অচেনা কলকাতা, পর্ব ২

পর্ব ২

চিৎপুরের যাত্রাপাড়া:

কলকাতা জন্মের আগে চিৎপুর রোড। সাহেবরা জানতেন এই রাস্তা ছিল তীর্থ ভ্রমণের পথ। সেকালের মানুষ এই পথ ধরে চিত্তেশ্বরী মন্দির হয়ে কালীঘাট দর্শনে যেতেন। শোনা যায় শোভাবাজার রাজবাড়ির হাত ধরে কলকাতায় যাত্রাপালার সূচনা। এরপর শহরে যাত্রার ইতিহাস প্রায় তিনশো বছরের।

চিৎপুর রোডের দুপাশে আজও অপেক্ষায় থাকে অপেরা হাউজের মালিকেরা। কখন আসবে বায়না নিতে। অফিসের মাথায় বাঁধানো বোর্ড। যেখানে জ্বল জ্বল করছে নাম। চারপাশে একাধিক পালার ছবি। একটার পর একটা এগোলে ম্যাজিক। দেওয়ালে পরপর সাজানো পুরনো বোর্ড। তাতে কত রকম নতুন পুরনো পালার ছবি। যাত্রাপাড়ার অমূল্য রতন!

রথের দিন বিভিন্ন অপেরা হাউজ নতুন পালার নাম আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষনা করেন। ওইদিন যাত্রার বায়না হয়। শোনা যায়, গৌড়বঙ্গের চৈতন্য মহাপ্রভু ষোড়শ শতাব্দীতে রুক্মিণী চরিত্রে পালায় অভিনয় করেছিলেন। নাট্যাচার্য শিশির কুমার ভাদুড়ি বলতেন, আমাদের জাতীয় নাট্য বলিয়া যদি কিছু থাকে তাহাই যাত্রা।

উচ্চ শব্দ ও চড়া আলোর ব্যবহার যখন মঞ্চে ব্যবহার হয়, দর্শকদের মধ্যে আলোড়ন ফেলে দেয়। হাততালির জোয়ার আসে। মঞ্চে নাটকীয় উপস্থাপনায় ও যাত্রার গানে মানুষের ঘোর লাগে। গ্রামে গঞ্জে উপচে পড়ে ঠাসাঠাসি ভিড়। মুখ দেখে যাত্রার মালিকেরা।

উত্তর কলকাতার বাগবাজারে এই বছর শুরু হলো এক মাস ব্যাপী যাত্রা উৎসব। একবার যাত্রা মঞ্চে ঘুরে আসুন। যাত্রাপালা দেখে নস্টালজিক হয়ে পড়বেন। বাগবাজারের ফনিভূষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চে যাত্রা উৎসব চলবে। ৬ মার্চ ‘আমি তালপাতার সেপাই’ পালা দিয়ে শেষ হবে যাত্রা উৎসব।

(চলবে)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top