যেখানে ডাকা হয় শিসের সুরে, চলুন সেই গ্রাম কংথং-এ

এখানে মানুষ শব্দ উচ্চারণ করে নাম ডাকে না। শিস দিয়ে সুর করে নাম ডাকে। এবং প্রত্যেকটি শিসের সুর আলাদা আলাদা। তাই এই গ্রাম ‘শিসের গ্রাম’ (হুইস্লিং ভিলেজ) নামে পরিচিত।

মেঘালয়ের পূর্ব খাসি হিল্‌সের এই গ্রাম যাতে বিশ্ব পর্যটন সংগঠনের (World Tourism Organisation) সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যটন-গ্রামের তকমা পায় তার জন্য ২০২১-এ ভারতের পর্যটন মন্ত্রক এই গ্রামটিকে মনোনীত করে। শিলং থেকে ৫৩ আর চেরাপুঞ্জি থেকে ৫০ কিমি দূরে এই কংথং গ্রাম।

মেঘের আলয় মেঘালয়। কংথং-ও তার ব্যতিক্রম নয়। চোখজুড়োনো এর প্রাকৃতিক শোভা, মনভরানো এর পরিবেশ। কিন্তু তার চেয়েও বড়ো বৈশিষ্ট্য, হৃদয়নিঙড়ানো এর মানুষজন।

মেরেকেটে শ’ সাতেক মানুষের বাস এই কংথং-এ। এখানে গেলে তাঁরা আপনাকে আপন করে নেবেন সুরে সুরে। আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর এই গ্রাম। কিন্তু কাউকে ডাকার সময় শিসের সুরে ডাকার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য আজও ছাড়তে পারেননি গ্রামবাসী।

কংথং-এ প্রতিটি গ্রামবাসীর দুটি করে নাম রয়েছে। একটা নাম খাতায়-কলমে, আর-একটি নাম শিসের সুরে। এই শিসের সুরেরও দুটি প্রকার – একটি সংক্ষিপ্ত সুর, খুব বেশি হলে ১০ সেকেন্ডের, আর-একটি দীর্ঘ সুর, অন্তত ৩০ সেকেন্ডের। সংক্ষিপ্ত সুরের নামটিই বেশি ব্যবহার করা হয় – ঘরে, কাজের জায়গা, নিজেদের মধ্যে। আর দীর্ঘ সুরের নামটি সাধারণত বনে-জঙ্গলে-পাহাড়ে ব্যবহার করা হয়।

এখানে এলে আলাপ করে নেবেন কংথং-এর অ্যাগ্রো ট্যুরিজম কোঅপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যান রোথেল খংসিটের সঙ্গে। তিনি সব ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবেন। এখানকার পাহাড়ে-জঙ্গলে যে পাখির ডাক শোনা যায়, যে ঝরনার শব্দ শোনা যায়, সেখান থেকেই সুর বোনেন গ্রামের মায়েরা। যুগ যুগ ধরে এটা চলে আসছে। তার পর সন্তান জন্মানোর পর তার কানের কাছে সেই সুর শিস দিয়ে গুন গুন করে শোনানো হয়। সেই সুর থেকে জন্ম নেয় গান, যার নাম ‘জিঙ্গারওয়াই লওবেই’। শিশুও জন্মের পর তার নামের ‘জিঙ্গারওয়াই লওবেই’টাই আগে আওড়াতে শেখে। এবং প্রতিটি শিশুর ‘জিঙ্গারওয়াই লওবেই’ আলাদা আলাদা। তবে প্রথাগত লেখাপড়া থেকে গ্রামের কেউই দূরে থাকে না। গ্রামের প্রতিটি শিশুই স্কুলে যায়। এবং বড়ো হয়ে কাজের সন্ধানে বাইরে বেরিয়ে পড়ে।   

কী ভাবে যাবেন

শিলং থেকে কংথং-এর দূরত্ব ৫৩ কিমি। শিলং বড়ো বাজার সুমো স্ট্যান্ড থেকে দুপুর ২টো নাগাদ একটি জিপ ছাড়ে। তাতে যেতে পারেন। তবে আগের দিন জায়গা সংরক্ষণ করে রাখলে ভালো হয়। ঘণ্টা তিনেক সময় লাগে কংথং পৌঁছোতে। না হলে সারা দিন শেয়ার জিপ যাচ্ছে চেরাপুঞ্জি। তাতে মওজরং পর্যন্ত চলুন। সেখান থেকে কংথং-এর শেয়ার গাড়ি পেয়ে যাবেন। তবে সংখ্যায় খুব কম। তাই ওখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন কংথং। তা ছাড়া শিলং থেকে পুরোটাই গাড়ি ভাড়া করে চলে আসতে পারেন কংথঙে।

কোথায় থাকবেন

এখানে থাকার জন্য রয়েছে ট্রাভেলার্স নেস্ট (যোগাযোগ: ৯৮৫৬০৬০৩৪৭)। এ ছাড়াও রয়েছে ব্যাম্বু হাট (https://www.airbnb.co.in)।

মনে রাখবেন

পর্যটক-প্রিয় গ্রাম কংথং। কিন্তু ‘সুরের গ্রাম’-এর কিছু নিজস্বতা আছে। নিরিবিলি গ্রাম। সেই নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগ করুন। আর পরিচ্ছনতা এই গ্রামের প্রধান সম্পদ। সুতরাং এমন কিছু করবেন না যাতে পরিচ্ছনতা নষ্ট হয়।

গ্রাম ঘোরার সময় সঙ্গে একজন গাইড রাখলে ভালো হয়। গ্রামের মানুষ সুর বিনিময় করে কী কথা বলতে চাইছে, তা বুঝিয়ে দেবেন ওই গাইড। তা ছাড়া এখান থেকে কিছু ট্রেকিং রুট আছে। কাছেই রয়েছে লংস্ল্যাং ভিউপয়েন্ট। আশেপাশে কিছু ফল্‌সও আছে। কাছে- দূরে কিছু রুট ব্রিজও আছে। এগুলো সব হাঁটাপথ। সঙ্গে গাইড রাখবেন।

ছবি সৌজন্যে https://nenow.in ও ফেসবুক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *