ভ্রমণঅনলাইনডেস্ক: ভূতুড়ে জায়গা দেখার সঙ্গে ভূতে বিশ্বাস করা বা না-করার কোনো সম্পর্ক নেই। মুম্বই শহরেও এমন বেশ কিছু জায়গা আছে, যেগুলো ভূতুড়ে জায়গার তকমা পেয়ে গিয়েছে। সেই সব জায়গাকে ঘিরে এমন সব কাহিনি ডানা মেলেছে যা রীতিমতো রোমহর্ষক। আপনি ভূতে বিশ্বাস করুন বা না-ই করুন, সেই সব জায়গায় গিয়ে যদি এক বার কাহিনিগুলো ভাবেন, গায়ের লোম আপনার খাড়া হয়ে যাবেই। নানা রকম ভূতুড়ে কাণ্ডকারখানা আপনাকে সন্ত্রস্ত করবেই। কথায় বলে মুম্বই কখনো ঘুমায় না। এই প্রবাদবাক্য যে কতটা সত্যি তা ওই সব জায়গায় ঢুঁ মারলেই বোঝা যায়। তা হলে রাত থাকতে থাকতে বেরিয়ে পড়া যাক।
ডিসুজা চওল
মুম্বই শহরের মাহিম অঞ্চলের ডিসুজা চওল এমনই একটা জায়গা যেখানে সূর্যাস্তের পর অনেকেই বাড়ির বাইরে থাকেন না। এখানে লোকমুখে যে কাহিনি প্রচারিত তা শুনে মনে হয় যেন কোনো ভূতের সিনেমা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, এখানে বহু বছর এক মহিলা হঠাৎই কুয়োয় পড়ে মারা গিয়েছিলেন। তাঁরই অতৃপ্ত আত্মা নাকি এখনো ঘুরে বেড়ায় এই চওলের আনাচে কানাচে। অনেকেই এটি বিশ্বাস করেন না, কারণ এই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শীও মেলেনি। তবু এই চওলের বাসিন্দারা সূর্যাস্তের পরে খুব একটা বাইরে বেরোন না।
সঞ্জয় গান্ধী ন্যাশনাল পার্ক
উত্তর মুম্বই-এর এই সংরক্ষিত অরণ্যে বন্য জন্তুর পাশাপাশি ভূতের উপস্থিতির কথাও শোনা যায়। ভূত থাক আর নাই থাক, রাতের নিরাপত্তারক্ষীরাও কিন্তু পাহারা দেওয়ার সময় ঠাকুরের নাম জপ করেন। শোনা যায়, এখানে নাকি কোনো রমণীর অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এবং কোনো গাড়ি গেলে তাকে থামানোর জন্যে হাত দেখায়। যদি কেউ গাড়ি না থামান তা হলে সেই আত্মা নাকি সেই গাড়ির পিছু নেয়। তবে এই জঙ্গলে যাঁরা অস্থায়ী ভাবে বসবাস করছেন, তারাও রাতে বেরোন না খুব একটা। তার কারণ অবশ্য শুধু ভূত নয়, লেপার্ড ও আরও নানা জন্তু এই জঙ্গলে আছে এবং সেটাও রাতে ঘর থেকে না বেরোনোর অন্যতম কারণ।
গ্র্যান্ড পারাডাই টাওয়ার্স
এই আবাসনেরও কিছু গল্প রয়েছে। পর পর আত্মহত্যার ঘটনা এই আবাসনকে ভূতুড়ে হায়গার তকমা দিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে আবার একই পরিবারের পাঁচ জনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এঁরা সকলেই উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। এঁদের ফ্ল্যাট অবশ্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এই আবাসনের বাসিন্দারা মনে করেন, কোনো এক অদৃশ্য শক্তি এখানে উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে। যাঁরা এই রহস্যের সমাধান করতে চান, তাঁদের খুবই প্রিয় জায়গা এই গ্র্যান্ড পারাডাই টাওয়ার্স।
পবন হন্স চত্বর
রাতের পবন হন্স চত্বরের কাহিনি শুনলে আপনার হাড়হিম হতে বাধ্য। এখানে লোকমুখে যে কাহিনি সবাই শুনে আসছে তা হল ১৯৮৯ সালে সালমা নামে একটি মেয়ে এখানে আগুনে আত্মাহুতি দেয়। তার পর থেকেই এই অঞ্চলে রাতে এক অগ্নিদগ্ধ নারীমূর্তিকে চিৎকার করে একটি গাছের দিকে যেতে দেখা যায় এবং আশ্চর্যজনক ভাবে, ওই গাছের আড়ালেই ওই মূর্তি অদৃশ্য হয়ে যায়। এক প্রবীণ নাগরিকের কথায়, ওই মেয়েটির অতৃপ্ত আত্মাই এখনও ঘুরে বেড়ায় পবন হন্স চত্বরে। এই ভূতের ভয়ে এই চত্বরে একটি হনুমান মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এখানকার মানুষদের কথা বিশ্বাস করলে বলতে হয়, এটিই মুম্বইয়ের সব চেয়ে ভয়ের জায়গা।
টাওয়ার অফ সাইলেন্স
পারসিদের কবরস্থান। প্রথা অনুযায়ী মৃত্যুর পরে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের মৃতদেহ এখানে রেখে যাওয়া হয় যাতে সেই দেহ শকুন বা অন্যান্য পাখির ভক্ষণে লাগে। এই ঘটনাই এই জায়গাটি সম্পর্কে নানা ধরনের ভূতুড়ে কাহিনির জন্ম দিয়েছে। এই জায়গায় খুব একটা কেউ যান না। শোনা যায়, যাঁরাই এই অঞ্চল দিয়ে যান, তাঁরাই কোনো না কোনো অপ্রাকৃত কিছুর উপস্থিতি টের পান।
মুকেশ মিলস
একটি পরিত্যক্ত বস্ত্রকল এখন মুম্বইয়ের অন্যতম জনপ্রিয় ভূতুড়ে জায়গা হিসাবে প্রসিদ্ধ। আরব সাগরের তীরে কোলাবা অঞ্চলে অবস্থিত এই মিলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৫ সালে। কিন্তু কয়েক বছর পর থেকেই মিলটি ব্যবসার অভাবে ধুঁকতে থাকে। শেষ পর্যন্ত ১৯৮২ সালে এতে আগুন লেগে ধ্বংস হয়। আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর এর বিধ্বংসী চেহারা অনেকেরই মনে ভয় জাগায়। টিভি সিরিয়ালের শুটিংস্থান হিসাবে এর প্রসিদ্ধি আছে। শুটিং চলাকালীন সিরিয়ালের সঙ্গে জড়িত বহু মানুষ এখানে অপ্রাকৃত কিছুর আভাস পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সান্টা ক্রুজ পশ্চিম
মুম্বই শহরের ব্যস্ত বাসস্থানগুলির মধ্যে এটি অন্যতম। কিন্তু এই জায়গারও ভূতুড়ে বলে দুর্নাম আছে। এখানে একটি বাড়ির তিনতলায় এক ভদ্রমহিলা আত্মহত্যা করেছিলেন। এবং অন্য বাসিন্দারা জানান যে ওঁর মৃত্যুর পরেই হঠাৎ একটি কালো কুকুরের আবির্ভাব হয় এবং সে ওই তিনতলার ঘরের করিডোরে পাকাপাকি বাস করতে শুরু করে। তাঁরা আরও জানিয়েছেন যে যখনই ওই কুকুরটি এক অশুভ সুরে ডেকে ওঠে তখনই ওই ভদ্রমহিলার আত্মার আবির্ভাব হয়। এই বাড়ি এবং চারপাশের বাসিন্দারা এত ভীত যে তাঁরা ওই ভদ্রমহিলার নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেন না। তাঁরা দরকারে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে হলেও বলেন “সেকেন্ড ফ্লোর কি ভাবিজি”।
রাম সাকিত বিল্ডিং
