অবন্তীপোরার অবন্তীস্বামী মন্দিরে লুকিয়ে আছে কাশ্মীরের অজানা ইতিহাস

ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: কাশ্মীরেই কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গিয়েছে অবন্তীস্বামী মন্দির। পর্যটকদের কাছে এখনও সে ভাবে পরিচিতি নেই এই মন্দিরের।

কাশ্মীর উপত্যকার অন্যতম বড়ো জনপদ অবন্তীপোরা। সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই এই জায়গার নাম ভেসে ওঠে। ভাবলে অবাক লাগে শ্রীনগর থেকে কিলোমিটার তিরিশেক দূরে এই অবন্তীপোরা আজ থেকে তেরোশো বছর আগে কাশ্মীরের রাজধানী ছিল।

উৎপল সাম্রাজ্যের রাজা অবন্তীবর্মা দক্ষিণ ভারত থেকে এসেছিলেন কাশ্মীর বিজয়ে। ৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে কারকোট সাম্রাজ্যের পতন ঘটিয়ে কাশ্মীরে উৎপল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন অবন্তীবর্মা।

নিজেদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর দুটি মন্দির স্থাপন করেন অবন্তীবর্মা। শিবমন্দির তথা অবন্তীশ্বর মন্দির এবং এই বিষ্ণুমন্দির, তথা অবন্তীস্বামী মন্দির। অবন্তীস্বামী মন্দির থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত অবন্তীশ্বর মন্দিরটি। অবন্তীবর্মার নাম অনুযায়ীই এই জায়গার নাম হয় অবন্তীপুর, যা কালক্রমে অবন্তীপোরা হয়ে ওঠে।

মন্দিরের কারুকার্য এক কথায় অতুলনীয়। একটা পাথরে খোদাই করা রয়েছে, রাজা অবন্তীবর্মার মূর্তি। তাঁর দু’পাশে দুই রানি এবং দুই বাঘ। এই মন্দিরের কারুকার্যের সঙ্গে মিল রয়েছে মধ্যপ্রদেশের খাজুরাহো মন্দিরেরও। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার, গোটা মন্দির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়নি কোনো চুন, বালি বা ওই ধরনের কিছু। অদ্ভুত সুচারু এবং শৈল্পিক ভাবে ইটের সঙ্গে ইট ‘ইন্টারলক’ করে বানানো হয়েছে সুবিশাল মন্দির।

মন্দিরের চত্বরের ভিতরে রয়েছে পাঁচটা ছোটো মন্দির। তার মধ্যেই যেটি বড়ো এবং প্রধান, সেটিই বিষ্ণুমন্দির। ভগবান শ্রীবিষ্ণুর পায়ের নীচে ছিল শেষনাগ। পাঁচটা মন্দিরের সমাহার বলে এই মন্দিরকে পঞ্চপাণ্ডবও বলা হয়। স্থানীয়রা এই মন্দিরকে বলেন ‘পাণ্ডব লরি’ অর্থাৎ পাণ্ডবদের ঘর।

১৪ শতকে মুসলিম শাসনের আগ্রাসনের কারণে নাকি ষোড়শ শতকে বিধ্বংসী ভূমিকম্পের কারণে এই মন্দির ধ্বংস হয়ে যায়, তা নিয়ে বিস্তর দ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে অনেকেই মনে করেন ওই ভূমিকম্পের পরেই মন্দিরটি সম্পূর্ণ রূপে মাটির নীচে ঢুকে যায়। জেগে ছিল তার প্রধান ফটকটা শুধু।

সেই ফটকের সূত্র ধরেই ১৯১৩ সালে খননকার্য শুরু করেন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দয়ারাম সাহানি এবং তাঁদের দলবল। তাতেই সকলকে অবাক করে আত্মপ্রকাশ করে অবন্তীস্বামী মন্দির। এর পরেই জানা যায় তাঁর ইতিহাস।

কী ভাবে যাবেন

পর্যটকরা সাধারণত পহেলগাঁও থেকে শ্রীনগর, অথবা শ্রীনগর থেকে পহেলগাঁও যান। অবন্তীপোরা এর পথেই পড়বে। শ্রীনগর থেকে দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার। শ্রীনগর থেকে ট্রেনেও অবন্তীপোরা পৌঁছোতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *