বাঁকুড়া: চোখের জলে টুসুকে বিদায় দিল জেলাবাসী। মকর সংক্রান্তির আগের দিন সারা রাত জেগে টুসু জাগরণ পুণ্যস্নান শেষ। এখন জেলার বিভিন্ন জায়গা মেতে উঠেছে নানা মেলায়।
টুসু উৎসব মূলত বাঁকুড়া জেলার লোকসংস্কৃতির এক অঙ্গ। এখানে টুসু ঘরের মেয়ে। মূলত এটি মেয়েদের একটি ব্রত। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তি থেকে পয়লা মাঘ পর্যন্ত চলে এই ব্রত পালন। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে টুসু ঘট বা মূর্তি স্থাপন করা হয়। এর পর এক মাস চলে সন্ধ্যারতি ও গান। মেয়েরাই এই কাজ করে সম্মিলিত ভাবে। পৌষ সংক্রান্তির আগের দিন হল জাগরণ। পৌষ সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তিতে টুসুর ভাসান বা বিসর্জন। এ দিন দলবেঁধে টুসুর বিসর্জন দেওয়া হয় জলাশয় বা নদীতে। তার পর মূর্তি ও চৌডল বিসর্জন দিয়ে নতুন জামা কাপড় পরে পিঠে-পুলি খেয়ে মকর পরবের সমাপ্তি ঘটে। এর সঙ্গে সঙ্গেই জেলা জুড়ে সূচনা হয় মেলা আর পৌষ পার্বণের। নতুন জামাকাপড়, নতুন চাল আর খেজুর গুড়ের গন্ধ জানান দেয় পিঠে সংক্রান্তির।
আরও পড়ুন জানুয়ারির শেষেই কলকাতা-তারাপীঠ এসি বাস পরিষেবা, জানাল এসবিএসটিসি
টুসু নিয়ে বিভিন্ন জনশ্রুতি রয়েছে। বিশিষ্ট গবেষক ও শিক্ষক সৌমেন রক্ষিত বলেন, “টুসু নিয়ে একাধিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। পরকুলে বা দক্ষিণ বাঁকুড়ায় টুসু নিয়ে প্রচলিত লোকগাথা হল রাজনন্দিনী টুসু নতুন বৌ হয়ে পালকি চড়ে পতিগৃহে যাচ্ছিলেন পথে মুসলমান সেনারা তাঁর স্বামীকে হত্যা করে তাঁকে অধিকার করতে চেয়েছিল। টুসু আপন সতীত্ব রক্ষার্থে নিকটবর্তী নদীতে ঝাঁপ দেয়। টুসুর এই আত্মবিসর্জনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পৌষ সংক্রান্তির দিন পরকুলের রাজা সেখানে টুসুমেলার আয়োজন করেন।” সৌমেনবাবু আরও বলেন, অনেকেই টুসুকে শস্যের দেবী বলে মনে করেন। তাই শীতকালীন শস্য বাড়িতে উঠে এলে কৃষকেরা আনন্দে এই দেবীর পুজো করেন। আবার টুসু শব্দের অর্থ পুতুল (মুন্ডারী ভাষায়)। আদতে টুসু হল সাধারণ মানুষের উৎসব। টুসু রাজনন্দিনীই হোন, কিংবা শস্যের দেবী, তাঁর আগমন যে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর ঘরে ঘরে আনন্দ নিয়ে আসে, তাতে সন্দেহ নেই।
অন্য দিকে মকর সংক্রান্তি উপলক্ষ্যে জেলা জুড়ে বিভিন্ন মেলার সূচনা হয়, যার মধ্য অন্যতম হল ইন্দাসের আকুই গ্রামে রানার জাত বা পীরবাবার মেলা। শতাব্দী প্রাচীন এই মেলা শুরুর ইতিহাস আজও অজানা বর্তমান প্রজন্মের কাছে। রানার পুকুরে টুসু ভাসিয়ে মকর চান করে বুড়ো পীরের কাছে পুজো দেন ভক্তরা। সত্যপীরের পুজোর জন্য স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বাতাসা, পাটালি, ধূপ, মাটির ঘোড়ার পসরা নিয়ে বসে থাকেন। একে শিন্নি বলে। সত্যপীরের কাছে ঘোড়া দেওয়ার নিয়ম। সাথে করে বাড়ির ঠাকুরের জন্য ও অনেক মানুষ জোড়া মাটির ঘোড়া কিনে আনেন।
পাশাপাশি ইন্দাসেও চলছে বাঁকুড়ারায়ের কুড়চি মেলা। ইন্দাস পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ফরিদা খাতুন বলেন, সংক্রান্তির দিন থেকে ছয় দিন ধরে চলবে এই মেলা। মেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হবে। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ এই মেলাতে অংশ নেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।