paren dooars

বর্ষায় পশ্চিমবঙ্গে এক ডজন গন্তব্য

বর্ষার মরশুমে বেড়াতে যাওয়ার একটা আলাদা মজা আছে। সমুদ্রে গেলে মাছের সম্ভার, পাহাড়ি জায়গায় গেলে পাহাড়ের কোলে মেঘ লেগে থাকা উপভোগ করা, জঙ্গলে গেলে সবুজ দেখে নিজের চোখকে তৃপ্তি দেওয়া বা রাঢ়বঙ্গে গেলে বৃষ্টিভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ উপভোগ করা, সব মিলিয়ে এই বর্ষাও হয়ে উঠতে পারে আপনার ভ্রমণের প্রিয় সময়। ছোট্টো একটি ছুটিতে বেরিয়ে পড়ুন সপরিবার বা সবান্ধব। চার মাস আগে ট্রেনের টিকিট কাটার প্রয়োজন নেই, কারণ এ তো ভ্রমণের মরশুম নয়। আর রাতে মাথা গোঁজার ঠাঁই? সে-ও মিলবে, নিশ্চিন্ত থাকুন।

দিঘা বাঙালির প্রিয় দিঘা। বর্ষায় দিঘাকে অন্য ভাবে চেনা যেতেই পারে। বিচ বরাবর সৈকত সরণি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বা হোটেলের বারান্দায় বসে আপনি উত্তাল ঢেউ উপভোগ করতে পারেন। আরেকটা মজা হল ইলিশ মাছ। চলে যান ওল্ড দিঘা থেকে কিলোমিটার দুয়েক, দিঘা মোহনায়। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর, এই তিন মাস ইলিশভর্তি ট্রলার এসে পৌঁছোবে মোহনায়। এখান থেকে চলে যাবে বিভিন্ন জায়গায়। আপনি আমিষাশী হলে মাছ-ভাত অবশ্যই খান আর ইলিশ খেতে ভুলবেন না।

কী ভাবে যাবেন

অনেক রকম ভাবেই যাওয়া যেতে পারে দিঘা। কলকাতা তথা দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ বাস টারমিনাস থেকেই বাস যাচ্ছে দিঘা। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস যেমন আছে, তেমনই আছে হরেক বেসরকারি সংস্থা। অনলাইনেও বুক করা যেতে পারে দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার বাস (online.sbstcbooking.co.in)। ট্রেনেও যেতে পারেন দিঘা। প্রতি দিন হাওড়া থেকে তিনটি ট্রেন যায় দিঘা। তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস, সুপার এসি এক্সপ্রেস আর কাণ্ডারী এক্সপ্রেস। জলপাইগুড়ি থেকে সাপ্তাহিক পাহাড়িয়া এক্সপ্রেস আর মালদা টাউন থেকে সাপ্তাহিক দিঘা এক্সপ্রেসেও দিঘা পৌঁছোনো যেতে পারে। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখুন erail.in ।

কোথায় থাকবেন

থাকার জায়গার কোনো অভাব নেই দিঘায়। ওল্ড দিঘা আর নিউ দিঘা মিলিয়ে প্রায় শ’ পাঁচেক হোটেল আছে সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য। সন্ধান পেয়ে যাবেন  makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq  ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে। থাকতে পারেন পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের দিঘা টুরিস্ট লজে। তবে টুরিস্ট লজ থেকে সমুদ্র কিছুটা দূরে। অনলাইনে বুক করতে পারেন টুরিস্ট লজ (www.wbtdcl.com)। সৈকতাবাস বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুন (০৯৪৩৪২ ৩৪২২২, ০৮৯৪২০০৭৭৮৮, ০৩২২০-২৬৬২৩৪)। দিঘা থেকে স্বল্প দূরে ওড়িশা সীমানায় উদয়পুর সৈকতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ওশিয়ানা টুরিস্ট কমপ্লেক্স (০৩৩-২৩৫৮৩১২৩, ০৯৪৩৪০১৮৮৪৯)।

বকখালি

কলকাতার সব থেকে কাছের সমুদ্রসৈকত বকখালি। দিঘার পরই বাঙালির দ্বিতীয় জনপ্রিয় সৈকত। বকখালির সাদা বালিতে খেলে বেড়ান। সাবধানতা অবলম্বন করে স্নান করতে পারেন সমুদ্রে। কোস্টাল ট্রেক করে চলে যান পশ্চিম দিকে ফ্রেজারগঞ্জ সৈকত বা আরও এগিয়ে বালিয়াড়া সৈকতে। বালিয়াড়া থেকে উপভোগ করতে পারেন সূর্যাস্তও। বালিয়াড়াই এ রাজ্যে একমাত্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যাস্তও দেখা যেতে পারে।

কী ভাবে যাবেন

এসপ্ল্যানেড থেকে পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণের বাস চলে বকখালি পর্যন্ত। তবে নামখানা থেকে দশ-পনেরো মিনিট অন্তর অন্তর বাস যাচ্ছে বকখালি। শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেনে নামখানা পৌঁছোন। সেখান থেকে ভ্যান বা টোটোয় চলুন নামখানার জেটি ঘাটে। নৌকায় হাতানিয়া-দোয়ানিয়া পেরিয়ে পৌঁছে যান ও পারের বাসস্ট্যান্ডে।

কোথায় থাকবেন

বকখালিতে থাকার জন্য বেশ কিছু হোটেল থাকলেও সবচেয়ে ভালো পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের বকখালি টুরিস্ট লজ। অনলাইনে বুক করতে পারেন (www.wbtdcl.com)। বেসরকারি হোটেলের সন্ধান পাবেন  makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq  ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

গাদিয়াড়া 

হুগলি আর রূপনারায়ণের সঙ্গমে অবস্থিত গাদিয়াড়া। হঠাৎ নীল আকাশের সুনীল শোভা উধাও হয়ে যাবে। শ্রাবণগগন অঙ্গনে ছুটে আসবে পথিক মেঘের দল। তারা জোট বাঁধবে। বিছিয়ে দেবে ঘন মেঘের আঁচল নদীর বুকে। বৃষ্টি নামবে দুদ্দাড়। বর্ষা উপভোগ করবেন টুরিস্ট লজের বারান্দায় বসে। আর যখন বৃষ্টি থামবে, নদীর বুকে ভেসে পড়বেন। নৌকা নিয়ে মাঝি সব সময়েই ‘রেডি’। আর নুরপুর-রায়চক-গেঁওখালির লঞ্চ সার্ভিস তো আছেই।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে ট্রেনে বাগনান। সেখান থেকে বাসে শ্যামপুর হয়ে গাদিয়াড়ার শিবপুর। বাসস্ট্যান্ড টুরিস্ট লজ থেকে ১ কিমি। কলকাতা বা বাগনান থেকে সোজা গাড়িতেও আসতে পারেন। হাওড়া, ধর্মতলা থেকে বাসও পাবেন।

কোথায় থাকবেন

দু’একটি বেসরকারি ব্যবস্থা থাকলেও লোকেশন হিসেবে আদর্শ পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের রূপনারায়ণ টুরিস্ট লজের। লজের সব ঘরের বারান্দা থেকে নদী দৃশ্যমান। অনলাইনে বুক করতে পারেন (www.wbtdcl.com)।

কৈখালি

মাতলা আর নিমানিয়ার সঙ্গমে কৈখালি। এখানে মাতলা সাগর-অভিসারী, তাই বিশাল বিস্তার তার। আর আড়ালে পড়ে থাকা নিমানিয়া যেন অভিমানিনী। এর ঢেউ নেই, পাড় ভাঙার কাজ নেই। নিতান্তই সাদামাটা। সাগরগামিনী নয়। তার আত্মবিসর্জন এই মাতলায়। নদীবাঁধের উপর দিয়ে ইট-বাঁধানো পা-পথ। এক পশলা বা ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলে ক্ষতি নেই, বরং উপভোগ করবেন মাতলার রূপ বদলানো। মাতলা তখন সত্যি যেন মাতাল।

কী ভাবে যাবেন

শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে জয়নগর-মজিলপুর। সেখান থেকে ট্রেকার, অটো বা ভ্যানোতে জামতলা হাট হয়ে কৈখালি। সড়কপথে গড়িয়া-বারুইপুর-জয়নগর-মজিলপুর-নিমপীঠ হয়ে কৈখালি যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

নিমপীঠ রামকৃষ্ণ আশ্রম পরিচালিত কৈখালি পর্যটক আবাস। রামকৃষ্ণ আশ্রমে আগে থেকে যোগাযোগ করতে হবে। যাওয়ার দিন আশ্রম থেকে কৈখালিতে থাকার অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে হবে। (যোগাযোগ: ০৩২১৮-২২৬০০১)

টাকি

ইছামতী এখানে ভরভরন্ত। বর্ষায় সে আরও পুষ্ট। সবুজ গাছগাছালিতে ছাওয়া এই শহর বর্ষায় আরও সবুজ। নদীর তীরে দু’টো দিন বিশ্রাম নিন এখানে। নৌকায় ভেসে পড়ুন। চলে যান মাছরাঙা দ্বীপে। হাত বাড়ালেই বাংলাদেশ, নদীর ও পারে। জমিদারবাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখুন, দেখে আসুন কুলেশ্বরী কালী মন্দির, ৩০০ বছরের পুরোনো জোড়া শিবমন্দির।

কী ভাবে যাবেন

শিয়ালদহ থেকে হাসনাবাদ লোকালে টাকি রোড স্টেশন। বাসে ধর্মতলা থেকে টাকি। সড়কপথে বারাসাত-বসিরহাট হয়ে টাকি। অথবা সায়েন্স সিটি থেকে বাসন্তী রোড ধরে বানতলা ছাড়িয়ে মালঞ্চ। সেখান থেকে টাকি।

কোথায় থাকবেন

টাকিতে রয়েছে পুরসভার নৃপেন্দ্র অতিথিশালা (০৩২১৭-২৩৩৩২৮) এবং ইছামতীর পাড়েই বেশ কিছু বেসরকারি গেস্ট হাউস। মাছরাঙা দ্বীপে পঞ্চায়েত সমিতির অতিথিশালার জন্য যোগাযোগ ০৩২১৭ ২৩৩২৭৬

মাইথন

‘মজুমদার নিবাস’-এর ঘরে বসে উপভোগ করুন বর্ষা। চতুর্দিকে জলবেষ্টিত হয়ে দ্বীপাবাস। সত্যিই তাই। মূল ভূমির সঙ্গে ‘মজুমদার নিবাস’-এর দ্বীপটির যোগাযোগের জন্য রয়েছে ঝুলন্ত সেতু। সবুজ পাহাড়, বরাকর নদী আর ড্যাম-জলাধার নিয়ে মাইথন। বৃষ্টিপাতের রিমঝিম শব্দ কেমন যেন নেশা ধরায়। এক ফাঁকে ঘুরে আসুন কল্যাণেশ্বরী মন্দির। নিরালা পথে হাঁটাহাঁটি করুন, বর্ষা এখানে বিরক্ত করে না, গ্যারান্টি। না হয় সঙ্গে ছাতা রাখুন।

কী ভাবে যাবেন

সকাল ৬:১৫-র ধানবাদগামী ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেসে চড়ে বেলা ১০টা নাগাদ পৌঁছোন কুমারডুবি। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে পৌঁছে যেতে পারেন ৬ কিমি দূরে মাইথনে। কিংবা দিনের যে কোনো সময়ে ট্রেনে আসানসোল বা বরাকরে পৌঁছে যান। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে চলে যান মাইথন। সরাসরি কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে চলে যেতে পারেন মাইথন।

কোথায় থাকবেন

মাইথনে থাকার সব থেকে ভালো জায়গা হল ‘মজুমদার নিবাস’। ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় বরাকর নদীর মাঝখানে দ্বীপের ওপর অবস্থিত ডিভিসির এই অতিথিনিবাস। বুকিং-এর জন্য ডিভিসির কলকাতা অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। (০৩৩-২৩৩৩২১১৫)। থাকার জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মাইথন টুরিস্ট লজ ও আরও অনেক বেসরকারি হোটেল। মাইথন টুরিস্ট লজ অনলাইনে বুক করতে পারেন (www.wbtdcl.com)।

আরও পড়ুন বর্ষায় দেশে এক ডজন গন্তব্য : ভ্রমণ অনলাইনের বাছাই

মুকুটমণিপুর

খাতড়া থেকে রানিবাঁধের রাস্তায় খানিকটা গিয়ে ডান দিকের পথ একটু পরেই নাতিউচ্চ পাহাড় আর জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে পৌঁছে দেবে মুকুটমণিপুরে —  কংসাবতী আর কুমারীর সঙ্গমে। বর্ষায় এই পাহাড়-জঙ্গল কী অপরূপ রূপ ধারণ করে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। বর্ষা আরও ভালো ভাবে উপভোগ করা যায় পাহাড়ের ঢালে ‘সোনাঝুরি’ থেকে। নৌকায় ভেসে পড়ুন লেকের জলে, চলে যান বনপুকুরিয়া মৃগদাব। আর কাছেই অম্বিকানগর, রাইচরণ ধবলদেবের বিধ্বস্ত রাজবাড়ি। ড্যামের উপর দিয়ে রাস্তা, ৬ কিমি দূরে পরেশনাথ টিলায় শিব ও পার্শ্বনাথের মূর্তি।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে ট্রেনে বাঁকুড়া পৌঁছে, সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে মুকুটমণিপুর যেতে পারেন। ধর্মতলা থেকে বাসেও যেতে পারেন মুকুটমণিপুর। সকাল সাড়ে ৬টার বান্দোয়ানের বাসে মুকুটমণিপুর যেতে সময় লাগবে ঘণ্টা ছয়েক।

