ঘুরে আসুন আন্দামান: ৮ রাত ৯ দিনে

cruise in Andaman
অঙ্কিতা দত্ত

ভারতের স্বাধীনতাসংগ্রামীদের এক সময়ে ‘দ্বীপান্তর’-এ পাঠানো হত। ‘কালাপানি’ পেরিয়ে যেতে হত সেই দ্বীপে। সে ছিল এক বিভীষিকা। এখন সেই ‘দীপান্তর’-এর দ্বীপ ভারতের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটনক্ষেত্র। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন, জায়গাটি আন্দামান। চার দিকে নীল জলের মাঝে ৫৭২টি ছোটো-বড়ো দ্বীপ নিয়ে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। চলুন দেখে নেওয়া যাক কোথায় কোথায় কী ভাবে ঘুরবেন আন্দামানে।

আন্দামান ভ্রমণের এই সূচি ৮ রাত ৯ দিনের।

প্রথম দিন – বিমানে চলুন পোর্ট ব্লেয়ার। হোটেলে চেক ইন করে বিশ্রাম নিন। বিকেলে চলুন বিপ্লবীদের সেই বিভীষিকাময় জায়গা সেলুলার জেল। সেলুলার জেলে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো দেখতে দেখতে পৌঁছে যাওয়া যায় সেই সময়ে, যখন এই জেলে বন্দি বিপ্লবীদের ওপরে অত্যাচারের কোনো সীমা ছিল না। রাত্রিবাস পোর্ট ব্লেয়ার।

cellular jail
সেলুলার জেল।

দ্বিতীয় দিন – আজও থাকুন পোর্ট ব্লেয়ারে। ঘুরে দেখুন শহর। অবশ্যই যাবেন করবিন্স কোভ বিচ এবং চিড়িয়া টাপু

তৃতীয় দিন – আজও পোর্ট ব্লেয়ারে। ঘুরে আসুন রস আইল্যান্ড (নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস আইল্যান্ড) এবং নর্থ বে আইল্যান্ড

Ross Island
রস আইল্যান্ড।

রাজীব গাঁধী ওয়াটার স্পোর্টস কমপ্লেক্স অঞ্চল থেকেই টিকিট কেটে স্পিড বোটে প্রথমে চলুন রস আইল্যান্ড। রস আইল্যান্ডে আছে ব্রিটিশ আমলের জীর্ণ গির্জা, ক্লাবঘর এবং আরও অনেক পুরোনো বাড়ি। এই দ্বীপে ঢুকতে গেলে প্রথমেই টিকিট কাটতে হয়। রস আইল্যান্ড ঘুরে চলুন নর্থ বে আইল্যান্ড। এই দ্বীপে আছে স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং এবং গ্লাসবোটে চড়ার সুযোগ। ফিরে আসুন পোর্ট ব্লেয়ারে।

চতুর্থ দিন – চলুন হ্যাভলক আইল্যান্ড (স্বরাজ দ্বীপ)। রাত্রিবাস হ্যাভলকে।   

radhanagar beach
রাধানগর বিচ,হ্যাভলক।

প্রথমে চলুন হ্যাভলক আইল্যান্ড। পোর্ট ব্লেয়ারের ফিনিক্স বে জেটি থেকে ক্রুজ ছাড়ে। এই ক্রুজে চেপেই যেতে হয় হ্যাভলক আইল্যান্ডে। এই ক্রুজের টিকিট অনেক আগে অনলাইনে কেটে রাখতে হয়। ক্রুজে করে সমুদ্র উপভোগ করতে করতে পৌঁছে যাবেন হ্যাভলক। পূর্বমুখী বিচের ধারে কোনো হোটেলে থাকলে সকালে দেখতে পাবেন সূর্যোদয়। হ্যাভলকে অবশ্যই ঘুরবেন রাধানগর বিচ

পঞ্চম দিন – চলুন নীল আইল্যান্ড (শহিদ দ্বীপ)। রাত্রিবাস নীলে।

coral at lakhmanpur 2 beach
লক্ষ্মণপুর ২ বিচে কোরাল।

হ্যাভলক থেকে আবার ক্রুজে করে চলে যান নীল আইল্যান্ড। ছোট্ট এই দীপটিতে একাধিক সমুদ্রসৈকত। লক্ষ্মণপুর বিচ ১ ও ২, সীতাপুর বিচ এবং ভরতপুর বিচ। লক্ষ্মণপুর ২ বিচে দেখতে পাবেন অসংখ্য প্রবালপ্রাচীর এবং আরও নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী। ভাটার সময়ে গেলেই অনেক কিছু দেখতে পাবেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় যে এই দ্বীপে প্রায় সবাই বাঙালি। বাংলা থেকে এত দূরে যে আরেকটি বাংলা আছে, তা এখানে না এলে জানাই যাবে না। বিকেলে সূর্যাস্ত দেখতে চলুন লক্ষ্মণপুর ১ বিচে।    

