হৈমন্তীপাবর্ণ: শিবপুরে যে বারোয়ারি জগদ্ধাত্রীপুজোর সূচনা হয়েছিল রায় চৌধুরীদের উঠোনে

শুভদীপ রায় চৌধুরী

হাওড়ার শিবপুরে এমন এক বারোয়ারিপুজোয় জগদ্ধাত্রীর আরাধনা হয়, যার সূচনা হয়েছিল শিবপুরের রায় চৌধুরীদের উঠোনে। বছর তিনেক আগে সেই  পুজোর সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ পূর্ণ হয়েছে।

১৯৭০ সালে এই পুজো শুরু হয়। সেই সময়ে রায় চৌধুরী পরিবারের ঠাকুরদালানে দুর্গাপুজো ও কালীপুজো ছাড়া সে অঞ্চলে আর কোনো পুজো হত না। সে কারণেই অঞ্চলের কিছু বাসিন্দা এবং রায় চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা মিলে শুরু করলেন মা জগদ্ধাত্রীর আরাধনা।

শারদীয়া মহাপূজা যেমন চার দিনের হয়, সন্ধিপূজা, কুমারীপুজো যেমন মহাপূজার অঙ্গ হিসাবেই পরিচিত, তেমনই শিবপুরের বাসিন্দারাও ঠিক করলেন যে ঠিক দুর্গাপুজোর মতোই জগদ্ধাত্রীপুজোও করবেন চার দিন ধরে এবং সেখানে সন্ধিপূজা, কুমারীপুজো সমস্তই অনুষ্ঠিত হবে। এ ভাবেই প্রথম দু’ বছর রায় চৌধুরীদের উঠোনেই সম্পন্ন হয় দেবীপূজা।

পুজো যখন তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করে তখন সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন যে তাঁরা এই পুজোটি আর রায় চৌধুরীদের উঠোনে করবেন না, পুজোটি বাড়ির চার দেওয়ালের বাইরে নিয়ে আসবেন। সেইমতো ব্যবস্থা হয়। তবে সে বছর একটা বিপত্তি ঘটে। জগদ্ধাত্রীপুজোর নবমীর দিন রাত্রিবেলা কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দেবীপ্রতিমাটি আগুনে পুড়ে যায়, তবে প্যান্ডেল অক্ষত অবস্থাতেই থাকে। পরের দিন পুজো কমিটির সদস্যরা আবার নতুন প্রতিমা এনে চার প্রহরে পুজো করে তার পর নিরঞ্জনের পথে রওনা হন। এই ঘটনার পরেও অবশ্য রায় চৌধুরী বাড়ির বাইরেই পুজো হতে থাকে।

১০৮টি প্রজ্জ্বলিত দীপশিখা।

চার দিনের পুজোয় ষষ্ঠীর দিন দেবীর অধিবাস হয়। দুর্গাপুজোয় সন্ধিপূজা থাকলেও জগদ্ধাত্রীপুজোয় এর কোনো বিধান নেই, তবুও শিবপুরের এই পুজোয় অষ্টমী এবং নবমীর সন্ধিক্ষণে একটি বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। এই সময়ে দেবীকে চামুণ্ডা রূপেই পুজো করা হয়। সেই সময় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম, ১০৮টি প্রজ্জ্বলিত দীপশিখা নিবেদন করা হয়।

পুজোর তিন দিনই দেবীকে অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। পুজোর সকালে চালের নৈবেদ্যভোগ, নানা রকমের ফল দেবীকে নিবেদন করা হয় এবং দুপুরে খিচুড়িভোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে নানা রকমের ভাজা, তরকারি, চাটনি, পায়েস ইত্যাদি। সন্ধ্যায় দেবীকে লুচিভোগ দেওয়া হয়। তবে সন্ধিক্ষণের পুজোয় কোনো রকম অন্নভোগ হয় না। সেই সময় ঘি-মধু দিয়ে শুকনো চাল মেখে নিবেদন করা হয় দেবীকে, সেই সঙ্গে নানা ফল, মিষ্টিও। দশমীর দিন কনকাঞ্জলিপ্রথাও রয়েছে এখানে।

আরও পড়তে পারেন

সোনায় মুড়ল কেদারনাথ মন্দিরের গর্ভগৃহ, সাজানো হল সাড়ে পাঁচশো পাতে

নভেম্বরে কাশ্মীরে জাফরান উৎসব, শিকারা উৎসব, প্রস্তুতি তুঙ্গে

৭৫ বছরে সর্বোচ্চ পর্যটক আগমন রেকর্ড করল জম্মু-কাশ্মীর

চলুন ঘুরে আসি রাজস্থান ১: আগ্রা-ভরতপুর-দৌসা-জয়পুর-সরিস্কা-অলওয়র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *