ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: এক দিকে দিগন্ত বিস্তৃত বেলাভূমি, অন্য দিকে সুউচ্চ পর্বতমালা। মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে একের পর এক খাঁড়ি। এমন এক রাজ্য যার একটা অঞ্চলে শুধুমাত্র জলকে কেন্দ্র করেই জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর এই কেরল তাই অনন্য। সমুদ্রতলের নীচে অবস্থিত জায়গা দেখতে চাইলে সেটাও কেরলেই পাবেন।
ইতিহাস, বন্যপ্রাণী, কনকনে শীত, সমুদ্রের কোলে সূর্যাস্ত যদি একটা অঞ্চলের মধ্যে পেয়ে যেতে চান, তা হলে সেটা কেরল।
এ হেন কেরলে কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখবেন, তার তালিকা করা যায় না। মনে হয় সব কিছুই দেখি। তাও দিন দশেকের ভ্রমণে সব কিছু তো দেখা যায় না। তাই কেরলের কোন জায়গার কী বিশেষত্ব সেটা সংক্ষেপে দেওয়ার চেষ্টা করি।
কোচি
মাত্তানচেরি। এ যেন একটা আধুনিক শহরের মধ্যে সম্পূর্ণ আলাদা একটা শহর, যেখানে পরতে পরতে প্রাচীনত্বের ছোঁয়া। এটি কোচির জিউ টাউন, তথা ইহুদিদের অঞ্চল। এখানে রয়েছে সিনাগগ এবং মাত্তানচেরি প্রাসাদ। জিউ টাউন দিয়ে হেঁটে যেতে আপনার দারুণ লাগবে।
কিছু দূরে সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ। ভারতের অন্যতম পুরোনো গির্জা। পর্তুগিজ অভিযাত্রী ভাস্কো দা গামাকে এখানেই প্রথম সমাহিত করা হয়। পরে তাঁর দেহ পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে নিয়ে যাওয়া হয়। ভাস্কো দা গামার দেহ না থাকলেও তাঁর স্মৃতিপ্রস্তরটি রয়েছে।
কোচির বিকেলটা কাটুক চাইনিজ ফিশিংনেটে। বেম্বানাড় লেকের ধারে এই ফিশিংনেটে সূর্যাস্ত নয়নাভিরাম।

মুন্নার
হাজার পাঁচেক ফুট উচ্চতায় কেরলের জনপ্রিয় শৈলশহর। মুন্নার ঢোকার কিলোমিটার দশেক আগে চারিদিকের সৌন্দর্য বদলে যায়। রাস্তা চা বাগানের মধ্যে দিয়ে। এই যাত্রাটা এত সুন্দর যে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ঘন মেঘকে কাটিয়ে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দারুণ লাগবে।
মুন্নার শহরের কাছেই অবস্থিত এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান। নীলগিরি থরের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়াও রয়েছে টপ স্টেশন, মাটুপেট্টি ড্যাম, ইকো পয়েন্ট ইত্যাদি। আর মুন্নারের আশেপাশে রয়েছে বেশ কিছু জলপ্রপাতও।

যদি একটু সাহসী পদক্ষেপ করতে চান, তা হলে জিপে করে চলুন কলুক্কুমালাই টপে। মুন্নার থেকে কলুক্কুমালাই যাত্রা কিন্তু আপনার স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
পেরিয়ার
পৃথিবীতে সাতটি নিমজ্জিত অভয়ারণ্য রয়েছে। তার মধ্যে ভারতে রয়েছে মাত্র একটি এবং সেটি পেরিয়ার অভয়ারণ্য। সাতশো সাতাত্তর বর্গ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে থাকা পেরিয়ার যেন এক বিস্ময়কর অভয়ারণ্য।
দেড় ঘণ্টার বোট সাফারিতে দেখে নিন পেরিয়ারের জঙ্গলকে। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা মিলতে পারে হাতি, হরিণ-সহ নানা রকম বন্যজন্তু। আর এই জঙ্গলে হেঁটে ঘোরারও ব্যবস্থা আছে।

কুট্টানাড়
আলেপ্পি জেলার কুট্টানাড় — Land Below The Sea Level. অর্থাৎ, ভারতের একমাত্র জায়গা যা অবস্থিত সমুদ্রতলের নীচে। কেরলের শস্যভাণ্ডার বলা হয় এই অঞ্চলকে। কিন্তু সেই কৃষিজমি আবার বছরের ৮ মাস থাকে জলের নীচে।
আলেপ্পি বিখ্যাত হাউসবোটের জন্য। এই অসাধারণ জলযানে একটা গোটা দিন কাটিয়ে ঘুরে নিন আলেপ্পির নানা প্রান্ত। জলকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ কী ভাবে জীবন অতিবাহিত করে, সেটাও চাক্ষুষ করুন।

ভারকালা
যেন এক টুকরো গোয়া। সোনালি বালুতট, নীলচে সবুজ সাগর, সবুজ নারকেল গাছের প্যারেড আর পাহাড়ের লাল দেওয়াল। প্রকৃতির এই হরেক রঙের শেড মন কেড়ে নেবে।
এই সমুদ্র শহরের প্রধান আকর্ষণ এখানকার ক্লিফ, অর্থাৎ পাহাড়ের লাল খাড়াই খোয়াইয়ের মতো অংশ যেটা সমুদ্রতটের একদম গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। সমুদ্রতল থেকে ২৫ মিটার উঁচু এই ক্লিফ বিস্তৃত সাড়ে ৭ কিলোমিটার।

কোভালম
অর্ধচন্দ্রাকৃতি বেলাভূমি। দু’দিকে দুটো বড়ো বড়ো শিলাখণ্ড। কখনও উদ্দাম ঢেউ সেই শিলাখণ্ডের গায়ে ধাক্কা খেয়ে ফোয়ারার মতো উঁচুতে উঠে যাচ্ছে, কখনও আবার শান্ত জলরাশির সাদা ফেনা ভিজিয়ে দিচ্ছে মসৃণ বালুকাতট।

কোভালমে একটা দিন কাটান স্রেফ এই সমুদ্রশহরকে উপভোগ করার জন্য, সূর্যাস্ত দেখার জন্য, কেনাকাটার জন্য। কোভালম থেকেই ঘুরে আসুন কন্যাকুমারী।