ঘুরে আসুন রাজ্যের বারোটি শৈব তীর্থ, পর্ব ২

পর্ব ২

শিব আদি দেব ও মহাজ্ঞানী। সকল দেবের দেবতা। তিনি অল্পতেই তুষ্ট। আবার অল্পতেই রুষ্ট। তাঁর শ্মশানে বাস। বাহন নন্দী ভূত-প্রেত চরদের সঙ্গে নিয়ে তিনি বহুকাল ধরেই অনার্যদের দেবতা ছিলেন।

কুষাণ যুগে আমরা শিব উপাসনার কথা জানতে পারি। বহু গবেষক মনে করেন কনিষ্ক নিজে শিবের উপাসনা করতেন। কুষাণ যুগে শিবের মূর্তি ও শিব লিঙ্গ পাওয়া গিয়েছিল। গান্ধার শিল্পেও শিব মূর্তি পাওয়া যায়। কনিষ্ক এর সময়কাল ভারতের এক গৌরবময় অধ্যায়। কণিষ্কের আমলে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ও একাধিক বৌদ্ধ স্তুপ নির্মাণ হয়। তেমনভাবেই হিন্দু ধর্মের প্রভাব শিল্পে ফুটে ওঠে। দিল্লির জাতীয় জাদুঘর, মথুরা জাদুঘর, পেশোয়ার জাদুঘরে কণিষ্কের সময়কার শিবের মূর্তি সংরক্ষিত আছে।

বর্ধমানেশ্বর শিব:
বর্ধমানে বর্ধমানেশ্বর শিবকে অনেকেই বুড়ো শিব বা মোটাবাবা নামেও ডাকেন। তবে বেশি খ্যাতি মোটাবাবা নামটির। পশ্চিমবঙ্গের গবেষক বিনয় ঘোষের মতে শিব হলেন বর্ধমানের লোকদেবতা। বর্ধমানের আলমগঞ্জ এলাকা থেকে মাটি খুঁড়ে এই বিশাল শিবলিঙ্গটি উদ্ধার করা হয়েছিল। ইনিই বর্ধমানেশ্বর শিব। গবেষকরা মনে করেন কুষাণ সাম্রাজ্যের সময়কার এই শিবলিঙ্গ। তখন অঞ্চলটি ছিল পুরুষপুরের অধীনে। মনে করা হয় এখানে এক বৌদ্ধ কেন্দ্র গড়ে ওঠে। গবেষণায় উঠে এসেছে কণিষ্ক নিজে বর্ধমানেশ্বর শিবের উপাসক ছিলেন। মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে এখানে ব্যাপক ভক্তসমাগম হয়। মানুষের বিশ্বাস, তাঁর আশীর্বাদে সব সংকট দূর হয়। বর্ধমান স্টেশন থেকে খানিক দূরত্বে বর্ধমানেশ্বর বা মোটাবাবাকে দর্শন করে আসুন।

বর্ধমানের ১০৮ শিব মন্দির:
বর্ধমানের এক অপূর্ব শিল্পকীর্তি। বর্ধমানের রাজা তিলোকচাঁদের রানী বিষ্ণুমতি নবাবহাটে ১০৮ শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ১০৮ মন্দির বলা হলেও আরো একটি মন্দির এখানে বেশি আছে। যার কারণ জানা যায় না। মন্দির গুলোর স্থাপত্যশৈলী চার চালা। সারা বছর এখানে লোকসমাগম ঘটে। লোকমুখে বিশ্বাস, ভয়ংকর দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রানী এই মন্দির নির্মাণ করেন। বর্ধমান স্টেশন থেকে টোটো নিয়ে মন্দির দর্শন করে নেওয়া যায়।

চুঁচুড়ার ষন্ডেশ্বরতলা:
হুগলিতে চুঁচুড়ার মানুষের জাগ্রত দেবতা বাবা ষন্ডেশ্বর। ষন্ডেশ্বরতলার গাজন খুব বিখ্যাত। চুঁচুড়া স্টেশন থেকে টোটো নিয়ে চলে আসুন ষন্ডেশ্বরতলায়। দিগম্বর হালদার স্বপ্নাদেশ পেয়ে গঙ্গা থেকে বাবা ষন্ডেশ্বরের মুর্তি উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করেন। মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে এখানে অসংখ্য ভক্তের সমাগম ঘটে।

(চলবে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top