ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: শৈলশহর দার্জিলিঙের (Darjeeling) সব হোটেল ১ জুলাই থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে। দার্জিলিঙ হোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশন এই সিদ্ধান্ত করেছে।
কেন্দ্র ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আগামী ৮ জুন থেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ খোলার অনুমতি দিলেও দার্জিলিঙ পাহাড়ে হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের ফলে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১০ হাজার পরিবারের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে। দার্জিলিঙ শহর ও তার আশেপাশে ৩৮০টি হোটেল আছে এবং প্রতি বছর ওই হোটেলগুলোতে সাড়ে চার হাজার পর্যটকের আগমন ঘটে।
দার্জিলিঙ হোটেল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (Darjeeling Hotel Owners Association) তরফ থেকে বলা হয়েছে, কোভিড ১৯ (Covid 19) অতিমারির কারণে পর্যটক আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় হোটেল খুলে রাখা যুক্তিযুক্ত নয়।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাঙ্গে শেরিং বলেন, “অদূর ভবিষ্যতে পাহাড়ে পর্যটক আগমনের কোনো সম্ভাবনা আমরা দেখছি না।” তিনি জানান, বুধবার অ্যাসোসিয়েশনের সভায় হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: এ বারের অমরনাথ যাত্রা মাত্র ১৫ দিনের, ৫৫ বছরের বেশি বয়সিদের যাত্রায় মানা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক হোটেল-মালিক বলেন, “বে-মরশুমে (Off-season) হোটেল খুলে রাখার যুক্তি খাটে না।” দার্জিলিঙে পর্যটকরা সব চেয়ে বেশি আসেন গ্রীষ্মকালেই। বর্ষাকালে পাহাড়ে পর্যটনশিল্পে চলে মন্দা।
ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটর-সহ পর্যটনশিল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁরা মনে করেন, হোটেল-মালিকদের এই সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলের পর্যটনশিল্পে, বিশেষ করে রেস্তোরাঁ ও পরিবহণ সেক্টরে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। দার্জিলিঙ, কালিম্পং পাহাড় ও ডুয়ার্স নিয়ে উত্তরবঙ্গের ট্যুরিজম সার্কিট। তবে কালিম্পং পাহাড় ও ডুয়ার্সের হোটেল-মালিকরা দার্জিলিঙের মতো সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।
অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারবেশন অ্যান্ড ট্যুরিজম-এর আহ্বায়ক রাজ বসু বলেন, তাঁর ধারণা করোনাভাইরাস জনিত সংকট কাটানোর পর যে শিল্পটি সব চেয়ে শেষের দিকে চাঙ্গা হবে তা হল পর্যটন শিল্প। তিনি বলেন, দার্জিলিঙ ও কালিম্পং পাহাড়ের হাজার ছয়েক হোম স্টে আবার খোলার ব্যাপারে স্থানীয় গ্রামগুলি থেকে সবুজ সংকেত পেতে অসুবিধা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দার্জিলিঙে হোটেল বন্ধের সিদ্ধান্ত অন্যান্য জায়গায় পর্যটন ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি করবে।
দার্জিলিঙ হোটেল-মালিকদের সংগঠন তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে বলে আশাবাদী ইস্টার্ন হিমালয় ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএইচটিটিওএ) সম্পাদক সন্দীপন ঘোষ। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে ভ্রমণ দার্জিলিং ছাড়া হয় না। তারা সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না করলে এই অঞ্চলকে পর্যটন ব্যবসায় তুলে ধরা কঠিন হবে।
হোটেল-মালিকদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার হুমকি দিয়েছেন জিএনএলএফ-এর মুখপাত্র অজয় এডোয়ার্ডস। তিনি বলেন, “হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অমানবিক এবং ব্যবসার নৈতিকতা বিরোধী।”
জিটিএ-র বোর্ড অফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স-এর চেয়ারম্যান অনিত থাপা বলেছেন, “বিষয়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটা মাঝামাঝি পথ খুঁজে বার করতে আমরা শীঘ্রই ত্রিপক্ষ বৈঠক ডাকব।”