স্বল্পচেনা উত্তরবঙ্গ: যোগীঘাটে কিছুক্ষণ

শ্রয়ণ সেন

মিষ্টি নদীর মিষ্টি নাম
তাকে একটি বার ছুলাম…

জায়গাটার নাম প্রথম শুনেছিলাম ঠিক সেই বছরই যে বার ভারতের এক রাজ্যে এক যোগী মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন। তা হলে কি ওই যোগীর সঙ্গে এই জায়গাটা কোনো ভাবে সম্পর্কিত? এটাকে সম্ভাবনা বা আশংকা যা-ই বলি না কেন, শুরুতেই তা দূর করে নিলেন প্রসেনজিৎদা। তাঁর কথায়, “ধুর, সেই সব কিছু না। নেপাল থেকে যোগী মানে সাধুরা এসে এখানে চান করতেন, তাই এই জায়গাটার নাম যোগীঘাট।”

মিষ্টি নদীর মিষ্টি নাম, রিয়াং। সিটংয়ে আমাদের আস্তানা থেকেই এর কুলকুল শব্দ শোনা যাচ্ছিল। গভীর রাতে সেই আওয়াজটা যেন বড়োই রোমাঞ্চকর। কিন্তু আওয়াজ শোনা গেলেও তার দেখা পাওয়া যায় না যে।

সেই রিয়াংকে কাছ থেকে ছুঁতেই হোমস্টে থেকে রওনা হয়ে গেলাম। মিনিট কুড়ির পথ। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে রাস্তা নেমে গেল ক্রমশ। আমরা এসে দাঁড়ালাম একটা লোহার সেতুর মুখে। বোঝাই যায় সেই সেতু খুব বেশি পুরোনো নয়। তার পাশেই একটি জরাজীর্ণ ঝুলন্ত সেতু।

এটাই যোগীঘাট। সেতুর ওপর থেকে রিয়াংয়ের চালচলন এবং উপত্যকার সৌন্দর্য দেখে প্রেমে পড়ে গেলাম। ওপর থেকে বয়ে এসে ধাপে ধাপে রিয়াংয়ের নেমে যাওয়া বড্ড মন কাড়ল।

এটি মূলত একটি সংকীর্ণ উপত্যকা। কার্শিয়াংয়ের পাহাড় ও মংপুর পাহাড়কে যুক্ত করেছে নদীর ওপরে নবনির্মিত একটি সেতু। সিটংয়ের দিকের পাহাড়ে মনোরম ধাপচাষের জমি, আর একটু ওপর দিকে কমলালেবু ও ফুলের বাগান।
সেতু থেকে নেমে গেলাম রিয়াংয়ের পাড়ে তাকে ছুঁয়ে দেখব বলে। মুগ্ধ হলাম। পর্যটক ভিড় এখনও সে ভাবে বাড়েনি, সেই কারণেই হয়তো জায়গাটা বেশ পরিষ্কার। মিনিট পনেরো সময় দুর্দান্ত কাটালাম।

মনের সব দুশ্চিন্তা এক লহমায় ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেল রিয়াং। বরং দিয়ে গেল একরাশ আনন্দ আর খুশির রসদ। আপশোশ একটা থাকল অবশ্যই। এখানে রাত্রিবাস না করার। কারণ যে জায়গাটা মাত্র মিনিট পনেরোতেই মনের মণিকোঠায় এ ভাবে জায়গা করে নেয়, সেখানে সারা দিন সময় কাটানো, উপত্যকার রঙ বদল চাক্ষুষ করা, পাখির কলতান আর রিয়াংয়ের কুলকুল শব্দ শুনতে থাকা না জানি কতই লোভনীয় হত।

কী ভাবে যাবেন

যোগীঘাটের অবস্থান সিটং আর মংপুর একদম মাঝখানে। তাই এনজেপি পৌঁছে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন এখানে। এ ছাড়া শেয়ার গাড়িও পাওয়া যেতে পারে।

কোথায় থাকবেন

সিটংয়ে রাত্রিবাস করে যোগীঘাট ঘুরে যেতে পারেন। অথবা যোগীঘাটেও রাত্রিবাস করতে পারেন। এখানে রয়েছে মুখিয়া হোমস্টে। যোগাযোগ করতে পারেন: ৯৬৪১০৯৫৪৮৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *