গণেশপুজোয় চলুন মুম্বইয়ের এই বিখ্যাত মণ্ডপগুলিতে

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: গণেশ চতুর্থী পেরিয়ে গেল সোমবার। হিসেবমতো দেশের প্রায় সব জায়গাতেই পুজো সাঙ্গ। কিন্তু আসল ধুম তো মুম্বইয়ে। মুম্বইয়ে এই পুজো চলে দশ দিন ধরে। মঙ্গলবার ছিল পুজোর দ্বিতীয় দিন।  এই সময়ে আপনি যদি মুম্বইতে থাকেন, তবে চারিদিকে আলোর রোশনাই, লোকের কোলাহল এবং মোদকের সুগন্ধ মেখে, চলুন বিখ্যাত প্যান্ডেলগুলি ঘুরে আসি।

লালবাউগচা রাজা

এই পুজোর শুরু ১৯৩৪ সালে। মানুষের বিশ্বাস, লালবাউগচা রাজা ভক্তের সব মনোবাঞ্ছাই পূর্ণ করেন। এখানকার মণ্ডপেই সব চেয়ে বেশি ভক্ত সমাগম হয়। অনেক সময় এখানকার প্রতিমা দর্শনের জন্য দরকার হলে ২৪ ঘণ্টা লাইন দিতে হয়। রোজ গড়ে ১৫ লক্ষের বেশি লোক ঠাকুর দেখেন।  ঠিকানা : লালবাগ মার্কেট, জি ডি গোয়েঙ্কা রোড।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে করে লোয়ার প্যারেল স্টেশনে নেমে, তার পর ক্যাব ভাড়া করে বা হেঁটেই পৌঁছাতে পারেন এই প্যান্ডেলে।

গণেশ গলি

১৯২৮ সালে শুরু হওয়া এই পুজোটি লালবাউগচা থেকে কয়েকটি গলি পরেই। ইদানীং এদের মণ্ডপ যথেষ্ট ভিড় টানছে। প্রতি বছরই এখানকার মণ্ডপ ভারতের কোনো মন্দিরের আদলে তৈরি হয়। এই বছর ভেল্লোরের শ্রীপুরম মন্দিরের আদলে এই প্যান্ডেলটি তৈরি হয়েছে। ঠিকানা: গণেশ গলি, লালবাগ।

কী ভাবে যাবেন

লোয়ার প্যারেল স্টেশনে নেমে ক্যাব ভাড়া করে বা হেঁটে পৌঁছে যাবেন মণ্ডপে।

আন্ধেরী চা রাজা

টাটা স্পেশ্যাল স্টিল এবং এক্সেল ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মীরা ১৯৬৬ সালে এই পুজো শুরু করেন। এই পুজো দেখতে বহু সেলিব্রিটি আসেন। এই প্যান্ডেলে আপনি ঠাকুর দর্শনের সঙ্গে আপনার পাশে কোনো অভিনেতাকেও দেখতে পেতে পারেন। এই পুজোকে বলা হয় মুম্বই শহরতলির লালবাউগচা রাজা।  ঠিকানা : বীর দেশাই রোড, আজাদ নগর, আন্ধেরী পশ্চিম।

কী ভাবে যাবেন

আন্ধেরী স্টেশন থেকে নেমে হেঁটেই পৌঁছে যাবেন এই প্যান্ডেলে।

চিঞ্চপোকলি চা রাজা

১৯২০ সালে শুরু হওয়া এই পুজোর সব চেয়ে প্রধান আকর্ষণ হল ‘আগমন সোহালা’ অর্থাৎ গণেশকে আহ্বান জানানো। গণেশচতুর্থীর ১০ দিন আগে থেকেই শুরু হয় এই উৎসব। গণেশকে নিয়ে আসা ও বিসর্জনের সময় হাজার হাজার ভক্ত নাচতে নাচতে পদযাত্রায় শামিল হন। এই পুজোয় সংগৃহীত অর্থের ৬০% বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যবহার করা হয়, যেমন লাইব্রেরি চালানো, নার্সারি চালানো, আদিবাসীদের সাহায্য করা ইত্যাদি।  ঠিকানা : দত্তারাম লাড মার্গ।

কী ভাবে যাবেন

ট্রেনে করে চিঞ্চপোকলি স্টেশন, সেখান থেকে হাঁটা পথ।

কেশবজি নাইক চওল সর্বজনীক গণেশোৎসব মণ্ডল

মুম্বইয়ের প্রাচীন পুজোগুলির অন্যতম। ১৮৯৩ সালে এই পুজো শুরু করেন লোকমান্য টিলক। ঐতিহাসিক এই পুজোর মূর্তিটি যে শুধু সব চেয়ে উচ্চতম তা নয়, এই মূর্তিটি পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে তৈরি।  এই পুজোর এ বারের মণ্ডপ মহারাষ্ট্রের গণপতিপুলের মন্দিরের আদলে তৈরি হয়েছে। এই পুজোটি দেখার সুযোগ হাতছাড়া করবেন না।  ঠিকানা : কেশবজি নাইক চল, গিরগাঁও। 

কী ভাবে যাবেন

ট্রেন ধরে চারনি রোড স্টেশন, সেখান থেকে ক্যাবে করে নিকদাত্রি লেনে পৌঁছোতে হবে।

খেতওয়াড়ি চা রাজা

১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই পুজোর একটি মজার ব্যাপার হলো যে প্রত্যেক বছর এই প্যান্ডেলের ঠাকুরের আকার একই থাকে এবং এত বছর ধরে একই কারিগর মূর্তি গড়ে আসছেন। এখানকার মণ্ডপে পৌঁছে দেখতে পাবেন এখানে ১৩টি গলি আছে এবং প্রত্যেক গলিতেই একটি গণেশপুজো হচ্ছে। তারই মধ্যে সব চেয়ে জনপ্রিয়  দ্বাদশ গলির পুজোটি।  ঠিকানা : লেন ১২, খেতওয়াড়ি, গিরগাঁও।

কী ভাবে যাবেন

গ্রান্ট রোড দিয়ে গেলেই প্যান্ডেলে পৌঁছোনো যায়।

সহ্যাদ্রি ক্রীড়া মণ্ডল

১৯৭৭ সালে শুরু হওয়া এই পুজো একটি স্পোর্টস ক্লাবের মাধ্যমে শুরু হয়। এই পুজোর জনপ্রিয়তা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে। এই পুজোর প্যান্ডেলের সাজসজ্জা খুবই আকর্ষণীয় হয়। এ বার এদের থিম ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান, জয় বিজ্ঞান’।  ঠিকানা: টিলকনগর, চেম্বুর।

কী ভাবে যাবেন

সেন্ট্রাল লাইন দিয়ে গেলে বিদ্যাবিহার স্টেশনে নেমে টিলকনগর পর্যন্ত ক্যাব ভাড়া করে আসতে হবে অথবা হারবার লাইনের ট্রেন ধরেও এই স্থানে যেতে পারেন।

গণেশ চতুর্থীর সময় সুন্দর করে সেজে ওঠে মুম্বই শহর। আর প্যান্ডেলগুলিই হল এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। হাজার হাজার মুম্বইয়ের মানুষ এই সময় আনন্দে মেতে ওঠেন। সারা রাস্তা জুড়ে শোনা যায় একটাই ধ্বনি ‘গণপতি বাপ্পা মৌরিয়া’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *