১১৫০০০ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত ভারতীয় রেলপথ বলা বাহুল্য পৃথিবীর দীর্ঘতম রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলির মধ্যে অন্যতম। সারা ভারতে প্রায় ২০,০০০ যাত্রীবাহী ট্রেন এবং প্রায় ৭০০০ মালগাড়ি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ৭৩৪৯ টি স্টেশন অতিক্রান্ত হয়। এত বেশি সংখ্যক ট্রেন পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কমই আছে। তার মধ্যে অনেক রেলপথই দৈর্ঘ্যে অনেক বড়। এত বিশাল দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত যেতে হলে যে লম্বা রাস্তা লাগবে তা তো বলাই বাহুল্য। এই দীর্ঘতম কয়েকটি রেলপথের তালিকা রইলো আপনার জন্য।
বিবেক এক্সপ্রেস
ভারতের দীর্ঘতম রেলপথ এটি। এই ট্রেন ডিব্রুগড় স্টেশন থেকে কন্যাকুমারী স্টেশন পর্যন্ত এই ট্রেন ভারতের দীর্ঘতম রেলপথ তো বটেই এবং পৃথিবীর মধ্যে দীর্ঘতম রেলপথ গুলির মধ্যে ২৪ নম্বরে আছে। ২০১৩ সালে এই ট্রেন চালু হয়, স্বামী বিবেকানন্দের স্বার্ধশতবর্ষে ওনার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। তবে এই ট্রেন সপ্তাহে এক দিনই চলে। ডিব্রুগড় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এই ট্রেনটি ৪২৭৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এবং প্রায় ৮০ ঘন্টা সময় লাগে । এই পথে প্রায় ৫০ টিরও বেশি অন্তর্বর্তী স্টেশন আছে।
তিরুঅনন্তপুরম – শিলচর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস
এই ট্রেনটিও সাপ্তাহিক ট্রেন। এই ট্রেনের আগে নাম ছিলো তিরুঅনন্তপুরম সেন্ট্রাল গুয়াহাটি সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস। পরে ২১শে নভেম্বর ২০১৭-এ ট্রেনটির যাত্রাপথ বাড়িয়ে এটি শিলচর পর্যন্ত করা হয় যার নাম হয় তিরুঅনন্তপুরম – শিলচর সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস । ৩৯৩২ কিলোমিটার দূরত্বের এই ট্রেনে সময় লাগে ৭৬ ঘন্টা ৩৫ মিনিট এবং এই রেলপথের অন্তর্বর্তী স্টেশনের সংখ্যা ৫৬।
হিমসাগর এক্সপ্রেস (কন্যাকুমারী থেকে শ্রী বৈষ্ণদেবী কাটরা)
মাতা বৈষ্ণবেদী কাটরা থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এই রেলপথ ভারতের তৃতীয় দীর্ঘতম। ১২ টি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে প্রায় ৭৩টি অন্তর্বর্তী স্টেশনের মধ্যে দিয়ে এই ট্রেনটি ৩৭৮৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে। এই রেলপথে যেতে প্রায় ৭৩ ঘন্টা সময় লাগে। দক্ষিণ ভারতের ভক্তদের সুবিধার্থে এই ট্রেন চালু করা হয় যাতে তাঁরাও বৈষ্ণবেদী দর্শন করতে পারেন।
নবযুগ এক্সপ্রেস (ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল থেকে জম্মু তাওয়াই)
ম্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল থেকে জম্মু তাওয়াই পর্যন্ত এই ট্রেনে যেতে লাগে প্রায় ৪ দিন। এই ট্রেনটি ৩৬৮৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে এবং মাঝে ৫৯ টি স্টেশনে থামে। এই ট্রেনটি ১৫ টি রাজ্য অতিক্রম করে, এবং এটি একটি সাপ্তাহিক ট্রেন। জম্মু ও কাশ্মীরের সঙ্গে ভারতের অন্য রাজ্য গুলির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই ট্রেন চালু করা হয়েছিলো।
তেন জম্মু এক্সপ্রেস (তিরুনেলভেলি তামিলনাড়ু থেকে জম্মু)
তেন জম্মু এক্সপ্রেস তিরুনেলভেলি থেকে শ্রী মাতা বৈষ্ণদেবী কাটরা পর্যন্ত যায়। এই রেলপথের দৈর্ঘ্য ৩৬৪২ কিলোমিটার। মাঝে ৬২ টি স্টেশনে থামে এবং সময় নেয় প্রায় ৬৯ কিলোমিটার। এই ট্রেনটি১১টি রাজ্য অতিক্রম করে।
অমৃতসর কচুভেলি এক্সপ্রেস (অমৃতসর থেকে কচুভেলি থিরুবনন্তপুরম)
অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির সারা পৃথিবী বিখ্যাত। প্রত্যেক বছর বহু বহু মানুষ এই স্বর্ণমন্দির দর্শন করতে আসেন। এই ট্রেনটি অর্থাৎ অমৃতসর কচুভেলি এক্সপ্রেস সেই অমৃতসর পর্যন্ত যায়। এই রেলপথের দূরত্ব ৩৫৯৭ কিলোমিটার। ৭টি রাজ্য অতিক্রম করে ট্রেনটির এই দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে ৫৭ ঘন্টা। এই ট্রেন মাঝে ২৫টি স্টেশনে থামে। সপ্তাহে রবিবার করে এই ট্রেন চলে। এই ট্রেনে অমৃতসর গিয়ে দক্ষিণ ভারতের মানুষেরা যাতে স্বর্ণমন্দির দর্শন করতে পারেন ।
হামসফর এক্সপ্রেস (আগরতলা থেকে বেঙ্গালুরু)
এই দীর্ঘ রেলপথযুক্ত ট্রেনের তালিকায় এই ট্রেনের নাম ২০১৬ সালে । এই ট্রেন আগরতলা থেকে বেঙ্গালুরু যায় এবং ৩৫৭০ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে।এই ট্রেন মাঝে ২৮টি স্টেশনে দাঁড়ায় এবং গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগে ৬৪ ঘন্টা ১৫ মিনিট। এই ট্রেন সপ্তাহে দুদিন চলে, মঙ্গলবার এবং শনিবার।
ছবি : ট্রেন ইনফো এবং অন্যান্য সাইট থেকে সংগৃহিত