শ্রীনগরের ‘পরী মহল’, আক্ষরিক অর্থেই পরীদের প্রাসাদ

শ্রয়ণ সেন

সুন্দর এই স্থাপত্যের নাম ‘পরী মহল’। আক্ষরিক অর্থেই এটি পরীদের প্রাসাদ। শ্রীনগরের অন্যতম দর্শনীয় স্থান হলেও পর্যটকদের কিছুটা নজরের আড়ালেই থেকে যায় এই ‘পরী মহল।’ কারণ যত পর্যটক শ্রীনগরের বিখ্যাত অন্য মুঘল উদ্যানগুলো দেখতে যান, ‘পরী মহল’-এ যান তাঁর অনেক কম মানুষ। অথচ একবার এখানে এলে মনে হবে, সব শহরের সব উদ্যানকে অবলীলায় হারিয়ে দেবে এই স্থাপত্যটি।

শ্রীনগরের চসমেশাহী বাগের কাছে জবরওয়ান পাহাড়ের কোলে একটি সুন্দর স্থান নির্বাচন করে সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি একটি সাত মহলা প্রাসাদ বানিয়েছিলেন মুঘল সম্রাট শাহজাহানের বড়ো ছেলে শাহজাদা দারাশিকো।

ক্ষমতার প্রতি লোভ ছিল না দারার। তাই দিল্লির তখতের থেকে অনেকটা দূরেই থাকতে পছন্দ করতেন তিনি। ১৬৪০, ১৬৪৫ এবং ১৬৫৪-তে তিনি এখানে এসে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে গিয়েছিলেন। এই প্রাসাদে তিনি তৈরি করেছিলেন নিজস্ব গ্রন্থাগার। প্রাসাদের অবজারভেটরি থেকে রাতের পর রাত আকাশ দেখে কাটিয়ে দিতেন শাহজাদা।

‘পরী মহল’-এর বিশেষত্ব এখান থেকে ডাল লেক এবং সমগ্র শ্রীনগর শহর দেখা যায়। এই দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। জনপ্রতি ২৪ টাকা (২০ টাকা এবং ৪ টাকা জিএসটি) দিয়ে টিকিট কেটে ‘পরী মহল’-এ প্রবেশ। এর পর থেকেই আপনি ‘পরী মহল’-এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে শুরু করবেন।

সবুজ গালিচা পাতা যেন সারা উঠোন জুড়ে। হেঁটে বেড়ান সেখানে নিজের ইচ্ছেমতো। ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাহাড়ের দেয়াল। মনে হবে সেই পাহাড় যেন দৃঢ়তার সঙ্গে পাহারা দিচ্ছে ‘পরী মহল’-কে। বাঁ দিকে একটু দূরেই চোখে পড়বে আরেক সবুজের গালিচা বিছানো গলফ কোর্স। দূরে পাহাড়ের চূড়ায় শঙ্করাচার্যের মন্দির। কান পাতলে শোনা যাবে মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি।

সাত ধাপের এই প্রাসাদ। প্রতিটি ধাপেই বিশাল বাগান। আর সেই বাগান থেকে সামনের দৃশ্য দেখতে দেখতে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেনই। বাগানে শুয়েবসে কাটিয়ে দিতে পারেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কেউ আপনাকে বিরক্ত করবেন না।

পাহাড়ের দেয়ালের পাহারায় ডাল লেকের দৃষ্টি সীমায় দাঁড়িয়ে অসাধারণ এক স্থাপত্য এই ‘পরী মহল’। শ্রীনগর ভ্রমণকালে একবার এখানে না এলে অনেক কিছুই মিস করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *