লোকপ্রিয় এক গৌরসুন্দর সন্ন্যাসীর কাছ থেকে বোঝা যায় নবদ্বীপের মাহাত্ম্য। আর এক লোকপ্রিয় পরমহংসের কাছে মানুষ আসল নবদ্বীপধামকে চিনেছিল। দুই অবতার। যা এক অদ্ভুত সমাপতন।
আজ শ্রীরামকৃষ্ণদেবের ১৯০তম জন্মতিথি। ঠাকুর বলতেন, তোমাদের চৈতন্য হোক।
চিরকাল সকল এক থাকে না। এ তো বিধির বিধান!
ষোড়শ শতাব্দীতে নবদ্বীপকে কেন্দ্র করে মহাপ্রভুর বাল্য-লীলা। তিনি এই তপোভূমিতে নিমাই পন্ডিত হয়ে টোলে পড়িয়েছিলেন। আবার এই নবদ্বীপে চব্বিশ বছর বয়সে সন্ন্যাস। কৃষ্ণদাস কবিরাজ লিখেছিলেন, মহাপ্রভু সব ছেড়ে বৃন্দাবনে চলে যেতে চান। কিন্তু মায়ের কথা শুনে থেকে গিয়েছেন নীলাচলে। অদ্বৈত আচার্য তাঁকে অবতার ঘোষণা করেন। গঙ্গার ভাঙ্গন যবে থেকে নবদ্বীপে শুরু হয়েছে, একটু একটু করে হারিয়ে গেছে বহু ইতিহাস। বাঁধানো পাড় তলিয়ে গিয়েছে। হারিয়ে গিয়েছে বহু মন্দির, টোল, চৈতন্যের স্মৃতি।

১৮৭০ সালে মথুরবাবুকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর নবদ্বীপধামে আসেন। সেদিন যেন ঠাকুর ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে চৈতন্য মহাপ্রভুর সব খুঁটিনাটি বিষয় পরখ করে দেখতে চেয়েছিলেন। সমস্ত নবদ্বীপ ঘুরেও ঠাকুরের চোখে মুখে উদ্দীপনা ছিল না। বেশ কয়েকটি গোঁসাই পরিবার দর্শন করলেন। এরপর ফিরে এলেন ঘাটে।
ঘাটে ফিরে নৌকায় ওঠার সময় হঠাৎ এক কান্ড ঘটলো। নৌকায় দাঁড়িয়ে ঠাকুরের দিব্যদর্শন হলো। আকাশের দিকে হাত দেখিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলেন ‘ওই এলোরে, ওই এলোরে’। সেদিন ঠাকুর বলেছিলেন, ‘দেখতে পেলুম অদ্ভুত দর্শন। দিব্য দুটি ছেলে, এমন রূপ দেখিনি, তপ্ত কাঞ্চনের মত রং, মাথায় একটি করে জ্যোতির মন্ডল হাত তুলে আমার দিকে চেয়ে হাসতে হাসতে আকাশ পথে ছুটে আসছে। জলে পড়তুম হৃদে নিকটে ছিল ধরে ফেললে’। দেখেছিলেন গৌর নিতাইকে। ঠাকুরের ভাবসমাধি হল।
অর্থাৎ সেদিন শ্রীরামকৃষ্ণ নিজের অনুভূতি দিয়ে বুঝিয়ে দেন পুরাতন নবদ্বীপ জলের তলায় বিলীন। চৈতন্য মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত বেশিরভাগ স্থান নদীর ভাঙ্গনে হারিয়েছে। যেটুকু আছে খুব সামান্যই অবশিষ্ট।
তথ্যসূত্র:
কথামৃত
নবদ্বীপ মিশন