ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: আজ সোমবার মহাষষ্ঠী। তবে পঞ্জিকা মতে গতকালই ষষ্ঠী পড়ে যাওয়ায় পুজোর বোধন হয়ে গিয়েছে। রবিবার রাস্তায় ছিল জনজোয়ার। লোকে ঠাকুর দেখতে নেমে পড়েছে। আজ অবশ্য হিসেবমতো কাজের দিন। তবু মানুষ দিনের কাজের শেষে পথে নেমে পড়বেন। কিন্তু আজ কোথায়? সাহায্য করছে ভ্রমণ অনলাইন। এ দিনের ঠাকুর দেখা না হয় উত্তর কলকাতাতেই হোক। শুরু করুন বাগবাজার দিয়ে।
বাগবাজার সর্বজনীন
শত বর্ষে প্রতিবারের মতোই বিশাল প্রতিমা। একচালা ঠাকুর, ডাকের সাজ। সামনের মাঠে বিশাল মেলা। গিরিশ মঞ্চের পাশে মাঠের ওপর মণ্ডপ।
কুমোরটুলি সর্বজনীন
বাগবাজার দেখে রবীন্দ্র সরণি ধরে চলে আসুন কুমোরটুলি সর্বজনীনে। ৮৮তম বর্ষে এদের থিম ‘মাটির ফিসফাস’। গঙ্গাপদ্মার মাটি মিশিয়ে প্রতিমা তৈরি হয়েছে। মণ্ডপের ভিতর আর বাইরে মাটি দিয়ে সাজানো হয়েছে। রয়েছে মাটির লরি, মাটি পোড়ানোর লরি। থিম সং করেছেন ও-পার বাংলার শিল্পী ফারজানা অয়াহিদ সায়ান। কুমোরটুলি বাসস্টপ থেকে গঙ্গার দিকে যেতে গলির ভেতর মণ্ডপ।
কুমোরটুলি পার্ক
কুমোরটুলি সর্বজনীন দেখে রবীন্দ্র সরণিতে আসুন। আরও দক্ষিণে যেতে ডান দিকের গলিতে কুমোরটুলি পার্কের মণ্ডপ। ২৬তম বর্ষে এদের থিম ‘স্বপ্নের রাখাল’। হিংসা হানাহানির মাঝে ভালোবাসার কথা বলতে রাখালের বেশে শ্রীকৃষ্ণ। তিনিও আরাধনা করছেন দেবী দুর্গার।
হাটখোলা গোঁসাইপাড়া
৮১তম বর্ষে এদের নিবেদন ‘সময়ের সংযোগ’। সময়ের সঙ্গে ছুটতে ছুটতে একে অপরের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। এটিই থিমের বিষয়। থিম বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে মানুষের স্কালপচার, লোহার খাঁচা ইত্যাদি। কুমোরটুলি পার্ক দেখে রবীন্দ্র সরণি ধরে আরও দক্ষিণে এলে পেয়ে যাবেন হাটখোলা গোঁসাইপাড়া।ল্যান্ডমার্ক হিসেবে রয়েছে বি কে পাল অর্থাৎ বটকৃষ্ণ পালের বাড়ি।
আহিরীটোলা সর্বজনীন
৭৯তম বর্ষ। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে একটা পুরোনো রাজবাড়ির আদলে। থিমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘আহিরীটোলা রাজবাড়ির অঞ্জলির প্রস্তুতি’। মণ্ডপকে ‘ন্যাচরাল লুক’ দিতে ব্যবহার করা হয়েছে আসল মার্বেল, ১৫৭ বাতির বেলজিয়াম গ্লাসের ঝাড়, পুরোনো দিনের আলোর স্ট্যান্ড, ছবি, ঝোলানো পাখা, সুইজ বোর্ড, আসবাবও। থিমের সঙ্গে মিলিয়ে সাবেক ঠাকুর। হাটখোলা গোঁসাইপাড়া দেখে রবীন্দ্র সরণি ধরে আরও দক্ষিণে এসে বিকে পাল আভেনিউ ধরে গঙ্গার দিকে গেলে আহিরিটোলার মোড়েই মণ্ডপ।
নিমতলা সর্বজনীন
৫৩তম বছরের পুজো। থিমে তুলে আনা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। নারী ও শিশু পাচারের বিষয়। থিমের ক্যাপশন ‘আমায় কেন আনলি ডেকে মা’?থিমের সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিমা। অসুর বধের দৃশ্য নেই। আহিরীটোলা থেকে আরও দক্ষিণে গিয়ে নিমতলা ঘাট স্ট্রিটের ওপরই মণ্ডপ।
রবীন্দ্র কানন সর্বজনীন
নিমতলা ঘাট স্ট্রিট ধরে যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউয়ের দিকে আসুন। ডান দিকে রবীন্দ্র কানন। ৭৮ বছরের এই পুজো। মণ্ডপে উপহার দেওয়া হচ্ছে রাজস্থান। জয়পুরের স্থাপত্যের আদলে। একটি কাল্পনিক মন্দির তৈরি করা হয়েছে। শিল্পীরা এসেছেন কাঁথি থেকে। নিমতলা ঘাট স্ট্রিট আর রবীন্দ্র সরণির ক্রসিং-এই পার্কের মধ্যে মণ্ডপ।
মৈত্রী সংঘ (যতীন মৈত্র পার্ক)
৭৮তম বর্ষের মণ্ডপ সেজেছে প্যাগোডার রূপে। গোটা মণ্ডপ তৈরি হয়েছে টিনের পাত দিয়ে। কারুকার্যও টিনের, সঙ্গে স্টিলের বাটি। প্রতিমা সাবেক চেহারার। রবীন্দ্র কানন দেখে এইটু উত্তরে চলে আসুন। যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউয়ের ওপর যতীন মৈত্র পার্কের ভেতর পুজো।
মহম্মদ আলি পার্ক
যতীন্দ্রমোহন অ্যাভেনিউ, সেন্ট্রাল অ্যাভেনিউ বরাবর মহাত্মা গান্ধী রোডের ক্রসিং পেরিয়ে চলে আসুন মহম্মদ আলি পার্কে। বাঁ দিকে পুজোমণ্ডপ। ৫০তম বর্ষে থিম পদ্মাবত। চিতোরগড় দুর্গ। গোটা মণ্ডপ জুড়ে রাজস্থানের পরিবেশ বিরাজ করছে। দেবীর সাজপোশাক রাজস্থানী রাজকন্যা বা রানির মতোই।
কলেজ স্কোয়ার
৭১তম বছরে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে অক্ষরধাম মন্দিরের আদলে। ভেতরে সাবেক দুর্গা। বিশাল চৌকো ঝাড় লণ্ঠন। মণ্ডপের ভেতরে রামের রাবণবধের গোটা কাহিনি। আলোকসজ্জায় রয়েছে অভিনবত্ব। রয়েছে বুলেট ট্রেনও। কলেজ স্ট্রিটের উপরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উলটো দিকে পার্কের ভেতর মণ্ডপ।
কানাইধর লেন অধিবাসীবৃন্দ
৬৮তম বছরে থিম ‘বিশ্বমাঝে রঙিন এ জীবন’। হানাহানি হিংসার মধ্যে এই ক’দিন শান্তি ফিরে পেতে এই থিম-ভাবনা। মণ্ডপের গলির ভেতরটাকে পৃথিবী কল্পনা করে সর্বত্র মা দুর্গার পায়ের ছাপ আঁকা হয়েছে। ভেতরে সুতোর কাজ। কলেজ স্কোয়ারের পেছনে রাজা রামমোহন সরণির কাছে।
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার বা লেবুতলা পার্ক
৮৩ বছরের চমক রুপোর বিশাল রথ। ১০ টন রুপোর ব্যবহার হয়েছে। ৪০ ফুট উঁচু রথ। দর্শকদের কালো চশমা পরে ঠাকুর দর্শনে আসতে বলা হয়েছে। শিয়ালদা অঞ্চলে লেবুতলা পার্কে মণ্ডপ।
শিয়ালদা অ্যাথলেটিক ক্লাব
৭১তম বর্ষে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে গ্রামের আদলে। রয়েছে আদিবাসীদের জীবনের টুকরো ছবি। মণ্ডপময় ধানের খেত, গোয়ালে গরু, ছাগল, পুকুরে মাছ ইত্যাদি দেখানো হয়েছে। প্রতিমা সাবেক। শিয়ালদা স্টেশন বাসস্টপের কাছে গলির ভেতর মাঠের ওপর বিশাল মণ্ডপ।
চালতাবাগান
শিয়ালদা অ্যাথলেটিক ক্লাব দেখে উত্তরে চলুন। মানিকতলা মোড় থেকে বাঁ দিকে বিবেকানন্দ রোডে ঢুকুন। আমহার্স্ট স্ট্রিট ও বিবেকানন্দ রোডের ক্রসিং-এ মণ্ডপ। ৭৬তম বছরে মণ্ডপ রয়েছে শান্তিনিকেতনে। উপস্থিত রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। তুলে ধরা হচ্ছে দোল, বাউল উৎসবের মতো শান্তিনিকেতনের বিভিন্ন উৎসব।
সিমলা ব্যায়াম সমিতি
বিবেকানন্দ রোড ধরে এগিয়ে যান। গিরিশ পার্কের কিছু আগে বাঁ দিকের রাস্তায় মণ্ডপ। ৯৩তম বছরে সিমলা ব্যায়াম সমিতি তৈরি করেছে মার্বেল প্যালেস। ভিতরে রয়েছে রাজমহলের পরিবেশ। রাজকীয় ঝাড় থেকে আসবাব সবই রয়েছে সেখানে। ঠাকুর ঐতিহ্য মেনে সাবেক ধরনের।
বিডন স্ট্রিট সর্বজনীন
সিমলা ব্যায়াম সমিতি দেখে একটু পিছিয়ে এসে বিধান সরণি ধরুন, উত্তরে এগিয়ে চলুন। বিডন স্ট্রিটের মোড়ে এসে বাঁ দিকে চলুন। বিডন স্ট্রিটের উপরেই মণ্ডপ। ৭৮ তম বছরেও ঠাকুরদালানের আদলে মণ্ডপ। একচালার সাবেক প্রতিমা।
হরিঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীন
বিডন স্ট্রিট সর্বজনীনের কাছেই হরি ঘোষ স্ট্রিট সর্বজনীন। বিধান সরণিতে হেদুয়া পার্কের উলটো দিকে বিডন স্ট্রিটে ঢুকে ডান হাতের প্রথম গলি হরি ঘোষ স্ট্রিট। একটু এগোলেই মণ্ডপ। ৭৯তম বর্ষে এদের প্রচেষ্টার নাম – ‘মাগো তোমার চরণে দিলাম ফুল, ক্ষমা কর মোর সব ভুল’। কৃত্রিম ফুল পাতা ইত্যাদি দিয়ে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে।
কাশীবোস লেন
কাছেই কাশীবোস লেনের পূজা। ৮১তম বর্ষে থিম ‘আমার আলিন্দে’। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে একাধিক বারান্দার আদলে। মণ্ডপের সামনেটা ছাদ। ভেতরে বারান্দা। নানান ধরনের হারিয়ে যাওয়া বারান্দার দেখা মিলছে মণ্ডপে। সবটা জুড়েই রয়েছে হারিয়ে যাওয়া নানান জিনিসের উপস্থিতি। প্রতিমা রাজনন্দিনীর বেশে মুক্ত আকাশের নীচে ছাদের ওপর নৃত্যরতা অবস্থায় বিরাজ করছেন।
দর্জিপাড়া সর্বজনীন
কাশীবোস লেন দেখে চলে আসুন দর্জিপাড়া সর্বজনীনে। রূপবাণী বাসস্টপের কাছে লক্ষ্মীনারায়ণ চপের দোকানের গায়ে গলির ভেতরে ব্ল্যাকস্কোয়ার পার্কের মাঠে পুজো। ৮১তম বছরে দর্জিপাড়ার থিম দশভূজা। বিশালকার দশ হাত দিয়ে মণ্ডপসজ্জা করা হয়েছে। মণ্ডপের বাইরে হরপার্বতীর মূর্তি। ভেতরে একাধিক দুর্গার রূপ ও পদ্মের ইন্সটলেশন।
হাতিবাগান সর্বজনীন
চলে আসুন হাতিবাগান মোড়ে, চলুন খান্নার দিকে। পথেই পড়বে হাতিবাগান সর্বজনীন। ৮৪তম বছরে থিম-ভাবনা ‘অন্তর্জাল’। প্রযুক্তি, ইন্টারনেট কী ভাবে সমাজ-মানসকে গ্রাস করছে তা বোঝানো হয়েছে অসংখ্য তারের জাল, স্তম্ভ ইত্যাদি দিয়ে। তারের জাল দিয়েই গোটা মণ্ডপ। থিমের সঙ্গে মিলিয়ে প্রতিমা। জাল কেটে বেরিয়ে আসার ভঙ্গিতে।
হাতিবাগান নলিন সরকার স্ট্রিট
খান্নার মোড়ের কাছে নলিন সরকার স্ট্রিটের ৮৬ বছর। এদের পুজোর থিম প্রযুক্তি আর ইন্টারনেট নিয়েই। এই সবের বশে চলে যাচ্ছে মানবজীবন। সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে মানুষ। এই সবের ফলাফল কী দাঁড়াচ্ছে তাই রয়েছে গোটা মণ্ডপ জুড়ে। দেবীর রূপ সাবেক।
হাতিবাগান নবীনপল্লি
৮৫তম বছরে থিম ‘পাঠাগার’। ইন্টারনেটের যুগে ব্যস্ততম সময় হারিয়ে যাচ্ছে বই পড়ার অভ্যাস, সময়ও নেই বললেই চলে। এই অবস্থায় ই-বুকই সম্বল। নতুন প্রজন্ম তো পাঠাগার ব্যাপারটাই সে ভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। তাই প্রায় ৫০ হাজার বই দিয়ে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। একচালা প্রতিমার চালচিত্রও বইয়ের। হাতিবাগান মোড় থেকে শ্যামবাজারের দিকে যেতে বাঁ হাতে মণ্ডপ।
শিকদারবাগান
১০৬ বছরে থিম সে কালের বাবুদের সংস্কৃতি। মণ্ডপে রয়েছে সে কালের খড়খড়ির জানলা, আলো-বাতি, আবহতে সেই সময়কার গান। পরিবেশে বনেদিয়ানা বিরাজ করছে। মূল মণ্ডপ বনেদিবাড়ির নাটমন্দিরের আদলে। সাবেক প্রতিমা একচালার। টাউন স্কুল বাসস্টপের কাছে গলির মুখে পুজো।
মোহনবাগান বারোয়ারি
১০২ বছরে সাবেক প্রতিমা ও মণ্ডপসজ্জায় সাবেকিয়ানা। অষ্টমীতে কুমারীপুজো। হাতিবাগান থেকে শ্যামবাজার যাওয়ার পথে ডান হাতে গলির ভেতর পুজো।
টালাপল্লি সাধারণ দুর্গোৎসব
৭১ বছরে থিম ‘বাঁচুন ও বাঁচতে দিন’। মণ্ডপ তৈরি হয়েছে প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ও বোতল দিয়ে। মণ্ডপের ভেতরে একটি কৃত্রিম পাড়া তৈরি করা হয়েছে সচেতনতা গড়ে তুলতে। সঙ্গে পাটের ব্যবহারও রয়েছে অন্দরসজ্জার কাজে এবং প্রতিমার পোশাক ও অলংকারের কাজে। টালা পোস্ট অফিস বাসস্টপে নেমে বাঁ হাতেই মণ্ডপ ব্রিজের পাশেই।
টালা বারোয়ারি
এ বছরের থিম ‘মা’। সারা জীবন মা সন্তানের জন্য ব্যয় করেন। সেই মাকে ঘিরে নানান বিষয় তুলে ধরা হয়েছে মণ্ডপে। বলা হয়েছে ‘আমি খানিকটা আমার মতো, বাকিটা আমার মায়ের মতো’। থিমের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঠাকুর। টালা পোস্ট অফিস বাসস্টপে নেমে ডান দিকে এই পুজো।
টালা সরকারবাগান সম্মিলিত সংঘ
এ বছরের থিম ‘উৎসর্গ’। মণ্ডপ ত্রিনয়নের আদলে। সফল নারীদের উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছে মণ্ডপ। টালা স্টেশনের কাছে মণ্ডপ।
টালা পার্ক প্রত্যয়
এ বছরের থিম ভূগর্ভের জগৎ ‘অতল অনন্ত’। মণ্ডপে ঢোকার সময় ভূমিকল্প অনুভব করবেন দর্শকরা। তার পরই রয়েছে টারবাইনে চড়ে টানেলের ভেতর দিয়ে জলের নীচে পৌঁছোনোর পালা। একটি গুহায় রয়েছেন প্রতিমা। টালা পার্কের কাছে মণ্ডপ।