রাজা বন্দ্যোপাধ্যায়, জলপাইগুড়ি: বাষ্পের সাহায্যে সেদ্ধ হবে চালের গুঁড়ো। তার মাঝখানে তিন জায়গায় সামান্য মিষ্টির ছোঁয়া। এই হল ‘ভাকা পিঠে’। শীতে কি এই অপরূপ পিঠের স্বাদ নিতে চান? তা হলে চলুন জলপাইগুড়ি।
জলপাইগুড়ি শহর এবং সংলগ্ন এলাকাতে এই ভাকা পিঠের বিক্রি শুরু হয়েছে। চলবে পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত।
জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার জেলায় এই ভাকা পিঠের কদর প্রচুর। এখন তো নিউ জলপাইগুড়ি-সহ বিভিন্ন স্টেশনে সারা বছর এই ভাকা পিঠে বিক্রি হয়। কোনো তেল মশলা নেই। কেবল দরকার চালের গুঁড়ো। বাকি যে উপকরণ লাগে সেগুলি হল নারকেল কোরা, গুড় এবং চিনি।
জলপাইগুড়ির দিনবাজার সেতুর ওপর মোট চার জন ভাকা পিঠে বিক্রি করেন। তাঁদের মধ্যে দু’ জন সম্পর্কে ভাই। জলপাইগুড়ি শহর থেকে কিছু দূরের রাহুতবাগানের বাসিন্দা নিতাই পাল এবং খরুম পাল। পাশাপাশি আলাদা ভাবে ভাকা পিঠে বিক্রি করলেও নিজেদের মধ্যে কোনো রেষারেষি নেই। শীতের দুপুরে দু’ জন দু’টো ভ্যানরিকশায় মালপত্র নিয়ে চলে আসেন দিনবাজার সংলগ্ন করলা সেতুর ওপর। ভ্যানরিকশার ওপর স্টোভ ধরিয়ে একটা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে জল গরম করতে দেন। ওপরের ঢাকনায় একটি এক ইঞ্চি গোলাকৃতি এবং অন্যটি অপেক্ষাকৃত ছোটো দু’টো ফুটো করা থাকে।
জল ফোটা আরম্ভ করলে দু’টো ফুটো দিয়ে বাষ্প বার হতে থাকে। তখন ব্যাগে রাখা চালের গুঁড়ো স্টিলের বাটিতে ভরা হয়। বাষ্পের ওপর বসানোর আগে বাটির চালের গুঁড়োর ওপরে গুড় মেশানো নারকেল কোরা অল্প মাত্রায় দেওয়া হয়। একটা সাদা কাপড়ে বাটির মুখ আটকে দেওয়া হয়। তার পর যে পাত্রটির ফুটো থেকে বাষ্প বার হচ্ছিল তার ওপর উলটো করে বাটি বসিয়ে দেওয়া হয়। বড়ো ফুটোর ওপর বড়ো বাটি এবং ছোটো ফুটোর ওপর ছোটো বাটি। বাষ্প যে ফুটো দিয়ে বার হচ্ছে তার মুখের ওপর সাদা কাপড়ে ঢাকা বাটির মধ্যের চালের গুঁড়ো থাকে। এক মিনিট পরেই তৈরি হবে যায় ভাকা পিঠে। গুড়, নারকেল কোরার মিশ্রণ না দিয়ে অনেকে আবার চিনিও ব্যবহার করেন। ক্রেতা চাইলেই কাগজের ওপর রেখে পরিবেশন করা হয়। বড়োটার দাম ১০ এবং ছোটোটার দাম ৫ টাকা।
বিক্রেতা পাল ভাইয়েরা জানালেন যে তাঁরা প্রত্যেকে রোজ আট কিলোগ্রাম চালের গুঁড়ো নিয়ে বসেন। এক কিলোগ্রাম চালের গুঁড়োয় ছোটো বড়ো মিলিয়ে ২২ থেকে ২৫টা ভাকা পিঠে তৈরি হয়। পৌষ সংক্রান্তি পর্যন্ত ভাকা পিঠে জলপাইগুড়ি শহরে বিক্রি হবে। পৌষ সংক্রান্তির পর বাড়িতে বাড়িতে পিঠে তৈরি শুরু হয়ে যায়। তখন ভাকা পিঠের কদর কমে যায়। নিতাই এবং খরুম পালের দাবি, “ভাকা পিঠে অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য। শরীরের কোনো ক্ষতি করে না।”
সুতরাং এই শীতে জলপাইগুড়ি এবং সংলগ্ন এলাকায় গেলে খেতেই হবে ভাকা পিঠে।