কোথায় থাকবেন

মুকুটমণিপুরে থাকার জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দু’টি ভালো ব্যবস্থা আছে। তবে পিয়ারলেস রিসর্টে ঘরভাড়া বেশি। বিশদ জানতে দেখতে পারেন ওঁদের ওয়েবসাইট (www.peerlesshotels.com/Mukutmonipur/)। রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের সোনাঝুরি প্রকৃতি ভ্রমণ কেন্দ্র। পাহাড়ের গায়ে মনোরম পরিবেশে অবস্থিত এই রিসর্ট। অনলাইনে বুক করতে পারেন (wbfdc.net)।

বড়ন্তি

আশেপাশে চারিদিকে অনেক টিলা। টিলা বলে তুচ্ছ করার মতো নয়। কারণ উচ্চতা নয়, এদের উপস্থিতিই বড়ো কথা। বর্ষায় পাহাড়গুলো সবুজ। আর সব ক’টার বুকেই ঝরনা। তাই অবিরাম সুর শুনিয়ে যায় এই পাহাড়গুলো। শাল-সেগুন-মহুয়া, নাম-না-জানা কত পাখি, রঙবেরঙের প্রজাপতি মোহময়ী করে তোলে বড়ন্তিকে।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে আসানসোল বা আদ্রা পৌঁছে সেখান থেকে প্যাসেঞ্জার/মেমু ট্রেন ধরে মুরাডি পৌঁছোতে পারেন। আসানসোল থেকে মুরাডি ট্রেনে লাগবে আধ ঘণ্টা। মুরাডি থেকে বড়ন্তি ৪ কিমি। রিকশা বা গাড়ি।

কোথায় থাকবেন

বড়ন্তিতে থাকার জন্য বেশ কিছু বেসরকারি রিসর্ট আছে। এর মধ্যে পলাশবাড়ি ইকো রিসর্ট (www.palashbari.com), আকাশমণি রিসর্ট (www.akaashmoni.in), লেক হিল রিসর্ট (www.lakehillresort.in), বড়ন্তি ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড নেচার স্টাডি হাট (barantiblog.blogspot.in) উল্লেখযোগ্য।

অযোধ্যা পাহাড়

ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড়ের এক্সটেনশন অযোধ্যা পাহাড়। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ গোরশাবুরুতে ঘন জঙ্গল আর ঝরনা। টুরগা ফলস্‌, টুরগা ড্যাম, বামনী নদীর জলপ্রপাত বর্ষায় আরও মোহময়ী হয়ে ওঠে। পাহাড়ের গায়ে শাল-শিমূল-শিরীষ-মহুয়া-সেগুনে ছাওয়া অরণ্যভূমি, বর্ষার জলে হঠাৎ সৃষ্টি হওয়া ছোটো ছোটো ঝরনা আর অসংখ্য পাখির কলকাকলি কেমন যেন আবিষ্ট করে রাখে। অযোধ্যায় দু’টো দিন কাটিয়ে ঘুরে আসুন মাঠাবুরু আর ছৌয়ের গ্রাম চড়িদা।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে অযোধ্যা যেতে গেলে নামতে হবে বরাভুম স্টেশনে। রাত ১১:০৫-এর চক্রধরপুর প্যাসেঞ্জারে করে বরাভুমে নামুন পরের দিন সকাল ৭টায়। এ ছাড়াও হাওড়া থেকে সকাল সাড়ে ৮টার দ্বিসাপ্তাহিক লালমাটি এক্সপ্রেসে বরাভুম পৌঁছোন বেলা দেড়টা নাগাদ। বরাভুম থেকে বাঘমুন্ডি হয়ে অযোধ্যা পাহাড় ৩৪ কিমি। তা ছাড়া ট্রেনে পুরুলিয়া গিয়ে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে সিরকাবাদ বা বাঘমুণ্ডি হয়ে যেতে পারেন। ট্রেনে পুরুলিয়া যাওয়ার সময় দেখে নিন erail.in  থেকে

কোথায় থাকবেন

অযোধ্যা পাহাড়ের একদম ওপরে থাকার জন্য রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিএডিসি দফতরের গেস্ট হাউস। এখানে রয়েছে মোট আটটি বাড়ি, নামগুলি: নীহারিকা, মালবিকা, মানসী, মালঞ্চ, অনামিকা, বলাকা, বিভাবরী, উপেক্ষিতা। বুকিং-এর জন্য যোগাযোগ করুণ ০৩২৫২-২২৫৭২৬

বাঘমুণ্ডিতে থাকার জন্য রয়েছে একটি দ্বি-তল হোম-স্টে আছে। আপনি মাঠাবুরুতেও থাকতে পারেন। এখানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন এজেন্সির ‘মাঠা ট্রি হাউস’। অনলাইনে বুক করতে পারেন এটি (wbsfda.gov.in)।

ঝাড়গ্রাম

খড়গপুর পেরোলেই ভূ-চিত্র বদলায়। মাটির রং লাল হয়। একটা-দু’টো করে শাল গাছ উঁকি মারতে শুরু করে। কিন্তু ছুটন্ত ট্রেন কখন যে শালের ঘন জঙ্গলে ঢুকে যায় টের পাওয়া যায় না। পেরিয়ে যায় কলাইকুণ্ডা, খেমাশুলি, সরডিহা, বাঁশতলা। ট্রেন আসে ঝাড়গ্রামে। যাকে বলে প্রথম দর্শনেই প্রেম। এ যেন শালের জঙ্গলেই স্টেশন। শহরকে খুঁজে পাওয়া যায় না। ভরা বর্ষার দিনেও শালের জঙ্গল ছাতার কাজ করে। ঘুরে আসুন জামবনি-চিল্কিগড়-গিধনি-বেলপাহাড়ি- কাঁকরাঝোর-ঘাঘরা-তারাফেনি।

কী ভাবে যাবেন

হাওড়া থেকে মোট ন’টি ট্রেনে ঝাড়গ্রাম পৌঁছোনো যায়। এর মধ্যে রোজকার ইস্পাত এক্সপ্রেস, স্টিল এক্সপ্রেস আর দ্বি-সাপ্তাহিক লালমাটি এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in

কোথায় থাকবেন

থাকার জায়গার কোনও অভাব নেই ঝাড়গ্রামে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি টুরিস্ট লজ বুক করতে পারেন অনলাইনে। (www.wbtdcl.com) । আছে পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র (wbfdc.net)। বেশ কিছু বেসরকারি রিসর্ট আছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঝাড়গ্রাম রিট্রিট (০৯৮৩১৭৪৪০৪২, ০৯৮৩৬৬৪৮২৫২)।

শান্তিনিকেতন

চুপটি করে বৃষ্টি দেখার জন্য চলে যান শান্তিনিকেতনে। বারান্দায় বসে, মস্ত বড়ো চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বর্ষা দেখুন। বৃষ্টির গন্ধ মাখা বাউল বাতাস উপভোগ করুন ঘরে বসেই। ঘরে থাকবেন না ? তা হলে চলে যান সোনাঝুরিতে, খোয়াইয়ে –- গরমে তেতেপুড়ে ওঠা ব্রহ্মডাঙার এখন আর সেই জ্বলন নেই। লাল মাটি থেকে ওঠা বর্ষার গন্ধ নিঃশ্বাসে পুরুন। ভিজে মাটির সুবাস নিন। পায়ে না হয় কাদা লাগুক। পদব্রজে চলে যান প্রান্তিকে। স্টেশনের গায়ে যে তেলেভাজার দোকান আছে, ওখান থেকে গরম গরম…। না, থাক। বেশি লোভ দেখাব না। আর রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত জায়গাগুলো ? সেগুলো না হয়, এ বার থাক। বর্ষায় এসেছেন, বর্ষাই দেখুন এই শান্তিনিকেতনে।

কী ভাবে যাবেন

শান্তিনিকেতনে ট্রেনে যাওয়াই সব চেয়ে সুবিধাজনক। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে সারা দিনে তিরিশটার ওপর ট্রেন যায় বোলপুর-শান্তিনিকেতনে। তবে হাওড়া থেকে সকাল ১০: ১০-এর শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসই সব থেকে ভালো ট্রেন। এটি বোলপুর-শান্তিনিকেতন পৌঁছোয় বেলা ১২:২৫-এ। এ ছাড়াও গণদেবতা এক্সপ্রেস, রামপুরহাট এক্সপ্রেস, সিউড়ি এক্সপ্রেসেও পৌঁছোতে পারেন শান্তিনিকেতনে। আর বর্ধমান-গুসকরা হয়ে সড়কপথ তো আছেই। দূরত্ব ১৬১ কিমি।

কোথায় থাকবেন

থাকার জায়গার কোনো অভাব নেই বোলপুর আর শান্তিনিকেতনে। পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের শান্তিনিকেতন টুরিস্ট লজে থাকতে পারেন। থাকতে পারেন বল্লভপুরে নিগমের নতুন আবাস রাঙাবিতান টুরিস্ট কমপ্লেক্সেও। অনলাইনে বুক করতে পারেন (www.wbtdcl.com)। এ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি হোটেল। সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq  ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

তবে শহর থেকে কিছু দূরে রসুলপুর গ্রামে সবুজ বন (যোগাযোগ ৮৩৪৮৫১৯০৪৬) বা দ্বারোন্দা গ্রামে বাবলি ফার্মেও (babli.org) রাত কাটাতে দারুণ লাগবে।

ডুয়ার্স

জয়ন্তী।

বর্ষা ডুয়ার্সে অফ-সিজন।  কিছু জায়গা ছাড়া ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জঙ্গল বন্ধ থাকে।  কিন্তু ডুয়ার্সকে যদি সত্যিই তার আসল রূপে দেখতে হয়, তা হলে বর্ষার তুলনা নেই। সবুজ প্রকৃতি এই সময়ে যে অপরূপ সাজে সেজে ওঠে, তা দেশের খুব কম জায়গায় গেলে দেখা যাবে। আরেকটা সুবিধা। ভিড়ভাট্টা এক দম পাবেন না, উপরন্তু হোটেল-লজ-রিসর্ট-এ পাবেন বিশেষ ‘মনসুন’ ছাড়। যদি খুব বেশি ঘোরাঘুরি করতে না চান, যদি হোটেলের বারান্দায় আয়েশ করে বসে বৃষ্টি পড়া উপভোগ করতে চান, প্রকৃতি-মাকে দু’ চোখ ভরে দেখতে চান, তা হলে বর্ষায় আপনার গন্তব্য হোক ডুয়ার্স।

কী ভাবে যাবেন

ডুয়ার্স অনেক রকম ভাবেই যেতে পারেন। ট্রেনে শিলিগুড়ি নেমে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন ডুয়ার্সের উদ্দেশে। শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে নিউ মাল জংশনে নেমে সেখান থেকেও রওনা দিতে পারেন। আবার ট্রেনে সোজা আলিপুরদুয়ার পৌঁছে সেখান থেকেও ডুয়ার্স ভ্রমণ শুরু করতে পারেন। কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন শহরেই উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার বাস চলছে। বাসের জন্য অনলাইন বুকিং redbus.in। ট্রেনের সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in

কোথায় থাকবেন

জলপাইগুড়ি জেলার পূর্বে ভূটান বর্ডারের কাছে পারেন-সুনতালেখোলা থেকে আলিপুরদুয়ার জেলার পশ্চিমে জয়ন্তী-বক্সা পর্যন্ত ডুয়ার্স বিস্তৃত। তবে বর্ষায় জঙ্গল বন্ধ থাকে বলে জলদাপাড়া বা লাটাগুড়ি এড়িয়ে যেতে পারেন। রাজাভাতখাওয়া, জয়ন্তী, মূর্তি, পারেন, সুনতালেখোলা, মালবাজারে থাকতে পারেন। সংস্কারের কাজ চলছে বলে বর্ষায় পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগমের টুরিস্ট লজগুলি বন্ধ রয়েছে। ঝালং, মূর্তি, পারেন, সামসিং, সুনতালেখোলা, রসিকবিল (কোচবিহারের কাছে) এবং বড়দাবড়িতে (হাসিমারার কাছে) পশ্চিমবঙ্গ বন উন্নয়ন নিগমের রিসর্টগুলিও দারুণ পরিবেশে তৈরি। অনলাইনে বুক করতে পারেন (wbfdc.net)। এ ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য বেসরকারি হোটেল আর রিসর্ট। সন্ধান পাবেন makemytrip, goibibo, trivago, cleartrip, holidayiq  ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে।

আরও পড়তে পারেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *