ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: পর্যটন সম্পদে রীতিমতো সমৃদ্ধ কর্নাটক। ইতিহাস, স্থাপত্য, জঙ্গল, সমুদ্র, পাহাড় – কী নেই এই রাজ্যে। সাধে এই রাজ্যের পর্যটনের স্লোগান ‘এক রাজ্য, অনেক বিশ্ব’! কিন্তু বাঙালি এই রাজ্যে বেঙ্গালুরু-মায়শুরু (মহীশুর) কেন্দ্রিক ঘোরাঘুরি করে চলে আসে। ভ্রমণ অনলাইন আপনাদের জন্য সাজিয়ে দিল উপকূল কর্নাটক ও গোয়া বেড়ানোর ভ্রমণ-ছক।
প্রথম দিন থেকে তৃতীয় দিন – দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রেনে বা বিমানে ম্যাঙ্গালুরু (ম্যাঙ্গালোর) পৌঁছোতে পারেন। অথবা বেঙ্গালুরু হয়েও ম্যাঙ্গালুরু আসতে পারেন। ভারতের সব শহরের সঙ্গে বেঙ্গালুরু ট্রেন বা বিমানপথে যুক্ত। বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে, বাসে, বিমানে বা গাড়ি ভাড়া করে ম্যাঙ্গালুরু পৌঁছোতে পারেন। সড়কপথে বেঙ্গালুরু থেকে ম্যাঙ্গালুরু ৩৫২ কিমি।
হাওড়া থেকে সরাসরি ম্যাঙ্গালুরু পৌঁছোনোর জন্য রয়েছে হাওড়া-ম্যাঙ্গালুরু সাপ্তাহিক বিবেক এক্সপ্রেস। ট্রেনটি প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেল ৩:৪৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে ম্যাঙ্গালুরু পৌঁছোয় শনিবার সকাল ১০টায়। হাওড়া থেকে বেঙ্গালুরু যাওয়ার এবং বেঙ্গালুরু থেকে ম্যাঙ্গালুরু যাওয়ার এক গুচ্ছ ট্রেন আছে।
(ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন https://erail.in/। বেঙ্গালুরু-ম্যাঙ্গালুরু বাসের জন্য দেখুন https://www.redbus.in/ , https://www.goibibo.com/ , https://bus.makemytrip.com/ , https://www.travelyaari.com/ ইত্যাদি সাইট।)
যে ভাবেই হোক তৃতীয় দিন বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবেন ম্যাঙ্গালুরু। রাত্রিবাস।
চতুর্থ দিন – আজও ম্যাঙ্গালুরুতে।
সোমেশ্বর সৈকত।
মেঙ্গালুরুতে কী দেখবেন
(১) মঙ্গলদেবী মন্দির – কেরল শৈলীর মন্দির, অধিষ্ঠিত দেবী মঙ্গলাদেবী তথা দুর্গা।
(২) গোকর্ণাথেশ্বর মন্দির – শহর থেকে ২ কিমি।
(৩) মিলাগ্রেস চার্চ – ১৬৮০-র তৈরি।
(৪) তানিভাবি এবং পনাম্বুর সৈকত – ন’ কিলোমিটার ব্যবধানে অবস্থিত ম্যাঙ্গালুরুর দুটি প্রধান সৈকত। সূর্যাস্ত নয়ানাভিরাম।
(৫) সুরতকল সৈকত – ম্যাঙ্গালুরু শহরতলিতে আরও এক সুন্দর সৈকত।
(৬) সোমেশ্বর সৈকত – ম্যাঙ্গালুরু থেকে ১৮ কিমি দক্ষিণে উল্লাল শহরে। সৈকতেই সোমনাথ মন্দির।
কালাসার পথে চা বাগান।
পঞ্চম দিন – ম্যাঙ্গালুরু থেকে চলুন কালাসা, ১১৯ কিমি। পথে দেখে নিন কারকালায় গোমতেশ্বর, বাহুবলীর মূর্তি। কারকালার কিছু পরে শুরু পাহাড়ি পথ। কুদ্রেমুখ জাতীয় উদ্যানের মধ্যে দিয়ে পথ গিয়েছে। দেখে নিন হনুমানগুন্ডি জলপ্রপাত। রাত্রিবাস কালাসা।
কালাসায় দেখে নিন
শ্রীকালাসেশ্বর শিব মন্দির, ৮ কিমি দূরে হোরোনাডুতে শ্রীঅন্নপূর্ণেশ্বরী মন্দির।
ষষ্ঠ দিন – কালাসা থেকে আবার নেমে আসুন উপকূলে। চলুন উদুপি, দূরত্ব ১১০ কিমি। রাত্রিবাস উদুপি।
সপ্তম দিন – থাকুন উদুপিতে।
মালপে সৈকত।
উদুপিতে দেখুন
(১) শ্রীকৃষ্ণ মন্দির – শহরের প্রাণকেন্দ্রে বৈষ্ণবগুরু মাধবাচার্য প্রতিষ্ঠিত তেরো শতকের মন্দির।
(২) মালপে সৈকত – উদুপির প্রধান সৈকত।
(৩) সেন্ট মেরিজ দ্বীপ – মালপে থেকে জলযাত্রা। ঘুরে আসতে সময় লাগে ঘণ্টা তিনেক।
(৪) কাউপ সৈকত – উদুপি থেকে ১২ কিমি দক্ষিণে।
(৫) কোডি বেঙ্গড়ে সৈকত – উদুপি থেকে ২০ কিমি উত্তরে।
(৬) আগুমবে – উদুপি থেকে ৫৫ কিমি, হাজার দুয়েক ফুট উঁচু। পথে চোদ্দোটি হেয়ারপিন বেন্ড। চেরাপুঞ্জি-মৌসিনরামের পর ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক বৃষ্টিপাতের স্থান। আগুমবেতে দেখুন সানসেট পয়েন্ট, রেনফরেস্ট রিসার্চ স্টেশন এবং অটোমেটিক ওয়েদার স্টেশন, চেষ্টা করুন দুপুর নাগাদ উদুপি থেকে রওনা হতে, যাতে সানসেট পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারেন। ৪০ কিমি দূরে আরব সাগরে ডোবে সূর্য। প্যানোরমিক দৃশ্য। এর পাশাপাশি আগুমবেরর অনতিদূরে রয়েছে দু’টি জলপ্রপাত যোগীগুন্ডি প্রপাত এবং কুঞ্চিকাল।
যোগ ফলস্।
অষ্টম দিন – উদুপি থেকে চলুন যোগ ফলস। পথে দেখে নিন মারাভান্থে সৈকত। দূরত্ব ১৬৩ কিমি। রাত্রিবাস যোগ ফলস।
নবম দিন – আজ চলুন গোকর্ণ। মুরুদেশ্বর হয়ে। দূরত্ব ১৭০ কিমি। রাত্রিবাস গোকর্ণে।

দশম দিন – আজও থাকুন গোকর্ণে।
আরও পড়ুন: চলুন বেরিয়ে পড়ি: কর্নাটক ১
গোকর্ণে দেখুন
(১) ওম বিচ – গোকর্ণের প্রধান আকর্ষণ। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে উলটো ‘ওম’-এর আকার।
(২) আরও এক গুচ্ছ সৈকত – সব থেকে উত্তরে গোকর্ণ সৈকত। তার পর দক্ষিণে একে একে পড়বে প্যারাডাইস সৈকত, কুদলে সৈকত, হাফ-মুন সৈকত ইত্যাদি।
(৩) মহাবলেশ্বর মন্দির – দেড় হাজার বছরের পুরোনো মন্দির।
একাদশ দিন – কারওয়ার হয়ে চলুন গোয়া। কারওয়ারে দেখে নিন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সৈকত। গোয়ায় থাকতে পারেন মারগাঁওয়ের কাছে কোলভা সৈকতে। মোট দুরত্ব ১৩৬ কিমি। রাত্রিবাস কোলভা।
প্যালোলেমে সূর্যাস্ত, দক্ষিণ গোয়া।
দ্বাদশ দিন থেকে চতুর্দশ দিন – গোয়ায় ঘোরাঘুরি।
গোয়ায় কী ভাবে ঘুরবেন
পরপর দু’দিন গোয়া পর্যটন উন্নয়ন নিগমের উত্তর গোয়া এবং দক্ষিণ গোয়া সফরে চলুন। আরও একটা দিন নিজের ইচ্ছামতো ঘুরুন – কোলভার কাছেই মাড়গাঁও শহর (৮ কিমি), কিছু দূরে পানজিম শহর (উত্তরে ৩২ কিমি) বা প্যালোলেম সৈকত (দক্ষিণে ৪২ কিমি, অনিন্দ্যসুন্দর সূর্যাস্ত)। এ ছাড়াও অজস্র সৈকত আছে। স্থানীয়দের সঙ্গে পরামর্শ করে চলে যেতে পারেন।
পঞ্চদশ দিন – মাড়গাঁও থেকে বাড়ি ফেরার ট্রেন। হাওড়া আসতে হলে অমরাবতী এক্সপ্রেস। প্রতি মঙ্গল, বৃহস্পতি, শুক্র এবং রবিবার সকাল ৭:৪৫-এ ছেড়ে হাওড়া পৌঁছোয় পরের দিন রাত সাড়ে দশটায়।
কোথায় থাকবেন
কর্নাটকের উপকূলের কোনো জায়গাতেই কর্নাটক পর্যটন উন্নয়ন নিগমের কোনো হোটেল নেই। তবে বিভিন্ন মানের বেসরকারি হোটেল এবং রিসর্ট রয়েছে। নেট সার্চ করে হোটেলের সন্ধান পেয়ে যাবেন। কোলভায় থাকতে পারেন গোয়া পর্যটন উন্নয়ন নিগমের কোলভা রেসিডেন্সিতে, একেবারে সমুদ্রের ধারে। অনলাইনে বুক করে নিতে পারে।
কী ভাবে ঘুরবেন
পয়েন্ট টু পয়েন্ট গাড়ি করে নেওয়াই ভালো।
মনে রাখবেন
(১) ম্যাঙ্গালুরু থেকে ভোর ভোর বেরোলে কারকালা দেখে, কুদ্রেমুখের মধ্য দিয়ে কালাসা পৌঁছে যাবেন দুপুরের আগে। খাওয়াদাওয়া সেরে চলে যান হোরোনাডু। শ্রীঅন্নপূর্ণেশ্বরী মন্দির দেখে ফিরে এসে কালাসায় শ্রীকালাসেশ্বর শিব মন্দির দেখুন।
(২) খুব সকালে কালাসা থেকে বেরিয়ে উদুপির শ্রীকৃষ্ণ মন্দির দেখে ঘণ্টা চারেকের মধ্যে চলে আসুন মালপে। থাকার চেষ্টা করুন মালপে বা তার কাছাকাছি। দুপুরে চলুন সেন্ট মেরিজ দ্বীপ। পরের দিন সকালে দেখে নিন কাউপ আর কোডি বেঙ্গড়ে সৈকত। দুপুরে চলুন আগুম্বে।
আরও পড়ুন: চলুন বেরিয়ে পড়ি: কর্নাটক ২
প্রয়োজনীয় তথ্য
১) কর্নাটক পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ওয়েবসাইট www.kstdc.co
২) কর্নাটক রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের ওয়েবসাইট www.ksrtc.in
৩) গোয়া পর্যটনের হোটেল এবং বাস বুকিং-এর জন্য ওয়েবসাইট https://goa-tourism.com
ডিটেল এ যে ভাবে লিখেছেন সত্যি বেড়ানোর সঠিক গাইড