ভ্রমণঅনলাইন ডেস্ক: কোভিড অতিমারি পরিস্থিতির জন্য বেশির ভাগ পর্যটনের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল লকডাউন। এখন বহু দেশ লকডাউন শিথিল করে কাজকর্ম স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। ফলত, পর্যটনের উপর নিষেধাজ্ঞা বহু দেশেই শিথিল হয়েছে। তারই মধ্যে কিছু দেশ আবার ২০২১-এর আগে তাদের দরজা পর্যটকদের জন্য খুলতে রাজি নয়। কিছু দেশ অন্তত এই ২০২০ সালটা দেখে নিতে চায়। কিছু আবার ২০২১ পড়ার পরেও কিছু দিন দরজা বন্ধ রাখতে চায়। কিছু দেশ সরকারি ভাবেই জানিয়ে দিয়েছে, এখনই তারা পর্যটকদের জন্য দরজা খুলছে না। আর কিছু আভাসে-ইঙ্গিতে সেটা বুঝিয়ে দিয়েছে। দেখা নেওয়া যায় কোন কোন গন্তব্য আপাতত অধরাই থাকছে পর্যটকদের কাছে।
বালি
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ। পর্যটনসম্পদে সমৃদ্ধ। কী নেই এখানে – জঙ্গলে পূর্ণ আগ্নেয়গিরিময় পাহাড়, সবুজ ধানখেত, সৈকত, প্রবাল-প্রাচীর। রয়েছে বেশ কিছু ধর্মীয় স্থান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উলুওয়াতু মন্দির – সমুদ্রের ধার থেকে একেবারে খাড়া উঠে যাওয়া পাহাড়ের শীর্ষে এই মন্দির।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2020/12/bali-uluwatu-temple-05.12-1-1.jpg)
বালি প্রশাসন ঠিক করেছিল, ১১ সেপ্টেম্বর থেকে তাদের দরজা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে ২০২১ না পড়া পর্যন্ত তাদের সীমান্ত বন্ধই থাকবে।
ইন্দোনেশিয়ায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সে দেশের সরকার চায় না ২০২০-তে দেশের দরজা আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হোক। তাই বালি প্রশাসনের সিদ্ধান্তে সায় নেই ইন্দোনেশিয়া সরকারের। বালির গভর্নর এ কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বালি-সহ সমগ্র ইন্দোনেশিয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যটকদের স্বাগত জানানোর মতো পরিস্থিতি নেই।
অস্ট্রেলিয়া
সিডনি হারবার আর সেখানকার বিখ্যাত অপেরা হাউস; উত্তরের অধিবাসী অধ্যুষিত উলুরু অঞ্চল; নর্থ কুইনসল্যান্ডে গ্রেট ব্যারিয়র রিফ, ডেনট্রি রেনফরেস্টে জলবিহার, জলপ্রপাত, কুমির ও কচ্ছপ দর্শন, ক্যাঙ্গারু দ্বীপ ও সেখানকার বিস্ময়কর পাথুরে স্থাপত্য; বিখ্যাত ক্র্যাডল মাউন্টেনে ট্রেকিং; ভিক্টোরিয়ায় সমুদ্রের পাড় বরাবর গ্রেট ওসেন রোড; পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার রটনেস্ট দ্বীপের ৬৩টি সমুদ্রসৈকত আর বিশাল মরুভূমি – বিচিত্র পর্যটন সম্পদে ভরপুর অস্ট্রেলিয়া নামে দেশটি। কিন্তু সে দেশের দরজা বাইরের মানুষের জন্য এখনও বন্ধ।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2020/12/kangaroo-island-05.12-1-1.jpg)
কোভিড পরিস্থিতি অস্ট্রেলিয়ায় যে খুব ভয়ংকর তা নয়। বরং বলা যায়, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এ দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। তবু মনে হয় না আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য যে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে তা খুব শীঘ্রই তুলে নেবে অস্ট্রেলিয়া।
গত জুনেই সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ঠারেঠোরে জানিয়েছিলেন, ২০২১-এর মাঝামাঝির আগে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য অস্ট্রেলিয়ার দরজা খুলবে না। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অনুমতি ছাড়া অস্ট্রেলিয়ানরা দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। অস্ট্রেলীয় বিমানসংস্থা কোয়ান্টাস গোড়ার দিকে ২০২০-এর অক্টোবর পর্যন্ত সমস্ত আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ রেখেছিল। এখন সেই সময়সীমা ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।
ভিয়েতনাম
ভিয়েতনাম বললেই মনে পড়ে যায় ষাট-সত্তর দশকের সেই বিখ্যাত স্লোগান ‘তোমার নাম, আমার নাম, ভিয়েতনাম, ভিয়েতনাম’। আমেরিকার বিরুদ্ধে অসম লড়াই লড়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ভিয়েতনাম, উত্তর আর দক্ষিণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সে দিনের সেই ভিয়েতনাম পর্যটনসম্পদে কিছু কম যায় না। পাহাড়, উপত্যকা, উপসাগর, সৈকত, দা নাং-এর মার্বেল পাহাড়, না ত্রাগের আসমানি জল, ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, মেকং ডেলটা, জলবিহারে অন্যতম দ্রষ্টব্য ভিয়েতনামের গ্রামজীবন, উপকূলের ধার ধরে ছবির মতো সব শহর, জাতীয় উদ্যান, হো চিন মিন সিটির মনোমুগ্ধকর পথঘাট, খাওয়াদাওয়া ও সেখানকার কাফে সংস্কৃতি এবং সর্বোপরি ভিয়েতনাম যুদ্ধের স্মৃতি বহন করা রাজধানী হ্যানয় – আপনাকে স্মৃতিতে সদাই জেগে থাকবে।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2020/12/vietnam-05.12-1-1.jpg)
ইদানীং ভিয়েতনাম সীমাবদ্ধ আন্তর্জাতিক উড়ান চালু করেছে – দক্ষিণ এশিয়ার কিছু দেশ যেমন চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া আর তাইওয়ানের সঙ্গে। সেখানেও কড়াকড়ি আছে। একমাত্র ভিয়েতনামের মানুষই সেই উড়ান ব্যবহার করতে পারেন। এবং সবাই নন। ছাত্র, ব্যবসায়ী, কূটনৈতিক এবং অন্য বাছাই করা যাত্রীদেরই অনুমতি দেওয়া হয় সেই উড়ানে ওঠার।
স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্টরা মনে করেন, ডিসেম্বর না পেরোলে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের ভিয়েটনাম ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যটকদের জন্য ভিয়েতনাম খুলে দেওয়া হলেও দেশকে খুব সতর্ক থাকতে হবে কারণ উপকূলবর্তী দা নাং শহরে সম্প্রতি কোভিড দেখা দিয়েছে।
নিউজিল্যান্ড
বর্তমান বিশ্বে জনপ্রিয় রাষ্ট্রপ্রধানদের অন্যতম জেসিন্ডা আরডার্ন। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় যে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন তাতে সে দেশের মানুষ তাঁর প্রতি খুবই আস্থাশীল ও শ্রদ্ধাশীল। তবে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করলেও বিদেশি টুরিস্টদের জন্য এখনও দরজা খোলেনি নিউজিল্যান্ড।
![](https://www.bhramononline.com/wp-content/uploads/2020/12/milford-sound-05.12-1-1.jpg)
অফুরান পর্যটনসম্পদে সমৃদ্ধ নিউজিল্যান্ড। প্রকৃতি যেন তার সমস্ত সম্পদ উজাড় করে দিয়েছে নিউজিল্যান্ডকে – পাহাড়, জঙ্গল, জলপ্রপাত, সমুদ্রসৈকত। সমুদ্রবক্ষে অসংখ্য দ্বীপ। ১৪৪টা দ্বীপ নিয়ে গড়া বে অফ আইল্যান্ডস, তুষার যুগে হিমবাহ দিয়ে তৈরি হওয়া মিলফোর্ড সাউন্ড, রাজধানী অকল্যান্ডের কাছে ওয়াইহেকে আইল্যান্ড, ক্রাইস্টচার্চের কার্ডবোর্ড ক্যাথেড্র্যাল – আরও কত কী! বৈচিত্র্যময় প্রাণীসম্পদে ভরপুর নিউজিল্যান্ড। ইতিহাস, হেরিটেজেও কম যায় না। এ দেশের আদিবাসীদের সংস্কৃতিও উপভোগ করার মতো।
সমস্ত ধরনের ভ্রমণকারীর জন্য নিউজিল্যান্ডের সীমান্ত বন্ধ রয়েছে। যাঁদের অত্যন্ত প্রয়োজন তাঁদেরই একমাত্র আসতে দেওয়া হচ্ছে সে দেশে। এই সুযোগ পাওয়ার জন্য তাঁদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জমা দিতে হচ্ছে।
ভ্রমণঅনলাইনে আরও পড়ুন
দরজা খুলে গেল নাথুলার, পর্যটকদের অনুমতি দেওয়া শুরু করল সিকিম