তেলকুপি: দামোদরের জলে ডুবে থাকা এক দেউলনগরী

নিজস্ব প্রতিনিধি: দামোদরের গভীর জলে পাশাপাশি দু’টি জীর্ণ দেউল। কিছু দূরে মন্দিরের পাশে অযত্নে পড়ে রয়েছে দেউলের মূর্তি। এটাই বর্তমানের তেলকুপি।

দামোদরের দক্ষিণ পাড়ের একদা সমৃদ্ধ এই বন্দর থেকে তাম্রলিপ্ত অধুনা তমলুকের সাথে জলপথে চলত বাণিজ্য। সেই সূত্রে এই বন্দরেই জৈন ব্যবসায়ীরা গড়ে তুলেছিলেন মন্দির নগরী।

১৮৭৮ সালে জিডি বেগলারের ‘Report of a tour through Bengal Provinces’-এর রচনাতে এই তেলকুপির মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য মেলে। যেখানে বেগলার তেলকুপিতে মোট ২২টি মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছিলেন। আবার দেবলা মিত্রের ‘Telkupi- a submerged temple site in West Bengal’ বইতে তেলকুপির মন্দির নিয়ে বিশদে আলোচনা রয়েছে। তা থেকে জানা যায়, একদা তেলকুপিতে ২৫-২৬টি মন্দির বা দেউল ছিল। ফলে তেলকুপির অতীতের স্বর্ণযুগ নিয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই।

কিন্তু তেলকুপির বর্তমান বড়োই বেদনাদায়ক। কারণ দামোদরের উপরে পাঞ্চেত জলাধার তৈরির পরে এই মন্দিরগুলির বেশির ভাগই চলে যায় নদের গর্ভে। কোনো ভাবে মাথা উঁচিয়ে থেকে যায় তিনটি দেউল। তার মধ্যে দু’টিকে বছরের প্রায় সব সময়েই দেখা গেলেও একটি শুধুমাত্র গরমকালে দামোদরের জল কমলে দেখা যায়।

জেলার লোক গবেষকদের একাংশের মতে, মন্দিরগুলির নির্মাণ মোটামুটি দশম-একাদশ শতাব্দীতে। এবং তা মূলত গড়ে ছিলেন জৈন ধর্মাবলম্বী ব্যবসায়ীরা। তৎকালীন সময়ে বাংলায় পালযুগে জৈন ধর্ম প্রসার লাভ করেছিল.এবং ধর্মের প্রসারে ভূমিকা নিয়েছিল জৈন ব্যবসায়ীরাই। যাঁরা এই অঞ্চলের দু’টি তামার খনি তামাজুড়ি ও তামাখুন থেকে তামা এনে তৈলকম্প বন্দর থেকে তাম্রলিপ্তে নিয়ে যেতেন।

তেলকুপির এই মন্দিরগুলো দেখতে হলে ভরসা নৌকা। দামোদরের পাড়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে তার পর নৌকায় ভেসে পড়া। ঘণ্টাখানেকের নৌকাভ্রমণে দেখে নেওয়া যেতে পারে বাংলার এই ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে।

কী ভাবে যাবেন

তেলকুপির সব থেকে কাছের স্টেশন আদ্রা। দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। সারা দিন হাওড়া থেকে অনেক ট্রেনই আদ্রা আসে। তবে সব থেকে ভালো ট্রেন হল হাওড়া-আদ্রা-বোকারো প্যাসেঞ্জার। ট্রেনটি প্রতি দিন রাত ১২:০৫-এ হাওড়া থেকে ছেড়ে আদ্রা পৌঁছায় পরের দিন ভোর ৫:১৫-এ। এই ট্রেনে এলে, সকালেই তেলকুপি ঘুরে নিয়ে দুপুরের ট্রেনে আবার কলকাতা যাত্রা করতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

তেলকুপি এখনও পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠেনি, তাই এখানে থাকার ব্যবস্থা নেই। রাত্রিবাস করতে হলে আদ্রা-রঘুনাথপুরে থাকবে হবে। সেখানে বেশ কিছু হোটেল-অতিথিনিবাস রয়েছে। এ ছাড়া তেলকুপি থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে পর্যটন কেন্দ্র বড়ন্তিতে রাত্রিবাস করেও তেলকুপি ঘুরে নিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *