ভ্রমণঅনলাইনডেস্ক: কোচি শহরের কানায় কানায় জড়িয়ে আছে ডাচ, পর্তুগিজ এবং ইংরেজদের ইতিহাস। ভারতের একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এই শহর। এমনকি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ভ্রমণ পত্রিকার সমীক্ষায় প্রকাশ, কোচি এখন একটি অবশ্য ভ্রমণের শহর।
দক্ষিণ ভারতের কেরলের এর্নাকুলাম জেলার কোচি শহরটি রাজ্যের সব চেয়ে জনবহুল শহর হলেও জনপ্রিয়তম শহরও। যে কোনো কেরলবাসীর কাছেই জানতে পারবেন কোচি শহরটি কতটা সুন্দর। বাকি কেরল যেখানে ঈশ্বরের নিজস্ব স্বর্গ, সেখানে কোচি শহরে জড়িয়ে আছে ইতিহাস। চলুন, আবার ঘুরে আসা যাক কোচি শহরের সেই জায়গাটা যাকে বলা হয় ফোর্ট কোচি। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ সেন্ট ফ্রান্সিস গির্জা। এই গির্জাটি হল ভারতে পর্তুগিজদের তৈরি প্রথম গির্জা আর এখানেই চিরতরে বিশ্রাম নিয়েছিলেন ভাস্কো-দা-গামা।
ইতিহাস এখনও দাঁড়িয়ে
১৫০৩ সালে পেড্রো আলভারেজ ডি ক্যাব্রাল এই গির্জা নির্মাণ করেন। পারস্য শৈলীতে বানানো এই গির্জা। এর পড়ে পরে এই শহরে এ রকম বেশ কিছু গির্জা তৈরি হয়।
আসল গির্জাটি ছিল সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এবং এর নাম ছিল সেন্ট বার্থোলোমিউ। পরে ১৫১৬ সালে এই গির্জাটি সংস্কার করা হয় এবং তখন এর নাম সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ। ইউরোপ থেকে ভারতে আসার সমুদ্রপথ আবিষ্কার করেন ভাস্কো-দা-গামা। তাঁর সমুদ্রপোত ভারতের মাটি ছোঁয় কেরলের কোঝিকোড় শহরে, ১৪৯৮ সালে। ভাস্কোর পরেই এখানে আসেন এই গির্জার প্রতিষ্ঠাতা ডি ক্যাব্রাল। তিনি কোচিনের রাজার অনুমতি নিয়েই এখানে একটি কেল্লা গড়েন এবং তার ভিতরেই তৈরি করেন এই গির্জা।
আরও পড়ুন: রাজকীয় বিলাসে দিন কয়েক কাটাতে চান? চলুন রাজস্থানের হাভেলি হোটেলে
এই গির্জায় ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়বে একটা ক্রস। এ ছাড়া যেটি সব চেয়ে আকর্ষণীয় তা হল কাপড়ের ফ্যান। এ ছাড়া কাঠের সিলিং ছাদ এবং মেঝের টাইলস আপনাকে নিয়ে যাবে কয়েক শো বছর আগে।
তৃতীয় বার ভারতে এসে মারা যান ভাস্কো-দা-গামা। সালটা ছিল ১৫২৪। তাঁর মৃত্যুর পর এই সেন্ট ফ্রান্সিস গির্জাতেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। ১৪ বছর পরে তাঁর দেহ লিসবনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এখনও এই গির্জায় রয়েছে তাঁর সমাধিফলক।

আর কী দেখবেন কোচিতে
কয়েক ভাগে টুকরো কোচি। বন্দরের গভীরতা বাড়াতে ১৯২০-তে যে মাটি তোলা হয়েছিল তা থেকে গড়া হয় উইলিংডন দ্বীপ। এয়ারপোর্ট, রেল, ভারত সরকারের ট্যুরিস্ট অফিস ইত্যাদি রয়েছে এই দ্বীপে। দ্বীপের অপর পারে মূল ভূখণ্ডে বাণিজ্যনগরী এর্নাকুলাম। রয়েছে ফোর্ট কোচি তথা মাত্তানচেরি উপদ্বীপাকারে। বিপরীতে বোলাঘাটি দ্বীপ। তার উত্তরে ব্যাপীন দ্বীপ।
ফোর্ট কোচিতে সেন্ট ফ্রান্সিস গির্জার দক্ষিণে রয়েছে সান্তাক্রুজ ব্যাসিলিকা। ১৫৫৭-য় তৈরি ব্যাসিলিকা পরের বছর ক্যাথেড্রাল-এ রূপান্তরিত হয়। এই ক্যাথেড্রাল ব্রিটিশরা গুঁড়িয়ে দিলে ১৮৮৭-তে নতুন করে চার্চ তৈরি হয়। ১৯৮৪-তে পোপ জন পল এটিকে ব্যাসিলিকায় রূপান্তরিত করেন।
ফোর্ট কোচির আরেক দ্রষ্টব্য চাইনিজ ফিশিং নেট। ক্যান্টিলিভারধর্মী বাঁশের কাঠামোয় ছাকনির মতো ঝুলে থাকা চিনাবালা বা চিনা জাল। ১৪ শতক থেকে রয়েছে এই জাল।
মাত্তানচেরি জেটির কাছে সেগুন কাঠের প্রাসাদপুরী মাত্তানচেরি প্যালেস। পর্তুগিজরা ১৫৫৭-য় এই প্রাসাদ তৈরি করে ভেট দেয় কোচিনের রাজাকে। ১৬৬৩-তে ডাচরা এই প্রাসাদের দখল নেয়। তাই একে ডাচ প্রাসাদও বলা হয়।
তিন ধরনের ইহুদির বাস কোচিতে। তাদের বসতি জু টাউন আরেক দ্রষ্টব্য। জেটি থেকে জু টাউন যাওয়ার পথে জেউইশ সিনাগগ।
পর্তুগিজরা দুর্গ গড়েছিল ব্যাপীন দ্বীপেও। ব্যাপীনের ১৮ কিমি দক্ষিণে চেরাই সৈকত।

কী ভাবে ঘুরবেন
এর্নাকুলাম থেকে ফেরি লঞ্চ যাচ্ছে দ্বীপ থেকে দ্বীপে। আধ ঘণ্টার জলপথে ব্যাপীন, মিনিট ২০ লঞ্চভ্রমণে ফোর্ট কোচি, মাত্তানচেরি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লঞ্চ চলে, তবে সেতুর মাধ্যমে সড়ক সংযোগও ঘটেছে এর্নাকুলাম থেকে উইলিংডন হয়ে মাত্তানচেরি, ফোর্ট কোচির। সব জায়গায় যাওয়ার বাস, ট্যাক্সি আর অটো মেলে।
কোথায় থাকবেন
কোচিতে থাকার নানা ব্যবস্থা আছে। রয়েছে কেরল পর্যটনের বোলঘাটি আইল্যান্ড রিসর্ট, অনলাইন বুকিং https://www.ktdc.com/online-reservation। এ ছাড়া বিভিন্ন দামের ও মানের প্রচুর বেসরকারি হোটেল আছে। নেটে সার্চ করলেই পাওয়া যায়। এ ছাড়া https://www.airbnb.co.in/ সার্চ করে নিজের বাজেট মাফিক হোটেল, হোমস্টে বা অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পাওয়া যায়।