কুঙ্কেশ্বর, কোঙ্কন উপকূলের এক মুক্ত

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: পশ্চিম উপকূলের সৌন্দর্য অতুলনীয়। গোয়া এবং কেরলের বাইরে পুরো উপকূলটাই বাঙালি পর্যটকদের কাছে অপরিচিত। আজ চলুন পশ্চিম উপকূলের এমনই এক অসাধারণ জায়গা মহারাষ্ট্রের কুঙ্কেশ্বর।

সাগর আর পাহাড়ের মিতালির আদর্শ জায়গা যদি থাকে ভূভারতে তা হল কোঙ্কন উপকূল। উপকূল বরাবর নাতি-উচ্চ পাহাড় আর তার মাঝে মনোরম সব সৈকত। এই কোঙ্কন উপকূলের মুক্তো হল কুঙ্কেশ্বর। মনোমুগ্ধকর সাগরবেলা আর কোঙ্কনি শৈলীর এক অপরূপ শিবমন্দির, এই নিয়ে কুঙ্কেশ্বর। দু’ দিন থাকলে আপনি যে কুঙ্কেশ্বরের প্রেমে পড়ে যাবেন, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।      

সমুদ্রের নীল জল যেখানে সৈকতের সাদা বালি ভিজিয়ে দেয়, সেখানেই রয়েছে শিবমন্দিরটি, যে মন্দিরে শিবাজি মহারাজও এক সময় এসেছিলেন। একাদশ শতকে যাদব রাজারা এই মন্দির নির্মাণ করেন। তবে এই মন্দির নির্মাণ নিয়ে যে কাহিনি প্রচলিত আছে, তা শুনলে আমাদের মধ্যে ধর্ম নিয়ে আর কোনো দ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়। কয়েক শো বছর আগে এক আরব ব্যবসায়ীর মাস্তুলবিশিষ্ট জাহাজ কুঙ্কেশ্বরের উপকূলে ভীষণ ঝড়ে পড়ে।

চতুর্দিক অন্ধকার, কোনো কূলকিনারা দেখা যায় না। হঠাৎ অনেক দূরে চোখে পড়ে এক ক্ষুদ্র আলোর বিন্দু। সেই আলোই পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে জাহাজকে। জাহাজ নিরাপদে এসে ভেড়ে কুঙ্কেশ্বরের সৈকতে। সেই আলো ছিল ছোট্ট এক শিবমন্দিরের প্রদীপের আলো। ভগবান শিবই তাঁকে বাঁচিয়েছেন, এই বিশ্বাসে নতুন করে মন্দির গড়ে দেন ওই ব্যবসায়ী।

কাছেপিঠে কী দেখবেন

(১) দেবগড় – এখানে রয়েছে সৈকত, এক গুচ্ছ মন্দির এবং ফোর্ট। কুঙ্কেশ্বর থেকে সোজা পথে মুমব্রি খাঁড়ি পেরিয়ে খুবই কাছে, ৬ কিমি। ঘুরপথে গেলে যেতে হয় জামসান্দে হয়ে, দূরত্ব ১৯ কিমি।

নাম শুনেই বোঝা যায় দেবতাদের আবাসভূমি দেবগড়। মন্দিরগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গজবাদেবী মন্দির ও বিমলেশ্বর (শিব) মন্দির। জামসান্দেতে রয়েছে দির্বা দেবী মন্দির।

দেবগড়ের মনোরম সাগরবেলা ২ কিমি দীর্ঘ, বাসস্ট্যান্ড থেকে ২ কিমি দূরে।

দেবগড় ফোর্ট সমুদ্রের ধারে, বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩ কিমি দূরে। কাছেই লাইটহাউস।

(২) তারা মুমব্রি সৈকত – দেবগড় সৈকত থেকে দক্ষিণে আড়াই কিমি দূরে আরও এক আকর্ষণীয় সৈকত।

(৩) বিজয়দুর্গ – কুঙ্কেশ্বর থেকে ৩৪.৫ কিমি, দেবগড় থেকে ২৮ কিমি। সিন্ধুদুর্গ উপকূলের সব চেয়ে প্রাচীন দুর্গ। এই দুর্গের নির্মাণকাজ চলে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০৫ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। শিলাহার বংশের  রাজা ভোজ (দ্বিতীয়) এই দুর্গ নির্মাণ করেন। পরে শিবাজি মহারাজ এর পুনর্নিমাণ করেন। দুর্গের ১ কিমি আগে সমুদ্রসৈকত।        

কী ভাবে যাবেন

দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে ট্রেনে বা বিমানে মুম্বই আসুন। মুম্বই থেকে ট্রেন ধরে চলুন কাঙ্কবলি। অনেক ট্রেন আছে। তার মধ্যে সুবিধাজনক –

(১) জনশতাব্দী এক্সপ্রেস – ছত্রপতি শিবাজি (সিএসটি) টার্মিনাস থেকে ছাড়ে ভোর ৫:১০ মিনিটে, কাঙ্কবলি পৌঁছোয় সকাল ১১.৪৮ মিনিটে।

(২) মান্ডবী এক্সপ্রেস – সিএসটি ছাড়ে সকাল ৭.১০-এ, কাঙ্কবলি পৌঁছোয় বিকেল ৩.৩০ মিনিটে।

(৩) ম্যাঙ্গালোর এক্সপ্রেস – সিএসটি ছাড়ে রাত ১০.০২ মিনিটে, কাঙ্কবলি পৌঁছোয় ভোর ৫.০৬ মিনিটে।

(৪) কোঙ্কনকন্যা এক্সপ্রেস – সিএসটি ছাড়ে রাত ১১.০৫ মিনিটে, কাঙ্কবলি পৌঁছোয় সকাল ৬.৪২ মিনিটে।

কাঙ্কবলি স্টেশন থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিন, কুঙ্কেশ্বর ৫২ কিমি।

মুম্বই থেকে বাসে আসুন দেবগড় (Devgad), ৪২৯ কিমি। সেখান থেকে গাড়িতে বা অটোয় চলে আসুন কুঙ্কেশ্বর, ১৯ কিমি। মুম্বই থেকে সরাসরি গাড়িতেও আসতে পারেন কুঙ্কেশ্বরে।               

কোথায় থাকবেন

কুঙ্কেশ্বরে থাকার সবচেয়ে ভালো জায়গা মহারাষ্ট্র পর্যটনের (এমটিডিসি) রিসর্ট। অনলাইন বুকিং mtdc.co । মন্দিরের কাছেই রয়েছে মায়েকার্স হলিডে হোম। বিশদে জানার জন্য দেখুন http://mayekarsholidayhome.in/

আরও পড়তে পারেন

মন্দিরনগরী মল্লভূমে ইতিহাসের হাতছানি

শান্তিপুরের রাস উৎসবকে পর্যটন মানচিত্রে তুলে আনার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

বেঙ্গল সাফারি পার্কে নতুন আকর্ষণ, বছর শেষের আগেই সিংহ সাফারি

বাঁকুড়ায় নতুন ট্রেক রুটের সন্ধানে অভিযান চালালেন ১৬ জন অভিযাত্রী

        

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *