ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: মাঝেমধ্যে মনে হয় না দু’-তিনটে দিন কোথাও একটু বিলাসিতায় কাটিয়ে আসি? এই পশ্চিমবঙ্গেই রয়েছে এমন কিছু জায়গা। তারই সন্ধান দিল ভ্রমণ অনলাইন।
ঝাড়গ্রাম রাজ প্যালেস
প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শৈলীর মেলবন্ধনে কী সুন্দর স্থাপত্যের সৃষ্টি হতে পারে তা ঝাড়গ্রাম রাজ প্যালেস না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। মল্লদেব রাজাদের তৈরি এই রাজবাড়ির কিছুটা হেরিটেজ হোটেল। বেশির ভাগটায় রাজপরিবারের লোকজন থাকেন।
থাকা
এখানে থাকার নানা ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে – রয়্যাল স্যুট, রয়্যাল গেস্ট হাউস, প্রিমিয়াম ডিলাক্স, একজিকিউটিভ স্যুট, ফ্যামিলি ডিলাক্স, ক্ল্যাসিক ডিলাক্স। /
কী দেখবেন
১। সাবিত্রী মাতা মন্দির – রাজবাড়ির অদূরেই, ঝাড়গ্রাম মল্ল রাজাদের আরাধ্যা দেবী।
২। ডিয়ার পার্ক – ৩ কিমি।
৪। ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ও ট্রাইবাল মিউজিয়াম – ২ কিমি।
৫। ভেষজ উদ্যান – ৯ কিমি দূরে গড় শালবনিতে।
৩। চিলকিগড় ও কনকদুর্গা মন্দির – ডুলুং নদীর ধারে, ১৫ কিমি।
৬। গুড়গুড়িপল ইকো পার্ক – ২৭ কিমি।
৬। কোদোপল অ্যাগ্রো ট্যুরিজম – ৪৫ কিম দূরে সুবর্ণরেখা ও ডুলুং নদীর সঙ্গমে ২০০ একর জায়গা জুড়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অ্যাগ্রো ট্যুরিজম প্রকল্প।
৭। রামেশ্বর মন্দির – ৪২ কিমি দূরে, গোপীবল্লভপুরের কাছে।
৮। শ্রীরাধাগোবিন্দ মন্দির অথবা গুপ্ত বৃন্দাবন – ১৫ শতকের মন্দির, ৩৫ কিমি দূরে গোপীবল্লভপুরে।
৯। বেলপাহাড়ি – ৩৭ কিমি দূরে আদিবাসী গ্রাম, আরও ৯ কিমি গিয়ে পাহাড়ে ঘেরা ঘাঘরা ঝরনা, কাছেই তারাফেনি ব্যারাজ।
১০। কাঁকড়াঝোড় ফরেস্ট ও ময়ূরঝরনা এলিফ্যান্ট রিজার্ভ – ৬২ কিমি দূরে কাঁকড়াঝোড় হয়ে আরও ৮ কিমি।
১১। গোপগড় হেরিটেজ অ্যান্ড নেচার ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার – ৩৬ কিমি।
প্যাকেজ ট্যুর
হোটেলের উদ্যোগেই ৪ রাত্রি/৫ দিনের প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা আছে। এই প্যাকেজ ট্যুরগুলিতে ঝাড়গ্রামের পাশাপাশি মুকুটমণিপুর, সিমলিপাল বা টাটানগর দেখে নেওয়া যায়।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে ঝাড়গ্রাম ট্রেনে আড়াই থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার ভ্রমণ। সকাল থেকেই নানা ট্রেন। বিশদে জানতে দেখে নিন erail.in । সড়কপথে কলকাতা থেকে জাতীয় সড়ক ১৬ ও ৪৯ (পুরোনো নম্বর ৬, মুম্বই রোড) ধরে খড়গপুর-লোধাশুলি হয়ে ঝাড়গ্রাম ১৭৩ কিমি। বাসে বা গাড়িতে যেতে পারেন। বাসের সময়ের জন্য দেখুন http://sbstc.co.in/