ষষ্ঠ দিন – চলুন ভরতপুর বিচ। রাত্রিবাস পোর্ট ব্লেয়ারে।

নীল আইল্যান্ডে রাত কাটিয়ে সকালেই চলুন ভরতপুর বিচ। ভরতপুর বিচের বালিয়াড়ি এত সমতল যে ভাটার সময়ে অনেক দূর পর্যন্ত জল চলে যায়। এই জায়গাগুলি যাওয়ার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা তো আছেই, চাইলে স্কুটিও ভাড়া করতে পারেন। ভরতপুর বিচ ঘুরে আবার ফিরে আসুন পোর্ট ব্লেয়ার।  

সপ্তম দিন – চলুন মায়াবন্দর। রাত্রিবাস মায়াবন্দরে।   

baratang
বারাটাং-এ বার্জে খাড়ি পেরোনো।

এই মায়াবন্দর যেতেই দেখা মিলতে পারে সেই ‘সবুজ দীপের রাজা’ জাড়োয়াদের সঙ্গে। প্রায় রাত থাকতে থাকতে বেরোতে হবে। গাড়ি ভাড়া করে বা পাবলিক বাসে প্রথমে যেতে হবে ৪১ কিমি দূরের জিরাকাটাং চেকপোস্ট। জারোয়াদের এই জঙ্গলে অনেক গাড়ির কনভয় এক সঙ্গে যায়। ভোরবেলা জঙ্গল পেরিয়ে ও পারে যাওয়ার জন্য দু’বার গেট খোলে। একবার ভোর ৪টেয় এবং তার পর সকাল ৬টায়। এ সময় ছাড়া এই জঙ্গলে ঢোকা যায় না। এবং এই কনভয়ে পুলিশের গাড়ি থাকে।

mud volcano
মাড ভলক্যানো।

দু’ ঘণ্টার এই জঙ্গলযাত্রায় কোনো জন্তুর দেখা না মিললেও দেখা মিলবে অনেক পাখি এবং ভাগ্য ভালো থাকলে জারোয়াও দেখতে পাবেন। জঙ্গল পেরিয়ে আসবে বারাটাং। এখানে বার্জে করে খাড়ি পেরিয়ে ও পারে গিয়ে স্পিডবোটে করে ঘুরে আসুন লাইমস্টোন কেভ মাড ভলক্যানো। তার পর আবার বাসে উঠে চলুন মায়াবন্দর, ১২৮ কিমি। মায়াবন্দরে টার্টল বিচরঙ্গত বিচ দেখতে ভুলবেন না।

অষ্টম দিন – চলুন রস অ্যান্ড স্মিথ আইল্যান্ড। রাত্রিবাস পোর্ট ব্লেয়ার।

natural bridge
প্রাকৃতিক ব্রিজ, যাকে স্থানীয়রা বলে হাওড়া ব্রিজ।

সকালে মায়াবন্দর থেকে চলুন রস অ্যান্ড স্মিথ আইল্যান্ড। দ্বীপ দু’টি একটি প্রাকৃতিক বালির ব্রিজ দিয়ে জোড়া এবং বালির উপর দেখতে পাবেন অসংখ্য হেঁটে বেড়ানো হারমিট ক্র্যাব। সমুদ্রের রং দেখে এখানে মুগ্ধ হতে হয়। ভ্রমণের শেষ অধ্যায়ে এই জায়গাটি সত্যই মন কাড়তে বাধ্য। ফিরে আসুন পোর্ট ব্লেয়ারে।

নবম দিন – বাড়ির পথে রওনা।

মনে রাখবেন

(১) আন্দামান বেড়ানোর পরিকল্পনা যত আগে থেকে করা যাবে, তত সুবিধা। তা হলে বিমানভাড়ায় সুবিধা পাওয়া যায়।

(২) ক্রুজের টিকিট আগাম কেটে রাখতে হবে। নেটে ‘andaman cruise service’ সার্চ করলে বিস্তারিত জানা যাবে।

sunset at chidiya tapu
চিড়িয়া টাপুতে সূর্যাস্ত।

(৩) সব জায়গাতেই যথেষ্ট সংখ্যক হোটেল আছে। নেট সার্চ করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে।

(৪) বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট আন্দামান নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে যেতে চাইলে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আগাম খোঁজখবর করে নেবেন। অনেকেই তাঁদের সঙ্গে গিয়ে নানা ভাবে প্রতারিত হন।

ছবি: অনুপম দত্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *