ভ্রমণঅনলাইনডেস্ক: শুধু বৌদ্ধ বা বুদ্ধের ভক্তদের কাছে স্বর্গ তো বটেই, সামগ্রিক ভাবে সব পর্যটকের কাছেই বুদ্ধগয়া একটি আকর্ষণীয় পর্যটনস্থল। এখানকার মূল আকর্ষণর মহাবোধি মন্দির। রাজপরিবারের সন্তান হয়েও গৌতম বুদ্ধ যে ভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য সারা জীবন সংগ্রাম করে গিয়েছেন তার জন্য তিনি প্রণম্য। সারা দেশে অনেক জায়গাই আছে, যেগুলি বুদ্ধদেবের পাদস্পর্শে ধন্য হয়েছিল। সে সব জায়গায় বুদ্ধমন্দির তৈরি হয়েছে, কিন্তু বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দিরের একটা বিশেষ গুরুত্ব আছে। তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের আদেশে এই মন্দির তৈরি হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে গুপ্ত বংশের রাজারা এই মন্দিরটির সংস্কার করান। এই মন্দির ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে সম্মানিত।
মহাবোধি মন্দির
গৌতম বুদ্ধ এই জায়গাতেই নির্বাণলাভ করেছিলেন এবং নির্বাণলাভের পরে সাতটি সপ্তাহ তিনি বিভিন্ন জায়গায় কাটান, যে জায়গাগুলো আজ দাঁড়িয়ে আছে মহাবোধি মন্দিরেরই চত্বরে। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে, সমস্ত প্রলোভনকে জয় করে নির্বাণলাভ করেছিলেন বুদ্ধ এবং তাঁর জীবনপথের অনেক চিহ্নই তিনি এই মন্দিরপ্রাঙ্গণে রেখে গিয়েছেন। দেখে নিই সেই সাতটি জায়গা –
বোধি বৃক্ষ
এই গাছ হল মহাবোধি মন্দিরের সব চেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। লোককথা অনুযায়ী, এই গাছেরই তলায় ধ্যানে বসে রাজকুমার সিদ্ধার্থ গৌতম নির্বাণলাভ করেছিলেন এবং তাঁর নাম হয় বুদ্ধ। নির্বাণলাভের পরে প্রথম সপ্তাহটিও তিনি এই গাছের তলায় বসে কাটিয়েছিলেন। মূল মন্দিরের পশ্চিমে এই গাছ দেখতে পাওয়া যাবে।
প্রার্থনাকক্ষ
গৌতম বুদ্ধ তার দ্বিতীয় সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন এক প্রার্থনা কক্ষে যেটি ‘অনিমেষলোচন চৈত্য’ নামে পরিচিত। এটি মন্দির যাওয়ার মূল পথের উত্তরে অবস্থিত।
চনক্রমনা
এই স্থানে গৌতম বুদ্ধ নির্বাণলাভের পর তাঁর তৃতীয় সপ্তাহটি কাটিয়েছিলেন। আঠারো পা এগিয়ে ও আঠারো পা পিছিয়ে হেঁটে তিনি এই সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন। এটি প্রধান মন্দিরের উত্তর দেওয়ালে অবস্থিত।
রত্নগড় চৈত্য
এই স্থানে গৌতম বুদ্ধ তাঁর চতুর্থ সপ্তাহটি কাটিয়েছিলেন। মূল পরিবেষ্টিত স্থানের উত্তর-পূর্বে এই রত্নঘর চৈত্য।
পদ্মপুকুর
এই স্থানে গৌতম বুদ্ধ তাঁর ষষ্ঠ সপ্তাহ কাটিয়েছিলেন এবং এই পদ্মপুকুর মন্দির চত্বরের দক্ষিণে মূল পরিবেষ্টিত স্থানের অবস্থিত।
রাজ্যতন গাছ
গৌতম বুদ্ধের ধ্যানপর্বের শেষ তথা সপ্তম সপ্তাহ কেটেছিল এই জায়গায়। মন্দিরের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত এই স্থানটিকে চিহ্নিত করতে একটি বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।
অজপলা নিগ্রোধ গাছ
তাঁর পঞ্চম সপ্তাহে তিনি এই গাছের তলায় বসে ধ্যান করেছিলেন এবং ব্রাহ্মণদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন।
আর কী দেখবেন বোধগয়ায়
১৯৮৯-এ দলাই লামা প্রতিষ্ঠিত ভগবান বুদ্ধের স্ট্যাচু, ভারতে উচ্চতম; থাই মনাস্টেরি; মুচলিন্দ লেক; রয়্যাল ভুটান মনাস্টেরি, চিনা মন্দির; ইন্দোসান নিপ্পন জাপানিজ মন্দির; ভিয়েত্নামিজ মন্দির; রুট ইনস্টিটিউট অব উইজডম কালচার; বার্মিজ বিহার মনাস্টেরি; সুজাতা মন্দির; সুজাতা কুটি; দাইজকিয়ো বুদ্ধিস্ট মন্দির; প্রত্নতাত্ত্বিক মিউজিয়াম ইত্যাদি।
হেঁটেই ঘুরে নিতে পারেন বোধগয়ার দ্রষ্টব্যগুলি। তা না হলে রিকশা করে নিতে পারেন।
কী ভাবে যাবেন
বিহারের গয়া ভারতের প্রায় সব জায়গার সঙ্গে ট্রেন ও বিমানপথে যুক্ত। গয়া রেলস্টেশন থেকে ১৭ কিমি দূরে বোধগয়া, যাওয়ার জন্য সরকারি, বেসরকারি বাস পাবেন। গাড়ি বা অটো ভাড়া করে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
থাকার জন্য রয়েছে বিহার রাজ্য পর্যটনের হোটেল সিদ্ধার্থ বিহার ও হোটেল সুজাতা বিহার। অনলাইন বুকিং http://bstdc.bih.nic.in/। এ ছাড়াও অনেক বেসরকারি হোটেল আছে। নেট সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
মনে রাখবেন
১৭ কিমি দূরেই গয়া। বোধগয়ার সঙ্গে গয়া ঘুরে নিতে পারেন। গয়ায় থাকার অনেক বেসরকারি হোটেল তো আছেই, আছে ভারত সেবাশ্রম সংঘের সুব্যবস্থাযুক্ত ধর্মশালা। যোগাযোগ: কলকাতা অফিস (২১১ রাসবিহারী অ্যাভেনিউ, কলকাতা ৭০০০১৯, ফোন ০৩৩২৪৪০৫১৭৮/২৩২৭, ০৩৩২৪৬০১৩৮১)।