ভ্রমণ অনলাইন ডেস্ক: দেশ জুড়ে লকডাউনের চতুর্থ দফা শেষ। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পঞ্চম দফা, যাকে বলা হচ্ছে ‘আনলক ১.০’। আড়াই মাস হতে চলল লকডাউন চলছে। দেশের অর্থনীতির কাছে এ এক বিরাট ধাক্কা। তাই ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু করতে নানা ক্ষেত্রে ছাড় দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি। ছাড় আসছে পর্যটন ক্ষেত্রেও। তবুও দেশের পর্যটন ক্ষেত্র আগের মতো স্বাভাবিক হতে বেশ কিছু দিন সময় যে লাগবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তত দিন না হয় চলুক ঘরে বসে মানসভ্রমণ। আর পর্যটন ক্ষেত্র স্বাভাবিক হয়ে গেলেও মানসভ্রমণে আপত্তি কী? এই মানসভ্রমণ মানে তো ভবিষ্যতের ভ্রমণছক। সব স্বাভাবিক হলে বেরিয়ে পড়তে অসুবিধা কী?
ভ্রমণ অনলাইন আজ মানসভ্রমণে নিয়ে যাচ্ছে কেরলের শৈলশহর ৩৯০০ ফুট উঁচু ভাগামনে।

উপভোগ করুন
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ট্রাভেলর-এর তৈরি করা ভারতে সব চেয়ে আকর্ষণীয় ৫০টি গন্তব্যের তালিকায় রয়েছে ভাগামন। চায়ের চাষ শুরু করার জন্য ব্রিটিশরা এখানে প্রথম আসে। পত্তন হয় চা-বাগানের। কিন্তু আজও, এই একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকের শেষেও এতটুকু বাণিজ্যিক গন্ধ লাগেনি ভাগামনের গায়ে। আজও সে কার্যত অনাঘ্রাতা। চা-বাগান, সবুজ তৃণভূমি আচ্ছাদিত ঢেউ খেলানো পাহাড়, গিরিসংকট, এঁকেবেঁকে বয়ে চলা পাহাড়ি নদী, পাইনের জঙ্গল, প্রাণোচ্ছল ঝরনা, নানা ধরনের অর্কিড, হরেক রকমের ফুলের সমাবেশ – দু’টো দিন প্রকৃতির কোলে থেকে অপার শান্তিতে কাটান।
তিন পাহাড়ের দেশ ভাগামন – তঙ্গল পারা, এক শ্রদ্ধেয় সুফি সাধকের বিশ্রামস্থল; মুরুগানমালা, শিবের পুত্র মুরুগাকে (কার্তিক) উৎসর্গীকৃত; এবং কুরিসুমালা, খ্রিস্টানদের জনপ্রিয় তীর্থস্থান। অর্থাৎ ভাগামন হল সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের জায়গা।
কী দেখবেন
(১) পাইনের জঙ্গল – এই জঙ্গল ব্রিটিশদের হাতে তৈরি করা। মনুষ্যসৃষ্ট এই জঙ্গল এখানকার প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। পাইনের জঙ্গলে হেঁটে বেড়ান। অন্য অভিজ্ঞতা আপনার সঞ্চয় হবে।

(২) ভাগামন লেক – সবুজ পাহাড়ের কোলে ভাগামন লেক। একে ঘিরে রয়েছে পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা বেশ কিছু গ্রাম। লেকে বোটিং করুন, ভালো লাগবে।
(৩) মারমালা ফলস্ – এরাত্তুপেট্টা যাওয়ার পথে ১৩১ ফুট উঁচু জলপ্রপাত। ঝরনার জলপতনের শব্দ, পাখির কলতান, দূর থেকে ভেসে আসা বন্য জন্তুর ডাক – আপনাকে মোহাবিষ্ট করবেই।
(৪) তঙ্গল পারা – শৈলশহর থেকে ৫ কিমি দূরে। কিছুটা ট্রেক করতে হয়। পাহাড়ের একেবারে ধারে এক বিশাল পাথর। কথিত আছে, এখানে হসরত শেখ ফরিদুদ্দীন বাবা নামে এক সুফি সাধক বিশ্রাম নিতেন। তাঁর স্মৃতিতে এখানে রয়েছে এক দরগা।

(৫) মুন্ডকায়াম ঘাট – এর সৌন্দর্য ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। অনুভব করতে হয়। এখান থেকে উপভোগ করুন সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত।
(৬) কুরিসুমালা – খ্রিস্টানদের জনপ্রিয় তীর্থস্থান, ভাগামনের গ্রামীণ জীবন দেখতে হলে এখানে আসুন। এখানে একটি আশ্রম ও একটি ডেয়ারি ফার্ম আছে। কুরিসুমালা আশ্রম সায়রো-মলাঙ্করা ক্যাথলিক চার্চের অধীন।
(৭) মুরুগানমালা – শৈলশহর থেকে ৮ কিমি দূরে মুরুগানমালা পাহাড়ে সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশে ভগবান মুরুগান তথা কার্তিকের মন্দির।

(৮) ব্যারেন হিলস – শৈলশহর থেকে ৪ কিমি দূরে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই পাহাড়ের চেহারারও পরিবর্তন। বর্ষা আর শীতে যে পাহাড় সবুজে মোড়া থাকে, সেই পাহাড়ই গ্রীষ্মে হয়ে যায় ন্যাড়া। বৃষ্টির জল পেলেই তৈরি হয়ে যায় সবুজ তৃণভূমি।
(৯) ভাগামন ফলস্ – কেরলের অন্যতম জনপ্রিয় ঝরনা, আরও একটি নাম পালারুবি।
(১০) ইদুক্কি ড্যাম – ৫৫ কিমি দূরে পেরিয়ার নদীর উপরে ইদুক্কি ড্যাম, নির্মাণশিল্পের এক অনন্য নজির।

ভাগামনের কাছাকাছি রেলস্টেশন কোট্টায়াম, দূরত্ব ৬৪ কিমি। ভারতের প্রায় সব বড়ো শহরের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত কোট্টায়াম। তবে সরাসরি ট্রেনের বেশির ভাগই সাপ্তাহিক বা দ্বিসাপ্তাহিক হওয়ায়, চেন্নাইয়ে ট্রেন বদল করে যাওয়ার সুবিধা বেশি।
কলকাতা থেকে সরাসরি কোট্টায়াম যাওয়ার ট্রেন –
(১) গুরুদেব এক্সপ্রেস – শালিমার থেকে ছাড় বুধবার রাত্রি ১১.০৫ মিনিটে, কোট্টায়াম পৌঁছোয় শুক্রবার বিকেল ৪,৩২ মিনিটে।
(২) শিলচর-তিরুঅনন্তপুরম অরোনাই এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে ছাড়ে শনিবার (ইংরেজি মতে রাত্রি ১২টায় দিন পালটায়) রাত্রি ১.০৫ মিনিটে, কোট্টায়াম পৌঁছোয় রবিবার সন্ধে ৭.১০ মিনিটে (সময় লাগে ৪২ ঘণ্টা ৫ মিনিট)।
(৩) শিলচর-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস – হাওড়া থেকে ছাড়ে বৃহস্পতিবার (ইংরেজি মতে রাত্রি ১২টায় দিন পালটায়) রাত্রি ১.০৫ মিনিটে, কোট্টায়াম পৌঁছোয় শুক্রবার সন্ধে ৭.০৭ মিনিটে (সময় লাগে ৪২ ঘণ্টা ২ মিনিট)।

চেন্নাই থেকে কোট্টায়াম যাওয়ার ট্রেন –
(১) তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস – রোজ চেন্নাই সেন্ট্রাল ছাড়ে বিকেল ৩.২০ মিনিটে, কোট্টায়াম পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৪.১২ মিনিটে।
(২) তিরুঅনন্তপুরম মেল – রোজ চেন্নাই সেন্ট্রাল ছাড়ে সন্ধে ৭,৪৫ মিনিটে, কোট্টায়াম পৌঁছোয় পরের দিন ভোর ৮.০৭ মিনিটে।
এ ছাড়াও চেন্নাই থেকে কোট্টায়াম যাওয়ার বেশ কিছু সাপ্তাহিক ট্রেন আছে। বিস্তারিত সময়ের জন্য দেখে নিন erail.com ।
কোট্টায়াম থেকে বাসে বা গাড়ি ভাড়া করে চলুন ভাগামন।
বিমানে কোচি গিয়ে সেখান থেকেও গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারেন ভাগামন, দূরত্ব ১০৩ কিমি।

এখানে থাকার জন্য অনেক বেসরকারি হোটেল-রিসর্ট রয়েছে। নেট সার্চ করলে পেয়ে যাবেন।
(১) গরমে (মার্চ থেকে মে) – গরমের দিনে একটু কষ্ট করে পৌঁছে যেতে পারলে ভাগামনে পাবেন মনোরম আবহাওয়া। খুব গরমের দিনেও তাপমাত্রা ২৩ ডিগরির বেশি ওঠে না।
(২) বর্ষায় (জুন থেকে আগস্ট) – বর্ষায় অবিরাম বৃষ্টি হয়তো প্যারাগ্লাইডিং, ট্রেকিং ইত্যাদিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে বটে, তবে এই সময়ে পাহাড়ের যে রূপ খোলে তা এক কথায় অনবদ্য। সবুজ যে এমন হতে পারে, তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।
(৩) শীতে (ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) – এটা তো বেড়ানোরই মরশুম। কুয়াশা ঢাকা ভাগামনের অন্য রূপ। ঠান্ডাটাও জমিয়ে পড়ে।
এ বার সপ্তাহ দুয়েকের জন্য কেরল বেড়াতে এসে ভ্রমণসূচিতে অবশ্যই যোগ করে নিন ভাগামন।