ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের তকমা পেল ধোলাভিরা

ধোলাভিরা।

ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: গুজরাতের ধোলাভিরা ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যের (UNESCO World Heritage) তালিকায় যুক্ত হল। এই নিয়ে গুজরাতের ৪টি স্থল এবং ভারতের ৪০টি স্থল বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হল। তবে এই প্রথম সুপ্রাচীন সিন্ধু সভ্যতার কোনো স্থল এই তালিকায় এল। এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছে ইউনেস্কো।

ধোলাভিরা এই সম্মান পাওয়ায় খুব খুশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউনেস্কোর এক পোস্টের জবাবে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মোদী। তিনি বলেছেন, “এই খবরে অত্যন্ত খুশি হয়েছি। ধোলাভিরা গুরুত্বপূর্ণ নগর ছিল এবং আমাদের অতীতের সঙ্গে অন্যতম যোগসূত্র। এটা দেখা খুব দরকার, বিশেষ করে যাঁদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং পুরাতত্ত্বের প্রতি ঝোঁক আছে।”

একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, “আমার ছাত্রাবস্থায় প্রথম ধোলাভিরা গিয়েছিলাম। জায়গাটা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ধোলাভিরার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের বিষয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। পর্যটন-বান্ধব পরিকাঠামো গড়ে তোলার ব্যাপারেও কাজ করেছিল আমাদের টিম।”

কী ছিল ধোলাভিরা      

পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি পুরোনো নগরকেন্দ্রিক সিন্ধু সভ্যতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ধোলাভিরা। গুজরাতের কচ্ছ জেলায় এই ধোলাভিরা গ্রাম। এখন যেখানে এই গ্রাম তার খুব কাছেই রয়েছে একটি টিলা। আর সেই টিলার উপরে সিন্ধু সভ্যতার নগরদুর্গ। প্রত্নতত্ত্ববিদ জগৎপতি জোশী ১৯৬৮ সালে এই নগরদুর্গ আবিষ্কার করেন।

১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এখানে খননকার্য চলে। প্রত্নতত্ত্ববিদ রবীন্দ্র সিং বিশ্‌তের নেতৃত্বে এই খননকার্যের পরে সিন্ধু সভ্যতার এই প্রাচীন নগরী আবিষ্কৃত হয়। প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে এই নগরী বাণিজ্য ও নির্মাণশিল্পের কেন্দ্র ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে এই নগরী ধ্বংস হয়।

ধোলাভিরার বৈশিষ্ট্য

পাকিস্তানের মহেন-জো-দারো, হরপ্পা ও গনওয়েরিওয়ালা এবং হরিয়ানার রাখিগড়ির পর ধোলাভিরাই ছিল সিন্ধু সভ্যতার পঞ্চম বৃহত্তম নগরী। ধোলাভিরা ছিল প্রাচীরে ঘেরা এক দুর্গনগরী। নগরী দু’ ভাগে ভাগ করা ছিল – লোয়ার ও মিডল্‌। নগরীর দেওয়াল ছিল বেলেপাথর ও চুনাপাথরে তৈরি। সিন্ধু সভ্যতার অন্যান্য নগরীতে মূলত মাটি দিয়ে তৈরি ইটের দেওয়াল ছিল।

প্রত্নতত্ত্ববিদ বিশ্‌ত দেখিয়েছেন, এই ধোলাভিরায় বেশ কয়েকটা জলাধার এবং দু’টি ময়দান ছিল। ওই ময়দান দু’টি বহুমুখী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হত। এর মধ্যে একটি নানা উৎসব-অনুষ্ঠান ও বাজারের জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হত। তা ছাড়া এখানে অনন্য নকশার ন’টি প্রবেশতোরণ ছিল এবং ছিল বৌদ্ধস্তূপের মতো গোলাকার স্তূপ।

ধোলাভিরা।

কেন ধোলাভিরাকে সম্মান  

ইউনেস্কো তার বিবৃতিতে বলেছে, খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সহস্রাব্দের শেষ থেকে দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি পর্যন্ত ধোলাভিরার রমরমা ছিল। দক্ষিণ এশিয়ায় ওই সময়ে যত নগর উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল তার মধ্যে ধোলাভিরা ছিল অনন্য। এবং একে রক্ষা করা হয়েছেও খুব সুন্দর ভাবে।

খননকার্যের পরে ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই, ASI) ধোলাভিরায় একটি মিউজিয়াম গড়ে তুলেছে। প্রাচীন দুর্গনগরীর কাছেই রয়েছে উড ফসিল পার্ক। কাঠের জীবাশ্ম রক্ষিত হচ্ছে এই পার্কে। খুব কাছে ধোলাভিরা গ্রাম, যেখানে বাস করেন হাজার দুয়েক মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *