ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: লকডাউনে ঘরে বসে থাকলেও কাজের কিছু কমতি নেই। তার সঙ্গে আছে একঘেয়েমি। সেই একঘেয়েমি কাটাতে ভ্রমণ অনলাইন আপনাদের নিয়ে যাচ্ছে মানসভ্রমণে।
আজ চলুন তিরুচেন্দুর। ‘তিরুচেন্দুর’ মানে পবিত্র সুন্দর শহর। মনোরম সাগরবেলায় সমুদ্রের ধারেই সুন্দর মুরুগান মন্দিরের জন্য বিখ্যাত তিরুচেন্দুর। আমাদের তামিলনাড়ু ভ্রমণসূচিতে সাধারণত তিরুচেন্দুর থাকে না। কিন্তু তিরুচেন্দুরের জন্য যদি একটি দিন থাকে তা হলে কিন্তু ঠকবেন না।
আরও পড়ুন: ঘরে বসে মানসভ্রমণ: আরাবল্লির পাদদেশে বাঁসওয়াড়া
মুরুগান মানে দেবসেনাপতি কার্তিক। দক্ষিণ ভারতে তিনি সুব্রহ্মণ্যম নামেও খ্যাত। তিরুচেন্দুরের মুরুগান মন্দিরের ভালো নাম ‘আরুলমিগু সুব্রহ্মণ্যমস্বামী মন্দির’। মন্দিরের স্থাপত্য দেখার মতন। মন্দিরটি পুব-পশ্চিমে ৬৫ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিণে ৯১ মিটার জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাতটি তলা বিশিষ্ট গোপুরম ৪২ মিটার উঁচু। মন্দিরের প্রবেশফটক দক্ষিণমুখী। গর্ভগৃহটি গুহার মধ্যে এবং সেখানেই মুরুগান বিগ্রহ অধিষ্ঠিত।
তিরুচেন্দুরের মুরুগান মন্দির নিয়ে একটি কাহিনি প্রচলিত। এই মন্দির ১৬৪৬ থেকে ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ডাচ (হল্যান্ড) ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দখল করে রেখেছিল। নায়েক শাসকদের নির্দেশে ডাচরা মন্দিরের দখলদারি ছেড়ে দেয়। কিন্তু তারা মুরুগানের বিগ্রহ নিয়ে চলে যায়। সমুদ্রপথে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড ঝড় ওঠে। তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে বিগ্রহ সমুদ্রের জলে ফেলে দেয়। ঝড় সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায়। মুরুগানের একনিষ্ঠ ভক্ত বড়ামালিয়াপ্পা পিল্লাইকে স্বপ্নে দেখা দেন ভগনাম সেন্তিল আন্দবন। এবং সমুদ্রের কোথায় বিগ্রহ রয়েছে তা জানিয়ে দেন। তিরুচেন্দুর মন্দিরের সেবক অতিত নাদারকে সঙ্গে করে জেলে নৌকা নিয়ে অকুস্থলে যান বড়ামালিয়াপ্পা পিল্লাই এবং বিগ্রহ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দে সেই বিগ্রহ আবার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই পুরো কাহিনি মন্দিরগাত্রে চিত্রকলার মাধ্যমে দেখানো আছে।

তিরুচেন্দুরের সৈকতটিও সুন্দর। বঙ্গোপসাগরে সূর্যোদয়ে রঙের খেলা মন ভরিয়ে দেয়।
কী ভাবে যাবেন
তিরুচেন্দুর থেকে ৫২ কিমি দূরে তিরুনেলভেলি, দেশের প্রায় সব প্রান্তের সঙ্গে ট্রেনপথে যুক্ত। কলকাতা থেকে তিরুনেলভেলি যাওয়ার ট্রেন – কন্যাকুমারী এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে ছাড়ে প্রতি সোমবার বিকেল ৪.১০ মিনিটে, তিরুনেলভেলি পৌঁছোয় তৃতীয় দিন সকাল ৮.২০ মিনিটে।
তিরুনেলভেলি থেকে বাসে বা গাড়িতে চলে আসুন তিরুচেন্দুর।
ট্রেনে বা বিমানে চেন্নাই আসুন। তার পর চেন্নাই এগমোর স্টেশন থেকে ট্রেনে তিরুনেলভেলি এসে সেখান থেকে বাসে বা গাড়িতে চলে আসুন তিরুচেন্দুর।
চেন্নাই থেকে তিরুচেন্দুর ৬৪০ কিমি, বাসে চলে আসতে পারেন।

কোথায় থাকবেন
সমুদ্রের ধারে থাকার জন্য রয়েছে তামিলনাড়ু পর্যটনের হোটেল তামিলনাড়ু। অনলাইন বুকিং: www.ttdconline.com । রয়েছে মন্দিরের অতিথিশালা, লজ। অনলাইন বুকিং: http://www.tiruchendurmurugantemple.tnhrce.in/
এ ছাড়াও প্রচুর বেসরকারি হোটেল, লজ আছে। গুগল সার্চ করে সন্ধান পাবেন।
জেনে রাখুন
যদি তামিলনাড়ু ভ্রমণে তিরুচেন্দুর জুড়ে দেন, তা হলে রামেশ্বরম থেকে কন্যাকুমারী আসার পথে এক দিন থেকে যান তিরুচেন্দুরে। রামেশ্বরম থেকে তিরুচেন্দুর ২২৮ কিমি। তিরুচেন্দুর থেকে কন্যাকুমারী ৯০ কিমি। বাস বা গাড়িতে চলে আসতে পারেন। তামিলনাড়ুতে বাস পরিষেবা খুব ভালো।
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চেন্নাই যাওয়ার ট্রেন আছে এবং চেন্নাই এগমোর স্টেশন থেকে তিরুনেলভেলি যাওয়ারও প্রচুর ট্রেন আছে। ট্রেনের বিস্তারিত তথ্য জানার জন্য দেখুন erail.in।
আরও পড়ুন: ঘরে বসে মানসভ্রমণ: নেল্লিয়ামপাতি