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস ছাড়াও বেশ কয়েকটা বেসরকারি হোটেল আছে।
(৪) কুলডিহা, পঞ্চলিঙ্গেশ্বর, রেমুনা – চেন্নাইগামী জাতীয় সড়কে বালেশ্বর থেকে ৪১ কিমি দূরে কুলডিহা অভয়ারণ্য – ২৮২ বর্গ কিমি জুড়ে শাল, পিয়াশাল, শিশু, মহানিম, আম, জাম, বহেড়া, শিমুলে ছাওয়া অরণ্য। অরণ্য চিরে বয়ে চলেছে পাহাড়ি নদী। অরণ্যের পাঁচ কিমি ভেতরে গড়শিমুলিয়ায় রয়েছে নজরমিনার। ভাগ্য ভালো থাকলে বন্যজন্তুর দর্শন মেলে।
কুলডিহা থেকে ৩০ কিমি (বালেশ্বর থেকে ২৭ কিমি) দূরে নীলগিরি পাহাড়ে পঞ্চলিঙ্গেশ্বর – সবুজ পাহাড়, সবুজ অরণ্য – পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে ঝরনাধারা – পাহাড়ি খাদের ছোটো ফাটলে বহতা জলে পাঁচ শিবলিঙ্গের অধিষ্ঠান। কিংবদন্তি, জরাসন্ধের পূজিত এই শিবলিঙ্গ। নিভৃতে অবকাশ যাপনের আদর্শ জায়গা পঞ্চলিঙ্গেশ্বর। এখানে থাকার জন্য রয়েছে পাহাড়ের পাদদেশে ওড়িশা পর্যটনের পান্থশালা।
পঞ্চলিঙ্গেশ্বর থেকে রেমুনা ২৬ কিমি – ওড়িশি স্থাপত্যের এক গুচ্ছ মন্দিরের জন্য বিখ্যাত। তবে ১২ শতকের ক্ষীরচোরা গোপীনাথ মন্দির অবশ্য দ্রষ্টব্য। রেমুনা থেকে বালেশ্বর ৮ কিমি।
(৫) যাজপুর বিরজাক্ষেত্র – চেন্নাইগামী জাতীয় সড়কে ভদ্রক ছাড়িয়ে পানিকৈলি। সেখান থেকে বাঁ হাতি রাস্তায় ১৬ কিমি গেলে যাজপুর বিরজাক্ষেত্র – সতীর ৫১ পীঠের এক পীঠ। সতীর নাভি পড়েছিল। কথিত আছে, এখানে নাকি গয়াসুরেরও নাভি পড়েছিল। রয়েছে বিরজাদেবী তথা দুর্গার মূল মন্দির। সিংহবাহিনী দুর্গা এখানে দ্বিভুজা। রয়েছে নাভিকুণ্ড। বিরজা মন্দিরের পাশে ব্রহ্মাকুণ্ড। বৈতরণী নদীর তীরে জগন্নাথ মন্দির। পাণ্ডাদের দাবি, এটিই ওড়িশার মূল জগন্নাথ মন্দির। শ্রীচৈতন্য পুরী যাওয়ার পথে এসেছিলেন এই বিরজাক্ষেত্রে। সে স্মৃতিও ছড়িয়ে আছে চৈতন্য পাদপীঠ মন্দিরে। এ ছাড়াও এই তীর্থক্ষেত্রে রয়েছে আরও এক গুচ্ছ মন্দির।
(৬) রত্নগিরি-উদয়গিরি-ললিতগিরি – চেন্নাইগামী জাতীয় সড়কে চণ্ডীখোলের মোড় থেকে বাঁ দিকে পারাদীপগামী রাস্তায় বৌদ্ধ সংস্কৃতির পীঠস্থান ‘দ্য ওয়ান্ডার ট্রায়াঙ্গেল’ রত্নগিরি-উদয়গিরি-ললিতগিরি।
চণ্ডীখোল থেকে রত্নগিরি ৩৬ কিমি। কেলুয়া নদীর তীরে গুপ্ত রাজাদের কালের রত্নগিরি। খননে আবিষ্কৃত হয়েছে মনোরম স্তূপ, ২টি মনাস্টেরি, ৮টি মন্দির, ভিক্ষুদের আবাস-কক্ষ, অসংখ্য ছোটো স্তূপ সহ ভাস্কর্যের নানা নিদর্শন।
রত্নগিরি থেকে উদয়গিরি ১৩ কিমি। ৩মি উঁচু ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় পদ্ম হাতে বুদ্ধের মূর্তি, সঙ্গে ৮ শতকের লিপি। রয়েছে ২০০০ বছরের পুরোনো বাপী বা কুয়া।
এর পর চলুন ললিতগিরি, উদয়গিরি থেকে ১১ কিমি। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২, সাত বছরের এই খননকালে ললিতগিরিতে মিলেছে ওড়িশার প্রাচীনতম (খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক) কারুকার্যমণ্ডিত ইটে গড়া বিশাল চন্দ্রাদিত্য বিহার। এখানকার চৈত্য হলে মিলেছে তথাগতের কেশ ও অস্থি। সে কালে বৌদ্ধদর্শন শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই ললিতগিরি। এখানে রয়েছে খিলানওয়ালা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, ৪টি বিহার, একটি বিশাল স্তূপ। ভূমিস্পর্শ মুদ্রায় বিশালাকার বুদ্ধ, প্রজ্ঞাপারমিতা, তারা, অবলোকিতেশ্বর, বসুধারা সহ মহাযান শাখার নানা দেবদেবীর মূর্তি। রয়েছে এএসআইয়ের প্রত্নতত্ত্ব মিউজিয়াম।
ফিরুন চণ্ডীখোল, ললিতগিরি থেকে ২৩ কিমি।
(৭) কটক – কলকাতা থেকে পুরীগামী রাস্তা কটক দিয়েই। কটক ও তার আশেপাশে রয়েছে ওড়িশার নানা আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। কটক শহরে রয়েছে মহানদীর উত্তর পাড়ে ১৪ শতকের বারবাটি ফোর্ট। রয়েছে সুভাষচন্দ্রের পৈতৃক বাড়ি জানকীনাথ ভবন, সুভাষের স্মৃতিধন্য র্যাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল।
কটক থেকে ঘুরে আসতে পারেন –
(ক) ধবলেশ্বর – কটক থেকে ১৫ কিমি দূরে মহানদীর দ্বীপে বিষ্ণুক্ষেত্র ধবলেশ্বর। ঝোলা ব্রিজে নদী পারাপার। ১০-১১ শতকে বসতিহীন এই দ্বীপে উৎকল রাজাদের গড়া মহাকাল মন্দিরে দেবতা শিব। প্রাকৃতিক পরিবেশটি ভারী সুন্দর। মহানদী এখানে যেন কূলহারা।
(খ) ঢেনকানল – কটক থেকে ৪৭ কিমি। শিল্পসুষমামণ্ডিত বলরাম, রঘুনাথ, কুঞ্জকান্ত, শম্ভুগোপাল সহ নানা প্রাচীন মন্দির, অনুচ্চ টিলায় রাজবাড়ি ও সায়েন্স পার্ক।
(গ) কপিলাস – ঢেনকানল থেকে ২৪ কিমি দূরে ১৫০০ ফুট উচ্চতায় কৈলাস পাহাড়ে ওড়িশার শিবতীর্থ কপিলাস – ওড়িশি শৈলীতে তৈরি ভাস্কর্যময় শিবমন্দির। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শেষ ৫ কিমি জঙ্গলময় ঘাট রোড। প্রকৃতি সব কিছু ভুলিয়ে দেয়। পাদদেশে রয়েছে চিড়িয়াখানা, ঘড়িয়াল প্রজনন কেন্দ্র, সায়েন্স পার্ক।
(ঘ) সপ্তশয্যা – কপিলাস থেকে ৩১ কিমি। অরণ্যময় দুর্গম পাহাড়ে সপ্তঋষির তপস্যাস্থল – সাত পাহাড়ে সাত গুহা ও সাত ঝরনা। গাড়ি রেখে পাহাড়ি পথে ঝরনাধারায় পা ভিজিয়ে, পাখির কুজনে মোহিত হয়ে দেড় কিমি পথ চলা, তার পর শতাধিক সিঁড়ি ভাঙা। রয়েছে রঘুনাথ মন্দির। আরও ১৬ কিমি গিয়ে যতন নগর – পাহাড়ের টঙে রাজবাড়ির ভগ্নদশা। সপ্তশয্যা থেকে ফিরুন কটক, ৪৯ কিমি।
(৮) ভুবনেশ্বর – জাতীয় সড়কে কটকের পরেই ওড়িশার রাজধানী ভুবনেশ্বর। এখানে দেখে নিন –
(ক) লিঙ্গরাজ মন্দির – বিমান তথা গর্ভমন্দির, জগমোহন, নাটমন্দির ও ভোগমণ্ডপ – এই চার স্তরে গড়ে ওঠা ওড়িশি শৈলীর বিশ্ববন্দিত মন্দির। ২.৫ মিটার ব্যাসের বিশাল লিঙ্গমূর্তি। লিঙ্গরাজ মন্দিরকে ঘিরে এক গুচ্ছ মন্দির।
(খ) বিন্দু সরোবর – লিঙ্গরাজ মন্দিরের উত্তরে অদূরে বিন্দু সরোবর তথা একাম্রকানন। জনশ্রুতি, এখানে স্নান করলে সর্বপাপ নাশ হয়। এই লেককে ঘিরে ২০০ হেক্টর জুড়ে গড়ে উঠেছে বটানিক্যাল রিসার্চ সেন্টার।
(গ) অনন্ত বাসুদেব মন্দির – বিন্দু সরোবরের পুব পাড়ে। ৬০ ফুট উঁচু এই মন্দিরে দেবতা বিষ্ণু।
(ঘ) সিদ্ধারণ্য ও বিভিন্ন মন্দির – লিঙ্গরাজ মন্দির থেকে কিছুটা উত্তর-পুবে সিদ্ধ অরণ্য। রয়েছে কেদার-গৌরী প্রস্রবণ। তার পাড়ে অপূর্ব কারুকার্যমণ্ডিত ১০ শতকের মুক্তেশ্বর মন্দির। একই চত্বরে ১১ শতকের অসম্পূর্ণ সিদ্ধেশ্বর মন্দির। মুক্তেশ্বরের বিপরীতে বিশাল বটবৃক্ষের নীচে পরশুরামেশ্বর মন্দির। অদূরেই কোটিতীর্থ পুষ্করিণী। কাছেই ৬ শতকের কেদার-গৌরী মন্দির।
(ঙ) রাজারানি মন্দির – মুক্তেশ্বর মন্দিরের কিছুটা পুবে ১১ শতকে নির্মিত ৫৮ ফুট উঁচু কারুকার্যময় বিখ্যাত রাজারানি মন্দির।
(চ) ব্রহ্মেশ্বর মন্দির – রাজারানি মন্দির থেকে ১ কিমি পুবে দক্ষিণী গোপুরমধর্মী ব্রহ্মেশ্বর মন্দির।
(ছ) খণ্ডগিরি ও উদয়গিরি – চেন্নাইগামী জাতীয় সড়কের কাছেই পূর্বঘাট পর্বতমালায় মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বৌদ্ধগুহা উদয়গিরি ও জৈনগুহা খণ্ডগিরি।
(জ) নন্দনকানন – শহর থেকে ১১ কিমি উত্তরে নন্দনকানন বটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা। দুয়ের মাঝে লেক। বিভিন্ন ধরনের সাফারি রয়েছে।
(৯) ধৌলি শান্তি স্তূপ – ভুবনেশ্বর থেকে পুরীর পথে খানিকটা গিয়ে ডান দিকে ৩ কিমি যেতে ধৌলি পাহাড়ে ধৌলি শান্তি স্তূপ। এই ধৌলিতেই খ্রিস্টপূর্ব ২৬১-তে সম্রাট অশোকের সঙ্গে কলিঙ্গরাজের যুদ্ধ হয়। অনুশোচনায় দগ্ধ সম্রাট শপথ নেন, আর অসি দিয়ে নয়, এ বার জয় প্রেম আর ভালোবাসা দিয়ে। আজও খোদিত রয়েছে অশোকের শিলালিপি। ১৯৭০-এ অনুচ্চ ধৌলি পাহাড়ে জাপান ও কলিঙ্গের বৌদ্ধ সংঘের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে শান্তি স্তূপ। রয়েছে মনাস্ট্রিও।
(১০) পিপলি – ধৌলি শান্তি স্তূপ থেকে পুরীর পথে ১৩ কিমি। পিপলির অ্যাপ্লিক শিল্পের তুলনা নেই। অতুলনীয় হাতের কাজে সমৃদ্ধ আসবাবপত্র, ছাতা, ব্যাগ, ঘর সাজানোর টুকিটাকি। দেখা যায় ও কেনা যায়।
(১১) রঘুরাজপুর – পিপলি থেকে ২৮ কিমি। পুরীর পথে বেশ খানিকটা গিয়ে বাঁ দিকের পথ। পটচিত্রের গ্রাম ও বিখ্যাত ওড়িশি নৃত্যশিল্পী কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মভূমি।
রঘুরাজপুর থেকে পুরী ১০ কিমি।
পুরীতে কী দেখবেন
পুরীতে কী দেখবেন, এ কথা বাঙালিকে বলা আর মায়ের কাছে মাসির গল্প করা এক জিনিস। তবু এক বার জানিয়ে দিই – পুরীর মূল আকর্ষণ দু’টি – সমুদ্রসৈকত ও জগন্নাথ মন্দির।
এ ছাড়াও দেখে নিন জগন্নাথের মাসির বাড়ি অর্থাৎ গুণ্ডিচাবাড়ি, সিদ্ধ বকুল তথা যবন হরিদাসের সাধনপীঠ, কাশী মিশ্রর ভবন যেখানে ১৮ বছর অবস্থান করেন শ্রীচৈতন্য, বাসুদেব সার্বভৌমের বাড়ি, মার্কণ্ডেয়েশ্বর মন্দির ও সরোবর, লোকনাথ শিবমন্দির, চন্দন সরোবর, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর সমাধিমন্দির, মুটিয়া নদীর উপর আঠারোনালা, জগন্নাথ মন্দিরের উত্তর-পশ্চিমে ইন্দ্রদ্যুম্ন সরোবর, চক্রতীর্থে সোনার গৌরাঙ্গ ইত্যাদি।
পুরীর কাছেপিঠে
(১) কোনারক – পুরী থেকে মেরিন ড্রাইভ ধরে চলুন ৩৬ কিমি, দেখে নিন সূর্যমন্দির। মন্দিরের অদূরে প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম।
(২) চন্দ্রভাগা সৈকত – পুরী থেকে ৩১ কিমি, কোনারক থেকে ৫ কিমি। চন্দ্রভাগা ও বঙ্গোপসাগরের সঙ্গম। রয়েছে লাইটহাউস। কাছেই রামচণ্ডীর মন্দির।
(৩) বালিঘাই সৈকত – পুরী থেকে কোনারকের পথে ১৭ কিমি।
(৪) অস্তরঙ্গা সৈকত – কোনারক ছাড়িয়ে আরও চলুন, পুরী থেকে ৬৭ কিমি।
(৫) সাতপড়া – চিলিকা হ্রদের একটি মুখ, পুরী থেকে ৪৯ কিমি। এখান থেকে জলযানে ভেসে পড়ুন, চলুন বঙ্গোপসাগরের মুখে রাজহংস দ্বীপে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারেন কিংবা ওটিডিসি-র (ওড়িশা পর্যটন উন্নয়ন নিগম) ব্যবস্থাপনায়। জলযাত্রায় দেখে নিন ডলফিনের খেলা।
(৬) ব্রহ্মগিরি – সাতপড়ার পথে, পুরী থেকে ২৪ কিমি দূরে, আলোরনাথ তথা বিষ্ণু মন্দিরের জন্য বিখ্যাত।
(৭) বলিহারচণ্ডী সৈকত – সাতপড়ার পথে খানিকটা গিয়ে বাঁ দিকে, পুরী থেকে ২৯ কিমি।
কোথায় থাকবেন
চাঁদিপুর, পঞ্চলিঙ্গেশ্বর, কটক, ভুবনেশ্বর, ধৌলি, পুরী ও কোনারকে রয়েছে ওড়িশা পর্যটনের পান্থনিবাস। অনলাইন বুকিং: https://www.panthanivas.com/।
এ ছাড়াও পুরী-সহ বিভিন্ন জায়গায় বেসরকারি হোটেল একটু একটু করে খুলছে। নেট দেখে সন্ধান করুন এবং ফোন করে ভালো করে সব কিছু জেনে নিন।
ধবলেশ্বর, ঢেঙ্কানল ও কপিলাসে রয়েছে নিরুপমা গ্রুপের হোটেল। অনলাইন বুকিং: http://nirupamagroup.com/
মনে রাখুন
(১) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে দেশ জুড়ে লকডাউন চললেও নানা ক্ষেত্রে কিছু কড়াকড়ি শিথিল করা হয়েছে। তার মধ্যে একটি ক্ষেত্র হল পর্যটন। তবে কী ভাবে হোটেল তার অতিথিদের দেখভাল করবে তার এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) জারি করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা মাপানো ইত্যাদি সাধারণ নিয়মগুলি ছাড়া আর কী কী নিয়ম মানতে হবে তা যাত্রার আগে হোটেলের সঙ্গে ভালো করে কথা বলে জেনে নেবেন।
(২) গাড়িকে যথা সম্ভব শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত না করে জানলা খুলে চলুন। হাওয়া যতটা চলাচল করানো যায়। তাতে যাত্রাপথে মাস্ক পরে থাকলে সুবিধা হবে। আর পুরো যাত্রাপথে মাস্ক পরে থাকা বাঞ্ছনীয়। আর হাত মাঝেমাঝেই স্যানিটাইজ করবেন।
হোটেল বুকিং করুন
[booking_product_helper shortname=”puri”]