রহস্যময় রেশম পথ / শেষ পর্ব : গ্যাংটক ঘুরে ঘরে ফেরা

sudip paul
সুদীপ পাল

গ্যাংটকের হোটেলে ঘরগুলো খুব সুন্দর পজিশনে ছিল। বড়ো বড়ো জানলা দিয়ে দূরের পাহাড় দেখা যায়। পরে জেনেছিলাম ওই পাহাড়েই বোনঝাকরি ফলস-সহ কিছু ট্যুরিস্ট স্পট আছে। যদিও জানলা দিয়ে বিশাল সবুজ পাহাড় ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছে না। এমনকি পাহাড়ের গায়ে কোনো বাড়িঘরও দেখা যাচ্ছে না।

ঝটপট ব্যাগপত্র রেখে ঘরে তালা মেরে ডাইনিং হলে চলে এলাম। এখন ৩টে বাজে। খিদেয় পেট জ্বলছে। এই ট্যুরে এই প্রথম মাছ খেলাম। হোটেলের মালিক ও ম্যানেজার দু’জনেই বাঙালি, তাই বেশ একটা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করছি।  খাওয়াপর্ব মিটে যাওয়ার পর ভূপালকে বিদায় জানানোর পালা। সত্যি এই ট্যুরে ও না থাকলে হয়তো ওই পথ পুরো কভার করে আসতে পারতাম না।

আরও পড়ুন রহস্যময় রেশম পথ / পর্ব ১০ : কুপুপ থেকে গ্যাংটক

ক্যালেন্ডারে দেখেছিলাম আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। তাই ভেবেছিলাম, পুজোপাঠ ও উৎসব দেখার জন্য রুমটেক মনাস্টেরি যাব। কিন্তু হোটেল-মালিক কোথাও ফোন করার পর জানালেন, পূর্ণিমা আজ সকালেই ছেড়ে গিয়েছে। প্রোগ্রাম সব কাল ছিল, আজ কোনো প্রোগ্রাম নেই। মনটা দমে গেল।

MG marg in the evening
বৃষ্টিভেজা সন্ধের এম জি মার্গ।

হতচ্ছাড়া বৃষ্টি যেন পিছু ছাড়ে না। টিপ টিপ করে পড়ছে। বৃষ্টির মধ্যেই ছাতা চলে এলাম এমজি মার্গে। আলো ঝলমলে এমজি মার্গ, গ্যাংটকের ম্যাল। বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট, বসার জায়গা সব ভিজে গিয়েছে। রাস্তার দু’দিকে হরেক রকম সম্ভার নিয়ে সাজানোগোছানো প্রচুর দোকান। বৃষ্টির মধ্যেই রাস্তায় মানুষের ঢল। অধিকাংশই বাঙালি ট্যুরিস্ট। আমরাও সেই দলে মিশে গেলাম। দু’ ঘণ্টা হাঁটাহাঁটি করে পায়ের অবস্থা খারাপ। তাই ১০০ টাকা দিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে হোটেলে ফিরে এলাম।

আমাদের কাররওই এটা প্রথম বার গ্যাংটকভ্রমণ নয়, জনপ্রিয় স্পটগুলো সবারই ঘোরা। অথচ কালকের পুরো দিনটা আমাদের হাতে। হোটেলবন্দি হয়ে থাকার কোনো মানেই হয় না। তাই অনেক মাথা ঘামিয়ে কালকের ভ্রমণসূচি বানালাম –  ইঞ্চে মনাস্ট্রি, দো দ্রুল চোর্তেন, গ্যাংটক ফ্লাওয়ার একজিবিশন সেন্টার আর ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলজি। রাতের খেতে যাওয়ার আগে ম্যানেজারকে দিয়ে একটা গাড়ির ব্যবস্থা করলাম।

enchey monastery
ইঞ্চে মনাস্টেরি।

পরের দিন ৯টার মধ্যে স্নান সেরে প্রাতরাশ সারা। গাড়ি সময়মতো চলে এসেছে। আমাদের প্রথম গন্তব্য আপার গ্যাংটকে, ইঞ্চে মনাস্টেরিতে।

আপার গ্যাংটক অভিজাত এলাকা। মন্ত্রী থেকে শুরু করে বড়ো বড়ো সরকারি পদাধিকারীরা এখানে থাকেন। জায়গাটাও বেশ সুন্দর। রাস্তার ধারে পাইন গাছের সারি। এ সব দেখতে দেখতে চলে এলাম ইঞ্চে মনাস্টেরি। নানা রঙের তিব্বতি কলকা ফটকে। গাছপালায় ঢাকা পথ ধরে অনেকটা হেঁটে যেতে হয়। হেঁটে যাওয়ার পথে বাঁ দিকের মনোমুগ্ধকর নিসর্গ দেখা যায়। তবে যে হারে ঘরবাড়ি তৈরি হচ্ছে, এ দৃশ্য আর কত দিন দেখা যাবে জানি না।

view from enchey monastery
ইঞ্চে মনাস্টেরি থেকে।

১৮৪০ সালে তিব্বতি লামা দ্রুপথ্রব কার্পো এই গুম্ফাটি নির্মাণ করেন। শোনা যায় তিনি দৈবক্ষমতা বলে উড়তে পারতেন। এর পর ১৯০৮ সালে তখনকার ১০ম রাজা সিকিয়ং টুলকু এই গুম্ফার পুনর্নির্মাণ করেন। সিকিয়ং টুলকু গুম্ফার যে রূপ দান করেন আমরা এখন সেটাই দেখতে পাই। পথের দু’ পাশেই রঙিন প্রার্থনাপতাকা ও প্রার্থনাচক্র সারিবদ্ধ ভাবে লাগানো আছে। ডান দিকের চক্র ঘোরাতে ঘোরাতে মনাস্টেরিতে  যেতে হয় এবং বিপরীত দিকের চক্রগুলো ঘোরাতে ঘোরাতে ফিরতে হয়।

বেশ বড়ো গুম্ফা। জুতো খুলে সাত ধাপ সিঁড়ি বেয়ে ভিতরে ঢুকলাম। বিশাল বুদ্ধমূর্তি মুর্তি। ভিতরে চলার পথের দু’ পাশে পাঁচ জন করে মোট দশ জন সন্ন্যাসী মুখোমুখি বসে মন্ত্রপাঠ করছেন। তাঁদের মন্ত্রোচ্চারণের সুর মুগ্ধ হয়ে বসে শুনতে হয়। এত সুন্দর ছন্দ আমি কখনও শুনেছি বলে মনে পড়ে না। তন্ময় হয়ে ধীর পায়ে তাঁদের সামনে দিয়ে মূর্তির কাছে এলাম। তিব্বতি কারুকার্য করা বেদিতে অনেক বাতি জ্বলছে। প্রচুর ফুল দিয়ে সাজানো। ভিতরের দেওয়ালেও তিব্বতি কারুকার্য। মন্ত্রোচ্চারণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনলাম। তার পর বেরিয়ে এলাম। কানে তখনও বাজছে সেই সুর। কয়েকটা মিনিট মনের আবহই পালটে দিল।

 flower exhibition centre
ফ্লাওয়ার একজিবিশন সেন্টার।

এ বারের গন্তব্য গ্যাংটক ফ্লাওয়ার একজিবিশন সেন্টার। টিকিট কেটে প্রবেশ। ভিতরে ঢুকেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। কত রকমের কত ফুল রে ভাই! কলকাতায় শীতকালে কিছু পুষ্পপ্রদর্শনী দেখেছি, কিন্তু এত ফুলের সমাহার দেখিনি। চতুর্দিক আলো করে আছে বিভিন্ন রঙের ফুল। আমরা যেন ফুল বাগিচার মৌমাছি । কোন দিকে কোন ফুলের কাছে যাব তা যেন ঠিক করতে পারছি না।

 flower exhibition centre 2
ফুলের জলসা।

ঘন্টা খানেক ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে বেরিয়ে এলাম। কিন্তু গাড়ি কথায় গেল? সারথিকে ফোন করে জানলাম গাড়ি যেখানে আছে সেখানে যেতে আমাদের হাফ কিমি হাঁটতে হবে। গ্যাংটকের ট্র্যাফিক পুলিশ বেশ কড়া। রাস্তার ধারে ফাঁকা জায়গা রয়েছে। তা সত্ত্বেও পার্কিং-এ গাড়ি রাখা বাধ্যতামূলক। হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির কাছে এলাম। সুন্দর সাজানো গোছানো শহর, গাছে ঢাকা অথচ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাস্তা। 

near flower exhibition centre
ফ্লাওয়ার একজিবিশন সেন্টারের কাছে।

সারথি জানালেন, এ বারের গন্তব্য দো দ্রুল চোর্তেন। চোর্তেনের কাছে পৌঁছে গাড়ি থেকে নেমে কিছুটা হাঁটতে হয়। হাঁটতে হাঁটতে এই স্তুপ সম্পর্কে যেটুকু জানি সেটা বলি। দ্রোদুল চোর্তেন ১৯৪৫ সালে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের নিংমা সম্প্রদায়ের প্রধান ত্রুলসিক রিনপোচে নির্মাণ করেছিলেন। তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের চারটি প্রধান সম্প্রদায় হল নিংমা, কাগিউ, শাক্য ও গেলুগ। নিংমা শব্দের অর্থ হল প্রাচীন। এখানে তিব্বতি বৌদ্ধধর্মের অনেক দুষ্প্রাপ্য পুথি রাখা আছে। 

dro dul chorten
দ্রো দুল চোর্তেন।

ভিতরে ঢুকে স্তূপগুলোর ছবি তুললাম। দু’জন সন্ন্যাসীকে দেখে এগিয়ে গেলাম। নমস্কার জানিয়ে এই চোর্তেন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলাম। এই চোর্তেনের প্রধানের সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দিয়ে তাঁরা চলে গেলেন। আমি অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাঁদের চলে যাওয়া দেখলাম। 

মৌসুমীকে সঙ্গে নিয়ে চোর্তেনের অফিসে প্রধান আধিকারিকের কাছে এলাম। তাঁর অনুমতি নিয়ে অফিসের ভিতরে ঢুকলাম। সাজানো-গোছানো ঘর। দামি চেয়ার-টেবিলে বসে আধিকারিক একজন সন্ন্যাসীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। আমরা যাওয়ার পর উঠে দাঁড়ালেন, তবে তা আমাদের প্রতি সৌজন্যতা প্রকাশ করার জন্য নয়, বাইরে বেরোনোর জন্য।  আমাদের আসার কারণ জানালাম। সব শুনে তিনি কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থাকলেন। তার পর যা বললেন তার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ওঁর মোদ্দা কথা, উনি এখানে নতুন এসেছেন। এখানকার চোর্তেন সম্পর্কে কিছু জানেন না। এ সম্পর্কে কোনো বুকলেটও নেই। কিছু জানতে হলে গুগুল সার্চ করতে হবে। 

ব্যথিত হলাম। বৌদ্ধধর্মকে আমি শ্রদ্ধা করি। এই ধর্মে শিক্ষার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। বৌদ্ধ সংস্কৃতি আমাদের অনেক কিছু শেখায় কিন্তু আজ যা অভিজ্ঞতা হল তার জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। 

 institute of tibetology
ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজি।

চোর্তেন থেকে বেরিয়ে এলাম। কিছুটা হেঁটেই ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলাজি। চোর্তেন যাওয়ার সময় এর পাশ দিয়েই যেতে হয়। আগে চোর্তেন দেখে এখন ফেরার পথে ঢুকছি। সত্যজিৎ রায়ের ‘গ্যাংটকে গণ্ডগোল’-এ এই জায়গার নাম পাই। গল্পে ‘যমন্তক’ নামে এক বুদ্ধমূর্তির উল্লেখ আছে যার  ৯টা মাথা ও ৩৪টা হাত। এখানে কি সেই মূর্তির দেখা পাব? নাকি সবটাই নিছক গল্প! 

মাথাপিছু ৪০ টাকা করে টিকিট কেটে ঢুকলাম। ভিতরে ফটো তোলা নিষেধ। মাঝারি সাইজের হলঘরে বৌদ্ধধর্মের বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য জিনিস রাখা আছে।  প্রাচীন বই, পুথি, চিত্র, অস্ত্র, মুদ্রা, কার্পেট/কাঁথা, মূর্তি, বাসন ইত্যাদি। ইংরাজিতে তার বিবরণ ও লেখা আছে।

 on the way to institute of tibetology
ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজির পথে।

কিন্তু কোথায় যমন্তক? গল্পের বইয়ে সবটাই কি গল্প? এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে যাচ্ছি, হঠাৎ সামনের দেওয়ালে একটা মূর্তি চোখে পড়ল। এটা কী? হ্যাঁ, এই তো সেই যমন্তক! নাহ্‌, সব গল্প ছিল না। গুনে দেখলাম ফুট খানেক বা তার সামান্য কিছু বড়ো মূর্তিটার ৫ ধাপে মোট ১১টা মাথা এবং গোল করে সাজানো মোট ৪২টা হাত।

ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলাজি থেকে বেরিয়ে এলাম। রাস্তার ও পারে একটা স্মারকের দোকান। সেখানে ঢুকলাম। সবই প্রায় বৌদ্ধ বা তিব্বতি সংস্কৃতির দ্রব্য।  এটা ওটা দেখলাম, দাম করলাম। দাম শুনেই পকেটে আগুন লেগে যাচ্ছে। তবুও সাধ্যমতো দু’টো জিনিস কিনলাম। একটা ড্রাগন আর একটা বুদ্ধমূর্তি। এখনকার মতো ঘোরা শেষ করে ফিরে চললাম হোটেলে। 

একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার পথে। আকাশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। পাহাড়ে ওঠা ইস্তক ভালো আবহাওয়া পাইনি বললেই চলে। সব সময় আকাশের মুখ ব্যাজার। কোনো জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার টিকিটাও দেখতে দিল না!

লাল মার্কেটে চক্কর মেরে এলাম মূল ম্যালে। এ-দোকান ও-দোকান ঘুরছি। অল্পবিস্তর কেনাকাটি হয়েছে। গ্যাংটকে এসে  অব্দি মোমো খাওয়া হয়নি। মোমো আমার খুব পছন্দের খাবার। আমি আজ মোমো খাবই পণ করেছি। ও দিকে অরূপদাও চা চা করছে। অতএব মোমো তো খাওয়া হলই, সঙ্গে শিঙাড়া, মিষ্টি, কফি – কিছুই বাদ গেল না।

বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। এ বৃষ্টি আরও বাড়বে। ছাতাও আনিনি, ঘোরাঘুরি মাথায় উঠল। হাঁটার তো প্রশ্নই নেই, ট্যাক্সি খুঁজতে খুঁজতেই জোর বৃষ্টি এল।  বেশি টাকা কবুল করে একটা ট্যাক্সি ঠিক করলাম। ততক্ষণে ভিজে গিয়ে আমার অবস্থা  লর্ড চমচমের মতো।

view from of hotel
ততক্ষণে কাঞ্চনজঙ্ঘা আবার মুখ লুকিয়েছে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই জানলার পর্দা সরিয়ে রোজকার মতোই বাইরের দিকে তাকালাম। বাইরে তাকিয়েই চক্ষু স্থির! এ কী দেখছি আমি! অবশেষে কাঞ্চনজঙ্ঘা! সামনের পাহাড়ের পিছনে লুকিয়ে থেকে কেবল মাথাটা বাড়িয়ে উঁকি মেরে আমাদের দেখছে কাঞ্চন। সমগ্র ট্যুরের মাঝে তাকে খুঁজে পাইনি, আজ ফেরার দিন তাকে ধরে ফেলেছি। না না, ভুল হল। আমরা তাকে ধরিনি, শেষ দিন বলে সেই-ই আমাদের কাছে ধরা দিল। 

আনন্দে সবাইকে ডেকে দেখালাম। না-ই বা দেখা গেল পুরো কাঞ্চনকে, কিছুটা তো দেখা যাচ্ছে। সবাই সম্মোহিতের মতো সে দিকে তাকিয়ে রইলাম। অনেকক্ষণ ধরে দেখেও সাধ মেটে না, কিন্তু উপায় নেই। এখনও কিছু গোছগাছ বাকি। একটু পরেই তো রওনা হতে হবে বাড়ির পথে। (শেষ)

ট্যুর প্ল্যান-

দিন ১ – এনজেপি থেকে রামধুরা। রাত্রিবাস।

দিন ২ – সকালে বেরিয়ে ইচ্ছেগাঁও, সিলারিগাঁও ঘুরে রিশিখোলায় রাত্রিবাস।

দিন ৩ – সকালে বেরিয়ে অরিটার লেক ঘুরে রংলি থেকে পারমিশন করে জুলুক। রাত্রিবাস।

দিন ৪ – সকালেই বেরিয়ে জুলুক ভিউ পয়েন্ট, থাম্বি ভিউ পয়েন্ট, নাথাং ভ্যালি, বাবা মন্দির, কুপুপ লেক, ছাঙ্গু লেক হয়ে সোজা গ্যাংটক। রাত্রিবাস।

দিন ৫ – গ্যাংটকে বিশ্রাম।

দিন ৬- এনজেপি থেকে ফেরার ট্রেন ধরা।

ছবি লেখক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *