লাইব্রেরি, গ্যালারি, মিউজিয়ামে কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ হওয়ার পথে যামিনী রায়ের বাড়ি

ভ্রমণ অনলাইনডেস্ক: দক্ষিণ কলকাতায় বালিগঞ্জ প্লেসের পাশেই একটা শান্ত গলি যামিনী রায় সরণি। সেখানে দাঁড়িয়ে একটা তিনতলা বাড়ি। একটা সময়ে এই বাড়িতে আড্ডা দিতে আসতেন দেশের নামজাদা লেখক, কবি, চিত্রকর, শিল্পী, পরিচালক এবং রাজনীতিবিদরা।

কিন্তু এখন সে বাড়ির বেহাল দশা। সেখানে যে বরেণ্য শিল্পী যামিনী রায় থাকতেন, তা অনেকেরই অজানা। তবে, দ্রুত এই বাড়ি রূপান্তরিত হতে চলেছে মিউজিয়ামে।

১৯৪৯ সালে বাগবাজারের ভাড়া বাড়ি ছেড়ে স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী যামিনী রায় চলেন আসেন দক্ষিণ কলকাতার বালিগঞ্জ প্লেসের এই বাড়িতে। ১৯৭২ সালে চিত্রকরের মৃত্যুর পর বাড়ির দশা বেহাল হয়ে যায়।

যামিনী রায়ের বাড়িটিকে মিউজিয়াম করে তোলার দায়িত্ব নিয়েছে দিল্লি আর্ট গ্যালারি। ২০২৪ সালের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ার কথা ওই বাড়ি। যামিনী রায়ের এই বাড়িকে একটি বিশ্বমানের মিউজিয়াম হিসেবে সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে চায় ডিএজি। ডিএজি যামিনী রায়ের পরিবারের কাছ থেকে বাড়িটা কিনে নিয়েছে এবং সংস্করণের দায়িত্ব নিয়েছে।

চল্লিশের দশকে যখন যামিনী রায় বালিগঞ্জের প্লেসের বাড়িতে এসেছিলেন, তখন এই জায়গার নাম ছিল ডিহি শ্রীরামপুর লেন। সেই সময় এই বাড়িটি কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ ছিল। পুরোনো বাসিন্দারা ছাড়া এখনকার অনেকেই জানেন না যে, শিল্পী যামিনী রায় একদা এখানে থাকতেন।

পশ্চিমী শৈলীতে প্রশিক্ষিত ছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের শিকড়কে কোনো দিন ভোলেননি। তিনি ছিলেন বাঁকুড়া জেলার বেলিয়াতোড় তথা বেলেতোড়ের মানুষ। তিনি বাংলার লোক ঐতিহ্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কাজ করতেন। যেমন বাঁকুড়ার ঘোড়া, বিষ্ণুপুরের পোড়ামাটির মন্দির, কালীঘাটের পটুয়া ইত্যাদি। যামিনী রায় অল্প টাকায় তাঁর আঁকা ছবি বিক্রি করতেন। তিনি চাইতেন তাঁর কাজ সহজলভ্য হোক। তাই তাঁর বাড়িটাকে এমন ভাবেই সংগ্রহশালায় পরিণত করা হচ্ছে, যাতে মানুষ সহজেই যামিনী রায়ের কাজ ও জীবনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।

এই বাড়ির নীচের তলায় ছিল যামিনী রায়ের স্টুডিও। এখানেই প্রদর্শিত করা হবে শিল্পীর কাজ। এ ছাড়া এই বাড়ির বাগানে রয়েছে সেই বহু-চর্চিত আম গাছ, যার তলায় বসে অবসর সময়ে ছবি আঁকতেন শিল্পী। সেখানে তৈরি হবে ক্যাফে। বাড়ির উঠোন জুড়ে থাকবে শিল্পীর আঁকা ছবি। বাড়ির প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় তৈরি হবে গ্যালারি। তার সঙ্গে থাকবে লাইব্রেরি, দোকান, ক্যাফেটেরিয়া।

সব মিলিয়ে এটা বলাই যায় যে কলকাতার অন্যতম একটা বড়ো আকর্ষণীয় স্থান হয়ে ওঠার অপেক্ষায় যামিনী রায়ের বাড়িটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *