১৫ অক্টোবর ষষ্ঠী, দুর্গাপুজো শুরু। হাতে আর দিন সাতেক সময়, শুরু হয়ে যাবে পুজোর ছুটিতে ট্রেনের আসনের আগাম সংরক্ষণ। সুতরাং আর দেরি নয়। এখনই করে ফেলতে হবে পুজোর ভ্রমণ পরিকল্পনা। পর্যটন সম্পদে সমৃদ্ধ আমাদের দেশ। ঘোরার জন্য রয়েছে নামী-অনামী বহু জায়গা। ভ্রমণপিপাসুদের জন্য খবর অনলাইন এ বারও সাজিয়ে দিচ্ছে এক গুচ্ছ ভ্রমণ পরিকল্পনা। শুরু হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত দিয়ে। এই পর্বে রয়েছে সিকিম।
ভ্রমণ-ছক ১: পূর্ব-উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিম সিকিম
প্রথম দিন – ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) পৌঁছে বা বিমানে বাগডোগরা পৌঁছে গাড়ি বা বাসে রওনা হয়ে যান গ্যাংটকের উদ্দেশে, এনজেপি স্টেশন থেকে গ্যাংটক ১২০ কিমি, বাগডোগরা থেকে গ্যাংটক ১২৬ কিমি। রাত্রিবাস গ্যাংটক (৫৪১০ ফুট)।
দ্বিতীয় দিন – গ্যাংটকে ঘোরাঘুরি। ঘুরে আসুন রুমটেক মন্যাস্টেরি, ২৩ কিমি। রাত্রিবাস গ্যাংটক।

তৃতীয় দিন – ঘুরে আসুন ছাঙ্গু লেক (১২৩১৩ ফুট), বাবা মন্দির ও নাথু লা (১৪১৪০ ফুট)। গ্যাংটক থেকে ৫৭ কিমি। রাত্রিবাস গ্যাংটক।
কী দেখবেন গ্যাংটকে –
(১) তাশি ভিউ পয়েন্ট – ভোরেই চলুন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার মহিমাময় দৃশ্য ভোলার নয়। নীচে দৃশ্যমান গ্যাংটক শহর।
(২) রঙ্কা মন্যাস্টেরি – গ্যাংটক থেকে ১৪ কিমি। পাহাড়ের কোলে এক শান্ত নিভৃত জায়গায় অবস্থিত এই মন্যাস্টেরি ভীষণ টানে।
(৩) হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক – রেড পান্ডা, হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক আর স্নো লেপার্ড রয়েছে এই চিড়িয়াখানায়। পাহাড়ের ঢালে এই চিড়িয়াখানা বাচ্চাদের নিয়ে উপভোগ করার মতো জায়গা।
(৪) বনঝাকরি ফলস্ – রঙ্কা মন্যাস্টেরি যাওয়ার পথে গ্যাংটক থেকে সাড়ে চার কিমি।

(৫) নামগিয়াল ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলজি ও দো দ্রুল চোর্তেন – সিটি সেন্টার থেকে ৫ কিমি। ইনস্টিটিউট অফ টিবেটোলজিতে দেখবেন বৌদ্ধধর্ম সংক্রান্ত চিত্রাবলি, নানা শিল্পকর্ম, বহু বর্ণের ঝুলন্ত বস্তু, এবং লেপচা, বাংলা ও ওড়িয়া ভাষায় লেখা তালপাতার পুথি ইত্যাদি।
(৬) এনচে মন্যাস্টেরি – শহর থেকে ৬ কিমি। গ্যাংটকের অন্যতম প্রাচীন মন্যাস্টেরি।
(৭) গ্যাংটক রোপওয়ে – সিয়ারি রোডে এই রোপওয়ে। ৫-৭ মিনিটের ভ্রমণ। সঙ্গে বাচ্চারা থাকলে মজা পাবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে উপভোগ্য ভ্রমণ।
(৮) সেভেন সিস্টার্স ওয়াটারফল – গ্যাংটক থেকে ৩০ কিমি।
চতুর্থ দিন – রওনা হয়ে যান নর্থ সিকিমের উদ্দেশে। এ দিনের গন্তব্য লাচেন, দূরত্ব ১০৭ কিমি। পথে দেখে নিন বাকথাং ওয়াটারফল, বাটারফ্লাই ওয়াটারফল, নাগা ওয়াটারফল, চুং থাং- এ লাচেন চু ও লাচুং চু-র সঙ্গম (যে দুই নদী মিলে তৈরি হয়েছে তিস্তা), ইত্যাদি। রাত্রিবাস লাচেন (৯০২২ ফুট)।

পঞ্চম দিন – চলুন তিব্বতি যাযাবরদের গ্রাম থাঙ্গু হয়ে চোপতা ভ্যালি ও আরও ৩০ কিমি গিয়ে গুরুদোংমার লেক (লাচেন থেকে ৬৬ কিমি, ১৭৮০০ ফুট)। গুরুদোংমার থেকে আরও ১০ কিমি এগিয়ে গেলে চোলামু লেক। বরফ-রাজ্যে এক অবিস্মরণীয় ভ্রমণ। এ যেন এক অনাঘ্রাতা অঞ্চল, সাধারণ টুরিস্টের পদলাঞ্ছিত নয়। রাত্রিবাস লাচেন।
ষষ্ঠ দিন – সক্কালেই বেরিয়ে পড়ুন লাচুং-এর উদ্দেশে, দূরত্ব ৪৫ কিমি। লাচুং-এ (৮৮৫৮ ফুট) প্রাতরাশ সেরে চলুন কাটাও (১৫০০০ ফুট), দূরত্ব ২৮ কিমি। রাত্রিবাস লাচুং।
সপ্তম দিন – চলুন ফুলের রাজ্য ইয়ুমথাং, দূরত্ব ২৬ কিমি। ১১৮০০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট উপত্যকায় বিচরণ করুন। চলে যান উষ্ণ প্রস্রবণে, দেখুন শিব মন্দির। ইয়ুমথাং থেকে আরও ৩০ কিমি এগিয়ে একবারে তিব্বত সীমান্তের কাছে ইউমেসামডং বা জিরো পয়েন্ট (১৫৫০৩ ফুট) চলুন। রাত্রিবাস লাচুং।

অষ্টম দিন – ফিরে আসুন গ্যাংটক। এখানে কিছু দেখার বাকি থাকলে দেখে নিন। রাত্রিবাস গ্যাংটক।
নবম দিন – প্রাতরাশ সেরে চলুন নামচি হয়ে চলুন পেলিং (৭০৫৪ ফুট), দুরত্ব ১৫০ কিমি। পথে দেখে নিন টেমি টি গার্ডেন, সামদ্রুপৎসে হিল ও সিদ্ধেশ্বর ধাম। সামদ্রুপৎসে হিলে আছে গুরু পদ্মসম্ভবের বিশাল মূর্তি। আর সিদ্ধেশ্বর ধাম কার্যত চারধাম। এখানে আছে পূর্বের জগন্নাথ ধাম, পশ্চিমের দ্বারকা ধাম, উত্তরের বদ্রীনাথ ধাম এবং দক্ষিণের রামেশ্বরম ধামের রেপ্লিকা। রাত্রিবাস পেলিং।
পেলিং-এ ম্যাল না থাকলেও রয়েছে সুন্দর একটা হেলিপ্যাড। দেখুন সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে কোকতাং, কুম্ভকর্ণ, রাতোং, কাব্রু ডোম, কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, জোপুনো, সিম্ভো, নরসিং, সিনিয়লচু-সহ আরও নানা শিখর।

দশম দিন – আলো ফোটার আগে ৪ কিমি হেঁটে চলুন সাঙ্গা চোলিং মন্যাস্টেরি। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে অপরূপ সূর্যোদয়ের সাক্ষী থাকুন। মন্যাস্টেরি থেকে দেখুন ফুলের উপত্যকা বার্সে।
ফিরে প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। চলুন পেমেয়াংসে, (পেলিং থেকে ৯ কিমি) ৩০০ বছরের বেশি পুরোনো মন্যাস্টেরি দেখতে। সেখান থেকে চলুন রাবদান্তসে (পেমেয়াংসে থেকে ১১ কিমি), সিকিমের দ্বিতীয় চোগিয়ালের দ্বিতীয় রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। ফিরে মধ্যাহ্নভোজ (রাবদান্তসে থেকে পেলিং ৯ কিমি)। এ বার বেরিয়ে পড়ুন ছাঙ্গে ফলস্ (১৫ কিমি), সিংশোর ব্রিজ (আরও ১২ কিমি, এশিয়ার দ্বিতীয় গভীরতম গর্জের ওপর ১৯৮ মিটার লম্বা ৬৭৮ ফুট উঁচু সেতু) হয়ে নেপাল সীমান্তে রডোডেনড্রনে ছাওয়া উতরে গ্রামের (আরো ১০ কিমি) কিমি) উদ্দেশে। রাত্রিবাস পেলিং।
একাদশ দিন – প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। চলুন রিমবি ফলস্ (১৮ কিমি, পাহাড় থেকে নামছে রিমবি নদী)। সেখান থেকে চলুন ১৫ কিমি দূরে লেপচাদের পবিত্র লেক খেচিপেড়ি (ইচ্ছেপূরণের জন্য খ্যাত খেচিপেড়ি পেয়ার ফ্ল্যাগ আর গাছগাছালিতে ছাওয়া, লেকের জলে পাতা পড়ে না), লেকের পাড়ে ছোট্টো গুম্ফা। খেচিপেড়ি দেখে চলুন ১৫ কিমি দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস্। ৩০০ ফুট ওপর থেকে দুদ্দাড় বেগে নামা কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস্ আকর্ষণে অনবদ্য। এ বার চলুন ১২ কিমি দূরে ইয়ুকসম। ১৭৮০ মিটার উঁচু ইয়ুকসম সিকিমের প্রথম রাজধানী। তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্ম লাল টুপি শাখার পত্তনও এই ইয়ুকসমে। কার্থোক লেকের পাড়ে পাইন গাছের তলায় প্রথম চোগিয়ালের মাটি ও পাথরে গড়া করোনেশন থ্রোন। পাথরে পায়ের ছাপ। অতীতের চোর্তেনের ধ্বংসাবশেষ। চার কিমি দূরে নিরালা নির্জনে সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন দুবদি মন্যাস্টেরি। রাত্রিবাস পেলিং।
দ্বাদশ দিন – গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে চলে আসুন এনজেপি স্টেশন (১৩৬ কিমি) বা বাগডোগরা বিমানবন্দর (১৪৩কিমি)।
আরও পড়ুন পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের ভ্রমণ-ছক : উত্তর-পূর্ব / ২

ভ্রমণ-ছক ২: পূর্ব-দক্ষিণ-পশ্চিম সিকিম
প্রথম থেকে তৃতীয় দিন – ভ্রমণ ছক ১-এর মতো।
চতুর্থ দিন – নামচি (গ্যাংটক থেকে নামচি ৮০ কিমি) হয়ে চলুন রাবাংলা (৭০০০ ফুট, ২৫ কিমি)। পথে দেখে নিন টেমি টি গার্ডেন, সামদ্রুপৎসে হিল ও সিদ্ধেশ্বর ধাম। সামদ্রুপৎসে হিলে আছে গুরু পদ্মসম্ভবের বিশাল মূর্তি। আর সিদ্ধেশ্বর ধাম কার্যত চারধাম। রাবাংলায় দেখে নিন বুদ্ধ পার্ক আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। রাত্রিবাস রাবাংলা।
পঞ্চম দিন – রাবাংলা থেকে চলুন পেলিং, ৫০ কিমি। রাত্রিবাস পেলিং।
ষষ্ঠ দিন ও সপ্তম দিন – ভ্রমণ ছক ১-এর দশম ও একাদশ দিনের মতো।
অষ্টম দিন – গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে চলে আসুন এনজেপি স্টেশন (১৩৬ কিমি) বা বাগডোগরা বিমানবন্দর (১৪৩কিমি)।
আরও পড়ুন পুজোয় চলুন / খবর অনলাইনের বাছাই : গন্তব্য উত্তর-পূর্ব / ১

ভ্রমণ-ছক ৩: পশ্চিম সিকিম
প্রথম দিন – চলুন ওখরে। নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশন থেকে ১২৮ কিমি, বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ১৩৪ কিমি। রাত্রিবাস ওখরে (৮২০০ ফিট)।
দ্বিতীয় দিন – গাড়িতে চলুন হিলে, ১০ কিমি। সেখানে থেকে ট্রেক করে চলুন ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় ফুলের উপত্যকা বার্সে। সাড়ে চার কিমি সহজ ট্রেক। ফুলের মরশুম না হলেও বার্সে রডোডেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারির মধ্য দিয়ে হাঁটা এক অনবদ্য অভিজ্ঞতা। নিস্তব্ধ পরিবেশে দেখা যায় হরেক পাখি। রাত্রিবাস ওখরে।
তৃতীয় দিন – চলুন কালুক (৫৬০০ ফুট, ৪৬ কিমি)। শান্ত, স্নিগ্ধ ছোট্টো জনপদ। এর খ্যাতি কুম্ভকর্ণ, কোকতাং, কাব্রু, গোচা সহ সপার্ষদ কাঞ্চনজঙ্ঘার ১৮০০ বিস্তৃতি। দেখে নিন পাহাড়ের মাথায় গুরুং মন্যাস্টেরি। রাত্রিবাস কালুক।
চতুর্থ দিন – ঘুরে আসুন রিনচেনপং (৫৫৭৬ ফুট, ৩ কিমি)। দেখে নিন রিনচেনপং মন্যাস্টেরি, পয়জন লেক, লেপচা হেরিটেজ হাউজ, রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য রবীন্দ্র স্মৃতি বন, রিশম মন্যাস্টেরি। রাত্রিবাস কালুক।

পঞ্চম দিন – চলুন হি-পাতাল (৮৪০০ ফুট, ১৭ কিমি)। নির্জন পাহাড়ি গ্রাম, বিচিত্র জাতের ও রঙের নানা পাখি সুরেলা ভাষায় কথা বলে। কাঞ্চনজঙ্ঘা সর্বক্ষণের সঙ্গী। চড়াই পথে হেঁটে দেখে নিন গাঁয়ের মন্যাস্টেরি। হি বাজার থেকে ঢাল গড়ানো পথে নেমে দেখে নিন সিকিমের উপাস্য শ্রীজঙ্ঘার স্মৃতি বিজড়িত ইউমা স্যামিও মন্দির, রহস্যময় আরণ্যক পরিবেশে শ্রীজঙ্ঘা ঝরনা এবং শ্রীজঙ্ঘা গুহা। চলুন তিন কিমি দূরে ছায়াতাল। রাত্রিবাস হি-পাতাল।
ষষ্ঠ দিন – দেখে নিন হি-খোলা ওয়াটার পার্ক, সিংশোর ব্রিজ, উত্তরে গ্রাম, ডেনটাম চিজ ফ্যাক্টরি ইত্যাদি। রাত্রিবাস হি-পাতাল।
সপ্তম দিন – ডেন্টাম ভ্যালি হয়ে চলে আসুন পেলিং, দূরত্ব ৩৯ কিমি। পথে দেখে নিন ছাঙ্গে ফলস্। এ দিন দেখে নিন পেমেয়াংসে, (পেলিং থেকে ৯ কিমি) ৩০০ বছরের বেশি পুরোনো মন্যাস্টেরি দেখতে। সেখান থেকে চলুন রাবদান্তসে (পেমেয়াংসে থেকে ১১ কিমি), সিকিমের দ্বিতীয় চোগিয়ালের দ্বিতীয় রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ। ফিরে মধ্যাহ্নভোজ (রাবদান্তসে থেকে পেলিং ৯ কিমি)।
অষ্টম দিন – আলো ফোটার আগে ৪ কিমি হেঁটে চলুন সাঙ্গা চোলিং মন্যাস্টেরি। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলে অপরূপ সূর্যোদয়ের সাক্ষী থাকুন। মন্যাস্টেরি থেকে দেখুন ফুলের উপত্যকা বার্সে।

প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। চলুন রিমবি ফলস্ (১৮ কিমি, পাহাড় থেকে নামছে রিমবি নদী)। সেখান থেকে চলুন ১৫ কিমি দূরে লেপচাদের পবিত্র লেক খেচিপেড়ি (ইচ্ছেপূরণের জন্য খ্যাত খেচিপেড়ি পেয়ার ফ্ল্যাগ আর গাছগাছালিতে ছাওয়া, লেকের জলে পাতা পড়ে না), লেকের পাড়ে ছোট্টো গুম্ফা। খেচিপেড়ি দেখে চলুন ১৫ কিমি দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস্। ৩০০ ফুট ওপর থেকে দুদ্দাড় বেগে নামা কাঞ্চনজঙ্ঘা ফলস্ আকর্ষণে অনবদ্য। এ বার চলুন ১২ কিমি দূরে ইয়ুকসম। ১৭৮০ মিটার উঁচু ইয়ুকসম সিকিমের প্রথম রাজধানী। তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্ম লাল টুপি শাখার পত্তনও এই ইয়ুকসমে। কার্থোক লেকের পাড়ে পাইন গাছের তলায় প্রথম চোগিয়ালের মাটি ও পাথরে গড়া করোনেশন থ্রোন। পাথরে পায়ের ছাপ। অতীতের চোর্তেনের ধ্বংসাবশেষ। চার কিমি দূরে নিরালা নির্জনে সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন দুবদি মন্যাস্টেরি। রাত্রিবাস পেলিং।
নবম দিন – গাড়ি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে চলে আসুন এনজেপি স্টেশন (১৩৬ কিমি) বা বাগডোগরা বিমানবন্দর (১৪৩কিমি)।
কী ভাবে যাবেন
(১) নিউজলপাইগুড়ি যাওয়ার জন্য ট্রেনের সময় জানতে দেখুন erail.in । বাগডোগরা উড়ানের সময় জানার জন্য ইন্টারনেট দেখে নিন।
(২) এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ট্যাক্সি বা শেয়ার জিপ মেলে গ্যাংটক যাওয়ার জন্য। দু’ জায়গাতেই প্রিপেড ট্যাক্সি পাওয়া যায়। চেষ্টা করবেন সিকিম রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিতে। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেজিস্ট্রেশনের গাড়ি নিলে সেই গাড়ি নামিয়ে দেবে গ্যাংটক সিটি সেন্টারের ২ কিমি নীচে দেওরালিতে। সেখান থেকে লোক্যাল ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে পৌঁছোতে হবে।
(৩) সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্টের (এসএনটি) বাস চলাচল করে শিলিগুড়ি-গ্যাংটক রুটে। এনজেপি স্টেশন থেকে অটো ধরে চলে আসুন শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে, তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনালের পাশে এসএনটি বাসস্ট্যান্ডে।
(৪) এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে ওখরে যেতে পারেন গাড়ি ভাড়া করে। অথবা শেয়ার জিপে জোড়থাং, সেখান থেকে শেয়ার জিপে ওখরে আসতে পারেন।

কী ভাবে ঘুরবেন
(১) গ্যাংটকে লোক্যাল ট্যাক্সি ভাড়া করে ঘুরে নিন স্থানীয় দ্রষ্টব্য।
(২) লোক্যাল ট্যাক্সি ভাড়া করে বা শেয়ার জিপে ঘুরে আসুন ছাঙ্গু লেক।
(৪) ভাড়া করা জিপে নর্থ সিকিম চলুন। কোনো ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবস্থাতেও যেতে পারেন। আপনার ট্যুর প্রোগ্রাম তাদের বলুন, সেই ভাবে ভ্রমণসূচি সাজানো হবে। অথবা তাদের নির্দিষ্ট প্যাকেজ ট্যুরেও যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার বাছাই দু’-একটা জায়গা বাদ পড়তে পারে।
(৫) গ্যাংটক থেকে গাড়ি ভাড়া করে পেলিং চলুন।
(৬) পেলিং ঘুরে নিন স্থানীয় যানে।
(৭) পেলিং থেকে এনজেপি স্টেশন বা বাগডোগরা এয়ারপোর্ট আসতে পারেন ভাড়া করা গাড়িতে বা শেয়ার জিপে।

কোথায় থাকবেন
(১) গ্যাংটক, লাচেন, লাচুং, রাবাংলা ও পেলিং-এ এখন বেসরকারি হোটেলের সংখ্যা প্রচুর। এদের খোঁজ পাবেন triviago.in, make my trip, goibibo, yatra.com, holidayiq, tripadvisor ইত্যাদি ওয়েবসাইটগুলিতে।
(২) সিকিমের বহু জায়গায় রয়েছে অনেক হোমস্টে। ইন্টারনেট থেকে সে সবের সন্ধান পেয়ে যাবেন।
(৩) নর্থ সিকিম ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমেও যেতে পারেন। তারা যেখানে রাখবে, সেখানে থাকবেন। সিকিম ট্যুরিজমও নর্থ সিকিম নিয়ে যায়। দেখুন ওয়েবসাইট www.sikkimtourismindia.com । রাজ্য সরকার অনুমোদিত যে সব প্রাইভেট অপারেটর নর্থ সিকিম ট্যুরে নিয়ে যায় তাদের তালিকার জন্য দেখুন www.sikkimtourism.gov.in/Webforms/General/TATO/TATO_List.aspx ।
(৪) আরামদায়ক হোটেলের ডালি সাজিয়ে বসে আছে ওখরে। গুগলে সার্চ করুন ‘accommodation in okhrey’, পেয়ে যাবেন সন্ধান।
(৫) কালুকে থাকার জন্য রয়েছে কাঞ্চেন ভ্যালি ট্যুরিস্ট লজ (০৯৪৩৩১২৭৮২৮/৯৮৩৬৫৫৭৮৯০), ঘোন্ডে ভিলেজ রিসর্ট (০৩৫৯৫-২৪৫২৬৭/৯৯৩৩০০১১২৭), ম্যান্ডারিন ভিলেজ রিসর্ট (০৩৫৯৫-২৪৫২০৯/৯৯৩২৪০৮১৪১/০৯০৮৩২৫২৫৪০), রিনচেনপং ভিলেজ রিসর্ট (০৩৫৯৫-২৩১০১৭) ইত্যাদি। আরও হোটেলের জন্য গুগলে সার্চ করুন ‘accommodation in kaluk’ ।
(৬) হি-পাতালে থাকার জন্য রয়েছে নেচার হিলটপ রিসর্ট (৯৯৩২৫১১৫২৬, ৯৫৬৪৬১৬৯৩৫), লেকভিউ রেসিডেন্সি (৭৭৯৭০০৭০০০, ৯০৯৩২০০৬০১), হোটেল সায়লেন্ট ভ্যালি (৮৯৬১৫২০৫৫৪, ৯৯০৩৮২৫২৮৭, ওয়েবসাইট www.bermiok.com), হোটেল কাঞ্চন ভিউ (৯০৫১১৬৬৫৬৩, ওয়েবসাইট hebermiok.com) ইত্যাদি। গুগলে ‘accommodation in hee bermiok’ সার্চ করলে বেশ কিছু হোম স্টে-র সন্ধান পাবেন।
থাকতে পারেন ছায়াতালেও – ছায়াতাল হেরিটেজ হোমস্টে (যোগাযোগ সৌরভ নায়েক ৮০১৭৬৩৩২৩৯)।

মনে রাখবেন
(১) গ্যাংটকে রোপওয়ে চালু থাকে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টে পর্যন্ত।
(২) নাথু লা ও নর্থ সিকিম ভ্রমণে সিকিমের পর্যটন ও অসামরিক পরিবহণ দফতরের ছাড়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। কোনো রেজিস্টার্ড ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে অনুমতিপত্র সংগ্রহ করতে পারেন। অনুমতিপত্রের জন্য ফোটো আইডি এবং দু’টি পাসপোর্ট সাইজের ছবি লাগবে। সরকার অনুমোদিত যে সব ট্রাভেল এজেন্ট অনুমতিপত্র সংগ্রহে সাহায্য করতে পারেন তাদের তালিকার জন্য দেখুন: www.sikkimtourism.gov.in/Webforms/General/TATO/TATO_List.aspx
(৩) নাথু লা যাওয়া যায় বুধবার থেকে রবিবার।
(৪) নর্থ সিকিম ভ্রমণসূচিতে কাটাও থাকে না। সময় থাকলে গাড়ির ড্রাইভারদের অতিরিক্ত টাকা দিলে তাঁরা সানন্দে কাটাও নিয়ে যান।
(৫) পশ্চিম সিকিম ভ্রমণ যদি ছোটো করতে চান তা হলে কালুক ও হি-পাতালে এক দিন করে অবস্থান কমাতে পারেন।