ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: সব চেয়ে বড়ো উৎসবের জন্য প্রস্তুত দেশ – দুর্গাপূজা আর নবরাত্রি। তার পরেই দীপাবলি। কিন্তু শুধু দুর্গাপূজা বা দীপাবলি নয়, গোটা অক্টোবর মাস ধরেই দেশের নানা প্রান্তে নানা উৎসব পালিত হবে। এই সব উৎসবের কোনোটা সাংস্কৃতিক, কোনোটা বা আঞ্চলিক। আর ঐতিহ্যশালী উৎসব তো রয়েইছে। আসুন দেখে নেওয়া যাক কী সেই সব উৎসব –

নবরাত্রি
বলা যায় এ বছর উৎসবের মাস অক্টোবর শুরু হচ্ছে নবরাত্রি দিয়ে। কার্যত নবরাত্রি শুরু হয়ে গিয়েছে দেবীপক্ষের প্রতিপদ থেকেই। মহিষাসুর ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছিলেন মা দুর্গা এবং তাঁর নানা রূপ – মহাকালী, মহালক্ষ্মী, মহাসরস্বতী প্রমুখ। এঁদেরই জয়ের স্মারক হিসাবে পালন করা হয় নবরাত্রি উৎসব। এই উৎসব উপলক্ষ্যে উত্তর ভারতের বাড়িতে বাড়িতে, মন্দিরে মন্দিরে মা দুর্গার স্তবগাথা গাওয়া হয়। গুজরাতে এর খুব ধুম। ডান্ডিয়া নেচে নবরাত্রি উৎসব পালন করে গুজরাতিরা। বাঙালিরা নবরাত্রি পালন করে দুর্গাপূজার মাধ্যমে এবং দক্ষিণ ভারতে পালিত হয় গলু উৎসব।
উৎসবের দিনক্ষণ – ২৯ সেপ্টেম্বর (প্রতিপদ) থেকে ৭ অক্টোবর (নবমী), ২০১৯।
উৎসবের মূল স্থান – উত্তর ভারত, বিশেষ করে গুজরাত।

ওয়াথুকাম্মা
দুর্গারই এক রূপ মহাগৌরী। হায়দরাবাদের নারীরা মহাগৌরীর যে পূজা করেন তারই নাম ওয়াথুকাম্মা। গান গেয়ে, প্রচুর ফুল নিবেদন করে পূজা সম্পন্ন হয়।
উৎসবের দিনক্ষণ – ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ অক্টোবর, ২০১৯।
উৎসবের মূল স্থান – হায়দরাবাদ, তেলঙ্গানা।

কবীর যাত্রা
কবীর যাত্রা হল রাজস্থানের লোকগানের উৎসব। এই উৎসবে যোগ দিতে রাজস্থানের দুর্গম অঞ্চলের লোকেরাও ছুটে আসে। যাঁরা মীরা বাঈ, সন্ত কবীর, বুলে শাহ প্রমুখের গানের ভক্ত, তাঁরা যোগ দেন এই উৎসবে। ওই একই থিমের উপরে চিত্রশিল্পী, আলোকচিত্রী এবং ভাস্করদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয় কবীর যাত্রায়।
উৎসবের দিনক্ষণ – ২ অক্টোবর থেকে ৬ অক্টোবর, ২০১৯।
উৎসবের স্থান – জোধপুর, জৈসলমের ও বিকানের।
আরও পড়ুন: মধুচন্দ্রিমায় গন্তব্য: মান্ডু অপেক্ষা করছে একরাশ ভালোলাগা আর চমক নিয়ে
দুর্গাপূজা
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা। শুধু বাঙালি কেন, কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের কার্যত জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে এই দুর্গাপূজা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যোগ দেন এই উৎসবে। ইতিমধ্যেই দেবীপক্ষের সূচনা হয়ে গিয়েছে। লক্ষ্মী-সরস্বতী-গণেশ-কার্তিককে নিয়ে মা আসছেন বাপের বাড়িতে। মণ্ডপে মণ্ডপে সপরিবার দুর্গাপ্রতিমা আসা শুরু হয়ে গিয়েছে। মণ্ডপসজ্জা, আলোকসজ্জাও প্রায় সম্পূর্ণ। বেশ কিছু সর্বজনীন পুজোর উদ্বোধনও হয়ে গিয়েছে। কলকাতার রাস্তায় দর্শনার্থীদের ঢলও নেমে গিয়েছে। শুধু কলকাতা কেন, পশ্চিমবঙ্গের বাকি সব শহর-গাঁ-গঞ্জ এখন সব কিছু ভুলে পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে। আর শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, প্রতিবেশী রাজ্য অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডেও ও দুর্গাপূজার ধুম যথেষ্ট। আর দুর্গাপূজা হয়ে গেলেই সারা ওড়িশা কোজাগরী পূর্ণিমায় মেতে উঠবে গজলক্ষ্মী পূজায়।
উৎসবের দিনক্ষণ – ৪ অক্টোবর (ষষ্ঠী) থেকে ৮ অক্টোবর (বিজয়া দশমী)।
উৎসবের মূল স্থান – মূলত পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারত হলেও সারা ভারত এবং বাংলাদেশও।

দশেরা
লঙ্কার রাজা রাবণ পরাজিত হলেন অযোধ্যার যুবরাজ রামের হাতে। বন্দিনী সীতাকে উদ্ধার করা হয়। রামের এই জয় স্মরণীয় করে রাখতে দেবীপক্ষের দশমী তিথিতে পালিত হয় দশেরা। এই উৎসব উপলক্ষ্যে অনেক জায়গাতেই রাবণ পোড়ানো হয়। মায়সুরুর (মহীশুর) দশেরা উৎসব দেখার মতো।
উৎসবের দিনক্ষণ – ৮ অক্টোবর (দশম)।
উৎসবের মূল স্থান – সারা ভারত জুড়ে, তবে উত্তর ভারতে বেশি।

রাজস্থান ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্টিভ্যাল
যে সব রাজস্থানী শিল্পী ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এবং দেশের বাইরে থাকেন, তাঁরা এই সময়টায় ছুটে আসেন জোধপুরে এই আন্তর্জাতিক লোক উৎসবে যোগ দিতে। পাঁচ দিন ধরে সারা রাত চলে লোকগান, লোকনৃত্য, আঞ্চলিক নাটক পরিবেশন।
উৎসবের দিনক্ষণ – ১০ থেকে ১৪ অক্টোবর, ২০১৯।
উৎসবের স্থান – মেহরানগড় ফোর্ট, জোধপুর, রাজস্থান।

রামনগর রামলীলা
ভাদ্র মাসের অনন্ত চতুর্দশী থেকে আশ্বিনের পূর্ণিমা পর্যন্ত বিশ্বের সব চেয়ে বড়ো রামলীলা অনুষ্ঠিত হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরে। কাশী ভ্রমণকারী এবং স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে দু’ শতক ধরে চলা এই রামলীলা একটি আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান।
উৎসবের দিনক্ষণ – ১২-১৩ অক্টোবর, ২০১৯।
উৎসবের স্থান – বারাণসীর অপর পারে গঙ্গাতীরের রামনগর।

মারোয়াড় ফেস্টিভ্যাল
রাজস্থানের মারোয়াড় অঞ্চলের একটা আলাদা ঐতিহ্য আছে। বিভিন্ন ফিল্ম আর বইয়ে তাদের মহিমার পরিচয় পাওয়া যায়। সেই আঞ্চলিক সংস্কৃতি উদযাপন করা হয় মারোয়াড় ফেস্টিভ্যালে। এই উৎসব উদযাপিত হয় পূর্ণিমায়। রাজস্থানের উচ্চাঙ্গ লোকগীতি আর নৃত্যের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় মধ্য যুগের নায়ক ও শহিদদের। পর্যটকরা ঘোড়ায় চড়া আর পোলো খেলাতেও যোগ দিতে পারেন।
উৎসবের দিনক্ষণ – ১২ ও ১৩ অক্টোবর, ২০১৯।
উৎসবের স্থান – জোধপুর, রাজস্থান।

দীপাবলি
কার্তিক মাসের অমাবস্যার রাতটা আলোয় আলোয় ভরে যায় সারা দেশে, কারণ এ যে আলোর উৎসব। প্রতিটি বাড়ি সাজানো হয় প্রদীপ কিংবা মোমবাতির আলোয়। রাবণকে মেরে সীতা উদ্ধার করে রাম এ দিন অযোধ্যা নগরীতে প্রবেশ করেছিলেন। অযোধ্যাবাসী দীপমালায় অযোধ্যা সাজিয়ে রামকে অভ্যর্থনা করেছিল। এ দিন পশ্চিমবঙ্গে পালিত হয় কালীপুজো। আর গ্রামেগঞ্জে পালিত হয় লক্ষ্মীপুজো।
উৎসবের দিনক্ষণ – ২৭ অক্টোবর, ২০১৯। দক্ষিণ ভারতে ২৬ অক্টোবর।
উৎসবের স্থান – সারা দেশ জুড়ে।

তাওয়াং উৎসব
পর্যটনের প্রসারে এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করতে অরুণাচল প্রদেশ পর্যটন দফতর প্রতি বছর তাওয়াং উৎসব পালন করে। তাওয়াং মনাস্টেরির সন্ন্যাসীরা অবিরাম মন্ত্রোচ্চারণ করেন। উৎসবে আদিবাসী নৃত্য ও লোকনৃত্য পরিবেশন করা হয়। সঙ্গে থাকে খাদ্য উৎসব এবং পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্য নানা অনুষ্ঠান।
উৎসবের দিনক্ষণ – ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর, ২০১৯।
উৎসবের স্থান – তাওয়াং, অরুণাচল প্রদেশ।