দোলেই ভোট! পর্যটন ব্যাবসায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কায় পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম

শ্রয়ণ সেন

দোলের ছুটির জন্য অনেকেই হাপিত্যেশ করে বসে থাকেন। সপ্তাহান্ত ঘেঁষে দোল এলে তো কথাই নেই, তা যদি না-ও হয়, দোলের ছুটির সঙ্গে আরও দু-একদিন অনেকেই বেরিয়ে পড়েন কাছেপিঠে। আর এ বার তো করোনার জন্য বেড়ানো শিকেয় উঠেছিল। করোনা-আতঙ্ক যত কাটছে তত মানুষ বেরিয়ে পড়ছেন। সে ভাবেই আগামী দোলের ছুটিতে অনেকেই পরিকল্পনা করে ফেলেছিলেন। কিন্তু বাদ সাধল নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা।   

টানা কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর সদ্য গত অক্টোবর থেকে আশার আলো দেখতে শুরু করেছিল পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম-সহ রাঢ়বঙ্গের পর্যটন। গত বছর দোলের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া পর্যটন ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছিল দুর্গাপুজোর পর থেকে। করোনাতঙ্ক কাটিয়ে মানুষও বেরিয়ে পড়ছিলেন ভ্রমণে।

আশা ছিল, এই দোলের সময়ে পর্যটকদের ঢল নামবে রাঢ়বঙ্গে। পলাশের পার্বণে মেতে উঠবে এই সব অঞ্চল। পর্যটন ব্যবসায়ী-সহ স্থানীয় মানুষজন ফের লাভের আশায় দিন গুনতে শুরু করেছিলেন।

কিন্তু সব আশায় জল ঢেলে দিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্যের ৮টা দফা ভোটের প্রথম দফাটিই হচ্ছে পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রামে। এবং সেটা ২৭ মার্চ অর্থাৎ দোলের আগের দিন। এই পরিস্থিতিতে রাঢ়বঙ্গের পর্যটনে আচমকা কালো মেঘ ঘনিয়ে এসেছে। ভোটের সময়ে পরিস্থিতি অশান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই ইতিমধ্যেই দোল এবং আশেপাশের তিন-চারটে দিনের বুকিং বাতিল করতে শুরু করে দিয়েছেন পর্যটকরা।

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে রীতিমতো ক্ষুব্ধ পর্যটন ব্যবসায়ীরা। বড়ন্তির একটি রিসর্টের কর্ণধার সপ্তর্ষি রায় বলেন, “পুরুলিয়া এমনিতেই পিছিয়ে পড়া জেলা। কিন্তু বর্তমানে পর্যটনের সুবাদে পর্যটন ব্যবসায়ীদের তো বটেই স্থানীয় মানুষজনের আর্থিক অবস্থাও অনেকটা ভালো হয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ ছিল পর্যটন। বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন সবাই। এ বার দোলের সময়েই ভোট স্থানীয় মানুষদের কাছে একটা বড়ো আঘাত।”

ভোটের সময়ে নিজের রিসর্ট খুলে রাখতে পারবেন কি না জানেন না সপ্তর্ষিবাবু। পুলিশের তরফে কী নির্দেশ আসে, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন তিনি।

ভ্রমণ ব্যবসায় যুক্ত সৌরভ নায়েক নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তে হতাশ। হোটেল বা রিসর্ট খোলা থাকলেও তাঁর চিন্তা গাড়ির পরিষেবা নিয়ে। তাঁর বক্তব্য, ট্রেনে করে কোনো স্পটে যদি চলেও যাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রেও ঘরবন্দি হয়েই হয়তো কাটাতে হবে, কারণ ভ্রমণের গাড়ি হয়তো পাওয়াই যাবে না। তাঁর উপদেশ, অন্তত ২৪ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাঢ়বঙ্গে যাওয়া উচিত নয়।

এই সাত দিনের সময়টাই যে পিক সিজন এ বার। সেই সময়টা কাটিয়ে পর্যটনের পালে হাওয়া লাগবে কি না, সেই নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ এর পরেই গরম পড়ে যাবে। এপ্রিলের গরমে রাঢ়বঙ্গকে এড়িয়েই যেতে চাইবেন পর্যটকরা।

বাংলার বিভিন্ন দিক চষে বেড়ানো ভ্রামণিক সঞ্জয় গোস্বামী চাঁচাছোলা ভাবেই বলে দিচ্ছেন যে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের পেটে সরাসরি হাত দিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তিনি বলেন, “গোটা রাঢ়বঙ্গের পর্যটন শিল্প চলে এই সময়টার ওপর ভিত্তি করে। আজ তাদের জন্য ভোটের করাল গ্রাসের খবর।”

কিন্তু এই ব্যাপারটার সমাধান আগেই মিলত বলে মনে করেন সঞ্জয়বাবু। তাঁর কথায়, “আমার প্রশ্ন হল পর্যটনের সঙ্গে সম্পর্কিত কয়েকশো প্ল্যাটফর্ম বা বিভিন্ন ইউনিয়নের তো নির্বাচন কমিশনের কাছে যাওয়া উচিত ছিল অনেক আগেই। সব সরকারের উপর ছেড়ে বসে না থেকে নিজেদেরই এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।”

ভারতে খেলাধুলো (ক্রিকেট বাদে) এবং পর্যটন সব থেকে ব্রাত্য বিষয় বলেই মনে করেন সঞ্জয়বাবু।

আরও পড়ুন: দেশের কিছু কিছু জায়গায় যাওয়ার জন্য ফের কোভিড ১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *