ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: ঝাড়গ্রাম বেড়াতে এলে সাধারণত পর্যটকরা সেই শহরের স্থানীয় দ্রষ্টব্য স্থান ঘুরে চলে যান। কেউ কেউ অবশ্য বেলপাহাড়ি বা কাঁকড়াঝোরও বেড়াতে যান। তবে এ বার ধীরে ধীরে পর্যটনের মানচিত্রে জায়গা হিসেবে দখল নিতে চলেছে লোধা-শবর অধ্যুষিত ঝাড়গ্রামের খোয়াব গাঁ। এই গ্রামে নানান রঙে, নানান ছবিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে মাটির বাড়িগুলো।
এক সময় এই গ্রাম লালবাজার নামে পরিচিত ছিল। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে দায়িত্ব নিয়ে এই গ্রামের ভোল পালটে দেন কলকাতার চালচিত্র অ্যাকাডেমি সংস্থার লোকজন। সংস্থার সদস্যরা গ্রামে ঘুরতে এসে কথা বলেন স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে। গ্রামের লোধা, শবর ও কুরমি পরিবারদের দেখে তাঁদের সাক্ষর করার সঙ্গে সঙ্গে স্বনির্ভর করে তুলতে এবং একই সঙ্গে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে এই লালবাজারকে গড়ে তুলতে একটি পরিকল্পনা করেন।
পিছিয়ে পড়া আদিবাসী অধ্যুষিত শ্রেণির অন্যতম লোধা-শবর পরিবারের সদস্যদের এবং বাচ্চাদের ট্রেনিং দেওয়া শুরু হয়। এই গ্রামে সব মিলিয়ে রয়েছে ১৩টি বাড়ি। সেই বাড়িতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দৃশ্য আঁকা শুরু হয়। প্রতি বছরই এই চিত্র পরিবর্তন করেন সদস্যরা। প্রথম প্রথম এই চিত্র আঁকতেন সংস্থার সদস্যরা। কিন্তু পরবর্তী কালে এই চিত্র আঁকেন এলাকার এই লোধা শবর পরিবারের ছেলেমেয়েরা। তাদের দক্ষ করে তোলা হয়েছে এই কাজে। সেই লালবাজার এখন খোয়াব গাঁ হিসেবে পরিচিত।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2023/03/khowab-ga2.jpg)
পাশাপাশি, গাছের মূল, শিকড় দিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে। ছাঁচ নিয়ে এসে ডোকরার কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম থেকে বেড়াতে আসার অন্যতম একটা কেন্দ্র এই খোয়াব গাঁ। এ বার পর্যটকরা এখানে এসে যাতে রাত্রিবাস করতে পারেন, সেই চেষ্টাও করা হচ্ছে।
গ্রামে কটেজ তৈরি করার ভাবনাচিন্তা চলছে। পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্য করে তাঁদের আধুনিক যুগের সঙ্গে মেলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংস্থার সদস্যরা। গ্রামের গা দিয়ে বয়ে চলা কেচেন্দা খালের জল এবং সবুজে ঘেরা জঙ্গলমহলের প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করবেন পর্যটকেরা। জঙ্গলমহলে এই লোধা-শবর অধ্যুষিত খোয়াব গাঁ যে আগামী দিনে প্রথম সারির পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে ছাপ ফেলতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2023/03/khowab-ga3.jpg)
চালচিত্র অ্যাকাডেমির দায়িত্বে থাকা মৃণাল মণ্ডল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “বছর কয়েক আগে ঘুরতে আসি গ্রামে। ভালো লেগে যায়। এর পর আমাদের সংস্থা থেকে ভাবনাচিন্তা করে ২০১৮ সাল থেকে আমরা দায়িত্ব নিয়েছি। এলাকায় লোধা ও শবর পরিবারের সদস্যদের কাঁথা সেলাই, কাটুম কুটুম শেখানো হয়। এ ছাড়া পরিবারের বাচ্চাদের বাড়ি আঁকার ট্রেনিং দেওয়া হয়। আমরা চাই জঙ্গলমহলের এই লোধা-শবর পরিবার শিক্ষিত হয়ে আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলুক।”