ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: মমতাজ মহলের স্মৃতিতে তাজমহল গড়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। কিন্তু প্রিয়তমা পত্নীর প্রতি ভালোবাসার প্রতীক হিসাবে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নজির কি শুধু শাহজাহান তৈরি করেছিলেন? না, এর নজির আরও আছে। এবং তাজমহলেরও আগের।
আবদুল রহিম খান-এ-খানন ছিলেন বিখ্যাত কবি, সম্রাট আকবরের নবরত্নের অন্যতম। প্রিয়তমা পত্নী মাহ বানুর মৃত্যুর পর তিনিও নির্মাণ করিয়ে ছিলেন এক স্মৃতিসৌধ, যা ছিল রাজধানী দিল্লির এক দ্রষ্টব্য স্থান। ছ’ বছর ধরে সেই স্মৃতিসৌধের সংস্কারপর্ব চলার পর অতি সম্প্রতি সেটি খুলে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য।

আবদুল রহিমের পত্নীর উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এই স্মৃতিসৌধটির সৌন্দর্য কয়েক শতক ধরে অমিলন। এর গুরুত্ব অসীম। এই সব বিষয় বিবেচনা করেই এই স্মৃতিসৌধটি সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দীর্ঘ ছ’ বছর ধরে সংস্কার করা হয় স্মৃতিসৌধের চাঁদোয়া, বহির্ভাগ, দালান, গম্বুজ এবং আশেপাশের প্রাকৃতিক ভূদৃশ্য।
স্মৃতিসৌধের বিভিন্ন মোটিফের যে চমৎকারিত্ব ষোড়শ শতকে ছিল, সেই চমৎকারিত্ব ফিরিয়ে আনা হয়েছে। মূল গম্বুজ-কক্ষের দেওয়ালটির যে খোদাই করা আকর্ষণীয় চেহারা ছিল, তা আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়াও বেলেপাথরে তৈরি স্মৃতিসৌধ-চত্বর ও প্রাচীর সংস্কার করা হয়েছে।
ভারতের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ তথা এএসআই-এর (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) অনুমতি নিয়ে ‘আগা খান ট্রাস্ট ফর কালচার’-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে এই স্মৃতিসৌধটির সংস্কারের কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালে। প্রায় হাজার তিনেক শিল্পী এই কাজে যুক্ত ছিলেন। এঁদের মধ্যে রাজমিস্ত্রী ছাড়াও ছিলেন পাথরে খোদাইয়ের কাজ করেন এবং চুন প্লাস্টারিং-এর কাজ করেন এমন শিল্পী।

আঠারো ও উনিশ শতকে এই স্মৃতিসৌধটিকে অট্টালিকার নির্মাণসামগ্রী রাখার গুদাম হিসাবে ব্যবহার করা হত। এ ছাড়াও দিল্লির সফদরজং স্মৃতিসৌধ এবং অন্যান্য সৌধ নির্মাণের জন্য এখানকার গম্বুজ থেকে পাথর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই সব কাণ্ডকারখানার জন্য আবদুল রহিমের স্মৃতিসৌধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দিল্লিতে যমুনার তীরে আবদুল রহিমের স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়। এর উদ্যান নাকি হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত বিস্তৃত।