ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের জেরে ঘরবন্দি? মন খারাপ করে বসে থেকে কী হবে? বরং আসুন, এই সময়টা কাজে লাগাই, নানা জায়গায় মানসভ্রমণ করি। আজ যাওয়া যাক নেল্লিয়ামপাতি।
‘ভগবানের আপন দেশ’ কেরলে প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে। কী নেই? সৈকত আছে, শৈলশহর আছে, অভয়ারণ্য আছে, সামুদ্রিক খাঁড়ি আছে, বিশাল বিশাল লেক আছে। এর পরেও আছে – চা বাগান, কফি বাগান, বিখ্যাত মন্দির, প্রাসাদ – আর কী চাই? তবে প্রায় সব জায়গাই পর্যটকদের ধূলিলাঞ্ছিত। না, হতাশ হবেন না। এই রাজ্যেই এমন অনেক জায়গা আছে যা অল্প চেনা।
এমনই একটি জায়গা নেল্লিয়ামপাতি, যে জায়গায় ‘টুরিস্ট’দের পা সে ভাবে পড়ে না। অপার সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নেল্লিয়ামপাতি – কেরলের ‘অফবিট’ শৈলশহর।
চোখ জুড়োনো প্রকৃতি, নির্জন রাস্তা, বিশাল বিশাল গাছ আর তাতে বড়ো বড়ো মৌচাক, পাখির কুহুতান আর ছোটো ছোটো পাহাড়ি স্রোতা – দু’টো দিন কোথাও না ঘুরেই কাটিয়ে দেওয়া যায় এই নেল্লিয়ামপাতিতে। তবে দেখারও আছে অনেক কিছু। গওর, হাতি, লেপার্ড, বিশালাকার কাঠবেড়ালির মতো বন্যপ্রাণীরও দেখা মিলতে পারে। পক্ষীপ্রেমিকদের স্বর্গরাজ্য নেল্লিয়ামপাতি।
কী দেখবেন
(১) পতুন্ডি ড্যাম – উনিশ শতকে তৈরি এই ড্যাম নেল্লিয়ামপাতি থেকে ২০ কিমি। তবে পাহাড়-শীর্ষ থেকেই দৃশ্যমান চারি দিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা পতুন্ডি জলাধার। জলাধারে বোটিং করতে পারেন।
(২) পোয়াবস টি এস্টেট (সিতরগুন্ড ভিউ পয়েন্ট) – এটি একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি, তবে পর্যটকদের ভিতরে যেতে দেওয়া হয়। চা বাগানের ভিতরে যেখানে গাড়ি পার্কিং-এর জায়গা সেখান থেকে ৫০০ মিটার সিতরগুন্ড ভিউ পয়েন্ট, নেল্লিয়ামপাতি থেকে ৮ কিমি। চা বাগানের ভিতর দিয়ে এই অল্প হাঁটা বেশ উপভোগ্য। কথিত আছে রাম-লক্ষ্মণ-সীতা তাঁদের বনবাসকালে এখানে বিশ্রাম করেছিলেন। এখান থেকেই দেখা যায় ১০০ মিটার উঁচু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া এক সুন্দরী ঝরনা – সিতরগুন্ড ঝরনা। এই এস্টেটে কফি, গোলমরিচ আর এলাচ গাছও রয়েছে। এই এস্টেটে বেড়ানো এক অনন্য অভিজ্ঞতা।
(৩) কেশবনপারা বা কেশবন রক – ঘন সবুজ জঙ্গলের মধ্য দিয়ে ট্রেক করে যেতে হয় কেশবনপারায়। ওপর থেকে নীচের দৃশ্য মন ভুলিয়ে দেয়। এখানে বিখ্যাত মালায়ালি অভিনেতা মামুটি অভিনীত ‘মৃগয়া’ ছবির শ্যুটিং হয়েছিল।
(৪) পালঘাট গ্যাপ – কেরলের পালাক্কাড় আর তামিলনাড়ুর কোয়েম্বত্তুরের মধ্যে একটি পাহাড়ি পাস – নেল্লিয়ামপাতি থেকে সুন্দর দৃশ্যমান।
(৫) পালাগাপান্ডি – আরও একটি এস্টেট। ব্রিটিশ আমলে তৈরি একটি বাংলো আছে। এই এস্টেট এখন একটি রিসর্ট। এই এস্টেটে রয়েছে এলাচ, চা ও কফি বাগান।
(৬) মামপারা – পালাগাপান্ডি থেকে ট্রেক করে বা জিপে চলে যান মামপারায় – নেল্লিয়ামপাতির আরও একটি ভিউ পয়েন্ট।
(৭) পদগিরি – আরও একটি নাম নেল্লিকোটা, নেল্লিয়ামপাতির সর্বোচ্চ বিন্দু।
(৮) অরেঞ্জ ফার্ম – কৃষি দফতরের অধীন কমলালেবুর বাগান, অবশ্য দ্রষ্টব্য।
(৯) পারামবিকুলাম ব্যাঘ্র প্রকল্প – নেল্লিয়ামপাতি থেকে ৮৯ কিমি।
কী ভাবে যাবেন
পালাক্কাড় থেকে ৬০ কিমি দূরে নেল্লিয়ামপাতি। ২৭ কিমি দূরে নেনমার (১৫৩২ ফুট)। সেখান থেকে ঘাটরাস্তা শুরু। কফি বাগান, চা বাগানের মধ্য দিয়ে পথ চলবে পাহাড়-শীর্ষের উদ্দেশে। পথেই পড়বে বেশ কয়েকটা ভিউ পয়েন্ট, অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যে মন জুড়িয়ে যাবে। চুলের কাঁটার মতো গোটা দশেক বাঁক পেরিয়ে পৌঁছে যাবেন শৈলশহর নেল্লিয়ামপাতি (৫১৫৭ ফুট), নেনমার থেকে ৩৩ কিমি। পালাক্কাড় থেকে বাস বা গাড়িতে আসা যায় নেল্লিয়ামপাতি।
আরও পড়ুন: ঘরে বসে মানসভ্রমণ: বস্তার
পালাক্কাড় ভারতের প্রায় সব শহরের সঙ্গেই ট্রেনপথে যুক্ত। কলকাতা থেকে যাওয়ার সরাসরি ট্রেন – (১) হাওড়া-এর্নাকুলাম অন্তোদয় এক্সপ্রেস – প্রতি শনিবার হাওড়া ছাড়ে বিকেল ৫টায়, পালাক্কাড় পৌঁছোয় তৃতীয় দিন রাত ২.৪২ মিনিটে। (২) শালিমার-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস – প্রতি মঙ্গলবার শালিমার ছাড়ে রাত ১১.০৫ মিনিটে, পালাক্কাড় পৌঁছোয় তৃতীয় দিন দুপুর ১.০৭ মিনিটে। (৩) গুরুদেব এক্সপ্রেস – প্রতি বুধবার শালিমার ছাড়ে রাত ১১.০৫ মিনিটে, পালাক্কাড় পৌঁছোয় তৃতীয় দিন দুপুর ১২.৩৭। (৪) বিবেক এক্সপ্রেস – প্রতি শুক্রবার সাঁতরাগাছি ছাড়ে বিকেল পৌনে ৪টেয়, পালাক্কাড় পৌঁছোয় তৃতীয় দিন রাত আড়াইটেয়।
এ ছাড়াও সাপ্তাহিক শিলচর-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস এবং সাপ্তাহিক শিলচর-তিরুঅনন্তপুরম আরোনাই এক্সপ্রেসও হাওড়া দিয়ে যায়।
বেঙ্গালুরু বা চেন্নাইয়ে ট্রেন বদল করেও পালাক্কাড় যাওয়া যায়। ট্রেনের বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন erail.in।
কোথায় থাকবেন
নেল্লিয়ামপাতিতে থাকার জন্য রয়েছে কেরল বন দফতরের ইকোট্যুরিজমের ‘নেল্লি ম্যানসন’। অনলাইন বুকিং https://nelliyampathy.kfdcecotourism.com/।
এ ছাড়াও রয়েছে অনেক বেসরকারি হোটেল, রিসর্ট, যাদের সন্ধান পাবেন makemytrip.com, goibibo.com, tripadvisor.in, tourmyindia.com, holidayiq.com প্রভৃতি ওয়েবসাইট থেকে।