ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রথম আছড়ে পড়ে কেরল উপকূলে। তাপদগ্ধ দেশে নামে বর্ষা। এই বর্ষার আগমন উপভোগ করতে আপনি যেতেই পারেন কেরলের কোভলমে, পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সৈকতশহরে। নীল সমুদ্র, নাতি উচ্চ পাথুরে পাহাড় এবং অম্লান সৈকত নিয়ে কোভলম। আপনি মুগ্ধ হবেনই।
বর্ষার আগমন বুঝতে মে মাসের ৩০-৩১ তারিখ থেকে জুন মাসের ৭-৮ তারিখের মধ্যে কয়েকটা দিন কোভলমে কাটান। বৃষ্টি উপভোগ করুন আর তার সঙ্গে একেবারে চষে ফেলুন কোভলম।
কোভলমের তিনটি সৈকত
১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ অর্ধচন্দ্রাকার সমুদ্র-উপকূলে রয়েছে তিনটি সৈকত বা বিচ –
লাইটহাউস বিচ – সব চেয়ে দক্ষিণের সৈকতটির নাম লাইটহাউস বিচ। এটিই কোভালমের সব চেয়ে জনপ্রিয় বিচ। ৩৫ মিটার উঁচু কুরুমসল টিলার মাথায় রয়েছে পুরোনো দিনের ভিড়িনজাম লাইটহাউস। তাই লাইটহাউস সংলগ্ন সৈকতটির নাম লাইটহাউস বিচ। লাল-সাদা বালির সৈকত।

হাওহা বিচ – এর আদত নাম ইভস্ বিচ, তবে লোকে হাওহা বিচ নামেই ডাকে। লাইটহাউস বিচের উত্তরে। দিনে দিনে বেড়াতে এসে যাঁরা ফিরে যান, তাঁরা বেশির ভাগই হাওহা বিচে আসেন। বাস আর ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের খুব কাছে। সারা দিনই জমজমাট। আর এই বিচে মৎস্যজীবীরাও খুব সক্রিয়।
সমুদ্র বিচ – আর দু’ কিলোমিটার উত্তরে সমুদ্র বিচ। এক বিশাল শৈলান্তরীপ একে দক্ষিণ থেকে আড়াল করে রেখেছে। তুলনায় নির্জন এই সমুদ্রসৈকত।
কাছেপিঠে
করামনা নদী – সহ্যাদ্রি পাহাড়মালার দক্ষিণাংশে শুরু হয়ে এই নদী কোভলমের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়ে আরব সাগরে পড়েছে।
ভিড়িনজাম লাইটহাউস – লাইটহাউসের শীর্ষ থেকে সমুদ্রের দৃশ্য উপভোগ করুন।
ভিড়িনজাম হারবার – লাইটহাউস থেকে ১ কিলোমিটার দক্ষিণে। মৎস্যজীবীরা এখান থেকে রোজ বেরিয়ে পড়েন সমুদ্র অভিযানে।

ভিড়িনজাম গুহামন্দির ও মসজিদ – ভিড়িনজাম হারবারের কাছেই এক বিশাল বটগাছের তলায় রক কাট কেভ টেম্পল তথা পাথর কেটে যে গুহামন্দির তৈরি করা হয়েছে তা অষ্টম শতকের। এই অপরূপ ভাস্কর্য দীর্ঘদিন মানুষের চোখের আড়ালে ছিল। ইদানীং এটি আবিষ্কৃত হয়েছে। কাছেই রয়েছে দু’টি সমুদ্রমুখী মসজিদ।
ভিড়িনজাম মেরিন রিসার্চ অ্যাকোয়ারিয়াম – অদ্ভুত দর্শন সামুদ্রিক মাছ, প্রবাল ও সামুদ্রিক প্রাণী দেখার জন্য চলে আসুন এখানে, লাইটহাউস থেকে ৫০০ মিটার দূরে। এখানে মুক্তও দেখতে পাবেন।
হ্যালসিয়ন ক্যাসল – লাইটহাউস থেকে ৪ কিমি দূরে, একে কোভলম প্রাসাদও বলা হয়ে থাকে। ১৯৩২ সালে কেরলের স্থাপত্যশৈলী ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্যশৈলীর মিশ্রণে তৈরি এই প্রাসাদ এখন হেরিটেজ হোটেল হলেও দর্শকদের জন্য খোলা।
ভেল্লাইয়ানি লেক – সাড়ে ৫ কিলোমিটার দূরে মিষ্টি জলের লেক ভেল্লাইয়ানি। এর স্বাভাবিক সৌন্দর্যের জন্য পর্যটকরা এখানে ভিড় জমান।
চাওয়ারা – সাড়ে ৭ কিমি দূরে মৎস্যজীবীদের ছোট্ট শহর। রয়েছে একটা সুন্দর সৈকত। কেরলের বিখ্যাত আয়ুর্বেদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে এখানে আসতে পারেন।

অল্প দূরে
তিরুঅনন্তপুরম – ১৪ কিলোমিটার দূরে কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম। এখানে দেখে নিতে পারেন পদ্মনাভস্বামী মন্দির, ষণগুমুঘম বিচ, ভেলি ট্যুরিস্ট ভিলেজ, নেপিয়ার মিউজিয়াম, পার্ক ভিউ তথা জু ও বটানিক্যাল গার্ডেন, ওই চত্বরেই আর্ট মিউজিয়াম, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম, শ্রীচিত্রা আর্ট গ্যালারি ইত্যাদি।
আরও দূরে
ইচ্ছা হলে আরও দূরে যেতে পারেন। দেখে নিতে পারেন –
ভারকালা সমুদ্রসৈকত – কোভলম থেকে ৫২ কিলোমিটার উত্তরে। নিরালা নির্জন প্রকৃতির মাঝে অনিন্দ্যসুন্দর এই বিচ। কাছেই ১১৫২ সালে তৈরি শ্রীজনার্দন স্বামী মন্দির। গাছগাছালির মাঝে সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয় মন্দিরে।
নেয়ার ড্যাম/ওয়াইল্ডলাইফ স্যাঙ্কচুয়ারি – কোভলম থেকে ৩০ কিমি পুবে, পশ্চিমঘাট পাহাড়মালার পাদদেশে। পাহাড়ে ঘেরা জলাশয়ে রয়েছে ছোটো ছোটো দ্বীপ। রয়েছে লায়ন সাফারি, কুমির প্রকল্প ইত্যাদি।
পোনমুড়ি – নেয়ার ড্যাম দেখে চলে যেতে পারেন, আরও ৪৮ কিমি। ১০৬৬ মিটার উচ্চতায় কেরলের শৈলশহর। লোয়ার ও আপারে বিভক্ত পোনমুড়ির নিসর্গ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
পদ্মনাভপুরম – দক্ষিণে কন্যাকুমারীর পথে কোভলম থেকে ৪৮ কিমি দূরে। ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের রাজধানী ছিল এই পদ্মনাভপুরম। ৬.৫ একর জুড়ে বিশাল প্রাসাদ কমপ্লেক্স।
কন্যাকুমারী – পদ্মনাভপুরম থেকে আরও ৪৩ কিমি দক্ষিণে। ভারতীয় মূল ভূখণ্ডে শেষ জনপদ। বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরের মিলনক্ষেত্র।

কী ভাবে যাবেন
দেশের যে কোনো জায়গা থেকে ট্রেনে বা বিমানে চলে আসুন কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন কোভলম, দূরত্ব ১৪ কিলোমিটারের মতো।
কোথায় থাকবেন
কোভলমে থাকার মতো অজস্র জায়গা আছে। সমুদ্র বিচে কেরল পর্যটনের যে ‘হোটেল সমুদ্র’ আছে তার জন্য অনলাইন বুকিং করতে পারেন ktdcbooking.com –এ।
লাইটহাউস বিচে থাকতে হলে যোগাযোগ করতে পারেন ভ্রমণ সংস্থা ট্রাভেলিজম-এর (Travelism) সঙ্গে। যোগাযোগ: 9903763296 নেট সার্চ করলে আরও হোটেলের সন্ধান পাবেন।
আরও পড়তে পারেন
হাওয়া বদলের পশ্চিমে – বর্ষশেষে শিমুলতলা চলুন ট্র্যাভেলিজমের সঙ্গে