ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: সাইবাবার জন্য আজ মহারাষ্ট্রের শিরডি আজ ভারতের অন্যতম তীর্থস্থান হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, গুরু দত্তাত্রেয় নতুন করে মানবজীবন নেন সাইবাবার মধ্য দিয়ে। সাইবাবা এখানেই নির্বাণ লাভ করেন। সাইবাবাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে সংঘ এবং সংঘের নানা কার্যকলাপ।
শিরডির মূল আকর্ষণ সমাধি মন্দির। শ্বেতপাথরে তৈরি ৬ ফুট উঁচু সাইবাবার বিগ্রহ। বিশাল হলঘরটি সাইবাবার জীবন-আখ্যানে সজ্জিত। ১৮৩৬-এ বাবার জ্বালানো ধুনি আজও জ্বলছে। বাবার ব্যবহৃত নানা জিনিসের প্রদর্শনী। অদূরেই বাবার প্রথম আগমনস্থল শ্রীখান্ডোবা মন্দির। আর আছে সাইবাবার গুরুর শ্রীগুরুস্থান মন্দির, শ্রীদ্বারকামাঈ মন্দির, মারুতি মন্দির, আব্দুলবাবার কুটির, লেনদি বাগ ইত্যাদি।
কত দূর থেকে এসে শুধু শিরডি দর্শন করে ফিরে যাবে্ন? শিরডিকে ঘিরে রয়েছে মহারাষ্ট্র-গুজরাতের কয়েকটি চিত্তাকর্ষক শৈলাবাস।
সপুতারা

গুজরাতের একমাত্র শৈলশহর সপুতারা ৮৭২.৯ মিটার উঁচু, মহারাষ্ট্রের সীমানায় অবস্থিত। নির্জন, নিরিবিলি, গহন বন।রয়েছে সপুতারা লেক, বোটিং করতে পারেন। আর দেখে নিন সূর্যাস্ত, সূর্যোদয়, ইকো পয়েন্ট, মিউজিয়াম, আর্টিস্ট ভিলেজ, ভ্যালি ভিউ পয়েন্ট (দেড় কিমি), রোজ গার্ডেন, নাগেশ্বর মহাদেব মন্দির। ১০ মিনিটের রোপওয়ে জার্নি করে সূর্যাস্ত দেখে নিন সানসেট পয়েন্ট থেকে।
ভান্ডারদারা
৭৫০ মিটার উঁচুতে পাহাড়ে ঘেরা মনোরম শৈলাবাস। ভান্ডারদারার এক আকর্ষণ প্রবারা নদীতে তৈরি উইলসন ড্যাম ও আর্থার লেক। লেক থেকে ছোটো নদী বেরিয়ে ৪৫ মিটার নিচুতে পড়ছে, নাম হয়েছে রান্ধা ফলস্। ভান্ডারদারা থেকে ২৭ কিমি দূরে শিবাজি মহারাজের রতনগড় দুর্গ। দুর্গে রয়েছেন নানা দেবতা আর দুর্গের পথে নানা গুহা। সহ্যাদ্রি পাহাড়ের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট কালসুবাই (১৬৪৬ মিটার) দৃশ্যমান ভান্ডারদারায়।
মালসেজ ঘাট

চার পাশে সহ্যাদ্রি পাহাড়, ধারা নামছে জলপ্রপ্পাতের, যে প্রপাত ফুলেফেঁপে ওঠে ভরা বর্ষায় – তারই মাঝে ৭০০ মিটার উচু সবুজে মোড়া উপত্যকা। পরিযায়ী পাখিরা মাঝেমাঝেই পরিবেশ আরও মোহময় করে তোলে।
শিরডি থেকে তা হলে চলুন চার দিনের ভ্রমণে। আপনাদের সুবিধার জন্য ভ্রমণ অনলাইন ছক সাজিয়ে দিল –
প্রথম দিন – সকালে বেরিয়ে পড়ুন, চলুন সপুতারা, ১৩৭ কিমি। রাত্রিবাস সপুতারা।
দ্বিতীয় দিন – সপুতারা থেকে প্রথমে চলুন ইগতপুরী, ১২০ কিমি। ইগতপুরী ঘুরে চলুন ভান্ডারদারা, ৪০ কিমি। রাত্রিবাস ভান্ডারদারা।
তৃতীয় দিন – সকালে বেরিয়ে পড়ুন, ভান্ডারদারা থেকে আসুন মালসেজ ঘাট, ৬৫ কিমি। রাত্রিবাস মালসেজ ঘাট।
চতুর্থ দিন – ফিরুন শিরডি, ১২৪ কিমি।

কী ভাবে যাবেন শিরডি
হাওড়া থেকে সাপ্তাহিক সাইনগর শিরডি এক্সপ্রেস। হাওড়া ছাড়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ২-৩৫ মিনিটে, শিরডি পৌঁছোয় শুক্রবার রাত ৮টায়। না হলে ট্রেনে নাসিক চলুন, সেখান থেকে দাদার-সাইনগর ত্রিসাপ্তাহিক এক্সপ্রেস (মঙ্গল, বৃহস্পতি ও রবি) এবং সাপ্তাহিক (শনি) দাদার-সাইনগর সুপারফাস্ট। চার দিনই রাত ১২-৫৫ মিনিটে নাসিক ছেড়ে সাইনগর শিরডি পৌঁছোয় ভোর ৩-৪৫ মিনিটে। তা ছাড়া নাসিক থেকে সড়কপথে শিরডি ৮২ কিমি, বাস বা গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন।
মুম্বই থেকে সড়কপথে শিরডি ২৯২ কিমি, বাস বা গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন। মুম্বই ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাস থেকে রোজ রাত ১০-৫৫ মিনিটে ছাড়ে শিরডি ফাস্ট প্যাসেঞ্জার, ১২ ঘণ্টা সময় লাগে গন্তব্যে পৌঁছোতে। আর দাদার থেকে রয়েছে দাদার-সাইনগর ত্রিসাপ্তাহিক এক্সপ্রেস (মঙ্গল, বৃহস্পতি ও রবি) এবং সাপ্তাহিক (শনি) দাদার-সাইনগর সুপারফাস্ট। চার দিনই রাত ৯-৪৫ মিনিটে দাদার ছেড়ে নাসিক হয়ে শিরডি পৌঁছোয় ভোর ৩-৪৫ মিনিটে।

দিল্লি, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ সহ ভারতের প্রায় সব বড়ো শহর থেকে ট্রেনে শিরডি পৌঁছোনো যায়। তবে দৈনিক ট্রেনের অভাবে ট্রেনে নাসিক এসে সেখান থেকে সড়কপথে শিরডি যাওয়াই সুবিধাজনক। ট্রেনের বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.in।
কোথায় থাকবেন
শিরডিতে থাকার জন্য শ্রীসাইবাবা সনাতন ট্রাস্টের অতিথিশালা আছে। অনলাইন বুকিং https://online.sai.org.in/। এ ছাড়া অনেক ধর্মশালা, হোটেল আছে। অনলাইন বুকিং https://yatradham.org/। আছে এমটিডিসি-র (মহারাষ্ট্র পর্যটন) শিরডি পিলগ্রিমস ইন। অনলাইন বুকিং https://mtdcrrs.maharashtratourism.gov.in/।
ভান্ডারদারা ও মালসেজ ঘাটে রয়েছে এমটিডিসি-র ভান্ডারদারা রিসর্ট ও মালসেজ ঘাট রিসর্ট। অনলাইন বুকিং https://mtdcrrs.maharashtratourism.gov.in/।
সপুতারায় আছে টিসিজিএল-এর (গুজরাত পর্যটন) তোরান অম্বিকা এবং তোরান হিল রিসর্ট। অনলাইন বুকিং http://booking.gujarattourism.com/।
এ ছাড়া সব জায়গাতেই বেসরকারি হোটেল রয়েছে। নেট সার্চ করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গের নতুন আবিষ্কার, শায়িত রবীন্দ্রনাথ দেখতে চলুন…
কী ভাবে ঘুরবেন
শিরডি থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ুন চার দিনের শৈলশহর ভ্রমণে।