ক্রিসমাস কার্নিভালে মেতে উঠল মহানগরী

পার্ক স্ট্রিটে জনপ্লাবন।

কলকাতা: একে বড়োদিন। প্রভু যিশুর জন্মদিন। তার উপর রবিবার। মানুষ উৎসবমুখর। মাঝে দু’ বছর কোভিডের কারণে শহরবাসী হয়তো তেমন ভাবে বড়োদিনের উৎসবে মেতে উঠতে পারেনি। কিন্তু এ বার একেবারে সুদে আসলে উশুল করে নিয়েছে তারা।

ভিক্টোরিয়ায় জনসমুদ্র। ছবি: রাজীব বসু।

শুধু রবিবার সন্ধ্যাতেই নয়, শহরের গির্জায় গির্জায় শনিবার মধ্যরাতের প্রার্থনার পর কলকাতা বড়োদিন উৎসবে মেতে উঠল সকাল থেকেই। বেশির ভাগ বাঙালি-বাড়িতেই প্রাতরাশে ছিল কেক।

সকালে কুয়াশায় ঢাকা শহর। ছবি: রাজীব বসু।

এ দিন মহানগরী কলকাতায় সকালটা শুরু হয়েছিল কুয়াশা দিয়ে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী বিস্তীর্ণ অঞ্চল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা কমতে থাকে এবং গরম বাড়তে থাকে। দুপুরবেলায় রীতিমতো ঘাম হতে থাকে।

ভিড় থেকে বাদ যায়নি চিড়িয়াখানাও। ছবি: রাজীব বসু।

বিকেলের পর থেকে আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হয়। যাঁরা দিনের বেলায় ঘর ছেড়ে বেরোননি তাঁরাও বেড়িয়ে পড়েন। মনে হয় গোটা শহরটা যেন আজ রাজপথে নেমে এসেছে।

ময়দানে নাচের আসর। ছবি: রাজীব বসু

প্রতি বছরের মতোই এ দিনও ‘অল রোডস লিড টু রোম’-এর মতোই রবিবার সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিটে গিয়ে মনে হচ্ছিল, কলকাতাবাসীর একটাই মন্ত্র ‘অল রোডস লিড টু পার্ক স্ট্রিট’। বড়োদিনের কলকাতা যেন ভেঙে পড়েছে পার্ক স্ট্রিটে।

শিশুদের সঙ্গে সান্টার খেলা। ছবি: রাজীব বসু।

অনেকেই আজ বেরিয়ে পড়েছিলেন ঘর ছেড়ে। নিজস্ব গাড়িতে বা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়েছেন কলকাতার আশেপাশে। সারাটা দিন আনন্দ করে ফিরেছেন রাতের দিকে। আর অনেকে ভিড় জমিয়েছেন কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলোয়।

ইকো পার্কে জনজোয়ার। ছবি: রাজীব বসু।

সকাল থেকেই লোক সমাগম হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, জাদুঘর, সায়েন্স সিটি, ইকো পার্ক প্রভৃতি স্থানে। এমনকি, কলকাতার ময়দানেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না। সেখানে নানা কর্মকাণ্ডে মেতে উঠেছেন সবাই। নাচ-গান করা, সান্টার নানা রকম মজা দেখানো – আরও কত কী।

মোমবাতি জ্বালিয়ে প্রার্থনা। ছবি: রাজীব বসু

কলকাতাবাসীর কাছে বড়োদিনের অন্যতম গন্তব্য হল সেন্ট পল্‌স ক্যাথিড্রাল। শনিবার মধ্যরাতে প্রার্থনা হয়েছে গির্জায়। রবিবার সকাল থেকেই সেখানে ভিড় জনিয়েছেন দর্শনার্থীরা। যিশুর প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা জানিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন। বিকেল ৪টের পর দর্শনার্থীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয় গির্জা।

পার্ক স্ট্রিটে বইয়ের স্টলে বিমান বসু।

বসে নেই বিভিন্ন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও। এ দিন তাঁরা জনসংযোগের কাজে চালিয়ে যেতে বেরিয়ে পড়েন। পার্ক স্ট্রিটে বইয়ের স্টলে দেখা যায় সিপিএম নেতা বিমান বসুকে।

ভিড়ের মাঝে পার্ক স্ট্রিটে সেলফি তোলার ধুম। ছবি: রাজীব বসু।

আর সন্ধের পর থেকেই কলকাতার পার্ক স্ট্রিট যেন আলোর বন্যায় ভাসছে, আর সেই সঙ্গে জনসমুদ্র আর গাড়ির মেলা। অ্যালেন পার্কে চলছে বড়োদিনের অনুষ্ঠান। কোনো রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রয়েছে অঢেল পুলিশি বন্দোবস্ত। কলকাতা পুলিশের অবিরাম ঘোষণা চলছে মাইকে – কলকাতাবাসীকে বড়োদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি চলছে নানা আবেদন। মধ্যরাতেও সেই ভিড় কমার কোনো লক্ষণ নেই।

নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনের উদ্বোধন। ছবি: রাজীব বসু।

এ দিন নিখিল ভারতীয় বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনেরও সূচনা করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও ছিলেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার মীরা কুমার, অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেন, চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন এবং সত্যম রায়চৌধুরী। সৌরভ গাঙ্গুলিও এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন।

লিড ছবি: পার্ক স্ট্রিটে জনপ্লাবন। তুলেছেন রাজীব বসু।    

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *