ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: অন্ধ্রপ্রদেশ বিশাল বড়ো একটা রাজ্য। কিন্তু দুঃখের বিষয় বিশাখাপত্তনম আর আরাকু ছাড়া রাজ্যের অন্য জায়গাগুলোয় বাঙালি পর্যটকের পা খুব একটা পড়ে না। তার মধ্যে অন্যতম হল হর্সলে হিলস্। সমুদ্রতল থেকে ১২৬৫ মিটার (৪১৫০ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত খুব সুন্দর এই শৈলশহর এই হর্সলে হিলস্।
হর্সলে হিলস্-এর পুরোনো নাম ইয়েনুগু মাল্লাম্মা কোন্ডা। প্রচলিত লোককথা অনুযায়ী, এখানে মাল্লাম্মা নামে ছোট্ট একটি মেয়ে থাকত। তার দেখভাল করত এক দল হাতি। মেয়েটি পাহাড়ি আদিবাসী মানুষদের শুশ্রূষা করত। হঠাৎ সে হারিয়ে গেল। এখানকার অধিবাসীদের বিশ্বাস, সে ছিল এক দেবী। তার সম্মানে মন্দির গড়া হল।
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে এখানে এলেন কুডাপ্পা জেলার কালেক্টর ডব্লিউ এইচ হর্সলে। পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানেই গ্রীষ্মাবাস বানানোর পরিকল্পনা করলেন। ১৮৭০-এ তৈরি হল সেই গ্রীষ্মাবাস। আর জায়গার নাম হল হর্সলে হিলস্।
মদনাপাল্লে থেকে পাহাড়ি পথের শুরু। নয়নাভিরাম সেই পথ। পাহাড়ি পথে এঁকেবেঁকে চলা পুরো রাস্তাটাই ইউক্যালিপটাস, জাকারান্ডা, গুলমোহর, রিতা, আমলা, চন্দন প্রভৃতি গাছে ছাওয়া। মাঝেমাঝে ভাল্লুক, বন্য কুকুর, সম্বর, চিতাবাঘ ইত্যাদির দর্শন মেলে।

কী দেখবেন
পূর্বঘাটে পর্বতমালায় হর্সলে হিলস্-এ শীত বেশ উপভোগ্য। চন্দন, পলাশ, পিয়াল, সেগুন, দেবদারু, ইউক্যালিপ্টাস, গুলমোহর আর আমগাছে ছাওয়া হর্সলের প্রকৃতি অত্যন্ত মনোরম। এখানকার বেশির ভাগ দ্রষ্টব্যের খ্যাতি নৈসর্গিক শোভার জন্য। শহরে অনেকগুলি ভিউ পয়েন্ট আছে। মনোরম সূর্যাস্ত দর্শনীয়।
(১) টপ পয়েন্ট — বাসস্ট্যান্ড থেকে ৬৫০ মিটার দূরে।
(২) গলি বন্ডা (উইন্ডিং রক) ভিউ পয়েন্ট — বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩৫০ মিটার দূরে।
(৩) হুইসপার উইন্ডস ভিউ পয়েন্ট — বাসস্ট্যান্ড থেকে ২০০ মিটার দূরে।
(৪) ভিউ পয়েন্ট থ্রি — বাসস্ট্যান্ড থেকে ৫০০ মিটার দূরে।
(৫) কল্যাণী — বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে ১৫০ বছরের পুরোনো ইউক্যালিপ্টাস গাছ, ‘কল্যাণী’। ১৮৬৯ সালে ডব্লিউ এইচ হর্সলে এই গাছ রোপণ করেছিলেন।
(৬) চিড়িয়াখানা — বনবাংলোর কাছে, বাসস্ট্যান্ড থেকে ১ কিমি।
(৭) ইয়েনুগু মালাম্মা মন্দির — বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪৫০ মিটার দূরে।
(৮) এনভায়রনমেন্টাল পার্ক –- বাসস্ট্যান্ডের কাছেই।
(৯) গঙ্গোত্রী লেক — আড়াই কিমি দূরে।
(১০) মদনাপাল্লে — ২৭ কিমি দূরে ৬৯৫ মি (২২৮০ ফুট) উচ্চতায় শহর মদনাপাল্লে। ১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে অ্যানি বেসান্ত প্রতিষ্ঠিত বেসান্ত থিয়োজফিক্যাল কলেজে কিছু দিন ছিলেন। সেই সময় ওই কলেজের প্রিন্সিপ্যাল ছিলেন ড. জেমস হেনরি কাজিন্স। তাঁর স্ত্রী মার্গারেট কাজিন্স রবীন্দ্রনাথের ‘জন গণ মন’ গানের ইংরেজি তর্জমায় সুরারোপ করেছিলেন। সেই উপলক্ষ্যেই রবীন্দ্রনাথের এখানে আসা।

কী ভাবে যাবেন
ভারতের যে কোনো জায়গা থেকে ট্রেনে বা বিমানে বেঙ্গালুরু চলে আসুন। বেঙ্গালুরু থেকে হর্সলে হিলস্ ১৩৮ কিমি, গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন।
তবে কলকাতা থেকে গেলে ট্রেনে চলুন রেনিগুন্টা। হাওড়া থেকে রেনিগুন্টা যাওয়ার সব চেয়ে ভালো ট্রেন হাওড়া-এসএমভিবি বেঙ্গালুরু দুরন্ত এক্সপ্রেস। সোম ও বৃহস্পতিবার বাদে বাকি পাঁচ দিন হাওড়া থেকে ছাড়ে সকাল ১০:৫০ মিনিটে, রেনিগুন্টা পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৯:৫৫ মিনিটে। রেনিগুন্টা থেকে হর্সলে হিলস্ ১৩৮ কিমি, গাড়ি ভাড়া করে চলে আসুন।
রেনিগুন্টা থেকে বাসেও যেতে পারেন হর্সলে হিলস্। টানা বাসের অভাবে প্রথমে চলুন মদনাপাল্লে, ১২৪ কিমি। মদনাপাল্লে থেকে বাসে হর্সলে হিলস্ ২৭ কিমি।
কোথায় থাকবেন
হর্সলে হিলস্-এ আছে অন্ধ্র পর্যটনের হারিথা হিল রিসর্ট। অনলাইন বুকিং www.aptdc.gov.in।

জেনে রাখুন
রেনিগুন্টা থেকে তিরুপতি ১০ কিমি। সুতরাং তিরুপতি ঘুরতে এসে হর্সলে হিলস্-এ দু’টো দিন কাটিয়ে যেতে পারেন। কিংবা বেঙ্গালুরু বেড়াতে এসেও দু’টো দিন কাটিয়ে যাওয়া যায় হর্সলে হিলস্-এ।