পর্ব ৩
নদিয়া জেলার শান্তিপুর তাঁত শিল্পের জন্য জনপ্রিয়। ভাবতে আশ্চর্য লাগে, সাহেব আমলে কলকাতা ছিল তাঁত শিল্পের অন্যতম এক কেন্দ্র। উত্তর কলকাতার সিমুলিয়া, দর্জিপাড়া, বরানগর, চাঁদপাল ঘাটের কাছে ছিল তাঁতিদের বসতি।
কলকাতায় তাঁতিতের বসতি:
হুগলি জেলার সরস্বতী নদীর পাড়ে বন্দর নগর সপ্তগ্রামের জৌলুস হারালে সেখানকার তাঁতিরা কলকাতায় আসা শুরু করেন। সুতানুটি অঞ্চলে এসে বসতি গড়ে তোলেন।
কলকাতার গবেষকদের কাছ থেকে জানা যায় সেকালে পর্তুগিজরা বরানগরের তাঁতিদের কাছ থেকে মোটা মসলিন কিনে নিতেন। তখনকার শেঠ বসাক বণিকেরা ভালো দামে পর্তুগিজদের কাছে সেগুলো বিক্রি করতেন। আজও বরানগরে তাঁতিপাড়া নামে একটি জায়গা আছে। উত্তর কলকাতার শিমুলিয়া অঞ্চলে বসবাসকারী তাঁতিদের বানানো কাপড়ের ছিল খুব সুখ্যাতি।
বলা হয়, শেঠ বসাকদের কূলদেবতা গোবিন্দের নামে গোবিন্দপুর নাম। লালদীঘি সংলগ্ন অঞ্চলে তাদের দোলমঞ্চ ছিল। সেই গোবিন্দপুরে একটি তাঁত শিল্পের কারখানা তৈরি করা হয়। সেখানে বেশ কয়েক হাজার তাঁতি কাজ করতেন। গোবিন্দপুরের কারখানাটি আজ অধুনালুপ্ত। শহরের চেহারাটা আমূল বদলেছে।
সুতানুটির সংস্কৃতি:
উত্তর কলকাতা তখন ব্ল্যাক টাউন। অর্থাৎ কালো চামড়ার মানুষের বাস। সাহেবরা এই অঞ্চলে একেবারেই পা দেন না। এখানেই ছিল এক মস্ত হাট। হুগলি নদীর পাড়ে সুতোর হাট। সেখানে কত ধরনের সুতো। সেই বাজারে সুতো কেনাবেচা হতো। সুতার নুটি অর্থাৎ গাঁট থেকে জায়গার নাম সুতানুটি। কলকাতার হাওয়ায় তখন পয়সা উড়ছে। বাবুদের বাবুয়ানি সপ্তমে। বাইজি নাচ, বিলাসিতা, বুলবুলির লড়াই, ঠাট-বাটে বহরে আদ্যন্ত ফাট বাবু। অভিজাত বনেদি বাড়িগুলোতে নবাবী হালচাল শুরু হয়েছে। সুতানুটির হাটে তখন ব্যবসায়ীদের রমরমা। খানিক দূরে, আজকের দর্জিপাড়া। বিডন স্ট্রিটের কাছে। সেদিনের পাড়া আজও রয়ে গেছে। সেখানে বহু তাঁতি এসে উঠলেন। সপ্তগ্রাম ছেড়ে এখানে থাকতে শুরু করেন। এরা সুতানুটির হাটে এসে নিজেদের তৈরি কাপড় বিক্রি করতেন। এভাবেই ধীরে ধীরে সুতানুটি যেন তার নিজস্ব পরিচিতি পেলো।
(চলবে)