বাঁকুড়া: সবুজ জঙ্গল, খোলা আকাশ আর সামনে বিশালাকার জলাধার। কনকনে শীতের ঠান্ডায় ভরসন্ধ্যায় দাউদাউ করে জ্বলছে কাঠের আগুন। আর দূর থেকে ভেসে আসছে ধামসা মাদলের সুর। ‘ফায়ার প্লেসে’র থেকে একটু দূরেই সারি সারি মাটির উনুন আবার কোথাও ইট দিয়ে বানানো কাঠের চুলায় রান্না হচ্ছে রকমারি মাছ মাংসের পদ। একেবারে আদিবাসীদের নিজস্ব ঘরানার জিল পিঠে অর্থাৎ মাংসের পুর দেওয়া এক ধরনের পিঠে, লেটো অর্থাৎ চালের গুঁড়ো আর মাংস দিয়ে বানানো বিশেষ আদিবাসী পদ, পোড়া পিঠে, বাঁশমাংস – আদিবাসী সম্প্রদায়ের তৈরি এই সব হরেক রকম খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি। সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদ্যোগে ২৬ ডিসেম্বর থেকে ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম বার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ‘আদিবাসী ফুড ফেস্টিভ্যাল’।
আপনি কি খেতে বা খাওয়াতে ভালোবাসেন অথবা হারিয়ে যাওয়া পুরোনো আদিবাসী রান্নার স্বাদ পাওয়ার জন্য সোশ্যাল সাইট থেকে ইউটিউবে অবাধে বিচরণ করেন? তা হলে আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে জল-জঙ্গল-জলাধার আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘেরা বাঁকুড়ার রানি মুকুটমণিপুরে। মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটির ভাইস চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি বলেন, আদিবাসী অধ্যুষিত অন্যতম এলাকা হল খাতড়া। আদিবাসীদের সংস্কৃতি, লোকাচার, খাদ্যাভাস বহুজনচর্চিত। পর্যটনের মরশুমে স্থানীয় মানুষ নিজেদের তৈরি খাবার নিজেরা তৈরি করে বিক্রি করতে পারবেন। ফলে বাড়তি কিছু রোজগারের সুযোগ পাবেন। এই জন্যই এই উৎসবের আয়োজন।
খাতড়ার মহকুমাশাসক রাজু মিশ্র এ প্রসঙ্গে বলেন, “কাজের সূত্র ধরে প্রতিনিয়ত আদিবাসী গ্রামে যেতে হয়। বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানের সূত্র ধরে আদিবাসীদের খাবারের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। স্থানীয়দের কাছ থেকে এই ধরনের উৎসব করার প্রস্তাব বারবার আসছিল। সম্প্রতি গোড়াবাড়ি অঞ্চলের খড়িডুংরি গ্রামে এক আদিবাসী পরিবারের খাবার খেয়ে ভালো লাগে। তাই এত দিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রথম বার আমরা মুকুটমণিপুরে পর্যটকদের জন্য আদিবাসী ফুড ফেস্টিভ্যালের আয়োজন করতে চলেছি।”
আরও পড়ুন শীতে চলুন জয়চণ্ডী পাহাড়, রাত কাটান এইখানে
এখানেই শেষ নয় আরও চমক রয়েছে ‘আদিবাসী ফুড ফেস্টিভ্যাল’-এ। নিজস্ব ঘরানার খাবারের স্বাদ জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে স্বয়ং বিধায়ক জ্যোৎস্না মান্ডি সাধারণ মানুষের জন্য নিজের দৈনন্দিন ও পালপার্বণের খাবার তৈরি করে পরিবেশন করবেন। বিধায়কের পছন্দের ব্যাম্বু চিকেন থেকে মাংসের পিঠে, শালপাতা, লাউ পাতা পোড়া মাছ মাংস সহ বিভিন্ন ধরনের পদ থাকছে এই অভিনব উৎসবে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আবেদনের ভিত্তিতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ জন এই ‘আদিবাসী ফুড ফেস্টিভ্যাল’-এ স্টল দিতে পারবেন। সাজসজ্জাতে সাহায্য করবে প্রশাসন। রান্নার উপকরণ সংশ্লিষ্ট দলগুলির। এর জন্য বাড়তি কোনো টাকা মুকুটমণিপুর ডেভেলপমেন্ট অথরিটি নেবে না বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে।