ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: হিমাচল প্রদেশে জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলির বাইরে আরও অনেক জায়গা রয়েছে যা ঐতিহাসিক এবং সৌন্দর্যের দিক দিয়েও অতুলনীয়। কিন্তু এখনও সে ভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারেনি। এমনই এক শহর হল নুরপুর।
পাঠানকোট থেকে ডালহৌসি ওঠার পথে পড়বে এই শহর, যার প্রেমে পড়েছিলেন নুর জাহান। নুরপুরের ইতিহাসটাও বেশ সুন্দর। রাজপুত পাঠানিয়াদের রাজত্বের শহর নুরপুর। একাদশ শতকে এই শহরের পত্তন করেন রাজা ঝেত পাল। ১৫৮০ থেকে ১৬১৩ পর্যন্ত রাজা বাসুর আমলে নুরপুরের নাম দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজ বাসুই এই কেল্লা তৈরি করেন। কিন্তু তখন এই শহরের নাম ছিল ধামেরি। সেখান থেকে নুরপুর নাম হল কী ভাবে?

নুরপুরের নাম এসেছে নুরজাহানের নাম থেকে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গির যখন দিল্লিতে সাম্রাজ্য চালাচ্ছেন তখন নুরপুর, তথা ধামেরিতে এসেছিলেন নুরজাহান। সেই শহরের সৌন্দর্যে তিনি এতটাই মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন যে এখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন জাহাঙ্গির-পত্নী। নুরজাহানের এই সিদ্ধান্তে চিন্তার ভাঁজ পড়ে স্থানীয় রাজাদের কপালে। স্থানীয় রাজারা ধামেরিতে মুঘল আগ্রাসন আটকানোর জন্য বদ্ধপরিকর ছিলেন। কিন্তু এটাও জানতেন যে নুরজাহান এখানে থেকে গেলে মুঘল আগ্রাসন এখানে হতে বাধ্য। অগত্যা নুরজাহানকে শহরছাড়া করানোর জন্য একটা অভিনব চিন্তা করা হল, যাতে তিনি মনে আঘাতও পেলেন না।
এই শহরে বেশি দিন থাকলে তাঁর সৌন্দর্যে প্রভাব পড়তে পারে আর তাঁর শরীরও খারাপ হতে পারে, কারণ এখানে নাকি অজানা রোগের প্রকোপ বাড়ছে — নুরজাহানের কানে এই কথা তুলে দেন স্থানীয় রাজারা। তখনই তড়িঘড়ি ধামেরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন নুরজাহান। হাঁফ ছেড়ে বাঁচে স্থানীয় সাম্রাজ্য।
কিন্তু নুরজাহানের সঙ্গে এই শহরের স্মৃতিকে বেঁধে রাখতে ১৬২২ সালে এই শহরের নাম বদলে নুরপুর করার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন রাজা জগত সিংহ পাঠানিয়া। এখানে রয়েছে নুরপুর কেল্লা। একটা পাহাড়ের ওপরে অনেকটা সমতল অঞ্চলের ওপরে অবস্থিত সেই কেল্লা। প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করে আবার বেশ খানিকটা ফাঁকা জায়গা। এক সময়ে এই কেল্লা গমগম করলেও, এখন অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। কেল্লার ধ্বংসের পেছনে অবশ্য ১৯০৫-এর কাংড়ার ভূমিকম্পও একটা কারণ।

তবে কেল্লার মধ্যে যেখানে মানুষের আনাগোনা সব থেকে বেশি সেটা বৃজরাজস্বামী মন্দির। মন্দির হওয়ার আগে এটি দেওয়ান-ই-খাস ছিল। তাই মন্দিরের ইসলামধর্মী স্থাপত্য নজর কাড়বে। মন্দিরের ভেতরে বিরাজ করছেন ভগবান কৃষ্ণ। নিজের রাজত্বকালে রাজস্থানের চিতৌর থেকে কৃষ্ণের মূর্তি এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন জগত সিংহ পাঠানিয়া।
কেল্লার এক্কেবারে শেষপ্রান্ত থেকে পুরো উপত্যকা দেখা যায়। এক দিকে হিমালয়ের পাহাড়শ্রেণি, অন্য দিকে পঞ্জাবের সমতল। নীচে দিয়ে বয়ে যায় একটি নদী, আকারে বেশ বড়ো। এই নদীর নাম জভর খাদ। চাক্কি নদীর একটা শাখানদী এটা।
নুরপুর কেল্লা ছাড়াও এখানে দ্রষ্টব্য বলতে রয়েছে নাগনি মাতা মন্দির। নুরপুর থেকে কুলুর দিকে ৬ কিমি গেলে এই মন্দির। স্থানীয়দের দাবি, এই অঞ্চলের অত্যন্ত জাগ্রত এই নাগনি মাতা। মন্দিরের পরিবেশ এক কথায় অসাধারণ। মূল সড়ক থেকে বেশ কিছুটা নেমে এই মন্দির। মন্দিরের পেছনে জঙ্গল হওয়ার ফলে মাঝেমধ্যেই এখানে সাপের দেখা মেলে। স্থানীয়দের বিশ্বাস তখন নাকি স্বয়ং নাগনি মাতাই পৃথিবীতে আসেন।

এ হেন নুরপুরে একটা রাত কাটিয়ে যেতে পারলে আপনি যে আরও সমৃদ্ধ হবেন তা বলাই বাহুল্য।
কী ভাবে যাবেন
কাংড়া ভ্রমণ শুরু করার পথে একটা দিন যদি নুরপুরে থাকতে পারেন, খুব ভালো লাগবে। হাওড়া বা দিল্লি থেকে ট্রেনে পাঠানকোট পৌঁছোন। পাঠানকোট থেকে নুরপুরের দূরত্ব ২৬ কিমি। বাসেই চলে আসা যেতে পারে, আর গাড়ি তো আছেই। ডালহৌসির পথে একটা দিন এই নুরপুরে কাটিয়ে দিন।
কোথায় থাকবেন
নুরপুরে বেসরকারি কিছু সাধারণ হোটেল রয়েছে। তবে এখানে রাত্রিবাসের সব থেকে ভালো জায়গা নিঃসন্দেহে হিমাচল পর্যটনের হোটেল নূপুর। অনলাইনে বুক করার জন্য লগইন করুন www.hptdc.in।