মাহিমের প্যারাডাইস সিনেমার ঠিক পিছনে রাম সাকিত বিল্ডিং নিয়েও শোনা যায় হাড়হিম করা ঘটনা। শোনা যায় বহু বছর আগে এক পঞ্চাশোর্ধ মহিলা জামাকাপড় ধুতে গিয়ে কুয়োয় পিছলে পড়ে গেছিলেন। বাসিন্দারা অনেকেই বলেছেন যে প্রতি অমাবস্যার রাতে ওই কুঁয়ো থেকে ওই মহিলার অতৃপ্ত আত্মা বেরিয়ে আসে, যদিও সে কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু বাসিন্দারা প্রত্যেকেই এই রাতে তটস্থ হয়ে থাকেন।
মার্ভ অ্যান্ড মাড আইল্যান্ড রোড
মার্ভ এবং মাড দ্বীপের সংযোগকারী রাস্তার এক দিকে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। জায়গাটির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে হয়। কিন্তু বেশ কিছু গাড়ি দুর্ঘটনার সাক্ষী এই রাস্তা। এবং প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনা থেকে উঠে এসেছে নানা রোমহর্ষক কাহিনি। তবে একটি কাহিনি খুবই প্রচিলিত। বহু বছর আগে এক মেয়েকে তার বিয়ের দিন খুন করে এই জঙ্গলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই থেকেই সেই মেয়েটির আত্মাকে এখনও রাতে এই রাস্তায় বিয়ের বেশেই দেখা যায়। এই কারণেই নাকি এই রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকে বলেন, যদি কখনও কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, তা হলে সরাসরি, তবে মেয়েটির চোখের দিকে না তাকালে দুর্ঘটনা এড়ানো যায়। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভয় পেলে এত কথা কার আর মাথায় থাকে?
নাসেরওয়াঞ্জ ওয়াদি
মাহিম স্টেশন থেকে এক কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যেই নাসেরওয়াঞ্জ ওয়াদি অবস্থিত। মুম্বই শহরের অন্যতম ভূতুড়ে অঞ্চল এটি। নাসের নামের এক পারসি ভদ্রলোক এখানে একটি জমির মালিক ছিলেন। কিন্তু এই জমি কেনার পরেই আগুনে পুড়িয়ে তাঁকে খুন করা হয়। এই দুঃখজনক ঘটনার পরে ওই জমিতেই সাত জন পর পর মারা যান। লোকমুখে শোনা যায়, ওঁর অতৃপ্ত আত্মা এখনও ওই অঞ্চলে ঘুরে বেড়ায় এবং তাঁর চলার রাস্তায় কেউ থাকলেই তিনি তাঁকে ভয় দেখান। তাই সূর্যাস্তের পরে এই রাস্তায় কেউ যায় না।
সেন্ট জনস্ ব্যাপটিস্ট চার্চসাধারণত ভগবান আর ভূতের স্থান এক সঙ্গে হয় না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটাই হয়েছে। তাই এই থেকেই বোঝা যায় কতটা ভয়ানক হতে পারে এই জায়গা। পশ্চিম আন্ধেরিতে এই গির্জাটি ১৫৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু ১৮৪০ সালে এক মহামারিতে এই গির্জা পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তার পরেই শোনা যায় এখানে এক যুবতী কনের অতৃপ্ত আত্মাকে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। ১৯৭৭ সালে এক ওঝা ডাকা হয় ভূত তাড়ানোর জন্য। এই পদ্ধতি শেষ হলে গির্জার সামনের পুকুরে জলোচ্ছ্বাস হয় এবং পুকুরের সব মাছ মরে যায়। এর পরে আর কোনো ঘটনা এখানে শোনা যায়নি। তবে কথায় বলে, সাবধানের মার নেই।