যোগাযোগ
০৩২২১ ২৫৫৪০১, ৬২৯৪০ ২৪৩১৯, ৯৬৩৫২ ৬৯৪১৬; ই মেল jhargrampalace@gmail.com ওয়েবসাইট http://www.jhargrampalace.com/
ইটাচুনা রাজবাড়ি
ইটাচুনা রাজবাড়ির আরেক নাম ‘বর্গি ডাঙা’। বাংলার নবাবের দেয় এক চতুর্থাংশ কর (চৌথ) আদায়ের জন্য মরাঠারা বাংলা সুবা আক্রমণ করেছিল। সেই মরাঠা যোদ্ধাদের বলা হত ‘বর্গি’। যুদ্ধবিগ্রহ থেমে যাওয়ার পর ‘বর্গি’দের একটা বড়ো অংশ এখানেই থেকে গেয়েছিল এবং ব্যবসাপাতি করে প্রচুর সম্পদ সৃষ্টি করেছিল। এই মরাঠা ‘বর্গি’দের একাংশ ছিল ‘কুন্দন’ উপাধিধারী। এঁরাও এই বঙ্গেই থেকে যান। এই ‘কুন্দন’রা কালক্রমে ‘কুণ্ডু’ হন। এ রকম এক ‘কুণ্ডু’ হলেন সাফল্য নারায়ণ কুণ্ডু। এঁরই পূর্বসূরিরা ১৭৬৬ সালে ইটাচুনা রাজবাড়ি তৈরি করেন।
কলকাতা থেকে ঘণ্টা দুয়েকের জার্নি। চলে আসা যায় ইটাচুনায়। সবুজ প্রকৃতির সান্নিধ্য উপভোগ করা, ভিজে মাটির গন্ধ শোঁকা, তারাভরা আকাশ দেখা, হুইসল বাজিয়ে শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার সাক্ষী থাকা, ছাদ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো, কবাডি খেলা, বাঁশির সুরে ভেসে যাওয়া, স্থানীয় মানুষজনের দৈনন্দিন জীবনের স্বাদ নেওয়া – নিজেদের রোজকার রুটিন থেকে একটু ব্রেক নিতে চলে আসুন ইটাচুনা।
থাকা ও ভাড়া
হরেক রকমের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে রাজবাড়িতে – ‘এ’ ক্যাটেগরিতে ‘বড়ো বউদি’, ‘ছোটো বউদি’, ‘ঠাকুমা’ আর ‘বড়ো পিসি’; ‘মা’ ক্যাটেগরিতে ‘গিন্নি মা’, ‘বড়ো মা’, ‘মেজো মা’; এ ছাড়া ঘর রয়েছে ‘বিলাস’, ‘মঞ্জরী’, ‘কাকাবাবু’, ‘পিসেমশাই’, ‘ছোটো পিসি’, ‘বড়দি’, ‘জ্যাঠামশাই’ ও ‘বড়দা’ নামে – এক একটি ঘরে ২/৩/৪ জনের থাকার ব্যবস্থা, আছে এসি, নন এসি ব্যবস্থা – ভাড়ার হার ২৭০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা, জিএসটি আলাদা। এ ছাড়াও ‘হাট’ (মাটির ঘর) আছে – ‘অপরাজিতা’ ও ‘মাধবীলতা’ (২ জনের ১৫০০ টাকা) এবং ‘কনকলতা’ ও ঝুমকোলতা (২ জনের ২৪০০ টাকা), জিএসটি আলাদা।
সারা দিনের সফরেও আসা যায় ইটাচুনায়। ১৫ থেকে ২০ জনের দল নিয়ে এলে বিশ্রাম করা যায় ‘আনন্দ’ সভাঘরে।
কী দেখবেন
১। মহানাদ ব্রহ্মময়ী কালীবাড়ি – ২০০ বছরের কালীবাড়ি, ৮ কিমি।
২। জটেশ্বর শিব মন্দির – মহানাদ কালীবাড়ি থেকে ২ কিমি।
৩। দেবীপুর লক্ষ্মী জনার্দন মন্দির – ২৪ কিমি দূরে টেরাকোটার মন্দির।
৪। পান্ডুয়া মিনার – ১৩ শতকের ১২৫ ফুট উঁচু মিনার, ৮ কিমি।
৫। বাঁশবেড়িয়া – হংসেশ্বরী ও অনন্ত বাসুদেব মন্দির, ২০ কিমি।
৬। দেবানন্দপুর – কথাশিল্পী শরৎচন্দ্রের জন্মস্থান, ১৮ কিমি।
৭। ব্যান্ডেল চার্চ – ২২ কিমি।
৮। ইমামবাড়া, চুঁচুড়া – ২৫ কিমি।
৯। চন্দননগর – এক সময়ের ফরাসি কলোনি, ৩০ কিমি।
১০। কালনা – সিদ্ধেশ্বরী কালী, ১০৮ শিব মন্দির, লালজি মন্দির, প্রতাপেশ্বর মন্দির, ২৫ চুড়োর কৃষ্ণচন্দ্র মন্দির, ৩০ কিমি।
১১। গুপ্তিপাড়া – চার টেরাকোটার চার বৈষ্ণব মন্দির, ২৭ কিমি।
কী ভাবে যাবেন
হাওড়া থেকে বর্ধমান মেন লাইনে খন্ন্যান লোকাল ট্রেনে দেড় ঘণ্টার পথ। স্টেশন থেকে টোটো, অটো আর ম্যাজিকে ৭ থেকে ১০ মিনিটের পথ ইটাচুনা রাজবাড়ি। কলকাতা থেকে গাড়িতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বাঁ দিকে আজাদ হিন্দ ধাবা ও হিন্দুস্থান হোটেল পেরোনোর পর বাঁ দিকের ‘একজিট’ ধরুন। ডান দিকে ঘুরে ব্রিজের তোলা দিয়ে আসুন বসিপুর। এখান থেকে সোজা হালুসাই, ১৯ কিমি। খন্ন্যান রেলস্টেশনের দিকে বাঁ দিক ঘুরুন। হালুসাই থেকে ১০ মিনিটের ড্রাইভে পৌঁছে যান ইটাচুনা রাজবাড়ি। রাস্তার বাঁ দিকে।
যোগাযোগ
ফোন ৭০০৩১২১৮১১, ৯৬৭৪৫৩৭৯৪০, ৯৭৪৮৭০০৮২০। ওয়েবসাইট http://www.itachunarajbari.com/
মহেশগঞ্জ এস্টেট, বলাখানা
কৃষ্ণনগর থেকে ১২ কিমি দূরে নবদ্বীপ ঘাট রোডে অবস্থিত এই রাজবাড়ি স্থানীয় জমিদার পালচৌধুরীদের এস্টেট, আদতে অষ্টাদশ শতকের এক নীলকুঠি। কৃষক বিদ্রোহের পর নীলচাষ অলাভজনক হয়ে গেলে নীলকুঠির তখনকার মালিক হেনরি নেসবিট স্যাভি ওই অঞ্চলের ক্ষমতাশালী জমিদার পালচৌধুরীদের কাছে ওই এস্টেট বিক্রি করে দেন।
থাকা ও ভাড়া
৩টি এসি ঘর, ২টি নন এসি গেস্টরুম। ২ জনের থাকা খরচ ৪০০০ টাকা (সোম থেকে বৃহস্পতি) থেকে ৫০০০ টাকা (শুক্র থেকে রবি)। এসি ব্যবহার করলে প্রতি রাতে ১০০০ টাকা। এই খরচের মধ্যে বেড টি, ব্রেকফাস্ট ও ইভিনিং টি ধরা আছে। লাঞ্চ ও ডিনারের খরচ জনপ্রতি ৪০০ টাকা (নিরামিষ) এবং ৫০০ টাকা (আমিষ)। ১০ বছর পর্যন্ত বয়সি শিশুর থাকার জন্য কোনো খরচ লাগে না। তার বেশি বয়স হলে ১০০০ টাকা অতিরিক্ত। ৫ থেকে ১০ বছর বয়সি শিশুর মিল চার্জ ২৫০ টাকা।
১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বলাখানা বন্ধ থাকে। বর্ষায় বিশেষ ছাড়ের বন্দোবস্ত আছে।
কী দেখবেন
১। মায়াপুর – ৪ কিমি।
২। বল্লাল ঢিপি – ৪ কিমি।
৩। জগন্নাথ মন্দির – ৪ কিমি।
৪। কৃষ্ণনগর – ১২ কিমি।
৫। শান্তিপুর, ফুলিয়া – ৩০ কিমি।
৬। কালনা – ৩৫ কিমি।
৭। নবদ্বীপ – ১২ কিমি।
কী ভাবে যাবেন
ট্রেনে শিয়ালদা/কলকাতা স্টেশন থেকে কৃষ্ণনগর মোটামুটি আড়াই ঘণ্টার পথ। সেখান থেকে অটো বা গাড়িতে ১২ কিমি দূরে মহেশগঞ্জ। কলকাতা থেকে গাড়িতে তিন ভাবে যাওয়া যায়-
(১) ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে রানাঘাট-ফুলিয়া হয়ে শান্তিপুর বাইপাস ধরুন। কৃষ্ণনগরের আগে রেলওয়ে ক্রসিং পেরিয়ে বাঁ দিকে নবদ্বীপ ঘাট রোড ধরুন। ৮ কিমি গেলে মহেশগঞ্জ।
(২) দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে হিন্দুস্থান হোটেল, তার পর বাঁ দিক ধরে ডান দিকে ফ্লাইওভারের নীচে দিয়ে বাঁ দিকে ঘুরে বৈঁচির পথে। জিটি রোড পেরিয়ে, রেলওয়ে ক্রসিং পেরিয়ে বাঁ দিকে কালনার পথে। সেখান থেকে ধাত্রীগ্রাম-সমুদ্রগড় ছাড়িয়ে গৌরাঙ্গ সেতু পেরিয়ে মহেশগঞ্জ।
(৩) ডানকুনি মোড়ের আগেই ডান দিকে দিল্লি রোড ধরুন। মগরা রেলওয়ে ক্রসিং-এ ডান দিক ঘুরে ফ্লাইওভারের নীচে দিয়ে এসে বাঁ দিকে হেয়ারপিন বাঁক নিয়ে সোজা কালনা। তার পর সমুদ্রগড় ছাড়িয়ে গৌরাঙ্গ সেতু পেরিয়ে মহেশগঞ্জ।
যোগাযোগ
ফোন ০৩৩২৩৯৯৪৯৯৪, ৯৮৩১৩২৮৪৮৬, ৯৮৩১২৭০৮০৭; ই-মেল balakhana1870@gmail.com। ওয়েবসাইট http://www.balakhana.com
বাওয়ালি রাজবাড়ি
কলকাতা শহরের উপকণ্ঠে বাওয়ালির মণ্ডল জমিদারদের এই প্রাসাদ আড়াইশো বছরের পুরোনো।
থাকা
এখানে থাকার হরেক ব্যবস্থা – ক্ল্যাসিক হেরিটেজ, জমিন্দারি জুনিয়র স্যুট, রয়্যাল স্যুটস, ডাকবাংলো।
কোথায় ঘুরবেন
কাছেপিঠে ঘোরার জায়গা অনেক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অছিপুরে চিনা মন্দির, বজবজে কোমাগাতা মারু স্মারক, বড়ো কাছারি। চলে যেতে পারেন ৩০ কিমি দূরে গঙ্গাতীরে ডায়মন্ড হারবার বা রায়চক কিংবা ২০ কিমি দূরে গঙ্গাতীরে ফলতা।
কী ভাবে যাবেন
কলকাতা থেকে ৩৫ কিমি। ডায়মন্ড হারবার রোডে জোকা থেকে ডান দিকের রাস্তা, বিবিরহাট হয়ে। গাড়িতে যাওয়াই সুবিধা। অন্যথায় বাসে জোকা গিয়ে সেখান থেকে স্থানীয় যানে ১৭ কিমি।
যোগাযোগ
ফোন ৯০৭৩৩ ১২০০০। রয়েছে অনলাইন বুকিং-এর সুবিধা http://www.therajbari.com/
কাশিমবাজার রাজবাড়ি
মুর্শিদাবাদের বহরমপুর থেকে তিন কিমি এগোলেই কাশিমবাজার রোডে পড়বে ‘কাশিমবাজার প্যালেস অব দ্য রয়ে’স তথা কাশিমবাজার রাজবাড়ি। এখানে রাজকীয় আতিথেয়তায় দু’টো দিন কাটিয়ে ঘুরে নিন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের রাজধানী। বিশদ তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন ৯৮৩১০৩১১০৮। ওয়েবসাইট https://cossimbazarpalaceroys.business.site/